Author : Gurjit Singh

Published on Jul 05, 2025 Updated 0 Hours ago

মোজাম্বিক এক ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছেকারণ একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা সহিংস বিদ্রোহ গণতন্ত্র অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে

এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মোজাম্বিক: রাজনৈতিক সঙ্কট, অর্থনৈতিক চাপ এবং স্থিতিশীলতার লড়াই

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ক্রমাগত বিদ্রোহের জালে আটকে থাকা মোজাম্বিক এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন দেশের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিকতাকেই দর্শায়, যা জালিয়াতির অভিযোগ, ব্যাপক বিক্ষোভ কঠোর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন দ্বারা চিহ্নিত। স্বৈরতন্ত্র গণতন্ত্রের মাঝে পড়ে মোজাম্বিক অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে এবং এগিয়ে চলার জন্য কোন স্পষ্ট পথের দিশা এই মুহূর্তে দেশটির কাছে নেই।

শাসক দলের আধিপত্যে ফাটল

২০২৪ সালের নির্বাচন জনসাধারণের অসন্তোষের এক অভূতপূর্ব প্রবাহের সূত্রপাত করে, যা ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো (ফ্রেন্তে দে লিবের্তাচাও দে মোজাম্বিক) দলের দীর্ঘস্থায়ী দখলকে চ্যালেঞ্জ করে। বিরোধী প্রার্থী ভেনানসিও মন্ডলেন ব্যাপক অনিয়মের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ফ্রান্সিসকো চাপোর জয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগগুলি ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়, যা নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের গভীর অবিশ্বাস রাজনৈতিক জবাবদিহিতার ক্রমবর্ধমান দাবিকেই দর্শায়।

দেশের কঠোর প্রতিক্রিয়া-বিক্ষোভ সহিংসভাবে ছত্রভঙ্গ করা এবং মন্ডলেনের আইনজীবী পাওলো গোয়াম্বে দলের সদস্য এলভিনো ডায়াসের হত্যাকাণ্ড-সহ - দমন-পীড়নের উপর ফ্রেলিমোর অব্যাহত নির্ভরতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ মোজাম্বিকের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভঙ্গুরতাকে তুলে ধরে এবং এর ফলে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও গভীর হতে পারে।

২০২৪ সালের নির্বাচন জনসাধারণের অসন্তোষের এক অভূতপূর্ব প্রবাহের সূত্রপাত করে, যা ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো (ফ্রেন্তে দে লিবের্তাচাও দে মোজাম্বিক) দলের দীর্ঘস্থায়ী দখলকে চ্যালেঞ্জ করে।

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি চাপো দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন বিদেশ মন্ত্রকের (এমইএ) সচিব (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) দাম্মু রবি।

অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং আঞ্চলিক পরিণতি

নির্বাচন-পরবর্তী অস্থিরতা মোজাম্বিকের অর্থনীতি আঞ্চলিক বাণিজ্যকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি নতুন চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নগর কেন্দ্রগুলিতে বিক্ষোভ ধর্মঘটের ফলে প্রায়শই বাণিজ্যিক কার্যকলাপ অচল হয়ে পড়েছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্র মাপুতো বন্দরের কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে প্রতিবেশী দেশগুলি, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা - যারা অর্ধেকেরও বেশি ক্রোম রফতানির জন্য বন্দরের উপর নির্ভরশীল - প্রভাবিত হয়েছে।

আন্তঃসীমান্ত পরিবহণ স্থগিতকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পথগুলি বন্ধ করে দেওয়া আন্তঃসংযুক্ত সাউথ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি বা দক্ষিণ আফ্রিকান উন্নয়ন সম্প্রদায় (এসএডিসি) অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি  করেছে, যা দর্শায় যে, মোজাম্বিকের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা কী ভাবে এই অঞ্চল জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

সংঘাতের কারণে ভেঙে পড়ছে এলএনজি স্বপ্ন

মোজাম্বিকের বিশাল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) মজুত তার  অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে। তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং কাবো দেগাদোতে একটি দৃঢ় জিহাদি বিদ্রোহ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আনসার আল-সুন্নার নেতৃত্বে বিদ্রোহ দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং প্রধান এলএনজি বিনিয়োগকে হুমকির মুখে ফেলেছে। রুয়ান্ডা বাহিনী এবং অন্যদের কিছু সামরিক সাফল্য সত্ত্বেও অন্তর্নিহিত অভিযোগগুলি - অর্থনৈতিক বর্জন সম্পদ বণ্টনের অভাব - মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থাগুলি সতর্ক রয়েছেকারণ নিরাপত্তাহীনতা দুর্বল শাসনব্যবস্থা একটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে যা বিনিয়োগকে বিলম্বিত করতে বা বাধা দিতে পারে এবং মোজাম্বিককে তার প্রাকৃতিক সম্পদকে পুঁজি করে তোলার বিষয়টিকে বাধা দিতে পারে।

রুয়ান্ডা বাহিনী এবং অন্যদের কিছু সামরিক সাফল্য সত্ত্বেও অন্তর্নিহিত অভিযোগগুলি - অর্থনৈতিক বর্জন সম্পদ বণ্টনের অভাব - মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ইতিহাসে নিহিত

মোজাম্বিকের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসে গভীর ভাবে প্রোথিত। ১৯৭৫ সালে পর্তুগাল থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি ফ্রেলিমো এবং রেনামোর (রেজিসস্তেনজিয়া নাশিনাল মোজাম্বিকানা) মধ্যে ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত হয়। ১৯৯২ সালের শান্তি চুক্তি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেও ফ্রেলিমো নির্বাচনী কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনের পরের ঘটনাগুলি এই ঐতিহ্যকেই প্রতিফলিত করে - ভিন্নমত দমন, জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনী অনুশীলন এবং রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড গণতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলিকে ক্ষয় করে চলেছে। ভয় রাজনৈতিক বর্জনের সংস্কৃতি একটি প্রাণবন্ত, জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করে।

গণতান্ত্রিক ক্ষয় এবং নির্বাচনী জালিয়াতি

মোজাম্বিকের নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে ভোটারদের ভয় দেখানো পক্ষপাতদুষ্ট তদারকি-সহ কারচুপির অভিযোগে বিপর্যস্ত। ২০২৪ সালের নির্বাচন জনসাধারণের সন্দেহকে আরও তীব্র করে তুলেছিল। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অনিয়মের নিন্দা করলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর ফ্রেলিমোর আধিপত্য গণতন্ত্রের আবরণ সরিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়।

নির্বাচনী অসদাচরণের জন্য জবাবদিহিতার অভাব এমন একটি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে, যেখানে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা হয় এবং নাগরিকদের মোহভঙ্গ বৃদ্ধি পায়। এই গণতান্ত্রিক ক্ষয় সরকারের বৈধতাকে দুর্বল করে অস্থিতিশীলতাকে স্থায়ী করে।

দুর্নীতি এবং বৈষম্য

সম্পদ দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মোজাম্বিক গভীর অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে যুঝছে। অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি ফ্রেলিমোর সঙ্গে যুক্ত অভিজাতদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে বাকিরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১৬ সালের ‘গোপন ঋণ কেলেঙ্কারি - যার মধ্যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অপ্রকাশিত ঋণ জড়িত ছিল - একটি আর্থিক সঙ্কটের সূত্রপাত করেছিল এবং সর্বোচ্চ সরকারি স্তরের মধ্যেকার দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছিল।

অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি ফ্রেলিমোর সঙ্গে যুক্ত অভিজাতদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে বাকিরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।

ক্রমাগত কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ — দুর্বল অবকাঠামো, সীমিত দক্ষ শ্রম, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের অভাব — উন্নয়নকে আরও বাধাগ্রস্ত করে। এই সমস্যা বর্জনের ধারণা জনসাধারণের ক্ষোভ সামাজিক অস্থিরতাকে উস্কে দেয়।

কাবো দেলগাদো সঙ্কট: বিদ্রোহ বাস্তুচ্যুতি

২০১৭ সাল থেকে কাবো দেলগাদোতে জিহাদি-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহ একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি অর্থনৈতিক বর্জনের উপর স্থানীয় অভিযোগগুলিকে কাজে লাগায়, বিশেষ করে অঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের বিষয়ে। এক মাসে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬০,০০০ শিশু রয়েছেঅনেকেই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং নির্যাতন বা সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগের ঝুঁকির সামনে অরক্ষিত।

