-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
পহেলগামে নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত গত সপ্তাহে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে, যার পরিণাম অবশ্য ছিল শনিবারের যুদ্ধবিরতি। তবে পাকিস্তান তার দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকেনি, এমনকি শনিবার সন্ধ্যায়ও বিক্ষিপ্ত আক্রমণ অব্যাহত ছিল এবং তার যথাযথ জবাবও দিয়েছে ভারত। বিস্তৃত ভাবে বলতে গেলে, ভারতের তিন দিনের সামরিক অভিযান তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে। এর আগেও ভারত পাকিস্তানকে পঙ্গু করার জন্য বেসামরিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছিল। এর ফলে সৃষ্ট চাপের কারণে পাকিস্তান বিশ্ব শক্তির কাছে আবেদন করতে বাধ্য হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু উপসাগরীয় দেশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শনিবার যুদ্ধবিরতির দিকে এগোয়।
পহেলগাম হামলার পরিকল্পনা কে করেছিল?
অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের জিহাদি জেনারেল আসিম মুনিরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দেয়। এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা সম্পূর্ণ রূপে মুনিরের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল। হামলার মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি একটি বিষগর্ভ বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি হিন্দু-মুসলিম বিভাজন, দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘ঘাড়ের শিরা’ (জুগুলার ভেন) বলে অভিহিত করেছিলেন। কাশ্মীর উপত্যকার ক্রমবর্ধমান শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং ধীরে ধীরে মূলস্রোতে ফিরে আসার প্রচেষ্টা আসলে মুনির ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠছিল।
অপারেশন সিঁদুরের অধীনে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ন’টি সন্ত্রাসবাদী শিবির ধ্বংস করে দেয় এবং সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটায়।
উরি ও পুলওয়ামা হামলার পর মোদী সরকার যে ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তা বিবেচনা করে এ কথা নিশ্চিত ছিল যে, পহেলগামের জন্য পাকিস্তানকে ভারী মূল্য চোকাতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান নিজেই অনিশ্চিত ছিল যে, ভারত কখন এবং কী ভাবে প্রতিশোধ নেবে। তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও চলছিল। অপারেশন সিঁদুরের অধীনে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে ন’টি সন্ত্রাসবাদী শিবির ধ্বংস করে দেয় এবং সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটায়। সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা ও তাদের অবকাঠামো ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তানের উপর প্রচণ্ড আঘাত আনার মাধ্যমে ভারত যে প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে, তা পাকিস্তান কখনও ভুলবে না। এটি ইতিমধ্যেই যুঝতে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আরও নড়িয়ে দেবে, মুনিরের অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং সম্ভাব্য ভাবে তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেবে।
ভারতের পরিমিত দৃষ্টিভঙ্গি
নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের উপর ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত তার কৌশল পরিবর্তন করেছে। পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারের দুর্বল অবস্থা কোনও গোপন বিষয় নয় এবং এ কথাও সর্বজনবিদিত যে, ক্ষমতার আসল লাগাম সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ভারত তার পাকিস্তান কৌশল সম্পূর্ণ রূপে সংশোধন করেছে। পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, বাণিজ্য বন্ধ করা এবং বন্দরে প্রবেশাধিকার সীমিত করা। এই পদক্ষেপগুলি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, পাকিস্তানকে একমাত্র সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে, যে ভাষা পাকিস্তান বোঝে। সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই সেই কাজটি সম্পন্ন করা হয়। প্রথমে সন্ত্রাসবাদীদের শিবির ও কেন্দ্রগুলি ধ্বংস করা হয়। প্রতিশোধস্বরূপ ভারতীয় বাহিনী কেবল পাকিস্তানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই ব্যর্থ করে দেয়নি, বরং পাকিস্তানের সামরিক কেন্দ্রগুলির এমন ক্ষতি করেছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখরক্ষার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারের দুর্বল অবস্থা কোনও গোপন বিষয় নয় এবং এ কথাও সর্বজনবিদিত যে, ক্ষমতার আসল লাগাম সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে।
