Author : Ayjaz Wani

Published on Oct 31, 2025 Updated 0 Hours ago

টিআরএফ-‌কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিতকরণ ভারত-মার্কিন সন্ত্রাস-বিরোধী সম্পর্ক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, তবে স্থায়ী প্রভাব পাকিস্তানের গভীর রাষ্ট্র এবং প্রক্সিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের উপর নির্ভর করে।

টিআরএফ-এর চিহ্নিতকরণ: কাশ্মীরের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে

১৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১৯ এবং নির্বাহী আদেশ ১৩২২৪ অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দপ্তর রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-‌কে যথাক্রমে 'বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন' (এফটিও) এবং 'বিশেষভাবে চিহ্নিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদী' (এসডিজিটি) হিসেবে চিহ্নিত করে  টিআরএফপাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর--তৈয়বা (এলইটি) দ্বারা সমর্থিত একটি প্রক্সি সন্ত্রাসী সংগঠন২০২৫ সালের এপ্রিলে নৃশংস পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য দায়ী ছিল। এই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন, যাঁদের তাঁদের ধর্মের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে একজন কাশ্মীরি মুসলিমও ছিলেন যিনি তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন যে, সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তটি পহেলগাম হামলার প্রেক্ষিতেযা ২০০৮ সালে লস্কর--তৈয়বার মুম্বই হামলার পর থেকে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত হয়সন্ত্রাসবাদ দমন এবং হতাহতদের ন্যায়বিচারের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নিষ্ঠাকে তুলে ধরে।

নয়াদিল্লি মার্কিন সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি সময়োপযোগী প্রচেষ্টা হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে, এবং এটিকে ‘‌ভারত-মার্কিন সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতার দৃঢ় স্বীকৃতি’‌ হিসেবে দেখেছে। এফটিও এবং এসডিজিটি- অধীনে সংস্থাগুলির চিহ্নিতকরণ এদের আর্থিক সহায়তা সীমিত করা, অনুদান রোধ করা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির একটি কার্যকর উপায় হিসেবে দেখা হয়। এটি মার্কিন উদ্বেগ সম্পর্কে দেশগুলিকে সতর্ক করে সন্ত্রাসবাদ ত্যাগ করার জন্য চাপের একটি রূপ হিসেবে কাজ করে এবং মার্কিন নাগরিক এবং সংস্থাগুলিকে মনোনীত সংস্থাগুলিকে কোনও সহায়তা না দেওয়ার জন্য সতর্ক করে।


এফটিও এবং এসডিজিটি- অধীনে সংস্থাগুলির চিহ্নিতকরণ এদের আর্থিক সহায়তা সীমিত করা, অনুদান রোধ করা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির একটি কার্যকর উপায় হিসেবে দেখা হয়।



এইচিহ্নিতকরণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের জন্য একটি কূটনৈতিক জয়। এর ফলে এখন জম্মু কাশ্মীরে (জেঅ্যান্ডকে) টিআরএফ-এর জন্য নতুন বাধা তৈরি হবেবিশেষ করে অস্ত্র অর্জনের ক্ষেত্রেকারণ এটি আর আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং বা আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে তহবিল স্থানান্তর করতে পারবে না। এই পদক্ষেপ অন্য দেশগুলিকেও দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে তাদের তহবিল চ্যানেলগুলি যাচাই করতে এবং ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টিআরএফ-সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বাড়াতে প্ররোচিত করবে। তবে, টিআরএফঅনেকটা পিপল অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (পিএএফএফ) এবং কাশ্মীর টাইগার্সের মতোইন্টার-‌সার্ভিসেস ইনট্যালিজেন্স সংস্থা (আইএসআই) এবং পাকিস্তানি ডিপ স্টেট দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত, যারা জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ, সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটিকে সমর্থন করে।

জম্মু কাশ্মীরে টিআরএফ এবং পিএএফএফ-‌এর উত্থান

২০১৯ সালে মোদী সরকার কর্তৃক ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিলের পর, জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে ধর্মনিরপেক্ষ করার জন্য এবং একটি স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য টিআরএফ গঠন করা হয়েছিল। তারা হরি সিং হাই স্ট্রিটে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শ্রীনগরের মধ্যাঞ্চলে তাদের প্রথম সন্ত্রাসবাদী হামলা শুরু করে, যার ফলে আটজন বেসামরিক লোক আহত হন। হামলার পরপরই, টিআরএফ তাদের দায় স্বীকার করে এবং তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলে যে, "কাশ্মীরের স্থানীয় অধিবাসী প্রতিরোধের সূচনা হয়েছে দখলদার ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করার জন্য... ভবিষ্যতেও এই ধরনের আক্রমণ চলবে"

টিআরএফ মূলত লস্কর--তৈয়বা কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে আত্মঘাতী হামলা থেকে স্থানীয় এবং -স্থানীয়দের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা এবং অতর্কিত হামলা চালায়। জৈশ--মহম্মদের (জেইএম)-এর সঙ্গে সংযুক্ত একই ধরনের প্রক্সি ছায়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিযেমন পিএএফএফ কাশ্মীর টাইগার্স২০২০- দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারত-বিরোধী প্রচারণামূলক ভিডিও প্রকাশ করে জম্মু কাশ্মীরের অরক্ষিত জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। পিএএফএফ মূলত পির পাঞ্জালের দক্ষিণে রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকায় এবং জম্মু প্রদেশে পরিচালিত হয়, অন্যদিকে টিআরএফ কাশ্মীর উপত্যকায় সক্রিয় রয়েছে।


সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তান ২০০৮ থেকে ২০১০ এবং ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় তালিকাভুক্ত ছিল।



২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-‌এর অধীনে তদন্তের সময় পাকিস্তানি আইএসআই ডিপ স্টেট বাধ্য হয়েছিল টিআরএফ, পিএএফএফ এবং কাশ্মীর টাইগার্সের মতো নতুন সন্ত্রাসী সংগঠনের উত্থানকে সহজতর করতে, যারা এলইটি জেইএম-এর মতো মূল সংগঠনের শাখা। সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তান ২০০৮ থেকে ২০১০ এবং ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় তালিকাভুক্ত ছিল ২০১৮-২০২২ সময়কালে, ইসলামাবাদকে বিশ্বব্যাপী চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন এবং জেইএম এলইটি-এর সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে ৩৪টি কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ৩২টি সম্পন্ন করা সত্ত্বেও, পাকিস্তান ধূসর তালিকায় থেকে যায় এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। অর্থ পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অবশিষ্ট সমস্ত পদক্ষেপ পূরণ  করার পরে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যক্তিদের একটি ডেটাবেস স্থাপনের পরেই শেষ পর্যন্ত এটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তারপর থেকে, ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, পাকিস্তান রাষ্ট্র-প্রশ্রয়পুষ্ট সন্ত্রাসবাদকে ধর্মনিরপেক্ষ করা এবং লস্কর--তৈয়বা জেইএম-এর নাম পরিবর্তন করে তার স্থানীয় শিকড়কে প্রচার করার চেষ্টা করেছে। এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকাভুক্তির পর ঐতিহ্যবাহী সন্ত্রাসী তহবিলের উৎস শুকিয়ে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝার কারণে জাতীয় অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ার সাথে সাথে পাকিস্তানি ডিপ স্টেট জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের জন্য মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

জম্মু কাশ্মীরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ

স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে খুব কম বা কোনও সাহায্য না পাওয়ার কারণেস্পষ্টতই ২০২৪ সালে মাত্র সাতজন স্থানীয় ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদে যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মাত্র একজনটিআরএফ পিএএফএফ-এর মতো গোষ্ঠীর সক্রিয় সন্ত্রাসীদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। নিরাপত্তা সংস্থাগুলির অনুমান, জম্মু কাশ্মীরে প্রায় ১২৫ থেকে ১৩০ জন সন্ত্রাসী রয়েছে, যাদের মধ্যে ১১৫ থেকে ১২০ জন পাকিস্তানি নাগরিক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শুধু এই সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণই দেয় না, বরং তাদের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র, যেমন এম৪ কার্বাইন, নাইট ভিশন গগলস, ইরিডিয়াম স্যাটেলাইট ফোন এবং ওয়াই-ফাই-সক্ষম থার্মাল ইমেজিং ডিভাইস দিয়ে সজ্জিত করে। সন্ত্রাসীরা উচ্চস্তরের এনক্রিপ্ট করা চিনা টেলিকম সরঞ্জাম ব্যবহার করেযা মূলত পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং নিরাপদ বার্তা প্ল্যাটফর্ম। চিনা কোম্পানিগুলি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য এই বিশেষ এনক্রিপ্ট করা টেলিকম সরঞ্জামগুলিকে একচেটিয়াভাবে কাস্টমাইজ করে।


সন্ত্রাসীরা উচ্চস্তরের এনক্রিপ্ট করা চিনা টেলিকম সরঞ্জামও ব্যবহার করেযা মূলত পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং নিরাপদ বার্তা প্ল্যাটফর্ম।


পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে সমর্থন করেছে তাদের কণ্ঠস্বরের জন্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে এবং টিআরএফ-এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রশংসা করে। ২৮ মে ২০২৫ তারিখে পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিমন্ত্রী মালিক রশিদ আহমেদ খান এবং পঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার মুহাম্মদ আহমেদ খানকে লস্কর--তৈয়বার সদস্য সাইফুল্লাহ কাসুরি, আমির হামজা এবং লস্কর--তৈয়বার প্রধান হাফিজ সইদের ছেলে তালহা সইদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। মন্ত্রীরা ভারতের বিরুদ্ধে তাদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে মহিমান্বিত করেছিলেন। এমনকি তাঁরা পহেলগাম হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটির বিরুদ্ধে ভারতের আক্রমণ 'অপারেশন সিন্দুর'-এর সময় নিহত সন্ত্রাসীদের সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন পহেলগাম হামলার পর এর মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল্লাহ কাসুরি গর্ব করে বলেছিলেন যে তিনি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

ভারতকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতামূলক সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইসলামাবাদ এবং তার সামরিক প্রতিষ্ঠান টিআরএফ এবং পিএএফএফ-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে জম্মু কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে। মার্কিন বিদেশ দপ্তর কর্তৃক টিআরএফ-কে এফটিও হিসেবে চিহ্নিত করা একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি, যা ভারত-মার্কিন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বৃহত্তর সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে। তা সত্ত্বেও, ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার জন্য পাকিস্তানি ডিপ স্টেট এবং তার সামরিক প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য মিত্র দেশগুলির কাছ থেকে দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে কি না তা এখনও দেখার বিষয়।



আইজাজ ওয়ানি (পিএইচডি) অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.