-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এম২৩ বিদ্রোহীরা কিনশাসার দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তির খেলা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের জন্য লড়াইয়ের মাঝেই ডিআরসি পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
১৩ নম্বর সংখ্যাটিকে প্রায়শই অশুভ বলে মনে করা হয় এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর (ডিআরসি) জন্য এটি তেমনটাই বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কারণ এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং কঙ্গো সেনাবাহিনীর মধ্যে ত্রয়োদশ বছরে পদার্পণকারী সংঘাত দেশটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালের গোড়ার দিকে এম২৩ বা মার্চ ২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি কঙ্গো সরকার এবং মূলত রুয়ান্ডা বংশোদ্ভূত কঙ্গো সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিদ্রোহী আন্দোলনের মধ্যকার সংঘাত থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
তেরো বছর পর ডিআরসির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দ্রুত জয় ও দখল করার পর এম২৩ গোষ্ঠীটি আবার খবরে উঠে আসে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এম২৩ নর্থ কিভু প্রদেশের বৃহত্তম শহর গোমা দখল করে। তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা সাউথ কিভুর রাজধানী বুকাভুও দখল করে। রাজধানী কিনশাসার দিকে তাদের দ্রুত অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ খনির কেন্দ্র ওয়ালিকালের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে।
গত তিন মাসের সহিংসতায় প্রায় ৩,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও ৮০,০০০ মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবিক সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগেও ডিআরসি সহিংসতা সহ্য করেছে, যা প্রধানত জাতিগত উত্তেজনা এবং ভূমি ও খনিজ সম্পদের উপর অধিকার সংক্রান্ত বিরোধ দ্বারা চালিত। তবে, ক্ষতির পরিমাণ তুলনাহীন। গত তিন মাসের সহিংসতায় প্রায় ৩,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও ৮০,০০০ মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবিক সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এম২৩-এর আক্রমণের মোকাবিলায় কঙ্গো সরকার ১,৩০,০০০ কর্মীর একটি সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে, যাদের সমর্থনে বুরুন্ডি, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালাউই, তানজানিয়া থেকে আঞ্চলিক বাহিনী ও ওয়াজালেন্ডো নামে পরিচিত দুর্বল প্রশিক্ষিত স্থানীয় সামরিক গোষ্ঠী রয়েছে। তবে ১০,০০০ থেকে ১৪,০০০ সংখ্যাবিশিষ্ট এই বাহিনীগুলি এম২৩ এবং রুয়ান্ডার সেনাবাহিনীর সুশৃঙ্খল ও সুসমন্বিত সম্মিলিত শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে রীতিমতো যুঝছে। ইতিমধ্যে, প্রায় ১৪ জন দক্ষিণ আফ্রিকান শান্তিরক্ষীর মৃত্যুর পর সাউথ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) সৈন্যরা - যা এসএএমআইডিআরসি নামে পরিচিত – এম২৩-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে, যার ফলে দেশ থেকে অবশিষ্ট এসএডিসি দল প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মূলত জাতিগত তুতসিদের সমন্বয়ে গঠিত এম২৩-র উৎপত্তি ২০০৯ সালে ডিআরসি এবং পূর্ববর্তী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি ব্যর্থ শান্তি চুক্তি থেকেই হয়েছিল, যা পরে এম২৩-এর মূল অংশ হয়ে ওঠে। ডিআরসি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) দেশের সরকারগুলি ধারাবাহিক ভাবে রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে এম২৩-কে সমর্থন করার অভিযোগ আনলেও রুয়ান্ডা কোনও রকম সম্পৃক্ততার কথা দৃঢ় ভাবে অস্বীকার করেছে। এম২৩ দাবি করে যে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল রুয়ান্ডা গণহত্যার জন্য দায়ী হুতু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করা, যারা পরবর্তী সময়ে পূর্ব কঙ্গোতে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি এই গোষ্ঠীটি কঙ্গোর রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করেছে এবং রাষ্ট্রপতিকে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এম২৩ দাবি করে যে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল রুয়ান্ডা গণহত্যার জন্য দায়ী হুতু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করা, যারা পরবর্তী সময়ে পূর্ব কঙ্গোতে আশ্রয় নিয়েছিল।
সঙ্কটের জাতিগত দিকটি প্রায়শই অতিরঞ্জিত করা হলেও ডিআরসির প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বহিরাগতদের আগ্রহ সম্ভবত শান্তির পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে বিরল খনিজ পদার্থের সুবিশাল মজুত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট। কোবাল্ট ফোন এবং কম্পিউটারের মতো বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদনে অপরিহার্য উপাদান। বর্তমানে ডিআরসির কোবাল্ট উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ চিনা সংস্থাগুলির মালিকানাধীন, যা পরে চিনে পরিশোধিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাটারি নির্মাতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিআরসির সঙ্গে খনিজ অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাও অন্বেষণ করছে। দেশটি সোনা, টিন, ট্যানটালাম এবং টাংস্টেন-সহ অন্যান্য মূল্যবান খনিজ পদার্থেও সমৃদ্ধ এবং আমাজনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের অবস্থান এখানে।
