-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ক্রমবিকশিত কৌশল প্রতিরোধ, উত্তেজনা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির জটিলতার মাঝে সূক্ষ্ম ভারসাম্যকেই তুলে ধরে।
২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রত্যক্ষ প্রতিশোধ হিসেবে - যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন - ভারত বালাকোটের পরবর্তী সময় সর্ববৃহৎ আন্তঃসীমান্ত হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) ন’টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে হামলা চালানো হয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত ২৫ মিনিটের দ্রুত ও সমন্বিত অভিযানে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম), লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে সম্পর্কিত ৮০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করা হয়। হামলার পর ভারত এই পদক্ষেপের অনুত্তেজক (নন-এস্কেলেটরি) প্রকৃতির উপর জোর দেয় এবং এ কথা স্পষ্ট করে দেয় যে, পাকিস্তান যদি উত্তেজনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে ভারত দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত। উত্তেজনার পারদ কত দূর পর্যন্ত উঠবে, তা এখন নির্ভর করছে পাকিস্তানের উপর।
একের পর এক সঙ্কট প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবারও ভারতীয় নেতৃত্ব এক কৌশলগত দুঃস্বপ্নের সম্মুখীন হতে বাধ্য হয়েছে: কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের অব্যাহত সমর্থনের প্রতি ভারতের কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত? এবং পাকিস্তানের প্রক্সি যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভারত কী ভাবেই বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে?
অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত ২৫ মিনিটের দ্রুত ও সমন্বিত অভিযানে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম), লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে সম্পর্কিত ৮০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করা হয়।
প্রতিপক্ষের লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকেশের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় সর্বোত্তম সময়েও প্রতিরোধের বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। অপ্রতিসম ক্ষমতা থাকলেও একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রতিপক্ষ শক্তি প্রয়োগের পথও বেছে নিতে পারে। প্রক্সি উপায়ে হোক বা প্রচলিত যুদ্ধের মাধ্যমে, পারমাণবিক অস্ত্র-সহ হোক বা না হোক, পাকিস্তানের সংশোধনবাদী লক্ষ্য, আদর্শগত মানসিকতা, উচ্চ-ঝুঁকি সহনশীলতা এবং তার সামরিক বাহিনীর প্রভাবশালী ভূমিকা সমস্যা প্রতিরোধ করার বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তোলে। পাকিস্তান একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্র নয়, দেশটি সর্বক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের পরিণতি সম্পর্কে অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো অবগতও নয়।
দ্বিতীয়ত, প্রতিরোধ প্রমাণ করা সহজাত ভাবেই কঠিন। কারণ এটি আগ্রাসী পদক্ষেপের উপস্থিতি নয়, বরং অভাবের উপর নির্ভর করে। ফলস্বরূপ, মাঝে মাঝে ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়ে। পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার প্ররোচনা বোধগম্য হলেও, নয়াদিল্লিকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, অতীতের তুলনায় এই ধরনের ব্যর্থতার হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ এখন মূলত কাশ্মীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যেখানে বড় ধরনের হামলা বিক্ষিপ্ত ভাবেই ঘটে থাকে। অঞ্চলটি আগের চেয়ে অনেক বেশি করে ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক নিন্দা স্থানীয় জনমানসের আবেগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে।
তৃতীয়ত, প্রক্সি যুদ্ধ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও কঠিন করে তোলে। কারণ সম্ভাব্য অস্বীকারের ধারা দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে দেয় এবং লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের কাজটিকেও দুর্বল করে তোলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ধরনের অপরাধের ইতিহাস বিবেচনা করলে, পাকিস্তানকে সন্দেহ করার বিষয়টি নেহাতই অমূলক বা অযৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে এমন এক বিন্যাস প্রতিফলিত হয়েছে, যাকে উপেক্ষা করা যায় না। তবুও ভারতের সবচেয়ে বড় কৌশলগত সাফল্যগুলির অন্যতম হল বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক জিহাদের সঙ্গে পাকিস্তানের অশুভ আঁতাতের আখ্যানকে প্রকাশ্যে আনা। তবে মার্কিন অনিশ্চয়তা ও চিনের উত্থানের মাঝে এই আখ্যানটিকে টিকিয়ে রাখা কঠিন কাজ হবে। মার্কিন নেতৃত্ব এবং ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব পাকিস্তানকে একঘরে করা ও তার উপর চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এই মুহূর্তে তেমনটা পুনরায় করা বেশ কঠিন।