এই সঙ্কট স্থানীয় পরিষেবাগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে১০০টিরও বেশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ৫০,০০০-এরও বেশি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। নামপুলার এরাতি জেলায় কলেরার প্রাদুর্ভাব - যেখানে ৪৫,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন - মানুষের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এক দিকে বিশুদ্ধ জল, স্বাস্থ্যসেবা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দুষ্প্রাপ্য এবং অন্য দিকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এমন একটি দেশে আরও গুরুতর হচ্ছে, যেখানে ৮০ শতাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। সীমিত আবাদযোগ্য জমির কারণে সংঘাত-সৃষ্ট ব্যাঘাতগুলি আরও বেশি সংখ্যক সম্প্রদায়কে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: প্রতিরোধের এক নতুন মুখ

চিরাচরিত ভাবে রাষ্ট্র কঠোর ভাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করত। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন এই ধারা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের বিক্ষোভের সময় সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পরেও ডিজিটাল মঞ্চগুলি বিক্ষোভকারীদের একত্রিত করতে এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য বিকল্প পথ প্রদান করে এবং মোজাম্বিক অঞ্চল জুড়ে রাজনৈতিক সমীকরণকে নতুন করে আকার দিতে পারে।

ভুল তথ্য এবং রাষ্ট্র পরিচালিত কোনও বিষয়ের মোড় স্রেফ ঘুরিয়ে দেওয়ার অভ্যাস যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় হলেও বিশেষ করে শহুরে যুবকদের মধ্যে ডিজিটাল সক্রিয়তার উত্থান নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের লক্ষণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য বিকল্প পথ প্রদান করে এবং মোজাম্বিক অঞ্চল জুড়ে রাজনৈতিক সমীকরণকে নতুন করে আকার দিতে পারে। মোজাম্বিকের জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সি এবং ২০-২৫ বছর বয়সিদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বেকার, যা যুব সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এই কঠোর অর্থনৈতিক পরিবেশে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ আসলে ক্রমবর্ধমান হতাশাকেই দর্শায়।

আন্তর্জাতিক ঝুঁকি এবং মানবিক ঘাটতি

মোজাম্বিকের বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরতা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলিকে সংস্কারের জন্য চাপ দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তবে এলএনজি সংক্রান্ত সম্ভাবনার কারণে দেশের কৌশলগত গুরুত্ব এই সমীকরণকে জটিল করে তোলে এবং বিশ্বব্যাপী শক্তিগুলি এই মুহূর্তে জবাবদিহিতার চাইতেও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও মানবিক তহবিলের পরিমাণ বিপজ্জনক রকমের কম। ইউনিসেফ (রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু সংক্রান্ত তহবিল) শুধুমাত্র জরুরি সাহায্যের জন্য ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করলেও বড় ধরনের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সুনির্দিষ্ট সহায়তার মধ্যে এই বিচ্ছিন্নতা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগকে দীর্ঘায়িত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারকে বিলম্বিত করার  ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

মোজাম্বিকে ভেনানসিও মন্ডলেনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফ্রেলিমো-র প্রতি অসন্তোষ একত্রিত হয়েছে। মন্ডলেন বিদেশ থেকে মানুষকে একত্রিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেছিলেন এবং শহুরে হতাশা যুব সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে একটি ভেঙে পড়া রাষ্ট্র

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকেই নির্বাচনী জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সন্দেহ মোজাম্বিককে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ২০২৪ সালের বিক্ষোভ সম্ভাব্য তীব্রতর বাঁকবদলকেই দর্শায়দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে দীর্ঘকাল ধরে প্রভাবশালী মুক্তিকামী দলগুলি ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে - দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) থেকে শুরু করে জিম্বাবুয়ের জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জেএএনইউ-পিএফ) পর্যন্ত। মোজাম্বিকে ভেনানসিও মন্ডলেনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ফ্রেলিমো-র প্রতি অসন্তোষ একত্রিত হয়েছে। মন্ডলেন বিদেশ থেকে মানুষকে একত্রিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেছিলেন এবং শহুরে হতাশা যুব সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন।

