সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র (ইউকে) সফ্ট পাওয়ার সূচকে ধারাবাহিক ভাবে উপরের দিকে থেকেছে। ২০২০ সাল থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কূটনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ব্রিটেন জি২০ দেশগুলির মধ্যে যুবসম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে আকর্ষক দেশ। এর ঠিক পরপরই রয়েছে কানাডা এবং ইতালির মতো দেশগুলি এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের থেকে সেই দেশগুলির পার্থক্য মাত্র কয়েক শতাংশ। ইউকে কনসালটেন্সি ব্র্যান্ড ফিন্যান্সের বার্ষিক গ্লোবাল সফট পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪-এ কূটনীতির ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে। জোসেফ নাই দ্বারা উদ্ভাবিত ‘সফট পাওয়ার’ শব্দবন্ধের অর্থ হল ‘জোর প্রয়োগের পরিবর্তে আকর্ষণ ও অনুনয়ের মাধ্যমে একটি দেশের উদ্দেশ্য অর্জন করার ক্ষমতা’।
তবুও ২০২১ সালের সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টিগ্রেটেড রিভিউ কৌশলে দেশটির কূটনৈতিক ক্ষমতার প্রসারের প্রচারে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি। পরিশোধিত সংস্করণ আইআর রিফ্রেশ-এ – ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের মতো সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে যেটি প্রকাশিত হয়েছিল - আবার কূটনৈতিক শক্তির বিষয়ে গুটিকয়েক বিভাগ রাখা হয়েছে। আরও বেশি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ১০০ পৃষ্ঠার নথিতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের বদলে শুধুমাত্র অস্পষ্ট বার্তাই দেওয়া হয়েছে। যেমন সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ‘তার বৃহত্তর বিদেশনীতি পদ্ধতিতে কূটনৈতিক শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও বেশি উদ্যোগ নেবে।’ দ্য গার্ডিয়ান দাবি করেছে যে, ১৪ বছরের রক্ষণশীল শাসনের অধীনে ব্রিটেনের কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে এবং বছরের পর বছর দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদেশে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে। অতি সম্প্রতি প্রাইম মিনিস্টার ক্যের স্টারমারের নেতৃত্বে ব্রিটেনের অতি-দক্ষিণপন্থী এবং জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যে হওয়া ব্যাপক উত্তেজনা ও দাঙ্গার ঘটনা আরও এক বার বহুসংস্কৃতির ব্রিটেনের ধারণাকে জোরদার ধাক্কা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি কারণের ফলে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে, যেমনটা নীচে বর্ণনা করা হল।
দ্য গার্ডিয়ান দাবি করেছে যে, ১৪ বছরের রক্ষণশীল শাসনের অধীনে ব্রিটেনের কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে এবং বছরের পর বছর দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদেশে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে।
ব্রেক্সিটের প্রভাব
কূটনৈতিক শক্তি শুধুমাত্র একটি দেশের সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর ক্ষমতার উপরই নির্ভর করে না, বরং তা দেশটির উদারতার ধারণাকেও দর্শায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রেরণামূলক গন্তব্য হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি দেশের ক্ষমতার মূল উপাদান হল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিপূর্ণতা।
২০১৬ সালের গণভোটের পরে ব্রেক্সিট এই ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে এবং এই ধারণার দিকে চালিত করে যে, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন এবং কম সমন্বয়মূলক একটি শক্তি হয়ে উঠেছে এবং একই সঙ্গে এই ধারণা একটি পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠার বিষয়ে দেশটির আবেদনকে খর্ব করে। ব্রিটিশ কূটনৈতিক শক্তি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলির মধ্যে শক্তিশালী হলেও ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ব্রেক্সিটের পরে ইউরোপীয় দেশগুলিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ব্রেক্সিট পরিবর্তিত নিয়ন্ত্রক নিয়মের পরিবর্তন হয়েছে, যা শ্রম ও মূলধনের বিনিময়কে আরও কঠিন করে তোলে এবং এর ফলে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রভাব দর্শানোর ক্ষমতাও প্রভাবিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ব্রিটেন বনাম অভ্যন্তরীণ বাগাড়ম্বর
ব্রেক্সিটের ফলে হওয়া ক্ষতির প্রভাব প্রশমনের জন্য টোরিদের দ্বারা প্রচারিত ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ আখ্যান সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ বাগাড়ম্বর এবং নীতিগুলি প্রায়শই পরস্পরবিরোধী থেকেছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি সে দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসন-বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। ব্রিটেনের বৈদেশিক সহায়তা বাজেটে ঘাটতি আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটির মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। ২০১৯ সালে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক সাহায্যের জন্য ১৫.১ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছিল, যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। যদিও ২০২২ সালে এই পরিমাণ কিছুটা বেড়ে ১২.৮ বিলিয়ন ইউরো হয়েছে। উপরন্তু, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের (স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড) সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ সংস্কৃতির ভাবমূর্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে দেশটির ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শক্তিকে আরও খর্ব করেছে।