ভারতের সবচেয়ে বড় কৌশলগত সাফল্যগুলির অন্যতম হল বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক জিহাদের সঙ্গে পাকিস্তানের অশুভ আঁতাতের আখ্যানকে প্রকাশ্যে আনা।
পরিশেষে, প্রতিরোধ ব্যয়বহুল এবং যে কোনও সামরিক পদক্ষেপকে অবশ্যই ক্ষতির বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত সংঘাত বৃদ্ধির ঝুঁকিগুলির মূল্যায়ন করতে হবে। ভারতের পূর্ণ অধিকার রয়েছে যে, সে পাকিস্তানকে নিজের কৃতকর্মের মূল্য চোকাতে বাধ্য করতে পারে এবং পাকিস্তানের দৃঢ় সংকল্পের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারতকে আরও বেশি ঝুঁকি সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে শাস্তি দেওয়া সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার চাইতে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে কৌশলগত ভাবে প্রতিপক্ষেরও সর্বদা একটি ভূমিকা থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে সহজে বশ করা সম্ভব নয় এবং প্রতিটি সঙ্কট-প্রতিক্রিয়া চক্রই ভবিষ্যতের উত্তেজনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ধারাবাহিক ভাবে ভারতীয় নেতারা এই দ্বিধাদ্বন্দ্বেরই সম্মুখীন হয়েছেন, যার কোনও সহজ সমাধান পাওয়া যায়নি। ১৯৯০-র দশকে ভারত কৌশলগত সংযমের পথ বেছে নিয়েছিল এবং নীরবে মূল্য চোকাতে বাধ্য হয়েছিল। উপমহাদেশের প্রকাশ্য পারমাণবিকীকরণ চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও গভীর করে তুলেছিল। ফলে ভারত অনেক বেশি সতর্ক হয়েছে এবং পাকিস্তান আরও বেশি করে উৎসাহিত হয়েছে। সেই সময় অপারেশন পরাক্রমের মতো বৃহৎ আকারের প্রচলিত সামরিক প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা করা হলেও এবং সৈন্য মোতায়েন করা হলেও সেই পদক্ষেপগুলি কখনওই বাস্তবায়িত হয়নি। সন্ত্রাসবাদ বিশ্বব্যাপী হুমকি হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের হাত ধরে ভারত পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে একঘরে করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলা ছিল ভারতের মূল ভূখণ্ডে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হওয়া শেষ বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা।
পারমাণবিক অস্ত্রের ধুয়ো তুলে ভারতীয় কাশ্মীরে হিংসা ছড়ানোর কাজে তার ক্ষমতা ও প্রতিশ্রুতির নিরিখে পাকিস্তান প্রাসঙ্গিক। এমনটা করার লক্ষ্য হল ভারতকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা এবং কাশ্মীর বিরোধের আন্তর্জাতিকীকরণ করা। এই হুমকি বা শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টিকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য যা প্রয়োজন, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কথা অনুযায়ী তা হল, ‘শুধুমাত্র প্রতিযোগিতায় নামাই নয়, বরং একই সময়ে দরকারে প্রতিযোগিতার খোলনলচে বদলে দেওয়া জরুরি।’ ভারতকে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়েছিল এবং কৌশলগত সংযমের পরিবর্তে পরিকল্পিত উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে হয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ভারত ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তারা আর কোনও মতেই সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করবে না এবং যথাযোগ্য জবাব দেবে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৯ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) জুড়ে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিশেষ বাহিনীর সাহায্যে হামলা চালানোর মাধ্যমে ভারত পরিকল্পিত আগ্রাসনের পথে হাঁটতে শুরু করে। এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলে একটি বড় পরিবর্তনকেই দর্শায়। এই গোপন, অগভীর অনুপ্রবেশ পাকিস্তানকে একটি অফ র্যাম্প প্রদান করেছিল এবং এই অভিযান অস্বীকার করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সামরিক পদক্ষেপ জনসাধারণের আবেগকে জাগিয়ে তুললেও রাষ্ট্রকে তার মূল্য চোকাতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগেও ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। মোদী এই আবেগকে আরও উস্কে দিয়েছেন এবং এই নজির স্থাপন করেছেন যে, প্রতিটি প্রত্যাঘাতই তীব্রতর হবে।
