-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক কেন্দ্র কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাত্ত্বিক ভাবে নেতৃত্বের ঝুলিতে আর একটি যুদ্ধবিরতি যুক্ত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন যে, ইজরায়েল ও ইরান উভয়ই তাঁর কাছে এমন একটি ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করেছিল, যার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে শত্রুতা বন্ধ হবে। ইজরায়েল যখন ইরান জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তখন ইরানি সামরিক বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইজরায়েলের বিখ্যাত আয়রন ডোমের বলয় ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ইরানের হামলায় চার ইজরায়েলির নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেহরান মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম আমেরিকান সামরিক স্থাপনা কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি হয়েছিল। ইরান সরকার ইতিমধ্যেই তাদের মতামত প্রকাশ করেছিল যে, তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে যে কোনও আক্রমণের ফলে অঞ্চল জুড়ে মার্কিন কেন্দ্রগুলিকে প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে। ইরানি সরকার এই হুমকির বিষয়ে তাদের কথা রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা ইরানি জনগণের প্রতি দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শনের জন্য এবং কয়েক দিনব্যাপী ক্ষয়ক্ষতির পর দেশটির জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা বজায় রাখার প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল। ইরানি বেসামরিক হতাহতের বাস্তবসম্মত পরিসংখ্যান এখনও মেলেনি।
ইরান সরকার ইতিমধ্যেই তাদের মতামত প্রকাশ করেছিল যে, তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে যে কোনও আক্রমণের ফলে অঞ্চল জুড়ে মার্কিন কেন্দ্রগুলিকে প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে।
যুদ্ধবিরতির স্থায়ী সাফল্য নির্ভর করছে ইজরায়েল ও ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উপর। ট্রাম্পের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে অভিযান চালানো। সেটা সফল করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আর প্রত্যক্ষ ভাবে বিষয়টিতে সম্পৃক্ত হবে না, যদি না মার্কিন কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ইজরায়েলের দিক থেকে দেখলে অবিনশ্বরতা ও সামরিক দক্ষতার ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলেও এই সব কিছুই তাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল। কোনও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢালই সম্পূর্ণ রূপে দুর্ভেদ্য নয়। তবে যুদ্ধবিরতির ঘটনাকে ইজরায়েল দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধের প্রেক্ষিতে ইরানি সক্ষমতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাওয়ার পথে একটি বাধা বলে মনে করতে পারে। কারণ নিকট ভবিষ্যতে ইজরায়েলি নেতৃত্ব আর এই সুযোগ পাবে বলে মনে হয় না এবং এটি সম্ভবত গুরুতর ভাবে ক্ষতি সাধন করতে পারে।
ইরানের জন্য পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতিটি আসলে সহিংসতা থেকে আপাত-বিরতিকেই দর্শায়। বিগত সপ্তাহগুলিতে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল লক্ষ করা গিয়েছে এবং দেশের সামরিক ও গোয়েন্দা নেতৃত্বের অনেকেই নিহত হয়েছেন। দেশটি তার সীমান্তের মধ্যে ৫০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি গোয়েন্দাদের সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইরান এখনও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, ইজরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিক্রিয়া দিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং এমন এক সময়ে সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধের সম্মুখীন, যখন তাদের আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার প্রধান ভরসা — হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতির মতো প্রক্সি গোষ্ঠীগুলি, যাদের ইরান বহু বছর ধরে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে —কেউই এই মুহূর্তে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছে না বা আগ্রহ প্রদর্শন করছে না।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ছিলেন পুরো সমীকরণে তাসের খেলার ‘জোকার’স্বরূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির জন্য উদ্যোগ নেয়। যুদ্ধবিরতির শর্ত ছিল এই ছিল যে, তেহরান যেন প্রথমে পাল্টা আঘাত করার সুযোগ পায়। আলোচনাস্থল হিসেবে কাতারকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে নানা কারণ। বর্তমানে দোহা অঞ্চলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে বিবেচিত।
দোহার উপর ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে, সেগুলি উল্লেখযোগ্য রকমের উচ্চতা বজায় রেখে চালানো হয়েছে। যেহেতু আল উদেইদ রাজধানীর কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তাই কাতারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলিকে সহজেই নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়।
আল উদেইদ বৃহত্তম ঘাঁটি হওয়ার পাশাপাশি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়েছিল যে, পেন্টাগন তাদের অধিকাংশ সম্পদকে বেশ কিছু আগেই ঘাঁটি থেকে সরিয়ে নিয়েছে, যার ফলে ঘাঁটিটি খালিই পড়ে ছিল। দোহার উপর ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে, সেগুলি উল্লেখযোগ্য রকমের উচ্চতা বজায় রেখে চালানো হয়েছে। যেহেতু আল উদেইদ রাজধানীর কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তাই কাতারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলিকে সহজেই নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। ইজরায়েল ও ইরান… উভয় পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য সমঝোতার পথ তৈরি করতে এক ধরনের ‘থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড’ (অবাস্তব নাটক) তৈরি করা হয়েছিল। আপাতত উভয় পক্ষই সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে।
ইজরায়েল নিজেও ঘোষণা করেছে যে, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ সফল ভাবে ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার অবসান ঘটিয়েছে। এ দু’টি ক্ষেত্রই ইজরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রধান লক্ষ্য ছিল। ইজরায়েল ক্ষেপণাস্ত্রগুলি নিজেই ধ্বংস করতে পারলেও পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে কার্যকর ভাবে হামলা চালানোর জন্য তাদের মার্কিন অস্ত্রের প্রয়োজন হয়েছিল। অনেকের মতে, বি-২ বোমারু বিমানের হামলার পূর্ণাঙ্গ সাফল্য পেতে আরো কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি যে পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। এর অর্থ হল এই যে, ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে মূল উদ্বেগ অর্থাৎ পারমাণবিক উত্তেজনা এখনও অনিশ্চিত অবস্থাতেই রয়েছে।
বর্তমান যুদ্ধবিরতি ইজরায়েল-সহ সকল পক্ষের জন্যই কার্যকর। কারণ ইজরায়েলেও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে। একটি ছোট আকারের দেশ হওয়ার দরুন তার সামরিক সক্ষমতা সত্ত্বেও যে কোনও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত অর্থনৈতিক ভাবে অস্থিতিশীল হত। যাই হোক, এই যুদ্ধবিরতি মেয়াদকাল অনিশ্চিত খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং আপাতত এই স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য ইজরায়েল ও ইরান উভয়েরই তরফে সংযম ও বিচক্ষণতার প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইন্ডিয়া টুডে-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kabir Taneja is a Deputy Director and Fellow, Middle East, with the Strategic Studies programme. His research focuses on India’s relations with the Middle East ...
Read More +