Author : Kabir Taneja

Expert Speak Raisina Debates
Published on Nov 25, 2022 Updated 17 Days ago

নেতানিয়াহুর প্রত্যাবর্তন সম্ভবত আরেক বার ইজরায়েল ও তার বিদেশি অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন দেখাবে

ই‌জরায়েলে ক্ষমতায় ফিরলেন নেতানিয়াহু
ই‌জরায়েলে ক্ষমতায় ফিরলেন নেতানিয়াহু

ইজরায়েলে চার বছরের মধ্যে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন হল। নির্বাচন সে দেশে এখন একটি হতাশাজনক চক্রে পরিণত হয়েছে, এবং ইজরায়েলি নাগরিকদের মধ্যেও উপহাসের বিষয় হয়ে উঠেছে। আবারও দেশটি এমন একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছে যা অদূর ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। ইজরায়েলি রাজনীতির মোচড় ও বাঁকগুলি যেমন হয়ে থাকে, সেই পথেই এবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর অতিদক্ষিণ রাজনীতিবিদ ও দলগুলির জোটসহ জয় পেয়েছেন, যদিও দেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন নেতা হিসাবে ক্ষমতায় থাকা এই নেতার আগের মেয়াদের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগগুলি জিইয়ে আছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে নেতানিয়াহুর কঠিন কাজ হবে এমন একটি সরকারকে সংহত করা যার আগামী মাসগুলিতে প্রতিকূলতা থেকে বাঁচার একটি ভাল সুযোগ থাকবে।

নেতানিয়াহুর প্রত্যাবর্তন, অনেকটা তাঁর অন্যান্য মেয়াদের মতোই, একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ, যা তাঁর ঘাড়ে একটি খুব ভারী ওজন চাপিয়ে দিয়েছে। সেই ওজন হল তাঁর দক্ষিণপন্থী পৃষ্ঠপোষকদের এবং যাঁরা তাঁদের ভোট দিয়েছেন তাঁদের সন্তুষ্ট করা।

নেতানিয়াহু মূলগতভাবে এক চিরন্তন রাজনীতিক। গত কয়েক বছর ধরে যখন রাজনীতিবিদদের পর রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় এসেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন, ভোটাররা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে নাফতালি বেনেট এবং পরে ইয়ার ল্যাপিডের নেতৃত্বে জোড়াতালি সরকারগুলির কাজকর্ম দেখেছেন। নেতানিয়াহুর প্রত্যাবর্তন, অনেকটা তাঁর অন্যান্য মেয়াদের মতোই, একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ, যা তাঁর ঘাড়ে একটি খুব ভারী ওজন চাপিয়ে দিয়েছে। সেই ওজন হল তাঁর দক্ষিণপন্থী পৃষ্ঠপোষকদের এবং যাঁরা তাঁদের ভোট দিয়েছেন তাঁদের সন্তুষ্ট করা। তাঁদের মধ্যে আছেন কিংমেকার দক্ষিণপন্থী ওতজ্‌মা ইহুদিত পার্টির নেতা ইতামার বেন–গভির। এই দলটি নির্বাচনে ভাল ফল করতে সক্ষম হয়েছে। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা বেন–গভির ইজরায়েলের স্বরাষ্ট্র, পুলিশ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক অতীতে ইজরায়েলি রাজনীতির পেনডুলাম ভয়ঙ্করভাবে দোদুল্যমান থেকেছে। ২০২১ সালে আট–দলীয় জোটের কিংমেকার হিসাবে দেখা হয়েছিল ইজরায়েলি আরব দলগুলিকে, যা বেনেট ও ল্যাপিডকে যৌথ নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছিল। তারপর পেনডুলামটির সম্পূর্ণ উল্টো দিকে যেতে এক বছর সময় লেগেছে। এবার ইজরায়েলি আরবদের বৃহত্তর ভূমিকার বিরোধী অতি–দক্ষিণদের কিংমেকার করা হয়েছে। ল্যাপিড পরাজয় স্বীকার করার আগেই ইজরায়েলের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টগুলিতে বলা হয়েছিল যে সে দেশ বেন–গভিরের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে খুব একটা আগ্রহী নয়

শুধু পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সময়ে নেতানিয়াহু ফিরে এসেছেন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ তৈরি করেছে বৈশ্বিক ব্যবস্থা, ইউরোপীয় বিদেশনীতি, মার্কিন শক্তির মন্দা সংক্রান্ত বিতর্কসহ একাধিক ছিদ্র। তার পাশাপাশি মহাশক্তির একটি নতুন যুগ এসে গিয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে। আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেতানিয়াহু তাঁর অফিস ছাড়ার আগে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস তৈরি করেছিলেন। তা ছিল একটি ঐতিহাসিক চুক্তি যা ইরানের হুমকির মুখে ইজরায়েল ও আরব বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক করেছিল।

নেতানিয়াহু তাঁর অফিস ছাড়ার আগে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস তৈরি করেছিলেন। তা ছিল একটি ঐতিহাসিক চুক্তি যা ইরানের হুমকির মুখে ইজরায়েল  আরব বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক করেছিল।

সৌদি আরব আপাতত চুক্তির বাইরে থাকাই বেছে নিয়েছে কারণ তারা কাগজে–কলমে ইজরায়েলের শত্রু, যদিও কাজের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ শক্তিকে একত্র করতে এবং মার্কিন নিরাপত্তা স্থাপত্যকে আরও মজবুত করতে ইজরায়েল ও সৌদি আরব উভয়েই কাজ করেছে। এই লক্ষ্যে, ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের আগমনকে উভয় রাষ্ট্রের তরফেই একটি ধাক্কা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, কারণ বাইডেন মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করেছিলেন এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার তিন বছর পর ২০১৮ সালে ট্রাম্প তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। এই অঞ্চলে ট্রাম্পের এই সমস্ত পদক্ষেপ সৌদি এবং ইজরায়েলি উভয়েই উৎসাহের সঙ্গে সমর্থন করেছিল, এবং উভয়ই আবারও ২০২৪ সালে রিপাবলিকান হোয়াইট হাউস দেখার আশা করে।

যাই হোক, শুরুতে নেতানিয়াহুর চ্যালেঞ্জ হবে পশ্চিমের সঙ্গে একটি ‘‌গ্রহণযোগ্য’‌ সম্পর্ক বজায় রাখা। এর জন্য তাঁকে তাঁর মধ্য–দক্ষিণ পরিচয়ের সঙ্গে তাঁর অতি–দক্ষিণ নতুন সহযোগীদের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ইরানের মতো বিতর্কিত ইস্যুতে নেতানিয়াহু আগামী মাসগুলিতে বাইডেনের নীতিগুলির মধ্যে দিয়ে তাঁর নৌকাটি সহজেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সত্যটি স্বীকার করার কাছাকাছি চলে এসেছে যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে অদূর ভবিষ্যতে কোনও সময় পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। ইরানে একদিকে তো নারী–নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদ আন্দোলন এখন ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে, তার উপর আবার সে দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর তৎপরতা অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বেড়ে চলেছে। ফলে কোনও চুক্তি করার সাফল্য অর্জনের জন্য তেহরানের সঙ্গে আপস করার বিরুদ্ধে মনোভাব দৃঢ় হয়েছে। তাছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হওয়ার পরে প্যালেস্টাইন ইস্যুটি আবার জ্বলে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি নতুন সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতাগুলি অতি–দক্ষিণ ও আলট্রা–অর্থোডক্স প্রতিনিধিদের হাতে চলে যায়।

ভারতের জন্য নেতানিয়াহু যুগের রাজনৈতিক ক্যানভাস ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্কের একটি ভাল চিত্র তৈরি করলেও নয়াদিল্লির বৈশ্বিক ব্যস্ততার মূল লক্ষ্য এখন অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত করা।

তবে নেতানিয়াহুর প্রত্যাবর্তন সম্ভবত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য সুসংবাদ, যিনি এই ইজরায়েলি রাজনীতিকের সঙ্গে একটি বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। যদিও ভারত–ইজরায়েল সম্পর্কে বেনেট ও ল্যাপিড উভয়ের সময়েই দ্রুত অগ্রগতি অব্যাহত ছিল, তবে কুখ্যাত মোদী–নেতানিয়াহু বন্ধুত্ব উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন বসন্তের সূচনা করতে পারে দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে:‌ এক, নিজেদের জাতীয় স্বার্থের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, এবং দুই, ধর্মীয় ইহুদিবাদ, আলট্রা–অর্থোডক্সি ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির (‌যা প্রায়শই রাষ্ট্র গঠন ও জাতীয়তাবাদের বিস্তৃত ধারণাকে ছাপিয়ে যায়) সাযুজ্যের কারণে  রাজনৈতিক ও আদর্শগত মিল।

যাই হোক, ভারতের জন্য নেতানিয়াহু যুগের রাজনৈতিক ক্যানভাস ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্কের একটি ভাল চিত্র তৈরি করলেও নয়াদিল্লির বৈশ্বিক ব্যস্ততার মূল লক্ষ্য এখন অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত করা। নেতাদের ঘিরে নাটকীয় জনসংযোগ সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার মুকুটে পালক যুক্ত হয়নি। ২০২০ সালে শুরু হওয়া চিনের সঙ্গে গালওয়ান সংকটের পর থেকে নয়াদিল্লি তার অর্থনৈতিক গতিপথকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে। এটি এমন একটি বাস্তবতা যার সঙ্গে নেতানিয়াহুকে দ্রুত মানিয়ে নিতে হতে পারে। নিছক বারংবার বিবৃত রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরের যুগ হয়তো পিছনে ফেলে আসা সম্ভব হয়েছে। অন্তত সেরকম আশা তো করাই যায়।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.