ভারতকে ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয়েছিল এবং কৌশলগত সংযমের পরিবর্তে পরিকল্পিত উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে হয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ভারত ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তারা আর কোনও মতেই সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করবে না এবং যথাযোগ্য জবাব দেবে।
২০১৯ সালে আধা-সামরিক বাহিনীর কনভয়ে বোমা হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অবিসংবাদিত ভূখণ্ডে এটিই ছিল প্রথম বিমান হামলা। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বলপ্রয়োগ কখনওই একতরফা হয় না। ভারতের প্রকাশ্য পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তান একটি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে বিমান হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়। ফলস্বরূপ, ভারত একটি যুদ্ধবিমান হারায় এবং পাইলটকে আটক করা হয়। তীব্র মার্কিন ব্যাকচ্যানেল কূটনীতির মাধ্যমে সঙ্কটটির তীব্রতা হ্রাস পায়, যার ফলে পাইলট নিরাপদে ফিরে আসেন এবং উভয় পক্ষই জয়ের দাবি করে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্গঠন করেছেন। প্রথমত, কেবল পাকিস্তানের ঝুঁকিচালিত কৌশল গ্রহণ করার পরিবর্তে ভারত এখন সক্রিয় ভাবে উত্তেজনার মাধ্যমে ঝুঁকিকে কাজে লাগায়। যাই হোক, প্রতিরোধের প্রতিটি ব্যর্থতা ভারতকে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে বাধ্য করে। দ্বিতীয়ত, মোদী ভারতের রাজনৈতিক শ্রেণিকে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার ফলে পাকিস্তানি উস্কানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক ভাবে মূল্য চোকাতে হতে পারে। গণতন্ত্রে এই ধরনের মূল্য সংকল্পের ইঙ্গিত দিলেও প্রতিশ্রুতির ফাঁদও তৈরি করে, যা নেতাদেরকে অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের দিকে চালিত করে। ভারতের চ্যালেঞ্জ হল প্রতিরোধ গড়ে তোলা, অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা এড়ানো এবং পাকিস্তানকে মূল্য চোকাতে বাধ্য করা এমন এক সময়ে, যখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পটভূমি ২০১৯ সালের তুলনায় - যখন ভারত বালাকোট বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিল - উল্লেখযোগ্য রকমের আলাদা।
মোদী এই প্রতিশ্রুতি মূল্য চোকানোর চাপ বহন করতে পারবেন, যা আবার অনেকের মতেই, তাঁকে প্রতিশ্রুতির ফাঁদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। মোদীর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য রকমের স্থিতিস্থাপক বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাঁর অনুভূত যোগ্যতা তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের চেয়ে অনেক বেশি এবং সঙ্কট মোকাবিলা করার বিষয়ে তাঁর ক্ষমতার ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে।
মোদী ভারতের রাজনৈতিক শ্রেণিকে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার ফলে পাকিস্তানি উস্কানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক ভাবে মূল্য চোকাতে হতে পারে।
উত্তেজনা তীব্রতর হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা অতিরঞ্জিতই। পাকিস্তান ভারতের দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারমাণবিক আখ্যান ব্যবহার করছে। তা সত্ত্বেও তাদের পারমাণবিক সীমারেখা শক্তির পরিমাণ একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, সিন্ধু জল চুক্তি-র (আইডব্লিউটি) অধীনে জলপ্রবাহের উপর যে কোনও নিষেধাজ্ঞার জন্য পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন-সহ পূর্ণ মাত্রার প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। এটি এমন একটি চরম অবস্থান, যা কেবল পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুণ্ণ করেছে।
বর্তমান সঙ্কটে পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব উভয়ই বারবার পারমাণবিক সংঘর্ষের আশঙ্কা উত্থাপন করলেও তাদের প্রকৃত আচরণ ভিন্ন ইঙ্গিতই দেয়। ২০১৯ সালে যখন ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাইলটকে আটক করা হয়েছিল, তখন মোদীর সরকার হুমকি দিয়েছিল যে, বিমানচালকের ক্ষতি হলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে। ভারতের গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-এর (আরঅ্যান্ডএডব্লিউ) প্রধান পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স-এর (আইএসআই)-এর প্রধানকে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই সতর্কবার্তাটি জানিয়েছিলেন। পরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তৎকালীন ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জন বোল্টনের কাছে এ বিষয়টি জানান। ভারত রাজস্থানে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল এবং তার প্রত্যুত্তরে পাকিস্তানের পাল্টা হুমকি ছিল প্রচলিত, কিন্তু পারমাণবিক নয়। ভারত যদি ন’টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করে, তবে পাকিস্তান তেরোটির জন্য প্রস্তুত ছিল। ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়া অবশ্য পারমাণবিক অস্ত্রের ঘাটতি নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত কুইড প্রো কুয়ো বা বিনিময় পন্থা।
