-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
পাকিস্তানের সহিংসা ও অভ্যন্তরীণ যোগসাজশকে প্রকাশ্যে এনে পহেলগাম আক্রমণ ভারতের সহ্যের সীমার বাঁধ ভাঙতে পারে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এই ‘স্বভাবশত্রু’র বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার পথ দর্শাতে পারে।
জম্মু ও কাশ্মীরের (জেঅ্যান্ডকে) পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা - যেখানে অনেক বেসামরিক পর্যটক নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন - ভারতের ‘স্বভাবশত্রু’র চিরস্থায়ী হুমকির সাম্প্রতিকতম নিদর্শন। পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ সীমান্ত পেরিয়ে স্থানীয় সমর্থন অর্জন করায় এই হুমকি তীব্রতর হয়েছে। পহেলগাম আক্রমণকারী ছ’জনের মধ্যে দু’জন স্থানীয় কাশ্মীরি বলে মনে করা হচ্ছে। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় শত্রুকেই মোকাবিলা করার জন্য সূক্ষ্মতা ও হিসেবনিকেশ করে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। এবং সম্ভবত রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এমন একটি যুক্তিসঙ্গত ও পরিশীলিত পদ্ধতির নমুনা দেওয়া হয়েছে।
কৌটিল্যের কাছ থেকে ভারত তার দীর্ঘস্থায়ী পাকিস্তান সমস্যা এবং কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের জন্য একাধিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। রাজত্বের কর্তব্য (রাজধর্ম), সুবুদ্ধি ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (আন্বীক্ষিকী), জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা (যোগক্ষেম), বল প্রয়োগ (দণ্ডনীতি), রাজনীতির চারটি পদ্ধতির প্রয়োগ (উপয়াস) এবং পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত ছ’টি পদক্ষেপ (সদগুণ) ইত্যাদি বিষয়গুলি সমস্যাটিকে সামগ্রিক ভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে। এই নিবন্ধটিতে বিশেষ করে শত্রুর প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় শত্রুকেই মোকাবিলা করার জন্য সূক্ষ্মতা ও হিসেবনিকেশ করে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। এবং সম্ভবত রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এমন একটি যুক্তিসঙ্গত ও পরিশীলিত পদ্ধতির নমুনা দেওয়া হয়েছে।
স্বভাবশত্রু এবং উপয়াসের ব্যবহার
রাজমণ্ডলের (যা রাজ্যগুলির কেন্দ্রীভূত বৃত্ত— আন্তঃরাষ্ট্রীয় বলয়) বিভিন্ন শ্রেণির রাজ্যের মধ্যে - যারা ‘শত্রু’র স্বভাব প্রদর্শন করে - তারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য পাকিস্তান এমন একটি স্বভাবশত্রু, যার একটি অব্যবহিত সংলগ্ন অঞ্চল রয়েছে। সেগুলি কৌটিল্যের তালিকাভুক্ত শত্রুর গুণাবলির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায় -
‘রাজকীয় বংশোদ্ভূত নয়, লোভী, নীচ পারিষদবর্গ (মন্ত্রী), অসন্তুষ্ট প্রজাসমূহ, অন্যায্য আচরণকারী, নিজেকে (কর্তব্য পালনে) নিযুক্ত না করা, দুষ্ট, শক্তিহীন, ভাগ্যের উপর বিশ্বাসী, স্বেচ্ছানুসারী কাজ করা, আশ্রয়হীন, যার কোনও অনুগামী নেই, অক্ষম, সর্বদা (অন্যের) ক্ষতি সাধনে তৎপর - এই ধরনের শত্রুকে নির্মূল করা সহজ।’ (কৌটিল্য, অর্থশাস্ত্র, ষষ্ঠ, ১, ১৩-১৪)
তর্কাতীত ভাবে, ভারত উপয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে অর্থাৎ সাম (সমঝোতা), দান (উপহার প্রদান), ভেদ (বিরোধ) এবং দণ্ড (বলপ্রয়োগ)। ভারত সকল বিন্যাসেই উপয়াস ব্যবহার করেছে— একক (একবারে একটি পদ্ধতি); বিকল্প [সম-দান (প্রতিকারমূলক), তার পরে ভেদ-দণ্ড (দমনমূলক)] এবং একটি সংমিশ্রণ (অর্থাৎ চারটি পদ্ধতিই একই সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে)।
ভারতের সমঝোতার উদ্যোগ (সম) স্বল্পমেয়াদি ও তেমন ফলাফল প্রদান করেনি এবং প্রায় সবসময়ই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আস্থাভঙ্গের কারণ হয়েছে। শ্যাম শরণ তাঁর ‘হাউ ইন্ডিয়া সিজ দ্য ওয়ার্ল্ড: ফ্রম কৌটিল্য টু দ্য টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি’ বইতে যে ‘সংলাপ-বিঘ্ন-সংলাপ’ চক্রের কথা উল্লেখ করেছেন, তা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বৃহৎ সমঝোতার ক্ষীণ সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে। পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত কর্তৃক ‘স্থগিত’ সিন্ধু জল চুক্তি ছিল ‘দান’ বা উপহার দেওয়ার একটি পদক্ষেপ। সম্ভবত, ভারত বিভিন্ন ‘চাপ বিন্দু’ (ভেদ) কাজে লাগিয়েছে এবং বলপ্রয়োগ (দণ্ড) ব্যবহার করেছে, যখন অন্য সমস্ত উপায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
ধারাবাহিক পর্যায়-পরিবর্তনের পরে একটি ‘সহ্যসীমা অতিক্রম’-এর পর্যায় আসে, যখন ‘গুণগত নীতি পরিবর্তন একটি অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা হয়ে ওঠে। কারণ রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অগ্রহণযোগ্য ক্ষতির একটি স্পষ্ট ও বিদ্যমান হুমকি রয়েছে।’ এই তাত্ত্বিক কাঠামোটি পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য।
ভারত ‘পন্থাসমূহের সঠিক সমন্বয়’ খুঁজে পেতে যুঝছে এবং এর আংশিক কারণ পাকিস্তানের একগুঁয়ে মনোভাব ও আচরণে অযৌক্তিকতা। বিদ্রোহ-বিরোধী ভারতের সংঘাত সমাধানের একটি আকর্ষণীয় বিশ্লেষণে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ফেলো ডঃ মাইকেল লিবিগ যুক্তি দেন যে, অভ্যন্তরীণ সংঘাত সমাধানের একটি ‘ভারতীয় পদ্ধতি’ রয়েছে, যা প্রতিকারমূলক এবং দমনমূলক ব্যবস্থার (উপয়াস) একটি যৌগিক পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিটি বাস্তব পরিস্থিতির জন্য পদ্ধতির একটি নির্দিষ্ট বিন্যাস গ্রহণ করা হয় এবং এটি যে পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়াগুলির জন্ম দেয়, তার মধ্যে একটি দ্বান্দ্বিক আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। ফলস্বরূপ, চারটি পদ্ধতির আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিবর্তন করা হলে একটি ‘পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন’ পরিলক্ষিত হয়। ধারাবাহিক পর্যায়-পরিবর্তনের পরে একটি ‘সহ্যসীমা অতিক্রম’-এর পর্যায় আসে, যখন ‘গুণগত নীতি পরিবর্তন একটি অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা হয়ে ওঠে। কারণ রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অগ্রহণযোগ্য ক্ষতির একটি স্পষ্ট ও বিদ্যমান হুমকি রয়েছে।’ এই তাত্ত্বিক কাঠামোটি পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের ‘সহ্যের সীমা’ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কৌটিল্য এমনকি মানুষ এবং বস্তুগত মূল্যের বিনিময়েও স্বভাবশত্রু, প্রতিকূল শত্রুর বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের পরামর্শ দিতেন।
বিশ্বাসঘাতকতামূলক অভ্যন্তরীণ বিষয়
অর্থশাস্ত্রে সমস্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যা ‘বাহ্যিক’ ও 'অভ্যন্তরীণ' উভয় ক্ষেত্রেই প্ররোচক ও প্রতিপক্ষের মধ্যে ‘সম্পর্ক’-এর আকারে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রতিটি অনন্য সংমিশ্রণ মোকাবিলা করার জন্য হিসেবি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়া ছাড়া সমস্যার উপশম হতে পারে না।
এ কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, কৌটিল্যের মতে, যে কোনও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত অব্যবস্থা আসলে একটি ভুল নীতি পদক্ষেপেরই ফলাফল। নির্ধারিত বিষয়ের বিপরীতে শান্তি চুক্তি এবং অনুরূপ প্রণয়ন আসলে এমন একটি ভুল নীতি, যা বিপদের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
‘প্রজারা যখন দরিদ্র হয়, লোভী হয়ে ওঠে; যখন লোভী হয়, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়; যখন অসন্তুষ্ট হয়, তখন তারা হয় শত্রুর শরণাপন্ন হয় অথবা নিজেরাই প্রভুকে হত্যা করে। অতএব, তার [শাসকের] উচিত প্রজাদের মধ্যে পতন, লোভ ও অসন্তুষ্টির এই কারণগুলি যেন উত্থাপিত না হয় অথবা যদি তা উদ্ভূত হয়, তা হলে অবিলম্বে সেই কারণগুলি প্রতিহত করা উচিত।’ (কৌটিল্য, অর্থশাস্ত্র, সপ্তম, ৫, ২৭-২৮)
অর্থশাস্ত্রে সমস্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যা ‘বাহ্যিক’ ও 'অভ্যন্তরীণ' উভয় ক্ষেত্রেই প্ররোচক ও প্রতিপক্ষের মধ্যে ‘সম্পর্ক’-এর আকারে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রতিটি অনন্য সংমিশ্রণ মোকাবিলা করার জন্য হিসেবি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যাটি কয়েক দশকেরও বেশি পুরনো এবং বাস্তব পরিস্থিতি সামলানোর প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। তবে, এটা বলা ন্যায্য যে দোষ বা ত্রুটিকে (অর্থাৎ বাস্তবের মৌলিক ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা, যা বিশ্বাসঘাতকতার দিকে চালিত করে) নির্মূল করার জন্য এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। এই প্রেক্ষিতে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুষ্য (বিশ্বাসঘাতক) এবং দুষ্যতি (বিশ্বাসঘাতকতার প্ররোচনা) অব্যাহত থাকবে। তবে তীব্রতা ও ব্যাপকতা কমতে পারে।
কৌটিল্যের গ্রন্থে অভ্যন্তরীণ ভাবে বিপদ মোকাবিলা করার জন্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা আজকের ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করতে পারে। অর্থশাস্ত্রের নিম্নলিখিত উদ্ধৃতিটি উপয়াস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক হিসেব-নিকেশের গুরুত্বকেই দর্শায়।
‘বিশ্বাসঘাতক [বিদ্রোহ] থেকে অমিশ্র বিপদের ক্ষেত্রে শাসকের উচিত নাগরিক ও দেশবাসীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপায় [সমঝোতা, উপহার ও মতবিরোধ] ব্যবহার করা, কিন্তু তার মানে বল প্রয়োগ করা নয়। কারণ বহু সংখ্যক মানুষের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করা যাবে না। যদি বল প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে না-ও পারে এবং একই সঙ্গে আর একটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কিন্তু তাদের [বিদ্রোহীদের] নেতাদের বিরুদ্ধে তার (শাসকের) উচিত 'গোপন শাস্তি প্রদানে’র মতো কাজ করা।’
অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক আন্তঃসংযোগ
শত্রু ও বিশ্বাসঘাতকদের মধ্যে দুই প্রান্তে ‘যোগসাজশ’ বহুমুখী প্রতিক্রিয়া দাবি করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের মারাত্মক গতিশীল পদক্ষেপই ভারতের উদ্দেশ্য পূরণ করবে না, যদি না সেই পদক্ষেপ বিদ্রোহী নেতাদের নিধন করতে পারে এবং সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসবাদ কাশ্মীরে যে সম্ভাব্য সমর্থনভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তা বানচাল করে দেয়। কৌটিল্য যুদ্ধ শুরু করার আগে দেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার বিষয়ে স্পষ্টবাদী। রাজমণ্ডলে রাজনৈতিক বৈধতা, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও আপেক্ষিক শক্তির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে। সর্বোপরি, পাঠ্যের রাজনৈতিক চূড়ান্ত লক্ষ্যের (যোগক্ষেম) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল, একটি রাষ্ট্রের বিদ্যমান সীমানার মধ্যে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দেশের কল্যাণ সাধন করা।
কাজরী কমল তক্ষশিলা ইনস্টিটিউশনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.