গত ১৫ থেকে ১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১১২ মিলিয়ন মানুষ ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন এবং ১.৯ মিলিয়ন যোগ্য ভোটার বিদেশে নিজেদের ভোট দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৮৭.৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। বিরোধী প্রার্থীরা সম্মিলিত ভাবে ১২%-এরও কম ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল অনুমানমাফিকই হয়েছে। একই ভাবে, এই অনুমানগুলি বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে নির্বাচনী পরিসরের সংক্ষিপ্ত জটিলতাগুলিকে খুব কমই তুলে ধরে। উল্লেখযোগ্য ভাবে ৩৩টি মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছিল, যা বেশ বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক বর্ণালীর প্রতিনিধিত্বকেই দর্শায়। এই প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মিলিটারি-বিরোধী অবস্থানের প্রতিনিধি ছিলেন, যাঁরা উদারপন্থী কর্মসূচিসম্পন্ন মঞ্চের কথা প্রচার করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী দলগুলি ‘প্রজন্মগত পরিবর্তন’ সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা এলডিপিআর (লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব রাশিয়া) এবং সিপিআরএফ-এর (কমিউনিস্ট পার্টি) নেতাদের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে ‘রাজনৈতিক বর্ষীয়ান’দের (পলিটিক্যাল ডাইনোসর) স্থানচ্যুত করার মাধ্যমে উঠে এসেছে। তাঁদের পরিবর্তে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। তৃতীয়ত, বর্তমান নির্বাচন ইউক্রেনের সংঘাতের পটভূমিতে হচ্ছে। নির্বাচকমণ্ডলীতে শুধু নতুন অঞ্চলের বাসিন্দারাই নন, যাঁরা রাশিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁরাও অন্তর্ভুক্ত। চতুর্থত, এ বছরই প্রথম বার, যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থার ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রার্থী
চূড়ান্ত ব্যালটে মাত্র চার জন প্রার্থী ছিলেন। এই সংখ্যাটি আধুনিক রুশ ইতিহাসে ঐতিহাসিক ভাবেই সর্বনিম্ন, যা ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংখ্যাকেই প্রতিফলিত করে এবং যেটিতে দিমিত্রি মেদভেদেভ জয়ী হয়েছিলেন।
রাশিয়ান নির্বাচনের ‘প্যালেট’ - প্রার্থীদের মধ্যে ভোট বিন্যাস
![](https://www.orfonline.org/public/uploads/editor/20240324153614.jpg)
সূত্র: রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন
এলডিপিআর এবং সিপিআরএফ-এর মধ্যে ‘প্রজন্মগত পরিবর্তন’ সুবিশাল সংরক্ষণের সঙ্গেই ঘটছে। এক দিকে, নতুন নেতাদের তুলে এনে বিদ্যমান ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ১৯৯০-এর দশকের রাজনীতিবিদ জেন্নাদি জুগানভ (সিপিআরএফ) ২০১৮ সালে একজন প্রার্থী হিসাবে ব্যবসায়ী পাভেল গ্রুডিনিন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হন; এবং ২০২২ সালে ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কির মৃত্যুর পরে এখন ৫৬ বছর বয়সী লিওনিদ স্লাটস্কি এলডিপিআর-এর নেতা হয়েছেন। যাই হোক, কমিউনিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করছেন ৭৫ বছর বয়সী নিকোলাই খারিটোনভ। তাঁরা উভয়ই প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী থাকলেও তাঁদের পূর্বসূরিদের গণমাধ্যমের স্বীকৃতির ছায়ায় ঢাকা পড়েছেন। এই কারণেই তাঁরা এখনও তাঁদের দলগুলির নতুন রাজনৈতিক আখ্যান ও কর্মসূচি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে পারেনি। আর একটি নতুন মুখ হলেন ৪০ বছর বয়সী ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ, যিনি ২০২০ সালে গঠিত ‘নিউ পিপল পার্টি’র প্রতিনিধিত্ব করছেন। অনেকেই আশা করেছিলেন যে, তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রটিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
চূড়ান্ত প্রার্থীদের সীমিত সংখ্যা সত্ত্বেও নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিছু অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। প্রার্থীরা স্ব-মনোনীত নির্দল প্রার্থী হিসেবে বা রাজনৈতিক দলের যে কোনও একটি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (সিইসি) বিধি অনুসারে, নিবন্ধনের পরে তাঁদের রাজনৈতিক প্রচার শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রার্থীদের সমর্থকদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়। পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বহীন দলগুলির স্বাক্ষরের ন্যূনতম সংখ্যা ছিল এক লক্ষ এবং স্ব-মনোনীতদের জন্য তা ছিল তিন লক্ষ।
প্রার্থীরা স্ব-মনোনীত নির্দল প্রার্থী হিসেবে বা রাজনৈতিক দলের যে কোনও একটি থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
৩৩টি প্রাথমিক আবেদনের মধ্যে শুধু মাত্র ১৫টি বিধিসম্মত হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাত জনকে আবার বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ তাঁরা অন্য প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নের শর্তের কারণে অন্য চার জনকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, যাঁরা প্রার্থীর সমর্থনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে পারেননি। অবৈধ স্বাক্ষরের আধিক্যের কারণে বরিস নাদেজদিনকে বাদ দেওয়া হয়। তিনি একজন জনপ্রিয় প্রার্থী এবং নন-সিস্টেমিক বা অ-সংগঠিত বিরোধী দলের প্রধান প্রতিনিধি। সিইসি দাবি করে যে, সংগৃহীত স্বাক্ষরের মধ্যে ১৫ শতাংশের বেশিই ছিল ত্রুটিপূর্ণ, যা কিনা নির্ধারিত সীমার ৫ শতাংশেরও বেশি।
বিদেশে ভোট
