Author : Kabir Taneja

Published on Jun 23, 2025 Updated 0 Hours ago

একটি বিপর্যয় আসন্ন হলেও ইরানকে তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য এই হামলা যথেষ্ট বলে প্রমাণিত না-ও হতে পারে।

ইরান ও ইজরায়েল: ছায়াযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে

পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হওয়ার পথে তেহরানের অগ্রগতিকে বিলম্বিত করার লক্ষ্যে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি লক্ষ্য করে ক্রমাগত সামরিক হামলা চালাচ্ছে জরায়েল। ইরায়েলের প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই সামরিক বিকল্পটি বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দিয়েছেন এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান এই পদক্ষেপগুলিকে যুদ্ধ ঘোষণা বলে ব্যাখ্যা করেছে।

বিশ্ব যখন বিস্তৃত সংঘাত ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কায় জর্জরিত, তখন ইহুদি রাষ্ট্র শিয়া ইসলামের ক্ষমতার আসনের মধ্যে এই সর্বশেষ দফা সংঘর্ষ আসলে কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান একটি ছায়াযুদ্ধকেই প্রকাশ্যে তুলে এনেছে। রায়েল এবং ইরান উভয়ই দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের স্বার্থকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়ে আসছে; তবে, হামাসের বর্তমানে মৃত সামরিক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়া-র ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত এই অঞ্চল জুড়ে একটি বিপজ্জনক ডমিনো বা অনুরণনশীল প্রভাবের সূত্রপাত করেছে। তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষকে – যা ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলির জোট এবং যারা তেহরানের জন্য সামনের সারিতে থেকে প্রতিরক্ষা আক্রমণের ভূমিকা পালন করেছিল - ভেঙে দিয়ে ইরায়েল বর্তমান অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে

তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষকে – যা ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলির জোট এবং যারা তেহরানের জন্য সামনের সারিতে থেকে প্রতিরক্ষা আক্রমণের ভূমিকা পালন করেছিল - ভেঙে দিয়ে ইরায়েল বর্তমান অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বছরের পর বছর ধরে তীব্র আন্তর্জাতিক কূটনীতির শিকার হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমি শক্তিগুলি আলোচনার মাধ্যমে এই জটিল সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছে এবং দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইরানকে সহযোগিতার পথে হাঁটতে চাপ দিয়েছে। একই সঙ্গে রায়েল তার গোয়েন্দা কেন্দ্রগুলির নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, যাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে দুর্বল করা যায় এবং বোমা তৈরির সময়সীমাকে বিলম্বিত করা যায়। পারমাণবিকীকরণের বিতর্কের বেশির ভাগ আখ্যানেই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিরাপত্তার উপর পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ইরানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে কথা তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেকে রায়েলকে ব্যাপক ভাবে একটি অঘোষিত পারমাণবিক শক্তি বলে মনে করে। স্টকহলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অনুমান অনুযায়ী, রায়েলের কাছে প্রায় ৮০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রসম্পন্ন হতে বাধা দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এই অঞ্চলে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বজায় রাখা, যা রায়েলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি কেবল ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পর্কিত নয়।

সম্প্রতি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) মতো রাষ্ট্রগুলির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি ইজরায়েলের জন্য একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরায়েল এখনও এই মঞ্চটিকে পরিচালনাকারী একমাত্র আঞ্চলিক সামরিক বাহিনী, যা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করেছে। সূত্রের খবর, রায়েলি বিমান শক্তি ইরানের আকাশসীমা প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

তবে বছরের পর বছর ধরে চলা ছায়াযুদ্ধের ফলেই বর্তমানে যুদ্ধক্ষমতা অর্জন করেছে, যে ক্ষমতাকে বর্তমানে কাজে লাগানো হচ্ছে। ২০০৬ সালে পি৫+১ শক্তি এবং তেহরানের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রথম পর্বের সময় ইরায়েল - যারা ইরানকে শক্তিশালী পারমাণবিক শক্তি প্রদানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার তীব্র সমালোচনা করেছে - ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী সামরিক নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে চলা এই ঘটনাপ্রবাহ দর্শিয়েছে যে, তারা ইরানি সমাজ, রাজনীতি সামরিক বাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখ্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে তেহরানে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা। এ ছাড়াও বলা যায়, ২০১২ সালে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে অনুপ্রবেশ করে প্রমাণস্বরূপ স্মোকিং গান খুঁজে বের করা এবং ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড।

রায়েল এখনও এই মঞ্চটিকে পরিচালনাকারী একমাত্র আঞ্চলিক সামরিক বাহিনী, যা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করেছে।

তেহরানের জন্য বিদ্যমান রায়েলি সামরিক অভিযানটি আসলে উভয়সঙ্কট পরিস্থিতি, যার প্রতিক্রিয়ায় তারা ইরায়েলের উপর শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন নিক্ষেপ করেছেকিন্তু ইরায়েলের দেশের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যার তুলনায় ইরানের কৌশলগত ফলাফল তেমন সাফল্য অর্জন করেনি। ইজরায়েল কর্তৃক নিধন তালিকায় রয়েছেন ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর-এর (আইআরজিসি) ম্যান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি, ইরানের সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাঘেরি, আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টা দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব আলি শামখানি।

২০২০ সালে ইরাকে আমেরিকান ড্রোন হামলায় আইআরজিসি কুদস ফোর্সের নেতা কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে এই ধরনের আক্রমণের প্রতি তেহরানের আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া আংশিক ভাবে পরিকল্পনা এবং বেশ কিছুটা ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা দ্বারা চালিত হয়েছে। বর্তমান উত্তেজনায় ইরানের প্রতিক্রিয়া মূলত তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভর করছে, যা ইরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে এবং যার মধ্যে বেসামরিক হতাহতও রয়েছে। বিশেষ করে দেশটির প্রধান সামরিক বাহিনী আইআরজিসি যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে তেহরানের কাছেও প্রতিক্রিয়াশীল না হওয়ার বিকল্পগুলি সীমিত।

রায়েল ইরান উভয়ের জন্যই দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্য এখনও অস্পষ্ট। বিপর্যয় আসন্ন হলেও কেবলমাত্র এই হামলা ইরানকে তার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত না-ও হতে পারে। সর্বোপরি, এই পরিস্থিতি দেশে মধ্যপন্থী রাজনীতির পরিসরকে সঙ্কুচিত করবে এবং বর্তমান আসন্ন উভয় রাজনৈতিক শ্রেণিকেই আদর্শগভাবে আরও শক্তিশালী করবে। অনেকে যেমনটা অনুমান করছেন, শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন অধরা থাকবে কারণ কেবল একটি জনপ্রিয় আন্দোলন বা অভ্যন্তরীণ অভ্যুত্থান একটি রাষ্ট্রে এই ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং এ ক্ষেত্রে উভয়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে

বর্তমান উত্তেজনায় ইরানের প্রতিক্রিয়া মূলত তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভর করছে, যা ইরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে এবং যার মধ্যে বেসামরিক হতাহতও রয়েছে।

পশ্চিম এশিয়ায় শক্তির মেরু হিসেবে ইরানের খ্যাতি তার আয়তনের তুলনায় অনেক ছোট প্রতিপক্ষের কারণে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইরানের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটি প্রতিবন্ধকতাময় হবে। তবে ইরায়েল এবং ইরান উভয়ই এখন একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে চেয়ে আছে, যেখানে আরব প্রতিবেশীরা নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার জন্য তৎপর হবে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিগুলি নিজেরা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত না হয়েই রায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য করবে। এই সব কিছুই, তা সে উত্তেজনা বৃদ্ধি, মধ্যস্থতা কিংবা উত্তেজনা হ্রাস হোক না কেন… পরিস্থিতি পশ্চিম এশিয়া-কেন্দ্রিক হয়েই থাকবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.