Author : Kabir Taneja

Published on Jun 26, 2025 Updated 0 Hours ago

ট্রাম্পের জন্য ইরানের সঙ্গে যে কোন বর্ধিত যুদ্ধ দূরবর্তী অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা থেকে বিরত রাখার প্রতিশ্রুতির বিপরীত হবে।

চিরাচরিত মার্কিন বোমা হামলা কেন ইরানকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করবে না

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পারমাণবিক আলোচনায় ওয়াশিংটনের দাবি পূরণ না হলে শিয়া ক্ষমতার কেন্দ্র ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভূতপূর্ব বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিল বিরক্তির। ২০১৮ সালে তিনি একতরফা ভাবে ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন, যা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। এখন তিনি তেহরানের সঙ্গে আবার একটি নতুন আলোচনার ফিকির খুঁজছেন।

এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। যুদ্ধবিমানের অতিরিক্ত স্কোয়াড্রন-সহ দুটি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। উপরন্তু, ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য বিমান অভিযান অব্যাহত থাকায় ভারত মহাসাগরে দিয়েগো গার্সিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে সম্প্রতি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান মোতায়েন করার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের অবস্থান এবং গতিশীল শক্তি উভয়ই জোরদার করেছে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানগুলিকে কেবল ট্রাম্পের দ্বারা নয়, বরং ইরায়েল, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মিশরের মতো আঞ্চলিক মিত্রদের তরফেও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ বলে মনে করা হচ্ছে। এ হেন প্রতিরোধের মাধ্যমে যেন এ কথা নিশ্চিত করা যায় যে, বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ধমনী অর্থাৎ সুয়েজ খাল যেন কোনও জঙ্গিবাদী শক্তির দখলে না চলে যায়।

কয়েক মাস ধরে, হুতিরা লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানগুলিকে কেবল ট্রাম্পের দ্বারা নয়, বরং ইরায়েল, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মিশরের মতো আঞ্চলিক মিত্রদের তরফেও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ বলে মনে করা হচ্ছে। এ হেন প্রতিরোধের মাধ্যমে যেন এ কথা নিশ্চিত করা যায় যে, বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ধমনী অর্থাৎ সুয়েজ খাল যেন কোনও জঙ্গিবাদী শক্তির দখলে না চলে যায়।

যাই হোক, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে সরাসরি আক্রমণ চালানোর ট্রাম্পের হুমকি বর্তমানে একটি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। তাঁর প্রথম মেয়াদের তুলনায় আজকের ট্রাম্প আরও দুঃসাহসী। ট্রাম্প এখন এমন একটি দল দ্বারা বেষ্টিত, যেখানে বেশির ভাগ মানুষই তাঁকে সমর্থন করে। এর পাশাপাশি সামরিক পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শ উপেক্ষা করে কেবল নিজস্ব ধারণার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ট্রাম্পের রয়েছে। সিগন্যাল সম্পর্কে তাঁর মূল উপদেষ্টাদের মধ্যে হওয়া কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পরে সম্প্রতি তাঁঘনিষ্ঠ মহলের দক্ষতার অভাব প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স পিট হেগসেথ সম্ভবত বলেছেন, হুতি কারা’… এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত ছিল না

বিমান শক্তির সীমাবদ্ধতা

ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে কোন সামরিক পদক্ষেপ কেবলমাত্র বিমান শক্তি ব্যবহার করেই করা সম্ভব। কিন্তু এটা বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ নয়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরায়েলের বিমান হামলার মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৮১ সালে অপারেশন অপেরার অংশ হিসেবে ইরায়েল বাগদাদের কাছে ইরাকের পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হানে। একই ভাবে, ২০০৭ সালে অপারেশন অর্চার্ডের অংশ হিসেবে ইরায়েল সিরিয়ার মরুভূমিতে একটি সন্দেহজনক পারমাণবিক কেন্দ্রে আঘাত হানে।

আশ্চর্যের বিষয় হল, এই অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ইরায়েলই কেবল পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তেহরান ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে অপারেশন স্কর্চ সোর্ড শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করে দেওয়া।

ইরানের পারমাণবিক বিবর্তন

এই সবই ছিল একক কেন্দ্রের উপর চালানো হামলা, যা ওই রাষ্ট্রের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল ভিত্তি ছিল। আজকের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিতান্তই ভিন্ন, বিস্তৃত এবং যুক্তিসঙ্গত ভাবে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইরানি রাষ্ট্র, বিশেষ করে শক্তিশালী ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর, তার পারমাণবিক অবকাঠামো রক্ষা করার জন্য অনেকটাই সময় পেয়েছে। নাতাঞ্জে দেশটির পারমাণবিক কেন্দ্রটি মাটির প্রায় ২০০ ফুট নীচে একটি পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বলে জানা যায়।

এই অবকাঠামোটির ক্ষতি করার জন্য বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে। প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করে এই ধরনের কেন্দ্রগুলিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার বিষয়টি ইতিমধ্যেই অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মনে করা হচ্ছেযদিও জিবিইউ-৫৭ বোমাটিকে এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে সেটি মাটির ২০০ ফুট গভীরে প্রবেশ করতে পারে। তবে, এই ধরনের আক্রমণের সম্ভাব্যতা সমগ্র কর্মসূচি ব্যাহত করার দৃষ্টিকোণ থেকে হামলার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা এখনও অস্পষ্ট।

প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করে এই ধরনের কেন্দ্রগুলিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার বিষয়টি ইতিমধ্যেই অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মনে করা হচ্ছেযদিও জিবিইউ-৫৭ বোমাটিকে এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে সেটি মাটির ২০০ ফুট গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অগ্রগতির পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশ জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর অর্থ হল, একক হামলাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না এবং ইরানকে প্রতিহত করার জন্য ধারাবাহিক বিমান অভিযানের প্রয়োজন হবে। হাস্যকর ভাবে, ইরান যে নকশা গোপন পদ্ধতিতে তার পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করছে, তা খানিকটা রায়েলের মতোই১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও ইজরায়েল তার পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করেছিল (যা আজও গোপনে রয়েছে)।

প্রত্যাশিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া 

সামরিক অভিযানের ধারাবাহিকতার দাবিই দুর্বলতার মূল কারণ। নিরস্ত্রীকরণ তো দূরের কথা, বিমান হামলা পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যাহত করার জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে এর অর্থ হল, ট্রাম্পের দৃষ্টিকোণ থেকে স্থলপথে প্রচলিত অভিযানের প্রয়োজন হবেকারণ ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা আমেরিকাকে আর কোনও চিরকালীন যুদ্ধ-এ জড়িত না করার প্রতিশ্রুতির উপর ব্যাপক ভাবে জোর দিয়েছিলেন।

এই ধরনের যে কোন পরিকল্পনা এই অঞ্চলে মার্কিন অংশীদারদের কাছ থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে। বিশেষ করে সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরশাহি উভয়ই মার্কিন অস্ত্রশক্তির আয়োজন করে এবং সম্ভবত এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি কেবল একটি আঞ্চলিক নয়, বরং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক সাফল্যের আখ্যানের কথাই বলেতবে যদি কোনও বিপথগামী ক্ষেপণাস্ত্র দুবাইয়ের মাটিতে পড়ে, তা হলে সমগ্র আমিরাশাহির সাফল্যের আখ্যান ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং রাষ্ট্রটির ব্যাপক উত্থান ব্যাহত হবে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যাহত করার জন্য ইরায়েলের প্রচেষ্টা সম্ভবত মার্কিনদের ‘শক অ্যান্ড অ’ অর্থাৎ ‘ধাক্কা ও বিস্ময়’ সংক্রান্ত শক্তির প্রচলিত ব্যবহারঅর্থাৎ বৃহৎ আকারের বোমা হামলার কৌশল ব্যবহারের চেয়ে এই ধারণা অনেক বেশি স্পষ্ট গভীর আঘাত হানতে পারে। রায়েল বছরের পর বছর ধরে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন-এর (জেসিপিওএ) বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গোপন অভিযান চালিয়েছে। কারণ তারা এটির তীব্র বিরোধিতা করেছিল

রায়েলি গোয়েন্দারা নথি ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য গোপনে পারমাণবিক কেন্দ্র লুপাট থেকে শুরু করে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালায়।

রায়েলি গোয়েন্দারা নথি ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য গোপনে পারমাণবিক কেন্দ্র লুপাট থেকে শুরু করে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালায়। এই সমস্ত কর্মসূচি চিত্তাকর্ষক ছিল এবং ইরানের সামরিক ক্ষেত্র ও রাজনীতিতে ইরায়েলের অনুপ্রবেশ দর্শিয়ে থাকলেও পারমাণবিক কর্মসূচির উপর ইজরায়েলের প্রভাব ছিল নিতান্তই ন্যূনতম। এবং সর্বশেষ গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা আর মাস বা বছরের সময়সীমায় আটকে নেই, বরং চাইলে সপ্তাহের মধ্যেই সে কাজ সম্পন্ন হতে পারে।

সমঝোতার পরিসর

সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই-এর কাছে পাঠানো ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চিঠি থেকে বোঝা যায় যে, ওয়াশিংটন ডিসিতে সমঝোতার পরিসর রয়েছে। অন্য দিকে, ইরানে - বিশেষ করে রাষ্ট্রের কট্টরপন্থী ঘাঁটির ভিত্তিতে - জেসিপিওএ-র মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং তা ব্যর্থ হয়েছিল।

এটি ট্রাম্প আয়াতুল্লাহ উভয়কেই তাঁদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী পরিসর পরিচালনার ক্ষেত্রে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। খামেনেইয়ের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চালানোর আরও একটি প্রচেষ্টা তাঁর প্রভাবের বলয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের জন্য ইরানের সঙ্গে যে কোন বর্ধিত যুদ্ধ দূরবর্তী অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা থেকে বিরত রাখার প্রতিশ্রুতির বিপরীত হবে।

উভয় পক্ষের সাম্প্রতিক বার্তা বিনিময় দর্শায় যে, এই বাস্তবতা ওয়াশিংটন তেহরানে কিছুটা হলেও গৃহীত হতে পারে।

আজকের পরিস্থিতি বিবেচনায় ইরানের উপর দ্রুত মার্কিন সামরিক বিজয়ের ধারণা - যার মধ্যে তার পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসও অন্তর্ভুক্ত - আসলে অবাস্তব। বিমান অভিযান ক্ষতির কারণ হলেও কর্মসূচির ব্যর্থতা কেবল দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক হতে পারে না; বরং বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান আর কটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।

ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই আলোচনাই এখন সেরা বিকল্প। উভয় পক্ষের সাম্প্রতিক বার্তা বিনিময় দর্শায় যে, এই বাস্তবতা ওয়াশিংটন তেহরানে কিছুটা হলেও গৃহীত হতে পারে। কিন্তু আজকের বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলার যুগে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই যে, সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত পথটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইন্ডিয়া টুডে-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.