-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকা যে সব যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তার অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্টের জন্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে একটি নতুন বড় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি নাটকীয় পরিবর্তন। সম্প্রতি ফোরডো, নাতানজ এবং ইসফাহান-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলার মাধ্যমে এটি এখন স্পষ্টতই একটি আঞ্চলিক সংঘাতের অংশ হয়ে উঠেছে। এক পর্যায়ে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, তিনি এই সংঘাত শেষ করতে সক্ষম হবেন। হামলা চালানোর আগে ইরানকে দু’সপ্তাহ সময় দেওয়ার পর ট্রাম্প দু’দিনের মধ্যে ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
হোয়াইট হাউসে তাঁর ভাষণে ট্রাম্প বলেন যে, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি ‘সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইরান যদি শান্তির পথে না হাঁটে, তবে আমেরিকা আরও কয়েকটি জায়গায় আক্রমণ করতে পারে। অন্য দিকে, ইরান মার্কিন হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে নিন্দা জানিয়েছে, ‘চিরস্থায়ী পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা ‘নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সমস্ত বিকল্প’ সংরক্ষণ করছে।
তার পর ট্রাম্প কাতারে মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে ইরানের সীমিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিশোধ ব্যবহার করে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, ‘বিশ্বকে অভিনন্দন, শান্তির সময় এসেছে!’ তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইজরায়েলের ডিফেন্স মিনিস্টার ইরানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেন এবং প্রতিক্রিয়ায় ‘শক্তিশালী হামলা’ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, সংঘাত ধীরে ধীরে কমে যাবে না কি আরও নির্ণায়ক পর্যায়ে প্রবেশ করবে। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে আপাতত এতটাই এগোনো সম্ভব।
এই ধরনের প্রথম অভিযানভিত্তিক কার্যকলাপে মার্কিন বাহিনী ইরানের গভীরে সমাহিত পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জন্য ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বোমা ব্যবহার করেছে, যা ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামে পরিচিত। মার্কিন অভিযান কতটা সফল হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ইরানিরা দাবি করেছে যে তারা ইতিমধ্যেই সমস্ত পারমাণবিক উপাদান কেন্দ্রগুলি থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
আমেরিকাও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৭০ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক শক্তি প্রদর্শনের পর আমেরিকা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আপাতত তাদের তরফে সামরিক পদক্ষেপ শেষ হয়ে গিয়েছে এবং ইরানে শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোর লক্ষ্যে এমনটা করা হয়নি।
এটি বাস্তবেই সুযোগের এক জানালা প্রদান করে। যদি সুনির্দিষ্ট পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি সত্যিই কার্যকর না থাকে, তা হলে ইজরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার তার প্রাথমিক যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের কথা উল্লেখ করে উত্তেজনা হ্রাসের পথে হাঁটতে পারেন। আমেরিকাও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৭০ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক শক্তি প্রদর্শনের পর আমেরিকা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আপাতত তাদের তরফে সামরিক পদক্ষেপ শেষ হয়ে গিয়েছে এবং ইরানে শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোর লক্ষ্যে এমনটা করা হয়নি।
তবে এ সব কিছু ইরান সরকারের পক্ষে মুখ রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। ইরানের ফরেন মিনিস্টার আব্বাস আরাঘচি স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন হামলার পর ‘কূটনীতির জন্য কতটা পরিসর উন্মুক্ত রয়েছে’, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, আমেরিকা ‘পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আক্রমণ করে ব্যাপক বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আত্মরক্ষার জন্য বৈধ অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’
সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই যুদ্ধে প্রবেশ করলে আমেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি গর্জে উঠে বলেন, ‘আমেরিকানদের জানা উচিত যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।’ এবং ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ইরানের প্রধান মিত্র ইয়েমেনের হুতিরা হুমকি দেয় যে, আমেরিকা যদি যুদ্ধে ইজরায়েলের পক্ষে যোগ দেয়, তা হলে তারা লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে যাওয়া মার্কিন জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। ইরানের পার্লামেন্ট ইতিমধ্যেই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। যদিও এর কার্যকারিতা তেহরানের লাভ-লোকসানের পাশাপাশি এর বিস্তৃত প্রভাবের উপর নির্ভর করবে।
খামেনেইয়ের রাজনৈতিক বৈধতা নির্ভর করে ‘মহান শয়তান’ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতার উপর। আমেরিকা সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর উপর হামলা না করলেও এই আক্রমণগুলি খামেনেইয়ের কর্তৃত্বের জন্য একটি স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ, যেগুলির প্রত্যুত্তর দেওয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
ট্রাম্পের জন্যও এটি একটি সন্ধিক্ষণ। যদিও তিনি মনে করছেন যে, ইরানের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়ার জন্য ইজরায়েল এবং আমেরিকার যৌথ প্রচেষ্টা ইরানকে দুর্বল ভাবে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করবে। চাপের মুখে ইরানের প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্য থেকেছে। তাই চাপের মুখে পড়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য হওয়ার বিষয়টি ইরানি প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করবে। ট্রাম্প সম্ভবত এই বিষয়ে হতাশ হবেন। এবং যদি তেহরান তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে, তা হলে ইরানের উপর চাপ আরও বাড়ানর জন্য আবার আক্রমণ না করার বিষয়টি ট্রাম্পের কাছে রাজনৈতিক ভাবে কঠিন হয়ে পড়বে। ইজরায়েলকেও নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমীকরণ সামলাতে হবে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতির চিত্রনাট্য মেনে না চলার জন্য ইরান এবং ইজরায়েল উভয়ের উপরই বিরক্ত। ইজরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তিনি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সতর্কীকরণ জারি করেন: ‘ইজরায়েল। বোমাগুলো ফেলো না। যদি তুমি এমনটা করো, তা হলে তা একটি বড় লঙ্ঘন হবে। তোমার পাইলটদের এখনই দেশে ফিরিয়ে আনো!’
ইজরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যেমনটা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার সিদ্ধান্ত ‘ইতিহাস বদলে দেবে।’ এমন একজন, যিনি নিজের মর্জি মতো কাজ করতে পেরেছেন, সেই ট্রাম্প সম্পর্কে নেতানিয়াহুর এই মূল্যায়ন প্রায় ঠিক বললেই চলে, ট্রাম্প হয়তো তাঁর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাঁকবদল ঘটিয়েছেন। কিন্তু এই ইতিহাসের চূড়ান্ত অধ্যায়টি লেখা এখনও বাকি রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +