Author : Suyash Desai

Published on Dec 18, 2022 Updated 4 Days ago

নবনিযুক্ত সিএমসি নেতৃত্বের বিন্যাস এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক চাপ চিনকে আঞ্চলিক সমস্যাগুলির সমাধানে উদ্যোগী হতে বাধ্য করছে।

২০তম সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে নিয়োগগুলি কী অর্থ বহন করে?
২০তম সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে নিয়োগগুলি কী অর্থ বহন করে?

কাজ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করা এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য কর্মসূচি নির্ধারণের পর চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) জেনারেল সেক্রেটারি শি জিনপিং পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার (পিআরসি) সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা ২০তম সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) সদস্যদের চূড়ান্ত করেছেন। সিএমসি পিএলএ-র শীর্ষে অবস্থান করে এবং চিনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী ও পিপলস আর্মড পুলিশকে (পিএপি) নিয়ন্ত্রণ করে। চিনের বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতির লক্ষ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং দেশের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য সমরশক্তি ব্যবহারের দায়িত্ব এই সংস্থাটির উপরেই ন্যস্ত। এর সদস্যরা চিনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিশন এবং ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিশনেরও একটি অংশ, যারা চিনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে। এই ২০তম সিএমসি সম্ভবত ২০২৭ সালে পিএলএ তার শতবর্ষ পূর্ণ না করা পর্যন্ত কাজ করবে।

সিএমসি পিএলএর শীর্ষে অবস্থান করে এবং চিনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী ও পিপলস আর্মড পুলিশকে (পিএপি) নিয়ন্ত্রণ করে।

শতবর্ষে পদার্পণ করার পাশাপাশি, শি জিনপিং সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি মাইলফলক হিসাবে ২০২৭ সালকে বেছে নিয়েছেন। ২০২১ সালের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে (এনপিসি) শি পিএলএ-এর শতবর্ষ পূরণের মধ্যে একটি নতুন সামরিক আধুনিকীকরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে তাঁর জাতীয় উন্নয়নের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাতে ‘২০২৭ সালে শতবার্ষিকী সামরিক নির্মাণ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সুনিশ্চিত করা যায়’ (কোয়েবাও ২০২৭ নিয়ান শিনঝান জিয়ানজুন বাইনিয়ান ফেনদউ মুবিয়াও)। চিনা সমরশক্তি-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ টেলর ফ্রাভেল উল্লেখ করেছেন যে, সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের অর্থ হল, ২০২৭ সালের সামরিক আধুনিকীকরণ অর্জনের লক্ষ্যটি আসলে ২০৩৫ সালের তথ্যপ্রদানের লক্ষ্যমাত্রার (ইনফর্মেটাইজেশন টার্গেট) নিরিখে একটি সূচনাবিন্দু। তাই আগামী পাঁচ বছর পিএলএ-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে  চলেছে এবং বর্তমান সিএমসি চিনের সামরিক সংস্কারের গতি নির্ধারণ করবে এবং পিআরসি-র আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব ও বিবাদে পিএলএ-র ভূমিকা নির্ধারণ করবে।

২০তম সিএমসি-তে নিয়োগ

গতবারের মতো এবারও সাত সদস্যের সিএমসি তৈরি হয়েছে। একাধিক পরিষেবা থেকে অপেক্ষাকৃত বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন ১৯তম সিএমসি-র বিপরীতে হেঁটে সর্বশেষ সিএমসি পিএলএ আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। শি জিনপিং ব্যতীত বর্তমান সিএমসি-তে তিন জন সদস্য পিএলএ সেনাবাহিনীর, এক জন পিএলএ নৌবাহিনীর (পিএলএএন), এক জন পিএলএ রকেট ফোর্স (পিএলএআরএফ) এবং এক জন পিএলএ স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএএসএসএফ) থেকে উঠে এসেছেন (দ্রষ্টব্য তালিকা ১)। অ্যাডমিরাল মিয়াও হুয়া পূর্বে পিএলএ আর্মির অংশ থাকলেও তিনি লানঝাউ সামরিক  অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই ভাবে, জেনারেল ঝাং শেংমিনও আগে সেনাবাহিনীতে ছিলেন। অর্থাৎ শি ছাড়া ছয় সদস্যের মধ্যে অন্তত পাঁচ জনই পিএলএ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ভাবে বর্তমান সিএমসি-তে পিএলএ এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) এবং পিএলএ জয়েন্ট লজিস্টিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএজেএলএসএফ)-এর কোনও প্রতিনিধিত্বই নেই, এবং পিএলএএন ও পিএলএএসএসএফ-এর নামমাত্র প্রতিনিধিত্ব রইল, যেহেতু এই পরিষেবাগুলির সঙ্গে দু’জন প্রতিনিধি মাত্র সীমিত সময়ের জন্যই যুক্ত ছিলেন। তাঁদের এই বাদ পড়া আশ্চর্যজনক, বিশেষ করে ২০১৫ সালের শ্বেতপত্রে সুনির্দিষ্ট ভাবে এ কথা উল্লেখ করার পরে যে, চিন দূর সমুদ্রে তার স্বার্থ অনুসরণ করতে এবং রক্ষা করতে আগ্রহী। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ‘স্থানীয় যুদ্ধে জয়লাভ করা’র কথা (দা ইং জুবু ঝানঝেং) উল্লেখ করা হয়েছে, যা আগের কর্ম সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত ছিল। সম্ভবত নিকটবর্তী সমুদ্র এবং স্থলসীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও ক্রমশ অবনতির দিকে এগিয়ে চলা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ – যা জাহাজ ও বিমান কেনা এবং সেগুলি বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করাকে প্রভাবিত করে – চিনকে আঞ্চলিক সমস্যাগুলির প্রতি তুলনামূলক ভাবে বেশি মনোযোগ দিতে বাধ্য করতে পারে, যা সিএমসি-তে নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে। পিএলএজেএলএসএফ-এর অনুপস্থিতিও আশ্চর্যজনক। কারণ সামরিক সরবরাহ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা ছিল শি জিনপিংয়ের সর্বশেষ কাজের প্রতিবেদনের মূল বিষয়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে চিনা সামরিক অভিযান এবং জটিল যুদ্ধক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের পথ হিসাবে উল্লিখিত পিএলএ-এর ‘সমন্বিত যৌথ অভিযান’-এর উপর এই নিয়োগের কী প্রভাব পড়বে, তা বলার সময় এখনও আসেনি।

নাম পদ শাখা পূর্ববর্তী পদ
শি জিনপিং চেয়ারম্যান অসামরিক নেতা
ঝাং ইউঝিয়া ভাইস চেয়ারম্যান পিএলএ আর্মি ইকুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, পিএলএ জেনারেল আর্মামেন্টস ডিপার্টমেন্ট
হে ওয়েইদং ভাইস চেয়ারম্যান পিএলএ আর্মি ইটিসি-র কম্যান্ডার, ডব্লিউটিসি-র ডেপুটি কম্যান্ডার, ডব্লিউটিসি আর্মির কম্যান্ডার
লি শাংফু সদস্য পিএলএএসএসএফ ইকুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, পিএলএ এসএসএফ-এর ডেপুটি কম্যান্ডার এবং পিএলএ আর্মামেন্টস ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি কম্যান্ডার
লিউ ঝেনলি সদস্য পিএলএ আর্মি পিএপি-র চিফ অফ স্টাফ, পিএলএ আর্মির চিফ অফ স্টাফ
মিয়াও হুয়া সদস্য পিএলএ নৌবাহিনী পলিটিক্যাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর, পিএলএ নেভির পলিটিক্যাল কমিশার এবং লানঝাউ মিলিটারি রিজিয়নের পলিটিক্যাল কমিশার
ঝাং শেংমিন সদস্য পিএলএআরএফ এসএএফ-এর (বর্তমানে আরএফ) পলিটিক্যাল কমিশার, সিএমসি কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইনস্পেকশনের সেক্রেটারি

