-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
২৬ ফেব্রুয়ারি মলদ্বীপের মজলিস বিচার বিভাগ আইনের একটি সংশোধনী পাস করে, যার ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে পাঁচ জন করা হয়। এই ঘটনার পর মলদ্বীপের জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (জেএসসি) নতুন দলত্যাগ বিরোধী আইনের উপর একটি সমালোচনামূলক শুনানির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতিকে বরখাস্ত করে। সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া হল এই যে, মলদ্বীপের বিরোধীরা দেশের গণতন্ত্রের ক্ষতিসাধন ও ক্ষমতা পৃথগীকরণ সংক্রান্ত লঙ্ঘনের জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সমালোচনা করেছে। বাইরে থেকে দেখলে এটি একটি সার্বভৌম বিষয়। তবে মুইজ্জুর রাজনীতি এবং নীতিগুলি মলদ্বীপের প্রতি ভারতের বাস্তবসম্মত সংযোগকে চাপের মুখে ফেলতে পারে।
ভারতের দ্বিধা
ভৌগোলিক পরিসর মূলত ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করেছে। দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক ঘনিষ্ঠতার কারণে ভারত পারস্পরিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে চায়। ভারত আরও আশঙ্কা করে যে, কোনও বহিরাগত শক্তি বা অস্থিতিশীলতার ঘটনা মলদ্বীপের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত তার বহুমুখী সহযোগিতা ও উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে দ্বীপদেশটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও দাপুটে প্রতিবেশী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতাও অবলম্বন করে। ভারত এ কথাও স্বীকার করে নেয় যে, মলদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অতিরিক্ত সম্পৃক্ত থাকার ফলে বেশ কিছু রাজনীতিক বিরূপ হতে পারেন এবং এমনকি ভারত-বিরোধী মনোভাবও ফের চাগাড় দিয়ে উঠতে পারে।
আবদুল্লাহ ইয়ামিনের রাষ্ট্রপতিত্বের সময় ভারত সতর্কতা অবলম্বন করে, মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের চেষ্টা করে এবং গণতন্ত্রকে দমন করার জন্য প্রকাশ্যে সরকারের তেমন সমালোচনা করেনি।
এর ফলস্বরূপ বাস্তববাদ প্রায়শই প্রাধান্য পেয়েছে এবং ভারত বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেছে। মলদ্বীপের কিছু রাজনৈতিক সত্তার সঙ্গে দুর্দান্ত রসায়ন থাকার পাশাপাশি ভারত সেই সব বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে কাজ করার চেষ্টা করেছে, যাদের প্রকাশ্য ভারতবিরোধী ভঙ্গি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে বিতর্কিত ক্ষমতার পরিবর্তন সত্ত্বেও এমনটা ঘটেছে এবং ভারত অবশেষে প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একটি কার্যকরী সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। একই ভাবে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের রাষ্ট্রপতিত্বের সময় ভারত সতর্কতা অবলম্বন করে, মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের চেষ্টা করে এবং গণতন্ত্রকে দমন করার জন্য প্রকাশ্যে সরকারের তেমন সমালোচনা করেনি। তৎকালীন বিরোধী দল এমডিপি ভারত সরকারকে হস্তক্ষেপ ও মলদ্বীপের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও এমনটা হয়েছিল।
তবে যখন ভারতের স্বার্থ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তখন ভারত সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এই ধরনের ভঙ্গি মূলত দৃশ্যমান হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে ভারত আরও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নানাবিধ প্রভাবের আশঙ্কা সত্ত্বেও ভারত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাশিদকে আশ্রয় দেয় এবং একটি চুক্তিতে সহায়তা করে যার ফলে তিনি ১৩ বছরের গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে মুক্তি পান। একই ভাবে একাধিক বার সমঝোতার চেষ্টার পর ভারত অবশেষে ২০১৮ সালে তার নীরবতা ভেঙে জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সমালোচনা করে। এটি সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপও বৃদ্ধি করে। সেই বছরের শেষের দিকে ইয়ামিনকে গণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত সম্পর্ক টানাপড়েনময় ছিল।
মুইজ্জু এবং ভারতের বাস্তববাদ
২০২৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন-বিরোধী আন্দোলন এবং ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার প্রবাহে ভেসে মোহাম্মদ মুইজ্জু জয়লাভ করলে নয়াদিল্লিও একই ধরনের দ্বিধায় পড়ে। ভারতকে হস্তক্ষেপকারী শক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল এবং ভারতের কাছে দু’টি বিকল্প ছিল: এক, বাস্তববাদকে আলিঙ্গন করে নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, অথবা নতুন সরকারের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং ভারত-বিরোধী বাস্তুতন্ত্র ও প্রচারের আগুনে আরও বেশি করে ঘি ঢালা।
দিল্লি অবশ্য দ্বিতীয় বিকল্পের চাইতে প্রথম বিকল্পটিকেই বেছে নিয়েছে এবং নতুন সরকারকে দূরে ঠেলে দেওয়ার পরিবর্তে বাস্তববাদী ভাবে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে। ভারতকে উৎপীড়নকারী বলা হলেও ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের দু’টি ট্রেজারি বিল পাস করা হয়। এর পরে উভয় পক্ষের তরফে উচ্চ স্তরের আলোচনা শুরু হয়, যা একটি অর্থনৈতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের জন্য পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তৈরি করে। এর পরে ভারত মুদ্রা বিনিময়ের আকারে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩০ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা) মূল্যের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০২৫ ও ২০২৪ সালের জন্য ভারতের তরফে যথাক্রমে ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তার পাশাপাশি এই মূল্য প্রদান করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভারত ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও হস্তান্তর করেছে।
যে কোনও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেশের স্থিতিশীলতার উপর তীব্র প্রভাব ফেলবে এবং ভারতের জন্য নতুন অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন চিন এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
ভারতের বাস্তববাদী নীতি ও সহায়তার একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এটি নয়াদিল্লিকে তার স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, সরকারের ভারত-বিরোধী মনোভাবকে প্রশমিত করতে এবং চিনকে মলদ্বীপে তার অবস্থান বৃদ্ধি করা থেকে বিরত রাখতে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। চিরাচরিত ও সভ্যতাগত সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সেই সম্পর্ক উন্নত করার একটি প্রকৃত ইচ্ছা থেকেও এ হেন মনোভাব উদ্ভূত হয়। মলদ্বীপের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বলেও উদ্বেগ রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে ধারাবাহিক ভাবে খারাপ ফলাফল প্রদানকারী অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং দ্রুত হ্রাসপ্রাপ্ত বৈদেশিক ভাণ্ডার। যে কোনও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেশের স্থিতিশীলতার উপর তীব্র প্রভাব ফেলবে এবং ভারতের জন্য নতুন অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন চিন এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
মুইজ্জুর রাজনীতি এবং ভারতের অধিকার
বিনিময়ে মুইজ্জু সরকার ভারতীয় বিপদসীমার প্রতি কিছুটা সংবেদনশীল হয়েছে। মলদ্বীপ কিছু ভারতীয় প্রকল্পের কাজে সম্মত হয়েছে এবং উচ্চ স্তরের যোগাযোগ বজায় রেখেছে। মলদ্বীপ সরকার এমনকি কিছু চিনা প্রকল্পও প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যা ভারতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর ছিল। তবে নয়াদিল্লি এখনও মলদ্বীপ সরকারের বেজিংয়ের প্রতি ঝোঁক এবং আগ্রহ নিয়ে উদ্বিগ্ন। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি বাস্তবায়িত মলদ্বীপ-চিন এফটিএ মলদ্বীপের উপর আর্থিক প্রভাব ফেলবে। এফটিএ বাস্তবায়নের পরে মলদ্বীপের রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে। তাই সরকারের নীতি, অর্থনীতির উপর এর প্রভাব এবং এই অঞ্চলের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে দিল্লিতে প্রকৃত উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ, ভারত তার সহনশীল নীতি ও সহায়তা পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছে।
২০০৮ সালে মলদ্বীপ বহুদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীকরণ, একটি অস্থির অর্থনীতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মারাত্মক বিপর্যয়ের জন্য এই তিনটি কারণই যথেষ্ট।
একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর রাজনীতি ভারতের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করছে। সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ক্ষমতাসীন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) সংবিধান সংশোধন করে এবং একটি নতুন দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রণয়ন করে, যা সাংসদদের দলীয় মত ও নেতৃত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাধ্য করে। যখন দেশের শীর্ষ আদালতে এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখন বিচার বিভাগীয় পরিষেবা কমিশন (জেএসসি) মামলাটি পরিচালনাকারী তিন বিচারককে বরখাস্ত করে। দিল্লি এটিকে একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখলেও সতর্কতার সঙ্গেই এই ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করছে। ২০০৮ সালে মলদ্বীপ বহুদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীকরণ, একটি অস্থির অর্থনীতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মারাত্মক বিপর্যয়ের জন্য এই তিনটি কারণই যথেষ্ট।
ইতিহাস বলে যে, ভারতের মলদ্বীপ নীতি বাস্তববাদী হলেও নিঃশর্ত নয়। ভারত বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের বিষয়ে মন্তব্য করার সময় সংযম বজায় রাখলেও মুইজ্জুর মলদ্বীপ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে এবং তা হল একটি দুর্বল অর্থনীতি ও খণ্ডিত রাজনীতি। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য অস্থিরতা ভারতের বাস্তববাদী নীতির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়াও, চিনের সঙ্গে মলদ্বীপ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের স্বার্থ ও নীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে কাজ করবে। এই ক্ষেত্রে দিল্লির কাছে এই উন্নয়নগুলি পর্যালোচনা করা এবং সেই অনুযায়ী তার ভূমিকা ও নীতিগুলি সংশোধন করা ছাড়া তেমন বিকল্প থাকবে না।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মলদ্বীপস পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative. He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...
Read More +