Author : Harsh V. Pant

Published on Jun 25, 2024 Updated 1 Days ago
মোদী ৩.০: চিন, পাকিস্তান এবং মলদ্বীপ কী আশা করতে পারে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব খুব স্বাভাবিক ভাবেই আগামী দিনের পরিবর্তন এবং অন্যান্য ধারাবাহিক ঘটনার উপর নজর রাখছে। মোদীকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা দ্বারা খানিকটা সীমাবদ্ধ বলে মনে হলেও তা ভারতের বাহ্যিক সম্পৃক্ততার উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। মোদী বিশ্বের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার পদ্ধতিকে মৌলিক ভাবে পরিবর্তন করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে আগামী পাঁচ বছর সেই পথটি বিকশিত হতে থাকবে। এটি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং উদীয়মান ক্রমে ভারতের কেন্দ্রীয়তা এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। মোদী সরকার ক্ষমতায় বহাল থাকার দরুন এটি ভারতের অংশীদার এবং প্রতিপক্ষকে নয়াদিল্লির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মূল্যায়ন করার নতুন সুযোগ প্রদান করবে।

 

একটি পরিবর্তিত পরিসর

ভারতের অংশীদারদের জন্য মোদীক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতা সুনিশ্চিত করে যে, গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল, সেই কাঠামোটি বহাল থাকবে এবং আগামিদিনে তা আরও শক্তিশালী হবে। মোদী সরকার ভারতের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসেবে ভারতের অংশীদারিত্বের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে সফল হয়েছে। ঘনিষ্ঠ সাযুজ্যকে বর্তমানে একটি সীমাবদ্ধতা হিসাবে দেখার পরিবর্তে সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে মজবুত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং ভারতের কৌশলগত পরিসরকে কৌশলে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

অভিযোজন ক্ষমতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি বিশ্বব্যবস্থায় ভারত গত দশকে পশ্চিমের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সফল হয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান বৈরিতা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গেও তার সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেএক দিকে, এই প্রবণতাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াকে সংযুক্ত করে চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ অর্থাৎ কোয়াড তৈরি করেছে এবং নয়াদিল্লির ভূমিকা তাতে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, ভারত ব্রিকস-প্লাস তৈরি করে ব্রিকস মঞ্চের বিকশিত চাপ বৃদ্ধি করতে থেকেছে। চিনেউপস্থিতি সত্ত্বেও ভারত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের ভাবমূর্তি উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে, তা সে বহুপাক্ষিক বা ক্ষুদ্রপাক্ষিকই… যা-ই হোক না কেন। গত কয়েক বছরে কোয়াডের সঙ্গে ভারতের গুরুতর সম্পৃক্ততার কারণে কোয়াড সবচেয়ে উচ্চ স্তরের বহুমুখী গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে।

ভারতের অংশীদারদের জন্য মোদী সরকারের ধারাবাহিকতা অর্থ হল নয়াদিল্লির অগ্রাধিকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ফলাফল নির্মাণ এবং ভারতীয় স্বার্থ অন্বেষণে অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় ভাবে কাজ করার মাধ্যমে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণের ঘটনা দর্শায় যে, ভারতের প্রতিবেশীর উপর মনোযোগ অব্যাহত থাকবে। যদিও এটি একটি সঙ্কেত যে নয়াদিল্লি তার পরিধিতে কৌশলগত স্থান হস্তান্তর করার কোন ইচ্ছা প্রকাশ করছে না। অনুষ্ঠানের দিন নয়াদিল্লিতে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর উপস্থিতি আসলে দ্বীপদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থিতিয়ে এলে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার জন্য মালের তরফে উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দর্শায়।

 

ভারতের প্রতিবেশীদের জন্য মোদীর তৃতীয় মেয়াদের অর্থ কী?

প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান কিছুটা সতর্কতার সঙ্গেই মোদী ৩.০ পর্যায়কে দেখবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামাবাদের তরফে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ তৈরি হলেও তবে তা দ্রুত কোনও মুনাফা প্রদান করবে বলে মনে হয় না। মোদী তাঁর নিজের শর্তে এবং নয়াদিল্লির পছন্দের সময় ও স্থান অনুযায়ী পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালাবেন। পাকিস্তানের প্রতি ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার কোন বাস্তবিক তাড়াহুড়ো নেইকারণ নয়াদিল্লি গত এক দশকে শুধু আন্তর্জাতিক মঞ্চেই নয়, ভারতীয় রাজনৈতিক আখ্যানেও পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে সফল হয়েছে। এটি ভারতকে প্রকৃত কৌশলগত চ্যালেঞ্জ অর্থাৎ চিনের দিকে তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ করে দিয়েছে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অভিনন্দন বিনিময়ের প্রতিবাদ করে বেজিং ইতিমধ্যেই মোদীর সঙ্গে ফের তিক্ততা শুরু করেছে এবং এই যুক্তি দিয়েছে যে, নয়াদিল্লির উচিত তাইওয়ান সংক্রান্ত রাজনৈতিক দর কষাকষি’ থেকে বিরত থাকা। এবং যখন চিনেবিদেশমন্ত্রক মোদীকে তাঁর নির্বাচনী বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিল, ভারত কেবল এ কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছিল যে, নয়াদিল্লি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে।

ভারতে নতুন সরকার আকার নিচ্ছে। একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং একটি প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের পাশাপাশি পুনরুজ্জীবিত মোদী ৩.০-র অধীনে নয়াদিল্লি বিশ্ব মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হতে চলেছে ভারতের অংশীদার এবং এর প্রতিপক্ষ উভয়েরই সেই আত্মবিশ্বাসী ভারতের প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত, যে দেশ আসলে নিজের শর্তমাফিক বিশ্বকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.