ব্রেক্সিটের ফলে হওয়া ক্ষতির প্রভাব প্রশমনের জন্য টোরিদের দ্বারা প্রচারিত ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ আখ্যান সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ বাগাড়ম্বর এবং নীতিগুলি প্রায়শই পরস্পরবিরোধী থেকেছে।
অন্য দিকে, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলি তাদের বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক শক্তির প্রভাব বিস্তার করছে। ভারত কৌশলগত ভাবে যোগের মতো তার সাংস্কৃতিক অনুশীলনগুলিকে ব্যবহার করে বিদেশে ভারতীয় প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করেছে। ২০২০ সালে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার জন্য তার জিডিপির ২.৭৫ শতাংশ ব্যয় করেছে। তবে এই খরচের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য, প্রতিরক্ষা, কূটনীতি থেকে শুরু করে বিদেশি সহায়তার মতো একাধিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এ অনুমান করা হয়েছে যে, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চিন প্রতি বছর কূটনৈতিক শক্তির জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে। এমনকি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় সমকক্ষ অর্থাৎ ফ্রান্সও কূটনৈতিক শক্তির প্রচারের জন্য সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ ব্যয় করে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে একটি টিকা উদ্ভাবন করা সত্ত্বেও দরিদ্র দেশগুলিতে বণ্টন না করে টিকা ‘মজুত’ করার ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত তার বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। সর্বোপরি, জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ভারতের মতো উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির ফলে ব্রিটিশ-সহ পশ্চিমী প্রভাব কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং মানুষজনকে তাদের নিজস্ব শিকড়ে ফিরতে উৎসাহিত করেছে। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র তাই এখনও পর্যন্ত এই ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার কথা বিবেচনা করে নিজের কূটনৈতিক শক্তির দৃষ্টিভঙ্গি মানিয়ে নেওয়ার কৌশল গ্রহণ করেনি।
বাজেটে একগুচ্ছ কাটছাঁট
সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাংস্কৃতিক শাখা ব্রিটিশ কাউন্সিলের বাজেট কাটছাঁট স্বরূপ ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী তার ২০টি কার্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এরাসমাসের মতো সহযোগী কর্মসূচিগুলি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি সুস্পষ্ট করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিদেশনীতি অগ্রাধিকার, যেমন বহুপাক্ষিক ব্যয়ের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ব্যয়ের অংশ হ্রাস করা আসলে সম্পৃক্ততা তো খর্বই করেছে, এর পাশাপাশি বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির তহবিলের পরিমাণও হ্রাস করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বিশ্বব্যাঙ্কের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) অনুযায়ী, ২০২০-২৩ থেকে ২০২২-২৫ সালের মধ্যে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ৫৪% হ্রাস পাবে। সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান চিরাচরিত সংবাদ মাধ্যমের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং ইউকে প্রেসও এর ব্যতিক্রম নয়। ঐতিহ্যগত ভাবে ব্রিটেনের কূটনৈতিক শক্তির একটি প্রধান উত্স বিবিসি-র মতো আউটলেটগুলির তহবিলে কাটছাঁট হয়েছে এবং তাদের নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাত সংক্রান্ত নিরীক্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন অসুবিধেয় পড়েছে। নিজেদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক তীক্ষ্ণতা বজায় রাখা, শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিশ্বব্যাপী পছন্দ ও অনুশীলনকে প্রভাবিত করার জন্য আর্থিক শক্তি বরাবরই সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান চালিকাশক্তি। পদ্ধতিগত ভাবে বাজেট কাটছাঁট এবং প্রত্যাহার এই প্রভাব বজায় রাখার নিরিখে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান চিরাচরিত সংবাদ মাধ্যমের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং ইউকে প্রেসও এর ব্যতিক্রম নয়।
ইউসিএল প্রফেসর আর্থার পিটারসন দাবি করেন, ‘উচ্চ শিক্ষা মধ্যযুগ থেকেই কূটনৈতিক শক্তির একটি প্রধান উৎস।’ সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই এ কথা সর্বতো ভাবে প্রযোজ্য, যে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য এবং শিক্ষার্থীরা ব্রিটিশ শিক্ষা, জীবন ও মূল্যবোধের অভিজ্ঞতা তাঁদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ব্রিটিশ কূটনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। কিন্তু অভিবাসন প্রবাহ রোধ করার লক্ষ্যে বন্ধুত্বহীন নীতির ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি এবং উত্সবগুলি ব্রিটিশ কূটনৈতিক শক্তির মূল উত্স হিসাবে কাজ করেছে। তবে কোভিড-১৯ অতিমারি পরবর্তী সময়ে অনন্য অনুষ্ঠানগুলি তাদের আন্তর্জাতিক প্রসার বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, অতিমারির পরে
