Published on Jun 10, 2025 Updated 0 Hours ago
চিনের বদলে কেন নিউজিল্যান্ড ভারতের সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়

২০২৫ সালের মার্চ মাসে নিউজিল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টার ক্রিস্টোফার লুক্সনের ভারত সফর ছিল ক্ষমতায় আসার পর সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর প্রথম ভারত সফর। সর্ববৃহৎ প্রতিনিধিদল (মন্ত্রী, বরিষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতা, কিউই ইন্ডিয়ান অর্থাৎ আধা-ভারতীয় ও আধা-নিউজিল্যান্ডের বিশিষ্টদের একটি দল এবং বেশ কয়েকজন সাংসদ-সহ) সঙ্গে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টারের গত ১৬ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ছদিনের এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার নিরিখে অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

রাইসিনা ডায়লগ হল ভারতের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক সম্মেলন, যা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশ্বনেতা, নীতিনির্ধারক বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক, নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার উপর জোর দেয়।

রাইসিনা ডায়লগের দশম সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লুক্সন একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য শক্তিশালী বক্তব্য পেশ করেন এবং নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি ভারত-নিউজিল্যান্ড অংশীদারিত্বের গভীরতার কথা তুলে ধরেন এবং এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় বাণিজ্য, জলবায়ু কর্মসূচি ও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় শক্তিশালী সহযোগিতার আহ্বান জানান। রাইসিনা ডায়লগ হল ভারতের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক সম্মেলন, যা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশ্ব নেতা, নীতিনির্ধারক বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক, নিরাপত্তা এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার উপর জোর দেয়।

দীর্ঘ বিলম্বিত এফটিএ

সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করা ছিল এই সফরের দুটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল। চিনের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণে নিউজিল্যান্ড বেজিং-এর বিরক্তির কারণ হতে পারে, এমন আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিল। তবে প্রাইম মিনিস্টার লুক্সন যেমন জোর দিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিহিসেবে দেশটির ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা পরিবর্তিত আঞ্চলিক শৃঙ্খলায় দেশটির অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন

২০০৯ সালে শুরু হওয়া বারবার বিলম্বের সম্মুখীন হওয়ার পর এফটিএ কৃষি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, ওষুধ পর্যটনের মতো খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার পূর্বাভাস আগামী দশকে বাণিজ্য দশগুণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে সমন্বিত হওয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাজারের প্রবেশাধিকার উন্নত করার বিষয়ে ভারতের বৃহত্তর কৌশলের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উভয় দেশই একটি মুক্ত, অবাধ এবং নিয়মভিত্তিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার কেন্দ্রীয়তা স্বীকার করে নিয়েছে। সামুদ্রিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ভারতের বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক প্রসারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোতে নিউজিল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণকেও দর্শায়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ক্রমবর্ধমানভাবে একটি বহু-মেরুকৃত শৃঙ্খলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে - যেখানে আঞ্চলিক মধ্যম শক্তিগুলি নিরাপত্তা সমীকরণকে আকার দিচ্ছে - ভারতের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সম্পৃক্ততা এমন একটি নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করে, যা কেবল মার্কিন-চিন প্রতিযোগিতার উপর নির্ভরশীল নয়। ভারতের জন্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড প্রশান্ত মহাসাগরের উন্নয়নের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার আন্তঃসংযুক্ততাকে ক্রমবর্ধমান ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করেছে। তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব বৃহত্তর আঞ্চলিক কাঠামোর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, যেটিতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড প্রশান্ত মহাসাগরের উন্নয়নের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার আন্তঃসংযুক্ততাকে ক্রমবর্ধমান ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করেছে।

ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন (সাগর) দৃষ্টিভঙ্গি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নির্ভরযোগ্য সক্ষম অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পাশাপাশি দেশটিকে একটি নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে জায়গা করে দিয়েছে। উভয় দেশই নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধির উপায় অনুসন্ধানে সম্মত হয়েছে এবং ভারতের মিলন নৌ-মহড়ায় নিউজিল্যান্ডের অংশগ্রহণের কথা স্থির হয়েছে, যা আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক নৌবাহিনীকে একত্রিত করে এবং জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তিতে ভবিষ্যতের সহযোগিতার পথ নিয়েও আলোচনার সুযোগ করে দেয়

প্যাসিফিক-এর পুনর্নবীকৃত নীতি

ওয়েলিংটনের ইন্দো-প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই) এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এ (সিডিআরআই) যোগদানের সিদ্ধান্ত তার প্যাসিফিক রিসেট নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছেআইপিওআই-এর মাধ্যমে ভারত নিউজিল্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সক্ষমতা  বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়ার ঘটনা সমুদ্রের অম্লীকরণ ছোট ইন্দো-প্যাসিফিক দ্বীপদেশগুলিকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে প্রভাবিত করে। এই দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কযুক্ত একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড এবং আইপিওআই-এর ভারত জলবায়ু অভিযোজন কৌশল, সামুদ্রিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং উপকূলীয় অবকাঠামো স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে কজোটে কাজ করতে পারে। একই ভাবে, ইন্দো-প্যাসিফিক আইইউইউ মাছ ধরার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, বিশেষ করে বিতর্কিত জলরাশিতে পরিচালিত বিদেশি নৌবহর দ্বারা। এই সমস্যাটি মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে মিলে যৌথ প্রচেষ্টায় নিউজিল্যান্ড ছোট দ্বীপদেশগুলির জন্য দক্ষ ভাবে স্থিতিশীল মৎস্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বর্ধিত টহল সমন্বয় সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে।

এই দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কযুক্ত একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড এবং আইপিওআই-এর ভারত জলবায়ু অভিযোজন কৌশল, সামুদ্রিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং উপকূলীয় অবকাঠামো স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে কজোটে কাজ করতে পারে।

নিউজিল্যান্ড কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগের (কোয়াড) অংশ না হলেও ভারতের সঙ্গে তাদের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব মানবিক সহায়তা দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর), সাইবার নিরাপত্তা এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো প্রকল্পগুলিতে কোয়াড-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলির সঙ্গে আরও বেশি করে সমন্বয়ের সুযোগ করে দেয়। সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সহযোগিতা ইন্দো-প্যাসিফিক সম্মিলিত প্রতিরোধকে শক্তিশালী করে। নয়াদিল্লি ওয়েলিংটন উভয়ই আসিয়ান এবং পিআইসি-সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত, যারা প্রধান শক্তি প্রতিযোগিতার কারণে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন। প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরাম (পিআইএফ) এবং আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম-এর (এআরএফ) মাধ্যমে নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি ভারত নিউজিল্যান্ডকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা শাসনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সুযোগ দেবে।

প্রাইম মিনিস্টার লুক্সনের সফর ভারত-নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করেছে এবং বাণিজ্য, নিরাপত্তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় গভীর সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করেছে। উভয় দেশ যখন ক্রমবর্ধমান ইন্দো-প্যাসিফিক পরিসরে দৃশ্যমান, তখন তাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব এই অঞ্চলের জন্য আরও স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্য গঠনে একটি চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রাখে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Pratnashree Basu

Pratnashree Basu

Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...

Read More +