এ বার দু’টি মূল কারণের দরুন উত্তেজনা ভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে - প্রথমটি হল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা। জেনারেল আসিম মুনির একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং এই সঙ্কটের ফলে সব কিছুই সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। পাকিস্তান ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তার সবচেয়ে খারাপ বেসামরিক-সামরিক সংঘাতের সম্মুখীন হয়েছিল, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন একটি জোট কর্তৃক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টাটি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাংলাদেশের পরাজয়ের পর থেকে সামরিক বাহিনী এতটা বৈধতার সঙ্কটের সম্মুখীন হয়নি। মুনিরের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ইমরান খান এবং তিনি একজন অনুগতকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলেছিল। এই উত্তেজনা তীব্রতর হয় যখন ২০২৪ সালের নির্বাচনে শরিফ জোটের পক্ষে সেনাবাহিনী ব্যাপক কারচুপি করেছিল। এই অস্থির পরিস্থিতিতে মুনির ও পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান সম্ভবত সেনাবাহিনী ও বৃহত্তর সমাজের মধ্যে ভিন্নমত দমন করার জন্য যে কোনও ভারতীয় পদক্ষেপকে কাজে লাগাবে এবং পাকিস্তানের ক্ষমতার উপর তাদের দখলকে আরও সুদৃঢ় করবে।
মুনিরের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ইমরান খান এবং তিনি একজন অনুগতকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলেছিল।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমেরিকার বিচ্ছিন্নতা ও চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দ্বারা আকার পেয়েছে। গত দুই দশক ধরে ভারতের পাকিস্তান নীতিতে মার্কিন সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারগিল যুদ্ধের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে আমেরিকান প্রশাসন কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে নয়াদিল্লির অবস্থানকে সমর্থন করেছে। বর্তমান মার্কিন নেতৃত্ব ভারতের অভিযোগ ও প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকারকে স্বীকার করলেও, অভ্যন্তরীণ লড়াই ও সীমিত মনোযোগের কারণে ইসলামাবাদের উপর চাপ দেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের বিপরীতে মার্কিন বক্তব্য এখন অনেকটাই অসম্পৃক্ত বলে মনে হচ্ছে।
বিপরীতে, চিন পাকিস্তানের জন্য আরও দৃঢ় মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বেজিং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদী হামলার ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ করার জন্য ইসলামাবাদের দাবিকে সমর্থন করেছে। চিন-পাক সামরিক সম্পর্ক গভীরতর করা এবং পাকিস্তানে - যার মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরও রয়েছে - উল্লেখযোগ্য চিনা বিনিয়োগের মাধ্যমে চিনা পৃষ্ঠপোষকতা আরও জোরদার হয়েছে।
একই সময়ে, ভারত তার অস্থির উত্তর সীমান্ত নিয়ে ব্যাপক ভাবে ব্যস্ত রয়েছে। ভারতীয় নেতৃত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল এই যে, সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও চিন পাকিস্তানকে সমর্থন করবে এবং এই অঞ্চলে ভারতকে সীমাবদ্ধ রাখার দীর্ঘস্থায়ী নীতি পরিবর্তন করবে না। চিনের প্রভাব যত প্রসারিত হবে, নয়াদিল্লিকে মার্কিন শক্তি ও উদ্দেশ্যকে আরও কার্যকর ভাবে কাজে লাগাতে হবে।
হর্ষ ভি পন্থ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যোগেশ জোশি দ্য ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দ্য ইন্ডিয়া সেন্টারের ডিরেক্টর এবং ইন্ডিয়ান কমিউনিটি এনডাওড অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Yogesh Joshi is Indian Community Endowed Assistant Professor and Director, India Center. His research focuses on military technological diffusion among rising powers, conventional military and ...
Read More +