কঙ্গো আফ্রিকার বৃহত্তম দেশগুলির অন্যতম, যার সীমান্ত ন’টি দেশ দ্বারা বেষ্টিত। এর মধ্যে রুয়ান্ডা এবং উগান্ডা উভয়ই স্থলবেষ্টিত এবং সম্পদের দিক থেকে দরিদ্র। তবে ডিআরসির খনিজ সমৃদ্ধ ও উর্বর ভূমির প্রতি দেশ দু’টির যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং কঙ্গো সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে এই দেশগুলি কী অবস্থান গ্রহণ করে, তা দেখার মতো হবে।
চিত্র ১: ডিআরসির মানচিত্র
সূত্র: ব্রিটানিকা
অতীতে রুয়ান্ডা এবং উগান্ডা ডিআরসি-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সহযোগিতা করেছিল এবং তাদের স্বার্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োয়েরি মুসেভেনির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এবং বর্তমান সংঘাতে উগান্ডা কোন পক্ষকে সমর্থন করবে, তা এখনও অনিশ্চিত। এ দিকে, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি এবং জিম্বাবুয়ে সম্ভবত ডিআরসিকে সমর্থন করবে।
রুয়ান্ডা এই অঞ্চলের মধ্যেও স্বার্থান্বেষী উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে পারে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট কাগামে চিরাচরিত যুক্তির কথা তুলে ধরে রুয়ান্ডার সম্প্রসারণের পক্ষে কথা বলেন। তবে ‘গ্রেটার রুয়ান্ডা’ সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জাতিগত-জাতীয়তাবাদের মূলে আর একটি আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই স্বার্থান্বেষী অবস্থান রুয়ান্ডার জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল বলে প্রমাণিত হতে পারে এবং সম্ভাব্য ভাবে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদির মধ্যে জটিল সম্পর্কের পাশাপাশি এই ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ হল আলোচনায় এম২৩-এর অংশগ্রহণের বিষয়টি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন এই অঞ্চলে আরও একটি সহিংসতার চক্রের সাক্ষী হচ্ছে, তখন অব্যবহিত অগ্রাধিকার হওয়া উচিত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে মধ্যস্থতা করা। দুর্ভাগ্যবশত, ২০২১ সাল থেকে অর্ধ ডজনেরও বেশি যুদ্ধবিরতি এবং শান্তিপ্রচেষ্টা করা হয়েছে, যার সব ক’টিই ব্যর্থ হয়েছে। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদির মধ্যে জটিল সম্পর্কের পাশাপাশি এই ব্যর্থতার একটি প্রধান কারণ হল আলোচনায় এম২৩-এর অংশগ্রহণের বিষয়টি। কঙ্গোর সরকার আলোচনায় এম২৩-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অস্বীকৃত হয়েছে এই আশঙ্কায় যে, এমনটা করলে অসাবধানতাবশত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে দলটিকে বৈধতা দেওয়া হবে। রুয়ান্ডা জোর দিয়ে বলেছে যে, কোনও প্রকার শান্তি আলোচনায় এম২৩-কে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তবুও, যখন এম২৩-কে ১৮ মার্চ অ্যাঙ্গোলায় শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তখন দলের নেতা কর্নেইল নাঙ্গা অ্যাঙ্গোলা ভ্রমণ করতে অস্বীকৃত হন। এই আখ্যানে আরও নাটকীয়তা যোগ হয়, যখন দুই রাষ্ট্রপতি একই দিনে কাতারের দোহায় দেখা করতে সম্মত হন এবং একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তবে চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এম২৩ তাদের সামরিক আক্রমণ পুনরায় শুরু করে, যার ফলে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়।
কিনশাসার ভবিষ্যৎ
১৯৯৬ সালের শেষের দিকে তৎকালীন বিদ্রোহী নেতা লরেন্ট কাবিলা যখন কিনশাসার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রেসিডেন্ট মোবুতু সেসে সেকোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখন খুব কম মানুষই তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। তবে ছয় মাসের মধ্যে কাবিলা সফল ভাবে কিনশাসা দখল করে নেন, যার ফলে মোবুতু তাঁর পরিবারের সঙ্গে টোগোতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। বর্তমান এম২৩-এর অগ্রযাত্রার অসাধারণ গতি এবং কঙ্গোর সেনাবাহিনীর দ্রুত পতন সিরিয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য তুলে ধরে, যেখানে সিরিয়ার জাতীয় সেনাবাহিনী একই দ্রুততার সঙ্গে ভেঙে পড়েছিল।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এই সহিংসতার চক্রের অবসান নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল ডিআরসি এবং রুয়ান্ডার কাঁধে নয়, বরং পশ্চিমী-শক্তি সহ সকল অংশীদারের উপরই বর্তায়।
বর্তমান বিদ্রোহী জোটের কিনশাসার নিয়ন্ত্রণ সফল ভাবে নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে হতে পারে। তবে এম২৩ তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার সঙ্গে সঙ্গেই যা একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হত, তা ক্রমশ সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। উপরন্তু, রুয়ান্ডার বৃহত্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে এই সহিংসতার চক্রের অবসান নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল ডিআরসি এবং রুয়ান্ডার কাঁধে নয়, বরং পশ্চিমী-শক্তি সহ সকল অংশীদারের উপরই বর্তায়। তৃতীয় কঙ্গো যুদ্ধের সম্ভাবনা যতই ঘনিয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নির্ধারণ করতে হবে যে, তারা কত দিন এই সঙ্কট টিকিয়ে রাখতে চায়। কিনশাসা আপাতত নিরাপদ বলে মনে হলেও তার ভবিষ্যৎ একটি অনিশ্চিত সুতোয় বাঁধা।
সমীর ভট্টাচার্য অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.