-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
জঙ্গি সমন্বয় বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাকে আরও গভীর করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বেলুচ বিদ্রোহের তীব্রতা পাকিস্তানের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এবং কয়েক বছর ধরে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশটির পরিস্থিতির গুরুত্ব ইসলামাবাদের ক্ষমতার অলিন্দে বসে থাকা মানুষদের নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানীতে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ ও সেগুলির উপর ছড়ি ঘোরানো, যাতে জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের সামরিক হুন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে মিশ্র শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা যায়। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) অশান্তি গণমাধ্যমে তেমন ভাবে প্রচারিত হয়নি। জনসাধারণের আলোচনা মূলত ইমরান খান, তাঁর বিচার, কারাগারে তাঁর দুর্দশা এবং তাঁর আখ্যান ও জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে সরকারের কৌশলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। বেলুচিস্তান ইসলামাবাদ এমনকি লাহোরের বাস্তব পরিস্থিতি থেকে এত দূরে থেকেছিল যে, এই অশান্ত প্রদেশে কী ঘটছে, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি।
জনসাধারণের আলোচনা মূলত ইমরান খান, তাঁর বিচার, কারাগারে তাঁর দুর্দশা এবং তাঁর আখ্যান ও জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে সরকারের কৌশলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে জাতীয় পরিষদে মাওলানা ফজল-উর-রহমান যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, ‘বেলুচিস্তানের পাঁচ থেকে সাতটি জেলা স্বাধীনতা ঘোষণা করার মতো অবস্থায় রয়েছে’ এবং ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ (পরের দিনই) তাদের স্বীকৃতি দেবে।’ পাকিস্তান ও তার বাইরের মানুষজন প্রদেশের নিরাপত্তার পরিস্থিতির তীব্র অবনতির বিষয়টি লক্ষ করতে শুরু করে। মাওলানা রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাড়িয়ে বললেও তবুও তিনি প্রদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং পরিস্থিতি যে কতটা গুরুতর, সে সম্পর্ক তিনি বেশ অবগত। মাওলানার অনুসরণেই জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় নেতা (এলওপি) ওমর আইয়ুব বলেছেন যে, বেলুচিস্তানের আধ ডজনেরও বেশি জেলায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আইয়ুবের মতে, এই জেলাগুলিতে পাকিস্তানি পতাকা আর তুলে ধরা হয় না।
তা সত্ত্বেও, কেবল মিশ্র শাসনের বিরোধী রাজনৈতিক নেতারাই বেলুচিস্তানের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে আমল দিচ্ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী শরিফের ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টাদের অন্যতম রানা সানাউল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি চাইলে বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারে। প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে… এ বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করার পর মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি অবশেষে পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা স্বীকার করেছেন। তবে বিদ্রোহীরা কয়েক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কোনও এলাকার দখল ধরে রাখতে পারছে না। বিদ্রোহীরা যে ইচ্ছা মতো আক্রমণ করতে পারে এবং কয়েক ঘণ্টার জন্যও প্রধান মহাসড়ক ও ছোট শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারে… এই বিষয়ে কোনও দায়িত্বশীল প্রশাসকই নিশ্চিত ছিলেন না। তবে বেলুচ বিদ্রোহীদের তরফে তীব্র মাত্রার ও মারাত্মক প্রভাবশালী হামলার বাড়তে থাকা ঘনঘটা পাকিস্তানের কর্তৃত্বকে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল করে দিয়েছে। আরও খারাপ বিষয় হল এই যে, বিষয়টি এত পরিমাণ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে যে, এটি অবকাঠামো এবং খনির প্রকল্পগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাকিস্তানের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাগুলিকে কার্যত অর্থহীন করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শরিফের ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম রানা সানাউল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি চাইলে বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারে।
এই প্রেক্ষিতে, বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ), বেলুচিস্তান রিপাবলিক গার্ড (বিআরজি) এবং সিন্ধুদেশ রেভোলিউশনারি আর্মি (এসআরএ) নামে চারটি জঙ্গি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে একটি জোট গোষ্ঠী বেলুচ রাজি আজোই সাঙ্গার (বিআরএএস) একটি ঐক্যবদ্ধ আদেশমূলক কাঠামো এবং ‘বিক্ষিপ্ত অভিযান’ থেকে সরে এসে একটি সংগঠিত, সমন্বিত ও সিদ্ধান্তমূলক বাহিনীর দিকে মনোনিবেশ করার পাশাপাশি একটি বেলুচ ন্যাশনাল আর্মি গঠনের ঘোষণা করেছে। বিআরএএস পাকিস্তান এবং তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্রতর করা এবং তার গেরিলা অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে। পাকিস্তান এবং চিনের দুর্বল জায়গায় আঘাত করার লক্ষ্যে বিআরএএস ‘দখলদার রাষ্ট্রের লজিস্টিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক স্বার্থ ব্যাহত করার জন্য বেলুচিস্তানের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে অবরোধ তীব্রতর করা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিআরএএস তাদের অভিযান জোরদার করার ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই গেরিলারা কৌশলগত উপকূলীয় মহাসড়কে আক্রমণ করে এবং ছ’টি গ্যাস ট্যাঙ্কার ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ও বেলুচ সহযোগীদের উপর ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এবং আত্মঘাতী হামলার ঘটনাও হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। ভূগোলের যে বিস্তৃত অংশে এই হামলাগুলি সংঘটিত হয়েছিল, তা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল এবং সেগুলি হল কালাত শহরে একটি আত্মঘাতী হামলা, কোয়েটায় একটি আইইডি বিস্ফোরণ, খুজদারে একটি সরকারপন্থী জনজাতি নেতার বিরুদ্ধে আর একটি আইইডি হামলা, জেহরিতে দুই ধর্মগুরুকে হত্যা। জেহরিতে গত জানুয়ারিতে প্রায় ১০০ জন বিদ্রোহী কয়েক ঘণ্টা ধরে আক্রমণ চালিয়েছিল এবং শহরটি দখল করেছিল। সাউথ এহসিয়া টেররিজম পোর্টাল দ্বারা সঙ্কলিত তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথম ন’সপ্তাহে, ইতিমধ্যেই ৭০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রায় ১৩৫ জন পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন এবং ৬৬ জন বিদ্রোহী/চরমপন্থী নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি একজন বিদ্রোহীর মৃত্যু হলে দু’জন করে সেনার মৃত্যু হয়েছে, যা আসলে সমস্যার ব্যাপকতাকেই দর্শায়।
এই বিদ্রোহীদের কিছু হামলায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর জনবল ও সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে কালাত জেলায় বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর একটি ভ্যানে অতর্কিত হামলা চালায়, যেখানে ১৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। দু’সপ্তাহ পরে, মান্দ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি চেকপয়েন্ট এবং একটি কনভয়ে হামলা চালানোর দরুন আরও ১৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। বিদ্রোহীরা হারনাইতে খনি শ্রমিকদের একটি বাসেও হামলা চালায়, যেখানে ১১ জন নিহত হয়। পাকিস্তানি গণমাধ্যম এটিকে বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত টাকা তোলার চক্র হিসাবে উপস্থাপন করলেও এটি আসলে একটি অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুর উপর আক্রমণ ছিল। বিদ্রোহীরা এটিকে পাঞ্জাব দ্বারা বেলুচিস্তানের সম্পদের শোষণ বলে অভিহিত করে। ফলে বিদ্রোহীদের দৃষ্টিতে এই আক্রমণ বৈধ। একই ভাবে, পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী এবং বসতি স্থাপনকারীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, যাদের বেলুচরা গুপ্তচর ও সহযোগী বলে চিহ্নিত করে। এটি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেলুচ যোদ্ধাদের কৌশলের একটি অংশ।
উত্তর বেলুচিস্তানের পশতুন-অধ্যুষিত জেলাগুলি বাদে বেলুচ বিদ্রোহীরা বেলুচিস্তানের প্রতিটি জেলায় সক্রিয় ছিল।
সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণটি ঘটেছিল ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে, যখন বেলুচ বিদ্রোহীরা অপারেশন হেরোফ শুরু করে, যেখানে তারা প্রদেশের সব দিক জুড়ে সমন্বিত আক্রমণ চালায়। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি ৯০০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছিল, যার বেশির ভাগই বিএলএ, বিএলএফ এবং বিআরএএস-এর ছত্রচ্ছায়ায় ঘটেছে। উত্তর বেলুচিস্তানের পশতুন-অধ্যুষিত জেলাগুলি বাদে বেলুচ বিদ্রোহীরা বেলুচিস্তানের প্রতিটি জেলায় সক্রিয় ছিল। অতীতের বিদ্রোহের তুলনায় এটি একটি গুণগত পরিবর্তন। কারণ লড়াইটি আগে শুধুমাত্র কয়েকটি জেলা ও উপজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে তা বেলুচিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং উপজাতি, ভাষাগত এবং লিঙ্গগত বিভাজনকে অতিক্রম করেছে।
বেলুচ বিদ্রোহীরা তাদের আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। কেবল হিংস্রতা, তীব্রতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার দিক থেকে নয়, পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও করেছে এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র ওরফে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কার্যকর ভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর কৌশল চিরাচরিত এবং তা হল বর্বরতা বৃদ্ধি করা, উপজাতীয় নেতাদের টোপ দেওয়া, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ঘুষ দেওয়া, জনগণকে ভয় দেখানো, সকল ভিন্নমতকে দমন করা, গণমাধ্যমের উপর খুব নিয়ন্ত্রণ রাখা, গণতন্ত্রের আড়ালে প্রদেশ পরিচালনার জন্য হাতের পুতুল নিয়োগ করা। কিন্তু এ বার এ হেন কৌশল একেবারেই অকার্যকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যত বেশি তার দমনমূলক শাসনকে কঠোর করে তুলছে, ততই তা বেলুচ জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে তুলছে এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারী ও তরুণরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছেন।
আখ্যানমূলক যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনুমানযোগ্য ভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অভিযান শুরু করেছে এবং বেলুচ ছাত্রদের অপহরণ করছে, তাদের অবৈধ হেফাজতে রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে তাদের হত্যা করেছে এবং তাদের মৃতদেহ রাস্তার ধারে বা বনে ফেলে দিয়ে আসছে। এই বছরের প্রথম কয়েক সপ্তাহে ২৫০ জনেরও বেশি ছাত্র নিখোঁজ হয়েছে। এই বলপূর্বক অন্তর্ধানের বিষয়টি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেবল ঘৃণা ও বিচ্ছিন্নতাকেই বাড়িয়ে তুলেছে এবং সম্ভবত এটি বেলুচ জনমতকে সংগঠিত করার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। নৃশংস দমন-পীড়ন ছাড়াও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন কালজয়ী কৌশল ব্যবহার করে আখ্যানমূলক কৌশলে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
উদাহরণস্বরূপ, কর্তৃপক্ষ প্রায়শই একজন ‘আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি’কে প্রদর্শন করে, যে রাষ্ট্রের পূর্ব নির্ধারিত বক্তব্য পেশ করে। এই বক্তব্যে প্রায়শই কম্যান্ডারদের বিরুদ্ধে লোভের অভিযোগ আনা হয়, দাবি করা হয় যে, ভারত তাদের অর্থায়ন করেছে এবং তারা আসলে বেলুচ স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। এরপর পাকিস্তানি গণমাধ্যম এই আখ্যানগুলিকে আরও জোরদার করার জন্য প্রচার শুরু করে। কিন্তু পাঞ্জাবের মানুষ ছাড়া কেউই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভুয়ো খবরে পাত্তা দিচ্ছেন না। একই ভাবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অথবা বিদ্রোহীদের আস্তানায় অভিযান চালানোর জন্য অভিযানের অতিরঞ্জিত ও প্রায়শই সম্পূর্ণ কাল্পনিক দাবিকেও কেউ আমল দিচ্ছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেবল প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে যে, তারা বিদ্রোহকে প্রতিহত করছে এবং কঠোর ভাবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। এমনকি নিহত বিদ্রোহীদের সংখ্যা নিয়েও তারা গুজব ছড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক আখ্যানে এই বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে বেলুচ ইয়াকজেতি কাউন্সিলের তরুণ নেতারা - যেমন অদম্য মাহরাং বেলুচ, সামি দিন বালুচ এবং অন্যান্য সদস্য - প্রদেশ জুড়ে বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিআরএএস-এর সংগঠন পুনর্গঠন ও কার্যক্রম তীব্র করার ঘোষণা আসলে এই কথাই দর্শিয়েছে, বিদ্রোহীরা বিশ্বাস করে যে, বেলুচিস্তানের সংগ্রাম একটি নির্ণায়ক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। রাজনৈতিক আখ্যানে এই বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে বেলুচ ইয়াকজেতি কাউন্সিলের তরুণ নেতারা - যেমন অদম্য মাহরাং বেলুচ, সামি দিন বালুচ এবং অন্যান্য সদস্য - প্রদেশ জুড়ে বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আইনসভার সদস্যরা ও প্রদেশের ‘নির্বাচিত’ সরকার রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতায় থাকা হাতের পুতুল হয়ে উঠেছে। কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই প্রশাসনকে বেলুচিস্তানের জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সম্পূর্ণ রূপে আপস করেছে এবং কারচুপি করেছে, যার সব ক’টিই স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বী কণ্ঠস্বরকে সশক্ত করেছে।
সামরিক ভাবে বেলুচ বিদ্রোহীরা জটিল আক্রমণের সমন্বয় সাধনের জন্য তাদের নাগাল, ক্ষমতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। পাকিস্তানের ২৫ কোটি জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম জনসংখ্যা হওয়ার দরুন বেলুচরা কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারবে, তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। তবে বিদ্রোহীরা বিশ্বাস করে যে, পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সমর্থন তাদের পক্ষে রয়েছে। বেলুচের ক্ষেত্রে সংখ্যার অভাব থাকলেও এই ঘাটতি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানের পশতুন অঞ্চলের তালিবান বিদ্রোহের কারণে কোনও সমস্যায় ফেলছে না, কারণ তালিবানদের এ হেন হামলা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে চাপে ফেলেছে এবং রক্তপাতের ঘটনা বৃদ্ধি করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালিবান শাসনের মধ্যে সম্পর্কের তীব্র অবনতি। তালিবানরা বেলুচদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ বেলুচ বিদ্রোহ পাকিস্তানের উপর একটি নির্দিষ্ট প্রভাব ফেলছে। কারণ তালিবানরা মনে করে যে পাকিস্তান ইসলামিক আমিরাতকে দুর্বল করার জন্য ইসলামিক স্টেট খোরাসানের (আইএসকে) সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের পরিস্থিতিও পাকিস্তানের বেলুচ বিদ্রোহীদের জন্য অনুকূল বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানকে দুরমুশ করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তও নিতে পারে।
বেলুচ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের সাহসিকতা ও হিংস্রতার সামনে পড়ে এবং প্রদেশের অস্থিরতা মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রাগৈতিসিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ না করায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে এখন সীমিত বিকল্প রয়েছে। বেলুচিস্তানে পঞ্চম বিদ্রোহের পর থেকে গত ২৫ বছর ধরে চালিয়ে আসা পন্থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তীব্রতর করতে পারে। তবে ফলাফল কিছুই বদলাবে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানকে দুরমুশ করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তও নিতে পারে। অভিযানের রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক পরিণতি অবশ্য বিপর্যয়কর বলে প্রমাণিত হতে পারে। তৃতীয় বিকল্প হল পুনর্মিলনের চেষ্টা করা। তবে এটি একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথ এবং এই পুনর্মিলনের চেষ্টা পাকিস্তানের পাঞ্জাবি সামরিক অভিজাতদের বুদ্ধিবৃত্তিগত ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। কারণ এটি পাকিস্তানের শাসক শ্রেণি ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের পরিপন্থী। তবে পাকিস্তান যে নীতিই গ্রহণ করুক না কেন, বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতেও জটিল থাকবে। আর বেলুচিস্তানের ‘দাসত্বের শৃঙ্খল’ (ইমরান খানের উদ্দীপক বাক্যাংশ ব্যবহার করলে) মোচন করার ইঙ্গিত অত্যন্ত অপরিপক্ব এবং অতিরিক্ত আশাবাদী মনে হলেও বেলুচিস্তান পাকিস্তানের গলায় কাঁটা হয়েই থাকবে, যেটিকে পাকিস্তান না গিলতে পারবে, না উপড়ে ফেলতে পারবে।
সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador ...
Read More +