Published on Feb 25, 2025 Updated 0 Hours ago

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত একটি অপরিহার্য ভিত্তিস্তম্ভ হিসাবে রয়ে গিয়েছে

ট্রাম্পের আমেরিকাকে নিয়ে পথ চলা

যখন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সির জন্য রাজনৈতিক প্রচারাভিযান গতি অর্জন করেছিল, সেই সময় থেকেই অনিশ্চয়তার গভীর অনুভূতি তার মিত্র,  অংশীদার ও বন্ধুদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে জর্জরিত করেছে। এই অনিশ্চয়তা এই বছরের ২০ জানুয়ারি তাঁর ক্ষমতাসীন হওয়ার পরের সপ্তাহগুলিতে  তীব্রভাবে বেড়েছে। এই প্রবাহ সত্ত্বেও, যা এখন দ্বিতীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশনীতির বৈশিষ্ট্য, নিশ্চয়তার কয়েকটি ছোট ক্ষেত্রও আবির্ভূত হয়েছে। ট্রাম্প এবং তাঁর দলের প্রাথমিক কার্যকলাপ বুঝিয়ে দেয় যে ভারতের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি খুব বিঘ্নিত নাও হতে পারে। তবুও, দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু’‌দিনের মার্কিন সফর এই দৃঢ় প্রত্যয়কে বোঝায় যে চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ভারতের প্রতি কোনও বিশেষ বৈরী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে, মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে তাঁর তৃতীয় বৈঠক, অন্য দুটি ছিল ইজরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও জাপানের শিগেরু  ইশিবার সঙ্গে। ওয়াশিংটন ইঙ্গিত দিয়েছে যে প্রতিবেশী অঞ্চলে তার অভিবাসন নীতি ও শুল্ক চাপানোর প্রক্রিয়ায় দ্বিগুণ জোর দেওয়ার সময়, তার বাহ্যিক পছন্দগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ট্রাম্পের বাহ্যিক বাধ্যবাধকতাগুলি কিছুটা হলেও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বর্তমান অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, যেখানে রাশিয়া ও চিন উভয়ই ট্রাম্পের টোপ নিতে রাজি নয়। অন্যদিকে, ভারত তার অভ্যন্তরীণ পছন্দের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিন্নভাবে সংযুক্ত রয়েছে, যা ভারতীয় অভিবাসী ও বাণিজ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের মেয়াদের এত গোড়ার দিকে একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন সফর বিরল। এটি অন্তত দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। প্রথমত, ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার অর্থনীতি ও স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মোকাবিলার জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয়ত, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় হাতে থাকা সমস্যাগুলির মধ্যে শীর্ষে ছিল অভিবাসন। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ এবং অবৈধ অভিবাসী উভয়কেই প্রভাবিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১৮,০০০ ভারতীয়ের সনাক্তকরণ এবং একটি সামরিক বিমানে ২০৫জন ভারতীয়ের নির্বাসন ভারতে আবেগকে আলোড়িত করেছে। আনুমানিক ৭,০০,০০০ এরও বেশি অবৈধ অভিবাসীর ভাগ্য ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচিত মূল বিষয়গুলির মধ্যে একটি ছিল।


মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে তাঁর তৃতীয় বৈঠক, অন্য দুটি ছিল ইজরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও জাপানের শিগেরু ইশিবার সঙ্গে। ওয়াশিংটন ইঙ্গিত দিয়েছে যে প্রতিবেশী অঞ্চলে তার অভিবাসন নীতি ও শুল্ক চাপানোর প্রক্রিয়ায় দ্বিগুণ জোর দেওয়ার সময়, তার বাহ্যিক পছন্দগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

 

জানুয়ারিতে, হাউস জুডিশিয়ারি সাবকমিটি অন ইমিগ্রেশন ইন্টিগ্রিটি, সিকিউরিটি অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ফের গড়ে তুলতে ট্রাম্প প্রশাসন কী করতে পারে তা মূল্যায়ন করার জন্য একটি শুনানি করে। ভারতের জন্য ছাত্র, কর্মজীবী, পেশাজীবী এবং যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে তাদের ভিসার অবস্থার বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তার দ্রুত সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাসিতদের গ্রহণ করে, ভারত ইঙ্গিত দিয়েছে যে এটি এমন একটি দেশ যা নিয়ম মেনে খেলতে প্রস্তুত। শেষ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সমস্ত অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করা হয়তো সম্ভব নয়। ট্রাম্পের জন্য সংকেত দেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে। যাই হোক, ভারতকে ট্রাম্পের অনুরোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, এবং দেখতে হবে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করবেন কি না।

ওয়াশিংটনে মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের সময় আলোচনার আরেকটি মূল বিষয় ছিল  ট্যারিফ। শুল্কের উপর, ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হ্রাস করা। ভারত ও চিন উভয়েরই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রাক্কালে বিদেশি ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তটি মূলত চিন ও মেক্সিকোর জন্য উদ্দিষ্ট হতে পারে, তবে এটি ভারতের উপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে ।

ট্রাম্পের শুল্ক কৌশল একটি বিস্তৃতভাবে ত্রিপক্ষীয় যুক্তি অনুসরণ করে: আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, আমেরিকার কোম্পানিগুলিকে দেশে ফিরিয়ে আনা, এবং বিশ্ব মঞ্চে মার্কিন আধিপত্য পুনরুদ্ধার করা। যাই হোক, অর্থনীতিবিদরা একমত যে উচ্চ শুল্ক সরাসরি মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারবে না। বিপরীতে, এগুলি ইস্পাত নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় গাড়ি শিল্পের মতো সম্পর্কিত খাতে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও বিস্তৃত ঐকমত্য রয়েছে যে, অন্য দুটি ফ্রন্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ তার নিজস্ব কোম্পানি ও বিদেশি সরকারগুলিকে চাপ দেওয়ার পরিবর্তে তার মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আরও ভালভাবে পরিবেশিত হবে। বন্ধু, অংশীদার ও মিত্রদের বিরোধিতা করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি নাও হতে পারে। যাই হোক, এটি অন্যান্য দেশ থেকে ছাড় নেওয়ার জন্য ক্যারট-অ্যান্ড-স্টিক কৌশলের অংশ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান কৌশলগত অংশীদার হিসাবে ভারত ট্রাম্পের থেকে শুল্কের সম্ভাব্য ছাড়ের সন্ধান করবে, কারণ ট্রাম্প চিন, কানাডা ও মেক্সিকোকে মূল লক্ষ্য করেছেন।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত ভারতীয় প্রবাসীরা ট্রাম্পের ভারতপন্থী পলিসি টিম এবং ওয়াশিংটনের জন্য বন্ধু ও মিত্রদের মধ্যে দিল্লির অনন্য অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার সময় অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির তুলনায় ভারতকে কৌশলগত সুবিধা দেয়।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত ভারতীয় প্রবাসীরা ট্রাম্পের ভারত-পন্থী পলিসি টিম এবং ওয়াশিংটনের জন্য বন্ধু ও মিত্রদের মধ্যে দিল্লির অনন্য অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার সময় অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির তুলনায় ভারতকে কৌশলগত সুবিধা দেয়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, ভারতই একমাত্র দেশ যা চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম। তা ছাড়া, ট্রাম্প ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া থেকে সরে আসার কোনও ইঙ্গিত দেননি। বিপরীতে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফর আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ফের নিশ্চিত করেছে, যা বোঝায় যে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের মোকাবিলায় ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে। চিন আমেরিকার প্রাথমিক প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেও। ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে বাইডেনের "নির্ধারক দশক" চলাকালীন গতিশীল ভূ-রাজনৈতিক পথ একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবিন্দুতে রয়েছে, এবং পরবর্তী পর্যায়টি তাঁর প্রশাসনের কৌশলগত পছন্দগুলির দ্বারা সংজ্ঞায়িত হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য, ভারত শুধু একটি কৌশলগত অংশীদার নয়, সেইসঙ্গেই ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা স্থাপত্যের একটি অপরিহার্য নোঙর। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বাইরে, ভারত ইন্দো-প্যাসিফিককে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রকল্পগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেটি এমন একটি এলাকা যেখানে ট্রাম্প
ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টার পর একটি আঞ্চলিক চুক্তির কথা ভাবছেন। মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গে ভারতের দৃঢ় সম্পর্ক তাকে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর (আইএমইসি)-‌র মতো উদ্যোগে একটি সম্ভাব্য অংশীদার হিসাবে এগিয়ে দিয়েছে, যা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর ওয়াশিংটন সফর কূটনৈতিকভাবে মার্কিন প্রত্যাশাগুলি মোকাবিলা করার সময় ভারতের জন্য তার নিজস্ব লাল রেখা চিত্রিত করার একটি সুযোগও উপস্থাপন করেছে। ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাশাগুলির মূল্যায়ন করা এবং তার জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ হবে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য ছাড় ও অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি হ্রাস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যদিও ভারত ইতিমধ্যে এই ক্ষেত্রগুলিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি প্রধান কৌশলগত অংশীদারের আলোচনায় কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।



এই ভাষ্যটি প্রথম ওপেন -‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...

Read More +