এই ধারাবাহিক পদক্ষেপে পাকিস্তানি সামরিক সদর দফতর ও বিমানঘাঁটির কাছে ভারতীয় হামলা প্রমাণ করেছে যে, ভারত পাকিস্তানের মাটিতেও নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে পারে। ভারতের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, তারা তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযানকে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করবে না। এর আগে নয়াদিল্লি পাকিস্তানের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন থেকে বিরত ছিল এই কারণে যে, ভারত একটি দায়িত্বশীল দেশ এবং এই ধরনের জট এড়িয়ে যাওয়াই সর্বোত্তম পন্থা। তবে মোদী সরকারের অধীনে এই পদ্ধতিটি মৌলিক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল
ভারত ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছে যে তারা যুদ্ধ চায় না, এমনকি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও তারা কেবল সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামোর উপরই হামলা করেছে। প্রাথমিকভাবে, সামরিক কেন্দ্রগুলিকে সীমার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রমাগত উস্কানির কারণে ভারতকে তার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হয়েছিল। সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান তার বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল এবং তাদের নিজস্ব প্রচারণার জন্য ভারতীয় প্রতিশোধকে কাজে লাগানোর আশা করেছিল। তবুও ভারত সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে। এর বিপরীতে পাকিস্তান কাপুরুষোচিত ভাবে সাম্বা থেকে জম্মু পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিক ও তাদের সম্পত্তিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারতের ব্যাপক চাপ অবশেষে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির জন্য বৃহৎ শক্তিগুলির কাছে আবেদন করতে বাধ্য করেছিল।
ভারত এই অভিযানের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে - এটি পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে এবং এই শক্তিশালী বার্তাই দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাকে যুদ্ধের ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
ভারতের আধিপত্য সত্ত্বেও দেশের ভেতরে কিছু মানুষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে, এ বার পাকিস্তানকে রেহাই দেওয়া উচিত ছিল না। আপাতদৃষ্টিতে এই হতাশা বোধগম্য। তবে গভীর বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি সমস্ত বৃহত্তর প্রেক্ষিত বিবেচনা করেই নেওয়া হয়। ভারত এই অভিযানের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করেছে - এটি পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে এবং এই শক্তিশালী বার্তাই দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাকে যুদ্ধের ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হবে। এই সংঘাতকে আরও প্রসারিত করা ভারতের স্বার্থের অনুকূল হবে না। বিশ্বে ভারতের ক্রমবর্ধমান মর্যাদা ও বিশ্বব্যাপী মঞ্চে ভারতে উল্লেখযোগ্য কণ্ঠস্বর মূলত তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তির কারণেই সম্ভব হয়েছে। সেই শক্তির মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতার প্রেক্ষিতে খাদের কিনারায় ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানের লক্ষ্য হল, ভারতকে এমন একটি সংঘাতে টেনে আনা যাতে বিশ্ব আবার উভয় দেশকেই সমান নজরে দেখতে শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্য রয়েছে, যা হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা। একটি অন্তহীন সামরিক সংঘাত কেবল এই অগ্রাধিকারগুলি থেকেই দেশের মনোযোগকে বিচ্যুত করবে।
মার্কিন-চিন সমীকরণ
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে মার্কিন-চিন শক্তি ভারসাম্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রচেষ্টাকে এই প্রেক্ষাপটেই বিচার করা উচিত যে, আমেরিকা ভারতকে কেবল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবেই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার হিসেবেও মনে করে। অতএব, আমেরিকা চাইবে না যে, ভারত তার শক্তি, সম্পদ ও সময় পাকিস্তানের জন্য নষ্ট করুক। ইতিমধ্যে, চিন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তান কেবল চিনা অস্ত্রই ব্যবহার করেনি, বরং চিনও প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে।
পরিশেষে, যাঁরা এই সংঘাতকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সঙ্গে কিংবা রুশ বা ইজরায়েলি প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন, তাঁদের এ কথা বুঝতে হবে যে, আজকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +