Author : Sushant Sareen

Expert Speak Raisina Debates
Published on Nov 09, 2022 Updated 12 Days ago

অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার ঘটনাটি দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে আসবে।

‘অযোগ্য’ ঘোষিত ইমরান খানের যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনা
‘অযোগ্য’ ঘোষিত ইমরান খানের যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনা

একটি বহুল প্রত্যাশিত রায়ে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ই সি পি) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পার্লামেন্ট বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা (‌ডিসকোয়ালিফাই)‌ করেছে, এবং দুর্নীতিতে জড়িত থাকার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের আইকনকে টেকনিক্যাল নক–আউট হতে দেখে ইমরানের সমর্থকদের যে যন্ত্রণা হয়েছিল, তা শুধু তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফকে একই ভিত্তিতে অযোগ্য ঘোষণা করার বিড়ম্বনার সঙ্গে মিলে যায়। যে বেতন তিনি কখনও পাননি তা ঘোষণা না করার কারণে শরিফকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল, অন্যদিকে ইমরানকে তাঁর সম্পদ ও দায়ের ভুল হিসাব ঘোষণার অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে দরজা দেখানো হয়েছে।

ইমরানের ডিসকোয়ালিফিকেশন তাঁর বিরুদ্ধে ই সি পি–তে দায়ের করা একটি অভিযোগ সূত্রে এসেছে, যা তোষাখানা মামলা নামে পরিচিত। ই সি পি তাঁকে ‘‌কমিশনের সামনে মিথ্যা ঘোষণা ও ভুল বক্তব্য জানানোর’‌  জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। ই সি পি–র মতে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যে সব উপহার পেয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেখেছিলেন ও পরে বিক্রি করেছিলেন, সে বিষয়ে তিনি ‘‌ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে উপহারের বিবরণ প্রকাশ না করে বস্তুগত তথ্য গোপন করেছেন… তাছাড়া পরে লাভের জন্য বিক্রির থেকে প্রাপ্ত অর্থের হিসাবও নেই’‌। তাঁর ডিসকোয়ালিফিকেশনের সময়কাল এখনও অজানা। সংবিধানের ৬৩(১)(পি) অনুচ্ছেদ, যার ভিত্তিতে ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে শুধু আইন অনুযায়ী ‘‌আপাতত অযোগ্য’‌ ঘোষণার কথা বলা আছে। ই সি পি–র রায়ে নির্বাচনী আইন ২০১৭–র ধারা ১৯০(২)–এর অধীনে পরবর্তী আই্নি পদক্ষেপ করার এবং আদালতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ই সি পি–র মতে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যে সব উপহার পেয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেখেছিলেন ও পরে বিক্রি করেছিলেন, সে বিষয়ে তিনি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে উপহারের বিবরণ প্রকাশ না করে বস্তুগত তথ্য গোপন করেছেন… তাছাড়া পরে লাভের জন্য বিক্রির থেকে প্রাপ্ত অর্থের হিসাবও নেই’‌।

দায়রা আদালতে এবং তারপরে উচ্চতর বিচার বিভাগে মামলা চলার পর অযোগ্যতার সময়কাল চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে ইমরানকে শুধু তিন বছরের জন্য কারাদণ্ডই দেওয়া হবে না, তাঁকে আজীবন অযোগ্য বলেও ঘোষণা করা হতে পারে, কারণ তিনি আর সাদিক ও আমিন (সত্যনিষ্ঠ ও সৎ) থাকবেন না। ইমরানের কাছে হাইকোর্টে ই সি পি–র রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিকল্প আছে, যেখানে স্থগিতাদেশ পাওয়া যেতে পারে। মোটামুটি সুস্পষ্ট অভিযোগের মামলাতেও ইমরানকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য উচ্চতর আদালতের ট্র্যাক রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে—যেমন এক বিচারককে হুমকি দেওয়ার মামলায় দেখা গিয়েছিল–এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে বিচারকেরা তোষাখানা মামলায় তাঁকে কিছুটা রেহাই দেবেন এবং ইসিপির রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করবেন। কিন্তু ইমরানের মাথায় তলোয়ার ঝুলিয়ে রেখে আদালতে বিচার চলবে, এবং তা দীর্ঘ বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অন্যান্য আরও বিপজ্জনক মামলা—যেগুলির মধ্যে আছে বিদেশি তহবিল মামলা যেখানে ই সি পি ইতিমধ্যেই ইমরানের তেহরিক–ই–ইনসাফ দলকে নিষিদ্ধ তহবিল গ্রহণ ও অপব্যবহার করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে—আদালতের সামনে এসেছে এবং সেগুলি শুধু ইমরানই নয়, আগের ক্ষমতাসীন দলটির উপরেও বিরাট আঘাত হানতে পারে।

রাজনৈতিকভাবে, যতদূর উপলব্ধি করা যায় এবং যে আখ্যান তৈরি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় ইমরানের বিরোধীরা ই সি পি–র রায়কে তাঁর পুরো প্রচারণা গুরুত্ব সহকারে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপকরণ হিসাবে দেখবেন, যে প্রচার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে আঁকে এবং নিজেকে শ্বেতশুভ্র ও বিশুদ্ধ হিসাবে উপস্থাপন করে। ইমরানের ভক্তরা অবশ্য তাঁর দোষের সেই সব প্রামাণ্য নথি উপেক্ষা করবেন যা তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে। তাঁরা তাঁকে একজন শহিদ হিসাবে দেখতে থাকবেন, যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলেন। অন্য কথায়, ইমরান যে জনপ্রিয় সমর্থন উপভোগ করেন তা শুধু প্রান্তিকভাবে প্রভাবিত হবে, যদি একান্তই হয়। ইমরানের সমস্যা হল জনপ্রিয়তা পাকিস্তানের কোনও রাজনীতিকের ক্যারিয়ারের অবসান ঘটানো বা তা লাইনচ্যুত করার পথে কখনও প্রতিবন্ধক হয়নি।

অর্থনীতি পুরোপুরি মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ও আরব রাষ্ট্রগুলির মতো দেশগুলির আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। এই দেশগুলি ইমরানকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

ই সি পি–র রায় প্রকৃতই ইমরান খানকে প্রভাবিত করবে ক্ষমতার রাজনীতির বৃত্তে। ইমরানের সামনে বিকল্পগুলি সঙ্কুচিত হচ্ছে। তিনি আপাতত রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার এবং পরে লড়াই করার ও জেতার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন; অথবা তিনি আগাম নির্বাচনের জন্য রাজপথে চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন। তিনি নিশ্চিত যে ভোট হলে তিনি অবশ্যই জিতবেন। তিনি যদি প্রথম বিকল্পটি বেছে নেন, তাহলে তিনি অযোগ্যতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁর রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু এই বিকল্পটির মধ্যে আছে একটি কুলিং অফ পিরিয়ড, অর্থাৎ ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনের পরেও, তা যখনই অনুষ্ঠিত হোক, সামরিক প্রতিষ্ঠান তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফেরার অনুমতি দেবে এমন সম্ভাবনা খুব কম।

আপাতত ইমরান ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য। তিনি সামরিক প্রতিষ্ঠানকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে, তাঁদের অবিশ্বাসী এমনকি বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করে, এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী বলে অভিযোগ তুলে সেনাকর্তাদের চটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বিপজ্জনক শাসনের রেকর্ড তাঁকে এমন এক সময়ে সম্পূর্ণভাবে ‘আর নেই দরকার’‌ করে তুলেছে যখন পাকিস্তান অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি। সন্ত্রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে;‌ অর্থনীতি পুরোপুরি মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে;‌ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ও আরব রাষ্ট্রগুলির মতো দেশগুলির আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তা ছাড়া পাকিস্তানের টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। এই দেশগুলি ইমরানকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় না। রাজনৈতিকভাবে, ইমরানের বিষাক্ত রাজনীতি যে চরম মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি করেছে তা থেকে পাকিস্তানের নিরাময় প্রয়োজন। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য চাপের প্রয়োজন আছে, যা ইমরান ক্ষমতায় ফিরলে সম্ভব হবে না। রাষ্ট্রের টিকে থাকার প্রয়োজনে ইমরানকে কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। তিনি যদি তা করতে প্রস্তুত থাকেন, তবে তাঁকে কিছুটা জায়গা দেওয়া হবে।

ইমরান নিজেকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে শীর্ষে উঠে আসার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।

কিন্তু ইমরান ‌নামক ব্যক্তিটি ইমরান বলেই ক্ষমতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি যে যথেষ্ট জনসমর্থনের অধিকারী, তা প্রশ্নাতীত। জুলাই মাসে উপনির্বাচনে তিনি যেভাবে বিপুল জয়লাভ করেছেন, এবং অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যেভাবে সাতটি আসনের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছেন, তার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত হয়েছে। ইমরান নিজেকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে শীর্ষে উঠে আসার ক্ষমতা তাঁর আছে। এপ্রিলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তিনি এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন যেমনটা তাঁর আগে কেউ করেননি। কিন্তু সেনাবাহিনী তাঁর আক্রমণের সময় অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল, এবং তাঁকে স্পর্শ করতে বা গতিরোধ করতে সক্ষম হয়নি। সেনাবাহিনীর পদস্থদের মধ্যে ও  নিচের তলায় মতানৈক্যের গুঞ্জন রয়েছে। ইমরান আরও দাবি করেছেন যে জেনারেলরা তাঁর বিরুদ্ধে থাকলেও তাঁদের পরিবার তাঁকে সমর্থন করে। বিচার বিভাগও তাঁর পক্ষে ঝুঁকে আছে বলে মনে হচ্ছে। তাঁর দলের সরকার রয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবের পাশাপাশি পাকিস্তান–অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাকিস্তান–অধিকৃত গিলগিট বাল্টিস্তানেও। এই সবের উপরে তাঁর এক প্রায় অন্ধ, ভূতগ্রস্ত গোছের সমর্থনভিত্তি আছে, যা তাঁর জন্য রাস্তায় বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত।

ইমরান সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে তিনি তাঁর সব ধরনের সমর্থন কাজে লাগিয়ে ‘‌লং মার্চ’‌ করে ইসলামাবাদে আসবেন এবং রাষ্ট্র ও সরকারকে আগাম নির্বাচনের জন্য সম্মত হতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবেন। যদি তিনি এই পথ বেছে নেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাছে তিনটি বিকল্প থাকবে: তা ইমরানের চাপের কৌশলের কাছে নতিস্বীকার করতে পারে এবং তারপরে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি নিতে পারে; লং মার্চ ভেঙে দেওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে পারে এবং তারপরে শুধু ইমরানকে কারাগারে নিক্ষেপ করতেই নয়, তাঁর দলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য  রাষ্ট্রের শক্তি ব্যবহার করতে পারে; এবং, যদি অন্য সব কিছু ব্যর্থ হয়, তাহলে সব সময় রাজনৈতিক পারমাণবিক বিকল্প তো আছেই—পাকিস্তানকে ঠিক করার জন্য সামরিক অধিগ্রহণের পর একটি টেকনোক্র্যাটিক সরকার তৈরি করা। শেষ বিকল্পটি অতীতে চারবার চেষ্টা করা হয়েছে;‌ কিন্তু সব কিছু ঠিক করা দূরে থাক, তা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। কিন্তু, সম্ভবত এটাই দেশটির সম্পূর্ণ পতন ঠেকানোর একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে;‌ কারণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও খারাপ করে দিচ্ছে এবং স্টেরয়েড–নির্ভর শ্রীলঙ্কা হওয়ার থেকে পাকিস্তান মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে রয়েছে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sushant Sareen

Sushant Sareen

Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador   ...

Read More +