-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন মৌলিক ভাবে একটি সংশোধনবাদী রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে এবং অর্থনৈতিক শক্তি তার বৈদেশিক নীতিকে পরিচালনা করছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন, যা আধুনিক মার্কিন রাষ্ট্রপতিত্বের দীর্ঘতম অধিবেশন। এটি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র ছ’সপ্তাহ পূর্তিতে অনুষ্ঠিত হলেও তাঁর ভাষণটি দৃঢ় ভাবে নীতিগত রূপরেখার একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিক নির্দেশ করে - বেল্টওয়ে আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরে ও বাইরের বৈদেশিক নীতিতে তীব্র পরিবর্তন প্রকাশ পেয়েছে, যা বিশ্বের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ককে নাড়া দেয়। আজকের মার্কিন রাজনীতিতে যে ভাঙন দেখা যাচ্ছে তা মার্কিন কংগ্রেসে তখনই প্রকাশ পায়, যখন বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে বা ট্রাম্পের ভাষণের মূল বিষয়গুলিতে সম্মত হতে অস্বীকৃত হন। সম্ভবত সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তটি ছিল যখন টেক্সাসের প্রতিনিধি আল গ্রিন ট্রাম্পকে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন যে, মেডিকেড-এর কাটছাট করার কোনও অধিকার তাঁর নেই।
সীমান্ত সংক্রান্ত প্রসঙ্গের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, যেখানে প্রেসিডেন্ট তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ সীমান্তে জরুরি অবস্থার উপর জোর দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প শতাধিক কার্যনির্বাহী আদেশ এবং ৪০০ কার্যনির্বাহী পদক্ষেপকে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে প্রশাসনকে রূপান্তরিত করার পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেন, যা ‘ড্রেনিং দ্য সোয়্যাম্প’ বা ট্রাম্পের দল কর্তৃক ব্যবহৃত জনপ্রিয় অভিব্যক্তিকে দর্শায়। এই অভিব্যক্তি প্রশাসনের দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাঁর বক্তৃতার একটি বড় অংশে অভ্যন্তরীণ নীতির উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সংক্রান্ত প্রসঙ্গের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, যেখানে প্রেসিডেন্ট তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ সীমান্তে জরুরি অবস্থার উপর জোর দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এপ্রিল মাসে দক্ষিণ সীমান্ত থেকে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
‘ড্রেন দ্য সোয়্যাম্প’ কৌশলের মধ্যে আমলাতন্ত্র হ্রাস করা, রেকর্ড সংখ্যক কর্মীকে ছাঁটাই করা, সরকারের কর্মীসংখ্যা হ্রাস করা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, জ্বালানি খরচ হ্রাস করা ও সরকারি ব্যয় কমানোও অন্তর্ভুক্ত। ডিওজিই অর্থাৎ ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি এই প্রচেষ্টার নেতৃত্বে রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ডিওজিই-র কার্যপদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প এ হেন পদক্ষেপের সাফল্যগুলির কথা তুলে ধরেছেন এবং এই বিভাগটির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্যের আর একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হল ‘গ্রিন নিউ স্ক্যাম’-এর অবসান ঘটানো, যা গত প্রশাসনের পরিবেশগত বিধিনিষেধ ও দূষণহীন জ্বালানি নীতিমালার অবসান সংক্রান্ত পদক্ষেপ। ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের দূষণহীন জ্বালানি সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করেছেন, সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্র উপকূলীয় জ্বালানি খনন পুনরায় শুরু করার জন্য কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেট জ্বালানি রফতানিকারক হওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারের উপর পূর্বে গৃহীত আদেশটিও বাতিল করেছেন।
ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করেছেন। কারণ এতে আমেরিকার ‘ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার’ খরচ হচ্ছিল। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন ন্যূনতম সতর্ক থাকলেও তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যন্তরীণ ভাবে সরকারের ব্যয় হ্রাস করা এবং দেশগুলিকে বর্তমান প্রশাসনের পছন্দগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য করার জন্য ‘স্ল্যাশ-অ্যান্ড-বার্ন’ শৈলীর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের দূষণহীন জ্বালানি সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করেছেন, সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্র উপকূলীয় জ্বালানি খনন পুনরায় শুরু করার জন্য কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেট জ্বালানি রফতানিকারক হওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারের উপর পূর্বে গৃহীত আদেশটিও বাতিল করেছেন।
কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘চার বছর বা আট বছরে বেশির ভাগ প্রশাসন যা অর্জন করে, আমরা মাত্র ৪৩ দিনে তার চেয়ে আরও বেশি অর্জন করেছি — এবং আমরা সবেমাত্র আমাদের কাজ শুরু করছি।‘ দুটি কারণে ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনে এক অভূতপূর্ব তাগিদ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমত, আগামী বছরের মিড-টার্ম নির্বাচনের আগে নীতিগত পরিবর্তনের কারণে আমেরিকাকে একটি নতুন পথে এগিয়ে যেতে দেখতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁর পরেও দীর্ঘস্থায়ী একটি উত্তরাধিকার রেখে যেতে হলে তাঁকে অন্যদেরকে নিজের আদলে তৈরি করতে হতে পারে। বর্তমানে তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করলেও তা আদৌ টিকে থাকবে কি না এবং ট্রাম্পের পরে রিপাবলিকান নেতৃত্বের উত্তরাধিকার কে বহন করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
বাহ্যিক ভাবে ট্রাম্পের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি হল অনন্য একতরফাবাদ, সম্প্রসারণবাদের শামিল এক স্পষ্ট নিয়তি প্রদর্শনের ধারণা এবং একটি অপ্রমাণিত বিশ্বাস যে, সমস্ত দেশ ওয়াশিংটনের নীতিগত পছন্দগুলির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। নিজের দেশে, কানাডা এবং মেক্সিকো উভয়ের উপর ২৫% শুল্ক পুনর্বহালে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত, যা পরে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে; মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর রাখা ও আলাস্কায় ডেনালির নাম বদলে মাউন্ট ম্যাককিনলে রাখার জন্য ট্রাম্পের জোর, কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাষ্ট্র হিসেবে সমন্বিত করার হুমকি এবং পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড ফিরিয়ে নেওয়ার ক্রমাগত হুমকি আসলে এমন একটি বিশ্বক্রমকেই দর্শায়, যা দ্রুত এক বিশৃঙ্খল একতরফাবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি ছাড়া প্রাথমিক সুবিধাটি হল অর্থনৈতিক।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক ট্রাম্পের এই ধাপ্পাবাজিকে খারিজ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্পের এ হেন পদক্ষেপ নিয়তি প্রদর্শনের এক নতুন রূপ। হংকংয়ের সিকে হাচিসন পরিচালিত পানামা খালের ২২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বন্দর কিনে নেওয়ার জন্য মার্কিন সংস্থা ব্ল্যাকরকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ট্রাম্প জয়লাভ করেছেন। ‘কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাষ্ট্র হতে পারে’… ট্রাম্প এই বক্তব্য জোর দিয়ে পেশ করেছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সীমান্ত চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বর্তমান জল চুক্তির প্রতিও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
‘কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাষ্ট্র হতে পারে’… ট্রাম্প এই বক্তব্য জোর দিয়ে পেশ করেছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, তিনি ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সীমান্ত চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহারের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত হয়তো এমন কিছু সিদ্ধান্ত, যার প্রভাব এখনও পূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এটি আমেরিকাকে এমন একটি দেশ হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে, যা কেবল তার নিজস্ব স্বার্থের জন্যই বিবেচিত হচ্ছে। এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবধান বাড়ছে, যা ঐক্যবদ্ধ পশ্চিমের ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে।
ইউক্রেনের জন্য সমস্ত সহায়তা বন্ধ করে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ছিল একটি নতুন মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির চূড়ান্ত রূপ, যেখানে অর্থনৈতিক সুবিধাই প্রাথমিক চালিকাশক্তি এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার সময় মিত্র, অংশীদার এবং বন্ধু দেশগুলিকে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য লেনদেনমূলক ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ট্রাম্পের অধীনে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই মূল সংশোধনবাদী রাষ্ট্র এবং বিশ্ব জুড়ে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, চিন ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিচ্ছে, ‘বৃহৎ শক্তিগুলির কোনও মতেই দুর্বলদের উপর নির্যাতন করা উচিত নয়’।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +