-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই ভারত পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলের উপকূলীয় দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতায় তার ‘মহাসাগর’ উদ্যোগ চালু করতে প্রস্তুত।
ভারত তার ‘সাগর’— অর্থাৎ সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন বা অঞ্চলের সকলের জন্য নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধি — মতবাদের দশম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছে এবং এই মতবাদই এখন বদলে ‘মহাসাগর’-এ উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মরিশাস সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের ‘মহাসাগর’ উদ্যোগের উন্মোচন করেন, যা ‘অঞ্চল জুড়ে নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক ও সামগ্রিক অগ্রগতি’কেই উপস্থাপন করে।
ঘোষণার এক মাসের মধ্যে ভারত পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলের (ডব্লিউআইওআর) উপকূলীয় দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতায় তার ‘মহাসাগর’ উদ্যোগ চালু করতে প্রস্তুত। ১৩ থেকে ১৮ এপ্রিল ভারতীয় নৌবাহিনী তানজানিয়া পিপলস ডিফেন্স ফোর্স-এর (টিপিডিএফ) সঙ্গে অংশীদারিত্বে ‘এআইকেইওয়াইএমই’ (আফ্রিকা-ইন্ডিয়া কি মেরিটাইম এনগেজমেন্ট বা মূল সামুদ্রিক সম্পৃক্ততা) নামে ছ’দিনের একটি বৃহৎ পরিসরের যুদ্ধমহড়া পরিচালনা করেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উদ্বোধনী মহড়ার সূচনা করেন, যেখানে ভারতীয় নৌবাহিনী ও দশটি আফ্রিকান দেশ অংশগ্রহণ করে এবং যা দেশের পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতের পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (ডব্লিউআইওআর) কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরবে। অংশগ্রহণকারী দশটি আফ্রিকান দেশ হল কোমোরোস, জিবুতি, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস, মোজাম্বিক,
সেশেলস, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সহ-আয়োজক দেশ তানজানিয়া।
বন্দর পর্বে জলদস্যুতা এবং তথ্য ভাগাভাগির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ‘টেবল-টপ’ এবং ‘কমান্ড-পোস্ট’ সংক্রান্ত মহড়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি ভেসেল অ্যান্ড ভিজিট, বোর্ড, সার্চ অ্যান্ড সিজার (ভিবিএসএস) অভিযানের প্রশিক্ষণও ছিল।
এআইকেইওয়াইএমই দু’টি ধাপে পরিচালিত হয়েছে: বন্দর পর্ব ও সমুদ্র পর্ব। বন্দর পর্বে জলদস্যুতা এবং তথ্য ভাগাভাগির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ‘টেবল-টপ’ এবং ‘কমান্ড-পোস্ট’ সংক্রান্ত মহড়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি ভেসেল অ্যান্ড ভিজিট, বোর্ড, সার্চ অ্যান্ড সিজার (ভিবিএসএস) অভিযানের প্রশিক্ষণও ছিল। বিপরীতে সমুদ্র পর্বে নৌদক্ষতার বিবর্তন, অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযান, ভিবিএসএস মহড়া, ছোট অস্ত্র চালনা এবং হেলিকপ্টার অভিযান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এআইকেইওয়াইএমই-এর সঙ্গে একযোগে ভারত ভারত মহাসাগর অঞ্চলের (আইওআর) বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ইন্ডিয়ান ওশান শিপ (আইওএস) সাগর নামে আর একটি উদ্বোধনী উদ্যোগ চালু করতে প্রস্তুত। এই উদ্যোগের অধীনে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আইএনএস সুনয়না দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হবে, যেখানে ভারত ও আরও ন’টি দেশের কর্মীদের সমন্বয়ে একটি সম্মিলিত ক্রু থাকবে এবং এই ন’টি দেশ হল কোমোরোস, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মলদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, সেশেলস,
শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
২০২৫ সালের এপ্রিলে এক মাস ধরে চলা এই মোতায়েনের মধ্যে দার এস সালাম, নাকালা, পোর্ট লুইস, পোর্ট ভিক্টোরিয়া ও মালে বন্দরে অভিযান অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সময়কালে, জাহাজটি তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মরিশাস ও সেশেলসের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে যৌথ নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এআইকেইওয়াইএমই এবং আইওএস সাগর-এর প্রস্তুতি হিসেবে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি ছাড়াও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির নৌ কর্মকর্তারা কোচির একটি নৌ পেশাদার স্কুলে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। প্রশিক্ষণের মধ্যে সমুদ্রে প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। নির্বাচিত কর্মীরা তাঁদের জাতীয় প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে পুরো জাহাজের কার্যক্রম, নজরদারি ও অন্যান্য অনুশীলনে নিযুক্ত হবেন। এই প্রশিক্ষণ তাঁদেরকে আইএনএস সুনয়নায় মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও প্রদান করবে। এ ছাড়াও অংশগ্রহণকারীরা দার এস সালামে এআইকেইওয়াইএমই মহড়ার বন্দর পর্যায়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
ভারত-আফ্রিকা সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা
২০১৮ সালের জুলাই মাসে উগান্ডার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থাপনের দশটি নির্ধারক নীতির রূপরেখা দেন এবং প্রতিটি নীতির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ভারতের সহযোগিতার অষ্টম নীতি ছিল ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত আফ্রিকান নৌবাহিনীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে, বিশেষ করে জলদস্যুতা-বিরোধী অভিযান। ২০১৮ সালে, ভারতীয় নৌবাহিনী দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকান এবং ব্রাজিলিয়ান নৌবাহিনীর পাশাপাশি আইবিএসএএমএআর-৬ মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এই মহড়ার অংশ হিসেবে ভারতীয় জাহাজগুলিকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল, যার মধ্যে সেশেলস, মরিশাস, রিইউনিয়ন, মাদাগাস্কার ও কোমোরোস অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বিবার্ষিক ভাবে মিলন মহড়াও পরিচালনা করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত পূর্ব নৌ কম্যান্ডের তত্ত্বাবধানে বিশাখাপত্তনমে মিলনের দ্বাদশ সংস্করণ আয়োজন করে। ২০২৪ সালের এই সংস্করণ - যা এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ - তাতে ৫৩টি দেশের নৌবাহিনী অংশগ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে ১৬টি আফ্রিকান দেশ ছিল: কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস,
মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নাইজেরিয়া, সেশেলস, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া ও টোগো।
এআইকেইওয়াইএমই মহড়ার লক্ষ্য আফ্রিকান নৌবাহিনীর সঙ্গে আন্তঃকার্যক্ষমতা জোরদার করা। কিছুদিন ধরে ভারত এবং অনেক আফ্রিকান দেশ তথ্য ভাগ করে নেওয়া ও নজরদারির মাধ্যমে জলদস্যুতা, পাচার এবং অনিয়ন্ত্রিত বা অপ্রতিবেদিত মাছ ধরা-সহ সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করছে। আন্তঃকার্যক্ষমতা অর্জনের জন্য দ্রুত ও অবাধ যোগাযোগ অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে ভারত ২০২৪ সালে সমস্ত বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদার নৌবাহিনীকে সংযুক্ত করার জন্য নিশার যোগাযোগ টার্মিনাল চালু করে।
দেশটির মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম, বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও পেশাদারিত্ব ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
পরিশেষে, ভারত মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) সঙ্কটে সর্বদা প্রথম সাড়া প্রদানকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে। দেশটির মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম, বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও পেশাদারিত্ব ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সর্বোপরি, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত মরিশাসের আগলেগা দ্বীপে একটি নতুন বিমানঘাঁটি ও জেটি উদ্বোধন করে, যা এই অঞ্চলে যে কোনও জরুরি অবস্থার সময় ভারতকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে সহায়তা করবে।
ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ার দরুন - যা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলকে বৃহত্তর ভারত মহাসাগর ও তার বাইরেও সংযুক্ত করে - পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চল তীব্র প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই অঞ্চলটি সমুদ্র ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও প্রকাশ্যে এনেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের উপর আক্রমণ, জলদস্যুতা এবং অপহরণের প্রচেষ্টা।
ভারত দ্বিবার্ষিক অনুষ্ঠান হিসেবে এআইকেইওয়াইএমই প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েছে এবং ভবিষ্যতের সংস্করণগুলিতে পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এর পরিধি বিস্তৃত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এই মহড়াটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ‘পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার’ এবং ‘প্রথম সাড়া প্রদানকারী’ হিসেবে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত ‘এআইকেইওয়াইএমই’ শব্দবন্ধটি ঐক্যকে বোঝায়। যেহেতু এআইকেইওয়াইএমই ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলিকে একত্রিত করার জন্য প্রস্তুত, তাই ‘মুক্ত এবং অবাধ’ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়ে দ্য প্রিন্ট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at ORF where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global order. He has a ...
Read More +