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বিদেশে ভোটদানের প্রক্রিয়া, যা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে সংঘটিত হয়েছিল এবং অভিবাসন প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এটিকে আরও উস্কে দেওয়া হয়েছিল। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটকেন্দ্র আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়াতে অবস্থিত, যার সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ১২। এই অঞ্চলগুলি তুলনামূলকভাবে অল্প জনসংখ্যাসম্পন্ন হলেও সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রধানত অধিগ্রহণের সুবিন্যস্ত পদ্ধতির কারণে রুশ নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। আবখাজিয়ার সেই সংখ্যা হল ৫০ শতাংশ এবং দক্ষিণ ওসেটিয়ার ৯৫ শতাংশ।
বিদেশে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা
![](https://www.orfonline.org/public/uploads/editor/20240324153527.jpg)
সূত্র: https://www.kommersant.ru/doc/6524296
বিদেশে মোট ২৯৫টি ভোটকেন্দ্র পূর্ববর্তী নির্বাচনী চক্রের ৩৯৪টি ভোটকেন্দ্রের তুলনায় সংখ্যার হ্রাসকেই দর্শায়। এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে দূতাবাসের কর্মীদের ঘাটতি এবং নিরাপত্তা বিবেচনার বর্ধিত সীমাবদ্ধতার জন্য ঘটেছে।
কিছু দেশে ভোটিং ব্যবস্থা প্রবেশের সমস্যা আরও গুরুতর ভাবে প্রকট হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের অনুপস্থিতির কারণে জর্জিয়ায় ভোটের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এস্তোনিয়ায় দূতাবাস প্রাঙ্গনের বাইরে রুশ নির্বাচন আয়োজন করার বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছিল, যার ফলস্বরূপ ২০১৮ সালের তুলনায় সংখ্যাটি ন’টি থেকে হ্রাস পেয়ে একটি ভোটকেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে। লিথুয়ানিয়াতেও একই রকম পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, যেখানে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচটি শহর থেকে মাত্র একটি শহরে অর্থাৎ ভিলনিয়াসের দূতাবাসের আওতায় নেমে এসেছে। লাটভিয়ার রিগায় দূতাবাসের আওতায় মাত্র দু’টি ভোটকেন্দ্র পরিচালিত হয়।
নতুন অঞ্চল
ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর), লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক (এলপিআর), এমনকি জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন ওব্লাস্টে নতুন ভোটারদের সংখ্যা প্রায় ৪.৫৬ মিলিয়ন। সেখানে ভোটদান ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে শুরু হয়, বিশেষ করে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়। এলাকাগুলিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘পৌঁছনো দুঃসাধ্য’। নাগরিকদের ও সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রাথমিক ভোটের প্রয়োজন ছিল। যোগাযোগ লাইনের কাছে স্থির ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিল এবং অনেক সামরিক কর্মী অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের পরিবর্তে স্থায়ী ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে, পূর্ববর্তী কমিশনগুলির অবস্থান সর্বজনীন ভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এ কথা প্রত্যাশিত যে, প্রারম্ভিক ভোটদানের হার পূর্ববর্তী নির্বাচন চক্রের ২ লক্ষ ২০ হাজার ভোটারের অংশগ্রহণের হারকে ছাপিয়ে যাবে। ডিপিআর-এ ৩৬ শতাংশ থেকে খেরসন অঞ্চলে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত ভোটদান হয়েছে, যা এই অঞ্চলগুলির ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার কথাই তুলে ধরে।
এলাকাগুলিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘পৌঁছনো দুঃসাধ্য’। নাগরিকদের ও সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রাথমিক ভোটের প্রয়োজন ছিল।
ডিজিটাল ভোটিং
ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থার ব্যবহার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি অগ্রগামী অন্তর্ভুক্তিকেই দর্শায়, যদিও পূর্বে স্থানীয় নির্বাচনে আংশিক ভাবে তা ঘটতে দেখা গিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ৩৮ মিলিয়ন ভোটারের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ অনুমান করলেও এই নতুন সাধনীটি ব্যবহার করার ইচ্ছা প্রকাশকারী ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪.৯ মিলিয়ন। ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের আবির্ভাব ওকালতি ও সমালোচনা উভয়েরই জন্ম দিয়েছে। সরকার আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি সহজ করা এবং আর্থিক ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতার পক্ষে যুক্তি দর্শিয়েছে। যাই হোক, স্বচ্ছতা সম্পর্কে জনসাধারণের মনে সংশয় রয়ে গিয়েছে এবং সম্ভাব্য সাইবার হুমকি কর্তৃপক্ষের মধ্যে আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি করেছে।
এই ঘটনাপ্রবাহ চূড়ান্ত ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত না করলেও সেগুলি মানুষের আচরণের গতিশীলতা, সামাজিক জনসংখ্যা ও অর্জিত ভোটের অনুপাত বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনী ফলাফলগুলির প্রত্যক্ষ প্রভাবের ফলে বৈদেশিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটা উচিত নয়। তবে সেগুলি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য একটি মাপকাঠি হিসাবে কাজ করতে পারে। যেমনটা আসন্ন সপ্তাহগুলিতে বৃহত্তর নীতি আখ্যানের সম্ভাব্য প্রভাবগুলির প্রতিশ্রুতিতেই দেখা যাবে।
ইভান স্কেদ্রভ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.