-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, এফএটিএফ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা সংস্থার পরোয়া না করে ভারতকে এ বার সন্ত্রাসবিরোধী চিন্তাভাবনাকে সমূলে সশক্ত করতে হবে।
পহেলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের বর্বর সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনাটি জম্মু ও কাশ্মীরে পূর্ববর্তী হামলার কৌশলে এক পরিবর্তনকেই দর্শায়। ২০১৬ সালে পাঞ্জাব রাজ্যের পাঠানকোট এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা… উভয় ক্ষেত্রেই সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। এ বার ২০০০ সালের পর প্রথম বারের মতো নাগরিকদের এ হেন নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ধরন একটি কঠোর অনুশীলন। বছরের পর বছর ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হওয়ার নেপথ্যে ছিল ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির নিয়মিত ভাবে এই ধরনের একাধিক পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ার ক্ষমতা এবং সেই অভিযানগুলি স্বভাবতই খবরের শিরোনামে উঠে আসে না। তবে পহেলগামের মতো ফলাফলের নেপথ্যে থাকা এ হেন ত্রুটিগুলির প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শগত সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সন্ত্রাসবাদ কোনও নিয়ম বা প্রবিধান মেনে কাজ করেন না। ভারত-পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান যুক্তিসঙ্গত ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত রিয়েল এস্টেট হওয়া সত্ত্বেও, সন্ত্রাসবাদ দমনে আধাসামরিক বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে সামনের সারিতে ব্যবহারের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পুনরায় খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
পহেলগামের মতো ফলাফলের নেপথ্যে থাকা এ হেন ত্রুটিগুলির প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শগত সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সন্ত্রাসবাদ কোনও নিয়ম বা প্রবিধান মেনে কাজ করেন না।
বিশ্বব্যাপী, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে। ৯/১১-পরবর্তী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ যুগের অংশ হিসেবে নির্মিত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের বিন্দুগুলি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান ও সামরিক শক্তির সমন্বয়ে পরিচালিত এই বেশির ভাগ সাধনী ও প্রক্রিয়া এ বার ওয়াশিংটনের স্ব-অভিষিক্ত বিশ্ব পুলিশবাহিনী হিসাবে নিজস্ব ভূমিকা থেকে সরে আসার দরুন প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপের ফলাফল হিসাবে আফগানিস্তানে তালিবান এবং সিরিয়ায় প্রাক্তন আল কায়েদা নেতা আহমেদ আল শারা'র মতো জঙ্গিরা প্যারা-স্টেটগুলির একটি নতুন যুগের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। সিরিয়া ও আফগানিস্তানের ঊর্ধ্বে উঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় মধ্যম পথ ও সমান্তরাল বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য হামাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনাও চালিয়েছে।
উপরোক্ত আপসগুলি নয়াদিল্লি আগামিদিনে কী ভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার পথে হাঁটবে, তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য এই ধরনের ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করে জনমত ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও - এমনকি গণতন্ত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ - স্বল্পমেয়াদি লাভের লক্ষ্যে গৃহীত নীতিগুলি উত্তেজনা বৃদ্ধির সময়ে স্থিতিশীল সমাধান আনতে পারে না। ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলা… এই ধরনের দু’টি উত্তেজনাকর পদক্ষেপ সত্ত্বেও পহেলগাম হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) একটি শাখা - যা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামেও পরিচিত – অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে ছোট পরিসরে কাজ করছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিদ্যমান ছিল। ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে ২০২১ সালে প্রায় ভবিষ্যদ্বাণীর মতোই টিআরএফকে ‘সন্ত্রাস পুনরুজ্জীবনকারী গোষ্ঠী’ (টেরর রিভাইভাল ফ্রন্ট) হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। বিগত বছরগুলিতে জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত ও কম তীব্রতার সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-সহ বিভিন্ন অ-প্রথাগত গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদী প্রতিশব্দগুলির অনেকগুলিই উপযোগী ছিল, যা এলইটি ও পাকিস্তান-সমর্থিত আর একটি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর (জেইএম) মতো অপ্রচলিত গোষ্ঠী দ্বারা সমর্থিত ছিল, যাতে তাদের প্রবর্তক, কার্যক্রমের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা যায় এবং দোষ অস্বীকার করার কাজটি সহজ হয়। পাকিস্তান যে দ্রুত পহেলগাম হামলা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল তা এই বিষয়টিরই প্রমাণ দেয়।