জাতিগত উত্তেজনাও পুনরুত্থিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নুসি কাবো দেলগাদোর বাসিন্দা হলেও তাঁর মাকন্দো জাতিগততার কারণে রাষ্ট্রকে, বিশেষ করে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘মাকোন্দিকরণ’ করার অভিযোগ উঠেছে। জাতিগত পক্ষপাতিত্বের এই ধারণা আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও গভীর করে তোলে, বিশেষ করে মাকুয়ার মতো চিরাচরিত ভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির প্রেক্ষিতেপ্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট চাপো বেইরা বন্দরের কাছে সোফালা প্রদেশের বাসিন্দা।

একটি অনিশ্চিত অগ্রগতির পথ

মোজাম্বিকের পথ চলার বিষয়টি অনিশ্চিত। ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বেশ কয়েকটি আন্তঃসংযুক্ত কারণের উপর, বিশেষ করে এলএনজি প্রকল্পের স্থিতিশীলতা, জনসংখ্যার পরিবর্তন এসএডিসি, রুয়ান্ডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহিরাগত দেশের ভূমিকার উপর। তবে জরুরি চ্যালেঞ্জগুলি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা গতিশীলতা মোকাবিলায় নিহিত।

এ ক্ষেত্রে যে দুটি মূল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, তা হল - প্রথমত, গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক মডেল অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন স্থায়ী শান্তি প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ফ্রেলিমো একটি গুরুতর বৈধতা সঙ্কটের সম্মুখীন। পদ্ধতিগত দুর্নীতি, অর্থনৈতিক প্রান্তিকীকরণ বিদ্রোহের কারণগুলির মোকাবিলা না করলে মোজাম্বিক সহিংসতা, দমন অনিশ্চয়তার চক্রে টকে পড়বে।

মোজাম্বিকে ভারতের প্রধান রফতানির মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য, ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি এবং অন্য দিকে ভারতে মোজাম্বিকের প্রধান রফতানি হল কোকিং কয়লা, কাজুবাদাম কাঁচা কৃষি পণ্য।

ভারত ও মোজাম্বিক

ভারত মোজাম্বিকের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, যার মোট বাণিজ্য মূল্য ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মোজাম্বিকে ভারতের প্রধান রফতানির মধ্যে রয়েছে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য, ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি এবং অন্য দিকে ভারতে মোজাম্বিকের প্রধান রফতানি হল কোকিং কয়লা, কাজুবাদাম কাঁচা কৃষি পণ্য। ভারত মোজাম্বিক থেকে কয়লার একটি প্রধান আমদানিকারকও। কয়লা গ্যাসে ভারতের ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ রয়েছে, যার সমান পরিমাণ নিষ্পত্তির অপেক্ষাধীন।

মোজাম্বিক ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার। সম্প্রতি মাপুতোতে হাই কমিশনে একটি নতুন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। ভারত ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর মোজাম্বিক সরকারকে দুটি জলযান ফাস্ট ইন্টারসেপ্টর ক্রাফট (এফআইসি) উপহার দিয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী মোজাম্বিকে মানবিক সহায়তা দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) প্রদানের জন্য প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল দেশ হিসেবে কাজ করেছে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে।

মোজাম্বিক ভারত মহাসাগরেও ভারতের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টায় জড়িত। সাগর (অঞ্চলের সকলের জন্য নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধি) কর্মসূচিটি দ্বিতীয় দশকে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত মহাসাগর-এর অধীনে ইন্ডিয়ান ওশান শিপ (আইওএস) সাগর এবং এআইকেইওয়াইএমই (আফ্রিকা-ভারত কি মেরিটাইম এনগেজমেন্ট) চালু করেছে, যা এই অঞ্চল জুড়ে পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদারএবং প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল দেশ’ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভূমিকাকে আরও জোরদার করেছে। এআইকেইওয়াইএমই-তে মোজাম্বিকের কর্মী মোজাম্বিক এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে পরিচালিত ভারত মহাসাগর জাহাজ (আইওএস) সাগর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মোজাম্বিকের অস্থিতিশীলতা ভারত মহাসাগরকে প্রভাবিত করে ভারত মহাসাগর এখন ভারত, জাপান ফ্রান্সের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রবিন্দু। বিদ্রোহ কৌশলগত মোজাম্বিক চ্যানেলের জন্য হুমকি। পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সক্রিয় কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত ফ্রান্স সমন্বিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টার মাধ্যমে সামুদ্রিক চলাচল সুরক্ষিত করতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ রক্ষা করতে সহযোগিতা করতে পারে।

 


গুরজিৎ সিং জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, আসিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.