-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পরিপূরক হিসেবে জাপান ভারতের উত্তর-পূর্বের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে জাপান ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের (নর্থ-ইস্ট রিজিয়ন বা এনইআর) উন্নয়নে ধারাবাহিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই সম্পৃক্ততা উন্নয়নের ক্ষেত্র ও গভীরতা… দুই প্রেক্ষিতেই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিস্তৃত ভাবে, এই সম্পৃক্ততা টোকিয়োর ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। গত দশক ধরে টোকিয়ো এই অঞ্চলে অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ, সংযোগ বৃদ্ধি ও এই অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সম্প্রতি সমাপ্ত অ্যাডভান্টেজ অসম ২.০— ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সামিট ২০২৫ - যা ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল - টোকিয়োর এনইআর-এর উন্নয়নের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির কথাই তুলে ধরে, যেখানে জাপানি রাষ্ট্রদূত ওনো কেইচি অবকাঠামোগত অগ্রগতি, শিক্ষাগত সম্পর্ক ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছেন। এই অনুষ্ঠানে ৬২টি বিদেশি মিশন একত্রিত হয়েছিল এবং ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি ও বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্ধপরিবাহী, দূষণহীন জ্বালানি ও উন্নত সংযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
জাপানের সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে অবকাঠামো প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বা জিআইসিএ) যোগাযোগ উন্নত করতে এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এই ধরনের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। জিআইসিএ ৭৫০ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন রাস্তা নির্মাণে সহায়তা করেছে, যা এই অঞ্চল জুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে। পণ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ ও বাসিন্দাদের জন্য অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগগুলি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।
গত দশক ধরে টোকিয়ো এই অঞ্চলের অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ, সংযোগ বৃদ্ধি ও এই অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, অসম, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর এবং ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলিতে সড়ক শৃঙ্খল, সেতু ও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পগুলির জন্য জিআইসিএ উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি হল উত্তর-পূর্ব সড়ক শৃঙ্খল সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প, যা বাণিজ্য ও চলাচল সহজতর করার জন্য জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলিকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এই প্রকল্পটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ভারত-জাপান অ্যাক্ট ইস্ট ফোরামের লক্ষ্য অনুসারে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ জোরদার করে।
ভৌত সংযোগ প্রকল্প ছাড়াও জাপান এই অঞ্চলের জল সরবরাহ ও স্বাস্থ্যবিধান সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতেও সক্রিয়ভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, গুয়াহাটিতে জিআইসিএ দীর্ঘস্থায়ী নগর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জল সরবরাহ অবকাঠামো উন্নত করার উদ্যোগগুলিকে অর্থায়ন করেছে ও সহায়তা জুগিয়েছে। এর পাশাপাশি টোকিয়ো সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য প্রকল্পগুলিকেও সমর্থন করেছে, যা এই রাজ্যগুলির পরিবেশগত সংবেদনশীলতা রক্ষা করার লক্ষ্যে গৃহীত। উদাহরণস্বরূপ, ত্রিপুরায় স্থিতিশীল অরণ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা বৃদ্ধির পাশাপাশি অরণ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করে।
জিআইসিএ দীর্ঘস্থায়ী নগর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জল সরবরাহ অবকাঠামো উন্নত করার উদ্যোগগুলিকে অর্থায়ন করেছে ও সহায়তা জুগিয়েছে।
২০২৪ সালে টোকিয়ো ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন’টি প্রকল্পের জন্য ২৩২.২০৯ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (ওডিএ) ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মূল প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্ব সড়ক শৃঙ্খল সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প (পর্যায় ৩), ধুবড়ি-ফুলবাড়ি সেতুর অর্থায়ন ও সপ্তম পর্যায়, জাতীয় সড়ক ১২৭বি-র ফুলবাড়ি-গোয়েরাগ্রে অংশকে সমর্থন জোগানো। এই সমস্ত উদ্যোগের লক্ষ্য পরিবহণ সংযোগ জোরদার করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি করা ও আঞ্চলিক সংহতি উন্নত করা। এর পাশাপাশি ১০ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন প্রকল্পের মাধ্যমে কোহিমায় নাগাল্যান্ড ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করা হবে, যা এই অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নত করবে।
সম্প্রতি জাপান ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (জেবিআইসি) ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভারতের পাওয়ার ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (পিএফসি) সঙ্গে তাদের সর্ববৃহৎ সবুজ অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ১২০ বিলিয়ন ইয়েন (৭৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণের লক্ষ্য হল পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করা, যা ভারতের ন্যায্য রূপান্তর লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এই চুক্তিটি জেবিআইসি-র ‘গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ এবং এতে সুমিতোমো কর্পোরেশন ও এএমপিআইএন এনার্জি ট্রানজিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাপানি শক্তি জড়িত। উপরন্তু, জাপান ও ভারত টোকিয়োতে সবুজ অ্যামোনিয়া রফতানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ভারত-জাপান ভিশন ২০২৫-এর অধীনে তাদের জ্বালানি অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে। ২০২২ সালে চালু হওয়া জাপানের ব্যাম্বু ভ্যালু চেন ইনিশিয়েটিভের লক্ষ্য হল একটি হাব-অ্যান্ড-স্পোক মডেলের মাধ্যমে এই অঞ্চলের বাঁশ শিল্পকে শক্তিশালী করা। জিআইসিএ, ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশন (এনবিএম) এবং নর্থ-ইস্ট কেন অ্যান্ড ব্যাম্বু ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এনইসিবিডিসি) দ্বারা সমর্থিত এই প্রকল্পে বাঁশের পণ্যের নকশা বৃদ্ধি, কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও শিল্প-শিক্ষা-সরকার সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগটিতে বাঁশভিত্তিক পশুখাদ্য ও ফুটপাথ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত উপকরণের ব্যবহারের বিষয়টিও অন্বেষণ করার পাশাপাশি একটি যৌথ সমন্বয় কমিটির (জেসিসি) বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করেছে, যা একই সঙ্গে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের প্রচার করে।
জাপান ও ভারত টোকিয়োতে সবুজ অ্যামোনিয়া রফতানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ভারত-জাপান ভিশন ২০২৫-এর অধীনে তাদের জ্বালানি অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ভাবে জাপান এই অঞ্চলের সঙ্গে এক অনন্য সংযোগ স্থাপন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মধ্যে মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে জাপান মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণে সহায়তা করেছে। উপরন্তু, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতেও উৎসাহ জোগানো হয়েছে, যার মধ্যে অসমের কটন বিশ্ববিদ্যালয় ও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাপানি ভাষার কোর্স চালু করা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালে তৃতীয় ভারত-জাপান শিক্ষা সম্মেলনে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী সুযোগ প্রদানে জাপানের সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। ১,৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেছিল এবং জাপানি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিল। এ ছাড়াও, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, বৃত্তি ও শিক্ষাগত সহযোগিতা মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে, বিশেষ করে দক্ষতা উন্নয়ন এবং পর্যটনের মতো ক্ষেত্রে।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতেও উৎসাহ জোগানো হয়েছে, যার মধ্যে অসমের কটন বিশ্ববিদ্যালয় ও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাপানি ভাষার কোর্স চালু করা অন্তর্ভুক্ত।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জাপানের সম্পৃক্ততা তার কৌশলগত স্বার্থ দ্বারাও নির্ধারিত। এই অঞ্চলটি ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল করিডোর হিসেবে কাজ করে, যা ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি ও জাপানের মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওইআইপি) দৃষ্টিভঙ্গি উভয়ের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে টোকিয়ো উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আঞ্চলিক অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বিত করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি করা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃহৎ আকারের প্রকল্পগুলির সঙ্গে ভারতের একমাত্র বিদেশি উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে জাপান ২০১৭ সালে চালু হওয়া অ্যাক্ট ইস্ট ফোরামের মাধ্যমে সড়ক শৃঙ্খল, জল সরবরাহ, অরণ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে সমর্থনকারী ওডিএ প্রদান করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে ও অঞ্চলের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বিদ্রোহীদের দ্বারা প্রায়শই অস্থিতিশীল একটি সংবেদনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও আমলাতান্ত্রিক বাধা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটিয়েছে এবং এই সব কিছুই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি অংশীদার দেশগুলির জন্য একটি জটিল ভৌগোলিক অবস্থান উপস্থাপন করে। তবে জাপানের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিয়েছে। ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পরিপূরক হিসেবে জাপান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ গঠনে, এর সংযোগ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং কৌশলগত তাৎপর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
প্রত্নশ্রী বসু অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...
Read More +