বিগত বছরগুলিতে জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত ও কম তীব্রতার সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-সহ বিভিন্ন অ-প্রথাগত গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছে।
টিআরএফ-এর মতোই এর সহযোগী গোষ্ঠী পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্টও (পিএএফএফ) নিজেদের উপস্থিতি জাহির করেছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির অনলাইন প্রচারণা প্রকাশ করেছে এবং এমনকি আফগানিস্তান থেকে সংগ্রহ করা পশ্চিম দ্বারা তৈরি অস্ত্রের প্রদর্শন করেছে। কয়েক মাস আগে তোলা পহেলগাম সন্ত্রাসবাদীদের একটি পুরনো ছবিতে এমন অস্ত্র দেখানো হয়েছে, যা ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাবুল থেকে তাদের চূড়ান্ত বাহিনী প্রত্যাহারের আগে সাধারণত সহজলভ্য ছিল না। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত এম৪ এবং এম১৬ রাইফেলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্প্রতি, রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অর্ধ মিলিয়ন অস্ত্র ফেলে গিয়েছিল, পরে সেই অস্ত্র তালিবানের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সেই অস্ত্রই হয় হারিয়ে গেছে, বিক্রি হয়েছে বা পাচার করা হয়েছে।
টিআরএফ এবং পিএএফএফ উভয়ই তাদের পরিচিতির নেপথ্যে আরও জাতীয়তাবাদী আদর্শগত প্রচেষ্টাকে দর্শিয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে কোন আলোকে দেখা হয়, তার উপর এর বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, ইসলাম, পাকিস্তান বা অনুরূপ ভাবে সম্পর্কিত কোনও মতাদর্শের সঙ্গে সরাসরি গোষ্ঠীগুলিকে তুলনা করার মতো শব্দ বা ভাবনা ব্যবহার না করার বিষয়টি আসলে এটিকে আদর্শগত চরমপন্থার বদলে স্থানীয় ‘প্রতিরোধ’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত করে তোলে। যদিও এই চরমপন্থাই নিয়োগ ও অভিযানের প্রাথমিক উৎস। নকশার দিক থেকে দেখলে, এটি পশ্চিম এশিয়ায় প্রচলিত কিছু গোষ্ঠী যেমন হামাস, এমনকি হিজবুল্লাহ ও হুতিদের গঠনের অনুরূপ হবে, যারা ইরান সমর্থিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসাবে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে।
তা সত্ত্বেও, এই লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন, নিয়োগ মূলত আদর্শ ও ধর্মতত্ত্বকেন্দ্রিকই। এই প্রক্সিগুলির আর একটি দিক হল একটি রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিতর্কে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। পিএএফএফ-এ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী শব্দটির ব্যবহারও এমনই একটি উদাহরণ, যেখানে সূত্রটি আদর্শের প্রতি হান্টিংটনীয় প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়, যা সভ্যতাগুলির মধ্যকার সংঘর্ষের ধারণাকে কেন্দ্র করে তৈরি। মজার বিষয় হল, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জেইএম-এর মতো গোষ্ঠীগুলির জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আগে আইএসআইএস-এর মতো অন্যান্য গোষ্ঠী এড়িয়ে গিয়েছে, যারা পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমস্যার কারণ হিসাবে মনে করেছিল। কারণ তাদের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে আসে বাস্তব জমিতে লড়াই এবং পরে আসে ইসলাম।
ইসলাম, পাকিস্তান বা অনুরূপ ভাবে সম্পর্কিত কোনও মতাদর্শের সঙ্গে সরাসরি গোষ্ঠীগুলিকে তুলনা করার মতো শব্দ বা ভাবনা ব্যবহার না করার বিষয়টি আসলে এটিকে আদর্শগত চরমপন্থার বদলে স্থানীয় ‘প্রতিরোধ’-এর সম্পর্কিত করে তোলে। যদিও এই চরমপন্থাই নিয়োগ ও অভিযানের প্রাথমিক উৎস।
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, এফএটিএফ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা সংস্থার পরোয়া না করে ভারতকে এ বার সন্ত্রাসবিরোধী চিন্তাভাবনাকে সমূলে সশক্ত করতে হবে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম সারির গোয়েন্দা সংস্থাগুলির আরও সশক্তকরণ প্রয়োজন। নিরাপত্তা সংস্থাটি প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর স্বাভাবিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করতে পারে, যেখানে প্রয়োজনে লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +