Published on Sep 17, 2024 Updated 7 Days ago

ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের বারবার শুদ্ধিকরণ কমিউনিস্ট পার্টি ও পিএলএ-র মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করে, যা সামরিক বাহিনীর অন্য ইউনিটগুলিতে তদন্তের সময় আরও খারাপ হতে পারে।

পিএলএ-তে দুর্নীতির অভিযোগে শি প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বহিষ্কার করলেন

চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) সম্প্রতি ইয়ান’‌আনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) সম্মেলনের ঠিক আগে দুই প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু এবং ওয়েই ফেংহে-কে বহিষ্কার করেছে। দল লি শাংফুর বিরুদ্ধে পদোন্নতির জন্য অর্থপ্রদান এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। ওয়েই, যিনি ভারত-চিন সীমান্তে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তিনি পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-‌র রাজনৈতিক পরিবেশের ক্ষতি করে সিপিসি-‌র আস্থার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও অবাধ্যতার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। লি এবং ওয়েই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহিষ্কৃত হওয়া সবচেয়ে সিনিয়র দুই সামরিক ব্যক্তিত্ব। লি-‌কে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে তাঁর মেয়াদকে সাম্প্রতিক সময়ে সংক্ষিপ্ততম মেয়াদগুলির অন্যতম করে তুলেছে। সিনিয়র সামরিক ব্যক্তিত্বদের বাদ দেওয়ার পর নতুন নিয়োগ সেনাবাহিনীর মধ্যে পার্টিকে শক্তিশালী করার দিকে নির্দেশ করে। হি হংজুন, যিনি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁর নিয়োগ এর দৃষ্টান্ত। জেনারেল হি সিপিসি-‌র কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাজ করেন, এবং সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) রাজনৈতিক কর্ম বিভাগের নির্বাহী উপ-পরিচালক ছিলেন, যা প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর মধ্যে পার্টি-গঠন ও রাজনৈতিক শিক্ষার মতো কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত।  

সামরিক বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি এবং যুদ্ধ-‌প্রস্তুতিতে এর প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই বছরের শুরুর দিকে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার কারণে পিএলএ-র সিনিয়র ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিরক্ষা-শিল্প কমপ্লেক্সের টেকনোক্র্যাটদের চিনের আইনসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। শি পিপলস লিবারেশন আর্মি রকেট ফোর্স পুনর্গঠন করেছেন, যা দেশের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের দায়িত্বে রয়েছে, এবং ইউনিটের নেতৃত্বদানকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।


সামরিক বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি এবং যুদ্ধ-‌প্রস্তুতিতে এর প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই বছরের শুরুর দিকে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার কারণে পিএলএ-র সিনিয়র ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিরক্ষা-শিল্প কমপ্লেক্সের টেকনোক্র্যাটদের চিনের আইনসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।



পিএলএ ডেইলির একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, শি-‌র অনৈতিকতা-‌বিরোধী অভিযানের ফলে দুর্নীতিবাজ কমান্ডারদের চক্রের মধ্যে গুপ্ত দুর্নীতি উন্মোচিত হয়েছে। ইয়ান'আনে  শি-‌র ডাকা সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের রাজনৈতিক সম্মেলনে ইস্যুটি বিরাটভাবে উত্থাপিত হয়েছিল। কনক্লেভে সিএমসি শীর্ষস্থানীয়দের এবং পিএলএ কমান্ডারদের সামনে তাঁর বক্তৃতায় শি এই মূল্যায়ন করেছিলেন যে, বিশ্ব সম্মিলিতভাবে এবং দেশগুলি পৃথকভাবে জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যা এমনকি পিএলএ-‌কেও মোকাবিলা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, সামরিক বাহিনী দুর্নীতিগ্রস্ত উপাদানগুলিকে বহন করতে পারে না এবং দুর্নীতি নির্মূল করা একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। তিনি দুর্নীতিবিরোধী তদন্তকারীদের দ্বারা প্রতিরক্ষা উৎপাদনে জড়িত বিভাগগুলির বৃহত্তর যাচাইয়ের জন্য, এবং দুর্নীতির নতুন রূপের সন্ধানের জন্য পরামর্শ দেন। সামরিক তত্ত্বাবধানকারী সিএমসি-র প্রধান হিসাবে, শি নিচের তলার সামনে  সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে পার্টির শক্তি পিএলএ-এর সাংগঠনিক ঐক্য থেকে এসেছে, এবং অবশ্যই পার্টির প্রতি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের হাতে 'বন্দুক' (অর্থাৎ সামরিক বাহিনী) থাকতে হবে। সামনের দিকে তাকিয়ে পার্টির উদ্দেশ্য হল যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য পিএলএ-‌র ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, এবং সেইসঙ্গে যুদ্ধ-প্রস্তুতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতৃত্বের আরও ভাল একীকরণ করা। তিনি এই বিষয়টির উপরও জোর দিয়েছিলেন যে তাঁর লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে, যখন পিএলএ তার শতবর্ষ উদযাপন করবে, একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা।

চিনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপর প্রকাশিত একটি ভাষ্য শি-‌কে পিএলএ-র মধ্যে তাঁর পূর্বসূরিদের আমল থেকে বিদ্যমান শিথিল শৃঙ্খলার সমস্যা মোকাবিলা করার কৃতিত্ব দেয়। মাও সেতুং-‌এর ইয়ান'আন সংশোধনী অভিযানকে উল্লেখ করে নিবন্ধটি আরও কঠোর তদারকি ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল, এবং জোর দিয়ে বলেছিল যে বিপ্লবী বিজয়ের জন্য নিচের তলার শৃঙ্খলা বাধ্যতামূলক ছিল। ১৯৪০-এর ইয়ান'আন সংশোধনী অভিযানের লক্ষ্য ছিল প্রাথমিকভাবে পার্টির মতাদর্শগত অংশকে বড় করা, এবং কর্মী ও নেতারা যাতে মাও-এর লেখা অধ্যয়ন করেন তার ব্যবস্থা করা। ঐতিহাসিকেরা যুক্তি দেন যে ইয়ান'আন প্রচারণার ফলে পার্টির মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়া অংশ মাওয়ের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। হিংসাত্মক প্রচারণার ফলে প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যান, কিন্তু মাও পার্টির উপর তাঁর দখলকে আরও শক্তিশালী করে তোলেন।  


চিনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপর প্রকাশিত একটি ভাষ্য শি-‌কে পিএলএ-এর মধ্যে তাঁর পূর্বসূরিদের আমল থেকে বিদ্যমান শিথিল শৃঙ্খলার সমস্যা মোকাবিলা করার কৃতিত্ব দেয়।



চিনের অভিজাত রাজনীতিতে এই অভ্যন্তরীণ ঘটনাগুলি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন চিন এবং তার প্রতিবেশীদের মধ্যে গুরুতর উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে নির্বাচিত হওয়ার পর পিএলএ তাইওয়ানের কাছে সামরিক মহড়া শুরু করেছিল। দক্ষিণ চিন সাগরের কিছু সামুদ্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধেও সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। ভারত-চিন সীমান্তে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার জন্য পিএলএ দ্বারা বারবার প্রচেষ্টার পর প্রায় চার বছর হয়ে গেল চিন ভারতীয় সীমান্তে একটি বড় শক্তি সমবেত করে রেখেছে।

এ কথা স্পষ্ট যে চিনের অভ্যন্তরীণ আখ্যান তৈরির জন্য একটি সুনিপুণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এবং এতে একটি আধুনিক শক্তি হিসাবে পিএলএ-এর রূপান্তরে শি-‌র ভূমিকার উপর আলোকপাত করা হয়েছে এবং বিষয়টিকে তাঁর নিজস্ব উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সিএমসি ভাইস-চেয়ারপার্সন জেনারেল ঝাং ইউক্সিয়া
পিপলস ডেইলিতে একটি নিবন্ধে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ২০১২ সালে শি দায়িত্ব নেওয়ার আগে সামরিক বাহিনী বিপদের প্রেক্ষিতে দুর্বল ছিল, এবং শি সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করা এবং দুর্নীতিবাজ জেনারেলদের থেকে মুক্তি দেওয়ার কাজটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই দাবিতে একটি অন্তর্নিহিত পরামর্শ রয়েছে যে, শি-‌র পূর্বসূরিরা সশস্ত্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা আরোপ করার প্রশ্নে শিথিল ছিলেন, যার ফলে জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল হয়েছিল। স্মরণ করা যেতে পারে যে, সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে শি-‌র দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই গুও বক্সয়ং, জু কাইহো-‌র মতো সিএমসি শীর্ষ কর্তা এবং অন্যান্য সিনিয়র সামরিক ব্যক্তিত্বকে অপসারিত করা হয়েছিল।


এ কথা স্পষ্ট যে চিনের অভ্যন্তরীণ আখ্যান তৈরির জন্য একটি সুনিপুণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এবং এতে একটি আধুনিক শক্তি হিসাবে পিএলএ-এর রূপান্তরে শি-‌র ভূমিকার উপর আলোকপাত করা হয়েছে এবং বিষয়টিকে তাঁর নিজস্ব উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।



প্রতিরক্ষা সংস্থায় সিনিয়র ব্যক্তিদের পতন পরিষেবাগুলিতে ‌নিচের তলাকে কেনার প্রয়াস তুলে ধরেছে, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতির উপর প্রশ্ন চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। যেহেতু শি আগের লোকেদের পরিবর্তে যাঁদের বেছে নিয়েছেন তাঁরাও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়, তাই ওয়েই এবং লি-এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সংক্রান্ত বর্ণন যুক্তির সামনে উড়ে যায় এবং শি-‌র ব্যবস্থাপনা খারাপভাবে প্রতিফলিত করে। ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বারবার শুদ্ধিকরণ পার্টি ও পিএলএ-র একটি উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের দিকেও ইঙ্গিত করে। সামরিক বাহিনীর অন্য ইউনিটগুলিতে তদন্ত প্রসারিত করা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সিপিসি-‌র আদর্শগত ক্ষেত্রে দক্ষ, এমন সামরিক নেতাদের সিনিয়র পদে নিয়োগ করে শি হয়তো ফাটল ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।



কল্পিত মানকিকর অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র‌্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.