বসবাসের ক্রমবর্ধমান খরচ ও ব্রেক্সিটের ফলে উদ্ভূত সমস্যার দরুন প্রতি ছ’টি ইউকে সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যে একটি করে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ব্রিটেনের কূটনৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার
ইউক্রেন এবং গাজার যুদ্ধের মতো সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলি চিরাচরিত সামরিক শক্তির অনিবার্যতা ও প্রয়োজনীয়তার উপর পুনরায় আলোকপাত করেছে। তবুও একটি ক্রমবর্ধমান জটিল বহুমেরুকৃত ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ ও নতুন শক্তির উত্থানের দরুন ক্ষমতার উপকরণও অগণিত।
অন্তত গত এক দশক ধরে ব্রিটেন স্থবির অর্থনীতির সম্মুখীন হয়েছে। অনুমান করা হয় যে, ২০২৩ সালে দেশটির জিডিপি-র মাত্র ০.১% বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, ভারত ২০২২ সালে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে গিয়েছে। উদীয়মান আন্তর্জাতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী আসন উদীয়মান শক্তি দ্বারা নিয়মিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য শীর্ষ বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিক শক্তি – যা সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত শক্তি - ব্যবহারের নিরিখে আরও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সাধনী হয়ে উঠেছে। এই অপরিহার্যতাকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০২০ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ব্রিটিশ ফরেন পলিসি গ্রুপ (বিএফপিজি) দ্বারা যৌথ ভাবে পরিচালিত একটি সফ্ট পাওয়ার রিসার্চ গ্রুপ তৈরি করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল ‘সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শক্তির সশক্তিকরণ, দেশটির আন্তর্জাতিক প্রভাবকে উন্নত করা এবং নিজস্ব মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব ও প্রচার।’
ইউক্রেনের প্রতি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সামরিক ও আর্থিক সহায়তা – যা ১২ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি - ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে হৃত আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
আগামী দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধাবিভক্ত সম্পর্ককে জোড়া লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের প্রতি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সামরিক ও আর্থিক সহায়তা – যা ১২ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি - ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে হৃত আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। প্রাইম মিনিস্টার ক্যের স্টারমারের নেতৃত্বে গৃহীত আরও কূটনৈতিক উদ্যোগ ইতিমধ্যে ফলপ্রসূ হচ্ছে। তাঁর মেয়াদের মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই স্টারমার ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইপিসি) অংশ হিসাবে ৪৫ জন ইউরোপীয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানান।
ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড লামি গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে ভারতই ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ। ইউএনএসসি-র মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানে আরও সমতামূলক ভিত্তির পক্ষাবলম্বন করে গ্লোবাল সাউথের আস্থা অর্জন এবং বহুপাক্ষিক সংস্কারের প্রতি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা আর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ভারতের মতো দেশের সঙ্গে গতিশীলতা ও অভিবাসন অংশীদারিত্ব বাস্তবায়িত হচ্ছে যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি অভিবাসনের পথ মসৃণ করা যায় এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাগত আবেদনকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়।
অবশেষে, সামাজিক গণমাধ্যম এবং ডিজিটাল মঞ্চগুলি কূটনীতির নতুন ক্ষেত্র হিসাবে বিকশিত হয়েছে। ইউক্রেন ও ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময় কূটনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক আখ্যান গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে তাত্পর্যপূর্ণ বৃদ্ধি লক্ষ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ব্রিটিশ কাউন্সিল ও নির্মাতা এবং প্রভাবশালীদের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শক্তিকে বৃদ্ধি করাই কৌশলগত কাঠামোর অংশ হতে পারে। এটির প্রসার তরুণ প্রজন্মের উপরেও মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা সম্ভাব্য ভাবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের বৈদেশিক নীতি বিনিয়োগকে লাভজনক করে তুলতে পারে।
শায়রী মলহোত্র ওআরএফ-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ইউরোপের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
আরন পাইলট ওআরএফ-এর রিসার্চ ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.