Published on Apr 30, 2024 Updated 0 Hours ago

ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য শক্তি শুধুমাত্র ইজরায়েলের বেঁচে থাকার জন্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্যও অপরিহার্য

ইজরায়েলের কৌশলগত এবং সামরিক–প্রযুক্তিগত গুরুত্ব

ইজরায়েল কেন এত গুরুত্ব পায়, বিশেষ করে তার প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে? বিশেষ করে যখন আমরা ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনি সন্ত্রাসবাদী উপরাষ্ট্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলতি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছি, সেই সময় উত্তর খোঁজার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে ইজরায়েলের তাৎপর্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে প্রসারিত। চলতি ইজরায়েল–হামাস যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন ইজরায়েলকে যে অবিচল সমর্থন দিয়েছে, তার জন্য কৌশলগত ও সামরিক–প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মূল্যায়ন প্রয়োজন।


চলতি ইজরায়েল–হামাস যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন ইজরায়েলকে যে অবিচল সমর্থন দিয়েছে, তার জন্য কৌশলগত ও সামরিক–প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মূল্যায়ন প্রয়োজন।


ইজরায়েলের কৌশলগত গুরুত্ব

প্রথমত, ইজরায়েলিরা তাদের আরব শত্রুদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অসাধারণভাবে সফল প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে এবং ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধে। এই দুটি সফল সামরিক অভিযানই ইহুদি রাষ্ট্রের একমাত্র বড় সাফল্য ছিল না, অপহৃতদের উদ্ধারে এর হাই–প্রোফাইল মিশনগুলিও সুখ্যাত, যেমন
১৯৭৬ সালে এন্টেবে উদ্ধার অভিযান এবং অন্য বেশ কয়েকটি সফল উদ্ধার ও গোপন মিশন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর প্রতিরক্ষাহীন ইজরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামাসের নৃশংস ও ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রতিরোধে ইজরায়েলি গোয়েন্দাদের বিপর্যয়কর ব্যর্থতা এবং হামাসের বিরুদ্ধে চলতি যুদ্ধ–সহ অতীত ও বর্তমানের বাস্তব যুদ্ধে কিছু প্রাথমিক বিপর্যয় সত্ত্বেও, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের ব্যর্থতাগুলির উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার ও প্রতিকার করেছে। সাধারণত, ইজরায়েলের সামরিক শক্তিপ্রদর্শন আঞ্চলিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির জন্য তার গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের শেষার্ধে ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব–ইজরায়েল যুদ্ধে তেল আভিভের সাফল্য শুধু আঞ্চলিকভাবে একটি  শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসাবে এর খ্যাতিকে তুঙ্গে নিয়ে যায়নি, এই যুদ্ধগুলির ফলাফল এই অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাবকেও প্রতিহত করেছে। ইজরায়েলের জন্যই ওয়াশিংটনের প্রভাব আজও পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং তা ঘটছে অন্য একটি বড় শক্তি গণপ্রজাতন্ত্রী চিন (পিআরসি)–এর প্রভাব বৃদ্ধি সত্ত্বেও। অতীতের ও চলতি যুদ্ধে আইডিএফ–এর অভিযানগত প্রদর্শন শক্তিশালী হওয়ার তাৎপর্য হল আইডিএফ, যা মানবজাতির সামরিক ইতিহাসে সবচেয়ে সফল যোদ্ধাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি, ক্ষমতার আঞ্চলিক ভারসাম্যেও অবদান রাখে। শেষোক্ত বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক–প্রযুক্তিগত শক্তি হিসাবে ইজরায়েলের অর্জনের কারণে চাপা পড়ে যায়। ইজরায়েল এবং বেশ কয়েকটি পশ্চিমী দেশের মধ্যে গভীর সামরিক–প্রযুক্তিগত সমন্বয় রয়েছে, বিশেষ করে এর প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। এই সহযোগিতা আমেরিকান, পশ্চিমী এবং অ–পশ্চিমী অস্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ইজরায়েলি প্রযুক্তিগত ইনপুটগুলির আকারে আসে।



সামরিক প্রযুক্তি: ইজরায়েলের মহাশক্তি

ইজরায়েলের মতো ছোট একটি দেশের এই সাফল্য বিশ্বের প্রতিরক্ষা বাজারে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তির প্রতীক। যেহেতু ইজরায়েলের নিজস্ব বাজার তার তৈরি সমস্ত সামরিক পণ্য শোষণ করার জন্য খুব ছোট, তাই সেগুলি রপ্তানি করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। স্টকহলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিরপি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে যে,
তেল আভিভ ২০১৮–২০২২ সময়কালে বিশ্বব্যাপী রপ্তানির ২.৩ শতাংশ সরবরাহ করেছিল, এবং দেশটি বিশ্বের দশম বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিকারক। একই সময়ে, ভারত সিরপি–র শীর্ষ ২৫ সামরিক রপ্তানিকারকদের তালিকাতেও জায়গা পায়নি। তথ্যের এই অংশটি, যদিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা কিন্তু উন্নত সামরিক ব্যবস্থার প্রধান রপ্তানিকারক হিসাবে তেল আভিভের তাৎপর্যের শুধু একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র প্রকাশ করে। বিশ্বের সর্বাগ্রে থাকা এবং সবচেয়ে উন্নত সামরিক শিল্পশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বিবেচনা করা যাক — এটি তার অস্ত্র প্ল্যাটফর্মের জন্য ইজরায়েলি অস্ত্রশিল্পের তৈরি করা বেশ কয়েকটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ সাবসিস্টেমের প্রাপক। ইজরায়েলের ‘‌রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস’‌ (র‌্যাডস)–এর তৈরি ‘‌ট্রোফি’‌ নামক অ্যাক্টিভ প্রোটেকশন সিস্টেম (এপিএস) শুধু আইডিএফ–এর দেশীয়ভাবে তৈরি মেরকাভা ৪ মেন ব্যাটল ট্যাঙ্ক (এমবিটি)–কে সজ্জিত করে না, তা এখন ২০১৮ সালের ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি চুক্তির অংশ হিসাবে মার্কিন সেনাবাহিনীর এম১ আব্রাহামস–এও একীভূত হয়েছে । ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর (বিএ) চ্যালেঞ্জার ৩ এমবিটি–কেও একই ট্রোফি এপিএস দিয়ে সজ্জিত করা হচ্ছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (এমওডি)‌) সঙ্গে র‌্যাডসের ২০২১ সালের একটি চুক্তির অংশ হিসাবে। ট্রোফির কার্যক্ষমতার মধ্যে রয়েছে একটি ইন্টারসেপশন সিস্টেম, কম্পিউটারাইজড ক্ষমতা, একটি রেডার এবং চারটি রেডার অ্যান্টেনা। ট্রোফি এপিএস–এর সমান্তরালভাবে বিকশিত আরেকটি ইজরায়েলি সক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হল আয়রন ফিস্ট সিস্টেম। এটি ইজরায়েল মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএমআই) দ্বারা নির্মিত। ট্রোফি এপিএসের বিপরীতে, যা ইন্টারসেপশনের পদ্ধতি হিসাবে মেটাল পেলেট নির্গমন করে, আয়রন ফিস্ট সিস্টেম বাধার উপায় হিসাবে একটি অ্যান্টিমিসাইল প্রজেক্টাইল ব্যবহার করে। আজ, ইউএস আর্মির হালকা ও মাঝারি ওজনের সাঁজোয়া যানগুলি তিনটি মূল কারণের জন্য আয়রন ফিস্ট সিস্টেমের হালকা ওজনের ভেরিয়েন্ট দিয়ে সজ্জিত: এর হালকা ওজন, ইন্টারসেপ্টর ছোঁড়ার ক্ষেত্রে কম ধাক্কা লাগা, এবং সাশ্রয়যোগ্যতা। এই সব প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, যা অন্যান্য দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, তা একটি সীমিত নমুনা মাত্র; ইজরায়েলের কাছে আরও বেশ কিছু আছে।

 

অ্যাংলো–আমেরিকান স্থলযুদ্ধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অবদান রাখার বাইরে, আমেরিকার রকওয়েল কলিন্স ও ইজরায়েলের এলবিট সিস্টেমসের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ইজরায়েলিরা লকহিড–নির্মিত এফ–৩৫ লাইটনিং ৩ বা জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার (জেএসএফ)–এর জন্য বিমানচালকদের ব্যবহৃত হেলমেট মাউন্টেড ডিসপ্লে (এইচএমডি) আকারে প্রযুক্তিগত ইনপুটও তৈরি করেছে। ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের নিজস্ব সম্পর্কের কথাই ধরা যাক, নয়াদিল্লি ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ইজরায়েলি সামরিক সহায়তা থেকে উপকৃত হয়েছে। যদিও ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) বহর থেকে সোভিয়েত–অরিজিন মিগ–২১ বাইসন ফাইটারের অবসরের বয়স হয়ে গিয়েছিল, তাদের পরিষেবা জীবন বহু বছর ধরে দীর্ঘায়িত হয়েছিল ইজরায়েলিদের দ্বারা প্রদত্ত ব্যয়–কার্যকর আপগ্রেডের কারণে। এই ঘটনা ঘটেছে এমন এক সময়ে যখন বর্তমান সরকারসহ ভারতীয় সরকারগুলির ক্রমাগত ব্যয়সঙ্কোচ সংক্রান্ত কঠোরতার কারণে আইএএফ–এর জীবনকাল–শেষ–হওয়া বাইসনগুলিকে প্রতিস্থাপিত করতে ফাইটার জেট কেনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব ছিল না। ইজরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা থেকে তিনটি ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবা উপকৃত হয়েছে —মানবহীন এরিয়াল ভেহিকল (ইউএভি) থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রাপ্তি পর্যন্ত —এবং এটাই ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা শিল্পের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা প্রতিফলিত করে।

দীর্ঘমেয়াদে, তেল বর্জনযোগ্য হয়ে উঠবে, কারণ অন্য কোনও সম্পদ এটিকে প্রতিস্থাপন করবে বা হাইড্রোকার্বনের ব্যবহারকে অত্যল্প করে দেবে;‌ কিন্তু ইজরায়েল এবং তার বাইরের ইহুদি জনগণ অনন্তকালের জন্য অপরিহার্য থাকবে।


উপসংহার

অবশেষে, একজন সেরা সমসাময়িক সামরিক ইতিহাসবিদ মার্টিন ফন ক্রেভেল্ডের কথা ধার করে বলা যেতে পারে, ওয়াশিংটন ডিসি বা নয়াদিল্লি কেউই ‘...ইহুদিদের থেকে তেল’‌কে অগ্রাধিকার দিয়ে ইজরায়েলের থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে পারবে না। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি ও তেল দুটোই প্রয়োজন, এবং তাদের প্যালেস্তাইনের মর্যাদার সঙ্গে ইজরায়েলের নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখাও প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদে, তেল অপরিহার্য থাকবে না, কারণ অন্য কোনও সম্পদ এটিকে প্রতিস্থাপন করবে বা হাইড্রোকার্বনের ব্যবহারকে অত্যল্প করে দেবে;‌ কিন্তু ইজরায়েল এবং তার বাইরের ইহুদি জনগণ অনন্তকালের জন্য অপরিহার্য থাকবেন। সর্বোপরি, ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য শক্তি শুধুমাত্র ইজরায়েলের বেঁচে থাকার জন্য নয়, মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্যও অপরিহার্য।



কার্তিক বোমাকান্তি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.