ভারত হল বিশ্বব্যাপী শক্তির বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, এবং দেশটি প্রায়শই তার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে চালিত করার জন্য কৌশলগত বাণিজ্য অংশীদারিত্বের উপর নির্ভর করে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক হিসাবে ভারত ২০২২ সালে ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি করেছে, আর এই আমদানির ১৫ শতাংশ ও ৬.৩৪ শতাংশ যথাক্রমে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে৷ যাই হোক, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের উত্তাল পটভূমির মধ্যে ভারত একটি চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল, যার উপর শক্তি নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে অনিশ্চিত ভারসাম্য তৈরি করার দায় চেপেছিল।
ভারতের শক্তির ক্ষুধা বেশ বড়, কারণ এর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি। এই শক্তির চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমদানির উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস; তাই প্রশ্ন হল ভারতের শক্তি বাণিজ্যের ভূচিত্র কি একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছে বা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে?
বৈশ্বিক শক্তির ভূচিত্রে ভারতের অবস্থান
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের উপর ছায়া ফেলেছে। শক্তির ক্ষেত্রে দুই মূল খেলোয়াড় হিসাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কে যে কোনও বাধা বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হয়, এবং সরবরাহ এবং চাহিদার সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মাধ্যমে শকওয়েভ পাঠায়। ভারত তার শক্তির চাহিদা মেটাতে আমদানিকৃত তেল ও গ্যাসের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে, আর এই আমদানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন (এবং এর পশ্চিমী মিত্রদের) থেকে আসে।
শক্তির ক্ষেত্রে দুই মূল খেলোয়াড় হিসাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কে যে কোনও বাধা বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হয়, এবং সরবরাহ এবং চাহিদার সূক্ষ্ম ভারসাম্যের মাধ্যমে শকওয়েভ পাঠায়।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ ভারতের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভূচিত্র এবং শক্তি ক্ষেত্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি মূলত তেল ও গ্যাসের দামের ওঠানামা এবং জ্বালানি আমদানির স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত উদ্বেগের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ভারত তার রুশ তেলের আমদানি যথেষ্ট বাড়িয়েছে, যা যুদ্ধের মধ্যে দেওয়া ছাড়ের হার দ্বারা চালিত হয়েছে। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ভারত রাশিয়া থেকে ২৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, যেখানে ২০২১ সালে আমদানি মূল্য ছিল ৯৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চিত্র ১: ২০২২-এর জন্য ভারতের অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি অংশীদার (%-এ)
সূত্র: অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য, এই আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ বেড়েছে, যা রাশিয়াকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী করে তুলেছে। দেশটি এপ্রিল ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশে অবদান রেখেছিল। ভারত পেট্রোলিয়ামের দাম বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত নিজস্ব সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের রপ্তানি ব্যবসাকেও শক্তিশালী করেছে, যার ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যাই হোক, রাশিয়ার তেল আমদানির উপর নির্ভরতা ভারতকে বৈশ্বিক শক্তির বাজারে দ্বন্দ্বের বৃহত্তর প্রতিক্রিয়ার জন্য সংবেদনশীল করে তুলেছে।
যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কারণে তেল ও গ্যাসের দাম প্রভাবিত হওয়ায়। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে যে কোনও ব্যাঘাত তেল ও গ্যাসের দামে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। একটি প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে এর সরবরাহ সীমিত করে বাজারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী দামের ঊর্ধ্বগতির দিকে চালিত করে।
আমদানিকৃত তেলের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ভারত তাৎক্ষণিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটি উচ্চতর মূল্যস্ফীতি ও শক্তি খরচের সম্মুখীন হয়েছে। বর্ধিত অনিশ্চয়তা বাজারের জল্পনাকে প্ররোচিত করেছে, যার ফলে দাম বেড়ে গিয়েছে এবং ভারতের রাজস্ব বাজেট ও চলতি খাতের ভারসাম্যের উপর চাপ বেড়েছে। তেল ও গ্যাসের দামের ওঠানামা মুদ্রা বিনিময় হারকেও প্রভাবিত করেছে। প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন শক্তি আমদানির ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতির চাপের দিকে চালিত করে।
একটি প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে এর সরবরাহ সীমিত করে বাজারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী দামের ঊর্ধ্বগতির দিকে চালিত করে।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও প্রায়শই তেল ও গ্যাসের দামে একটি ঝুঁকির প্রিমিয়াম যোগ করে, যা বাজারের অনিশ্চয়তা ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার অনুভূত ঝুঁকিতে প্রতিফলিত হয়। যেমন, রুশ শক্তির উৎস থেকে ইউরোপের সরে যাওয়া বৈশ্বিক শক্তির ভূচিত্রে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই উপস্থাপন করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ধিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি-সহ বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছে।
যাই হোক, পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করার সীমিত ক্ষমতা দাম ক্রমাগত বেশি রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে, যা জ্বালানি খাতের স্থিতিশীলতার উপর ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা এবং বাজার শক্তির জটিল আন্তঃপ্রক্রিয়ার উপর জোর দেয়। ভূ-রাজনৈতিক কারণে উচ্চ শক্তির খরচ তারপর পরিবহণ, কৃষি ও উৎপাদন-সহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, যা আবার ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের স্তরের উপর প্রভাব ফেলে।
ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্য গতিশীলতার বিবর্তন
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব উল্লেখযোগ্যভাবে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাকে রূপ দিয়েছে, বিশেষ করে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, যার পাশাপাশি থেকেছে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের স্থায়ী সংযোগ। ঐতিহ্যগতভাবে, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও শক্তি ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যাই হোক, রাশিয়ার উপর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাসহ সংঘাতের প্রভাব পরোক্ষভাবে ভারতের আমদানিতে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, প্রভাব ফেলেছে। এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ভারত ২০২২ সালের শেষের দিকে রাশিয়াকে একটি প্রধান তেল সরবরাহকারী হিসাবে উন্নীত করে ছাড়যুক্ত রাশিয়ান তেলের আমদানি বাড়িয়েছে।
একইসঙ্গে, ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মিথস্ক্রিয়া একটি সূক্ষ্ম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান আশা করলেও, এই পশ্চিমী শক্তিগুলি রাশিয়ার সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভরতা বিবেচনা করে ভারতের কৌশলগত বাধ্যবাধকতা স্বীকার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সামরিক আলোচনা সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দিকে একটি স্থানান্তরের ইঙ্গিত দেয়, এবং সম্ভাব্যভাবে রাশিয়া থেকে সামরিক আমদানির উপর ভারতের নির্ভরতা হ্রাস করে৷
ভারতের বাস্তববাদী অবস্থান কোনও একক ব্লকের সঙ্গে পাইকারি সারিবদ্ধতার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, এবং ঐতিহ্যগত মিত্রদের চাপ ও উদীয়মান বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়ে চলার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কৌশলগুলি ঐতিহাসিক অনুষঙ্গ, সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ভবিষ্যৎ কৌশলগত অবস্থানের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক কাজ প্রতিফলিত করে। এই পদ্ধতিটি বৈশিষ্ট্য হল প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ আঞ্চলিক গতিশীলতার জটিলতার মধ্যে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি সতর্ক সারিবদ্ধকরণ। ভারতের বাস্তববাদী অবস্থান কোনও একক ব্লকের সঙ্গে পাইকারি সারিবদ্ধতার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, এবং ঐতিহ্যগত মিত্রদের চাপ ও উদীয়মান বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়। তার উপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গতিশীলতার উপর সংঘাতের প্রভাব, যা প্রকাশ পায় পণ্যের দাম ও বাণিজ্যের পরিমাণের পরিবর্তনের মাধ্যমে, তা ভূ-রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্যে নিজের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য একটি পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ভূচিত্রের মধ্যে দিয়ে ভারতের এগিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্তঃস্রোতের কারণে নিঃসন্দেহে ভারতের শক্তি বাণিজ্যের ভূচিত্র গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভারতের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি লাঘব করলেও ছাড়যুক্ত রুশ তেল আমদানি বৃদ্ধির ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী শক্তির দামের ওঠানামার প্রেক্ষিতে দেশটির দুর্বলতার উপরও জোর দেয়। তার উপর, বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার উপর সংঘাতের প্রবল তরঙ্গের প্রভাব আরও নিশ্চিত করেছে যে ভারতকে অবশ্যই বাণিজ্য গতিশীলতার বিকাশের মাধ্যমে উপস্থাপিত সুযোগ ও চ্যালেঞ্জগুলিকে গ্রহণ করার পাশাপাশি তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকতে হবে। এই ভারসাম্যমূলক কাজটিতে ভূ-রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মোকাবিলায় স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজনযোগ্যতার প্রতি ভারতের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেশটিকে বিশ্বের বাজারের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি মূল খেলোয়াড় করে তুলেছে।
দেবস্মিতা সরকার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ প্রোগ্রাম, সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি-র একজন জুনিয়র ফেলো।
সৌম্য ভৌমিক সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.