এর পাশাপাশি ১৯তম সিএমসি থেকে তিন জন সদস্য জেনারেল ঝাং ইউঝিয়া, অ্যাডমিরাল মিয়াও হুয়া এবং জেনারেল ঝাং শেংমিনকে রাখা হয়েছে। জেনারেল হে ওয়েইদং, যিনি সিএমসি-এর দুই ভাইস চেয়ারম্যানের একজন, এর আগে ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের (ইটিসি) কমান্ডার, ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের (ডব্লিউটিসি) ডেপুটি কমান্ডার এবং ডব্লিউটিসি সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইটিসি তাইওয়ান এবং ডব্লিউটিসি ভারত ও ভুটানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলার ভারপ্রাপ্ত। গত পাঁচ বছরে এই দু’টি ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নিয়োগ কর্ম-পরিকল্পনাগত এবং প্রতীকী গুরুত্বকেই নির্দেশ করে। ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগের মাধ্যমে তাঁর উত্থান হয়তো ভবিষ্যতে এই দুই ক্ষেত্রে উত্তেজনা বেড়ে ওঠারই ইঙ্গিত দেয়। তবে তা না-ও হতে পারে। মজার বিষয় হল, জেনারেল হে ছাড়াও, অ্যাডমিরাল মিয়াও লানঝাউ সামরিক অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন, যেটি এখন ডব্লিউটিসি-এর একটি অংশ— এমন একটি অঞ্চল যা দক্ষিণ জিনজিয়াং সামরিক জেলার নেতৃত্ব দেয় এবং যেখানে ২০২০ সাল থেকে চিন ও ভারত সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০তম সিএমসিতে পিএলএএএফ এবং পিএলএএসএসএফ-এর কোনও প্রতিনিধি নেই, অর্থাৎ সাইবারকে পিছনের সারিতে পাঠানো হয়েছে। জেনারেল লি শাংফু পিএলএএসএসএফ-এর ডেপুটি কম্যান্ডার ছিলেন যা প্রাথমিক ভাবে মহাকাশ সংক্রান্ত কার্যকলাপের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি এর আগে শিচ্যাং উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে ৩১ বছর কাজ করেছেন এবং তার মধ্যে ১০ বছর তার পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। চিন মহাকাশ যুদ্ধকে কতটা গুরুত্ব দেয়, লি শাংফু-র অন্তর্ভুক্তি তা নির্দেশ করলেও সাইবার শাখার প্রতি তার আপেক্ষিক অবহেলা, বিশেষ করে সাম্প্রতিক কাজের প্রতিবেদন এবং ২০১৯ সালের প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রে স্পষ্ট ভাবে সামরিক উদ্ভাবন ও সুবিস্তৃত প্রযুক্তি, সাইবার, বিগ ডেটা এবং সামরিক অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব উল্লেখ করার পর, তা সত্যি বিস্ময়কর।

পিএপি হল একটি চিনা আধাসামরিক সংস্থা যা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাদাঙ্গা নিয়ন্ত্রণসন্ত্রাসবিরোধিতা, দুর্যোগ মোকাবিলাআইন প্রয়োগ এবং সামুদ্রিক অধিকার সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ

এ বারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলেন জেনারেল লিউ ঝেনলি, যিনি পিএলএ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে পিএপি-র চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পিএপি হল একটি চিনা আধাসামরিক সংস্থা যা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসবিরোধিতা, দুর্যোগ মোকাবিলা, আইন প্রয়োগ এবং সামুদ্রিক অধিকার সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। যুদ্ধের সময়ে পিএলএ সেনাবাহিনীকে সাহায্য করাও তাদের দায়িত্ব। তাঁর পদোন্নতি বর্তমান সরকারের অধীনে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উপরই জোর দেয় এবং সম্ভবত তিব্বত ও জিনজিয়াং-এর পরিস্থিতির অবনতির দিকেও ইঙ্গিত করে।

ডব্লিউটিসি সর্বদাই অতিরিক্ত মাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে এবং সিএমসি-তে সাউথ থিয়েটার কম্যান্ড যথাযথ প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়নি। তবে তা ডব্লিউটিসি-র গঠন এবং আকারের কারণেও হয়েছে, যার মধ্যে প্রাক্তন চেংদু ও লানঝাউ সামরিক অঞ্চল, তিব্বত সামরিক জেলা এবং জিনজিয়াং সামরিক জেলা অন্তর্ভুক্ত।

সিএমসি-তে প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্ব বিভিন্ন পরিষেবার উন্নতি বা নানা ক্ষেত্রে স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার একমাত্র উপায় হতে পারে না। সাংগঠনিক স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং নিম্ন স্তরগুলিতে পিএলএ-র নিজেরই কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে। তবে অতীতে যেমনটা দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে পিএলএ সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে, সিএমসি-তে নিয়োগ  ব্যক্তিদের সংগঠনের মূল্যে নির্দিষ্ট পরিষেবা এবং ক্ষেত্রের স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম করে তোলে। এই নিয়োগগুলি পিএলএ-কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নাকি তাকে ঠেলে দেবে আরও পিছনে, সে কথা কেবলমাত্র সময়ই বলবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.