-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
হাসিনার পর বাংলাদেশ যখন তার বিদেশনীতি পুনর্নির্ধারণ করছে, তখন ভারত একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারতের এক বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এবং অন্য দিকে পাকিস্তান তার অবস্থান ধরে রাখছে।
দুই দেশের সরকারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠেও বাংলাদেশ ও ভারত একাধিক ভাবে সংযুক্ত। দুই দেশের অভিন্ন সাধারণ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভূমি, আন্তঃসীমান্ত নদী এবং সংলগ্ন সামুদ্রিক অঞ্চলের মাধ্যমে একটি স্থায়ী বন্ধন বিদ্যমান। রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সত্ত্বেও এই পারস্পরিক নির্ভরতা অপরিবর্তনীয় হলেও শাসনব্যবস্থায় পরিপূরকতার মাধ্যমে পারস্পরিক অগ্রগতির জন্য এটিকে অবশ্যই কাজে লাগানো যেতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রাক্তন আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সঙ্গে ভারত সরকারের অংশীদারিত্বের এটি একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য ছিল। সংযোগ, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা পর্যন্ত… বিভিন্ন ক্ষেত্র কেবল তাদের সহযোগিতার সম্প্রসারণ দ্বারাই নয়, বরং তিস্তার জল বণ্টন সংক্রান্ত বিরোধের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা দ্বারাও তা প্রদর্শিত হয়েছে।
এই অংশীদারিত্বের এক দশক ধরে এ ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রায় স্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির হাত ধরে ‘পূর্ব অভিমুখে কাজ করা’র আকাঙ্ক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছিল।
এই অংশীদারিত্বের এক দশক ধরে এ ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রায় স্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির হাত ধরে ‘পূর্ব অভিমুখে কাজ করা’র আকাঙ্ক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছিল। তবে ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে বাংলাদেশে গণবিপ্লব, তার পরে হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ফলে হঠাৎ করে এই অংশীদারিত্ব বন্ধ হয়ে যায়। আট মাস ধরে ক্ষমতায় থাকা নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে যুঝছে, তখন বাংলাদেশের বিদেশনীতিতে নিজস্ব বৈধতা নিশ্চিত করার লড়াইয়ের মধ্যেই ভারত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জনসাধারণের মধ্যে বৈধতার অভাব
প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য ভূমিকা পালনকারী মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনি বৈধতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কারণ ২০১১ সালের সাংবিধানিক সংশোধনী আইন বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ সম্প্রতি ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক ভাবে বাতিল করে এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল’ করে ইউনূস প্রশাসনকে বৈধতা দিলেও গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যুঝতে থাকা একটি দেশে তা একটি অনির্বাচিত সরকার হিসেবে কাজ করছে। এই সরকারের জনসমর্থনের প্রধান উৎস হল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ক্ষমতায় আসার জন্য এই জনসমর্থনকেই কাজে লাগানো হয়েছিল।
এই আন্দোলনের সূত্রপাত বাংলাদেশে ‘মুক্তিযোদ্ধা’দের বংশধরদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের মাধ্যমে হয়েছিল। বিক্ষোভের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সম্মুখীন হওয়ার পর ছাত্ররা সরকার বিরোধী হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হতাশা যখন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন দেশ জুড়ে বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলি আওয়ামী লীগ-বিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণের অসন্তোষকে আরও উস্কে দিয়ে পরিস্থিতিকে তাদের অনুকূলে নিয়ে আসে। ভারত যেহেতু প্রাক্তন হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল এবং ধারাবাহিক ভাবে হাসিনার ক্ষমতায় ফিরে আসার বিষয়টিকে সমর্থন করেছিল, তাই আওয়ামী-বিরোধী মনোভাবের পাশাপাশিই বিদ্রোহে ভারত-বিরোধী রবও উঠেছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হতাশা যখন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন দেশ জুড়ে বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলি আওয়ামী লীগ-বিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণের অসন্তোষকে আরও উস্কে দিয়ে পরিস্থিতিকে তাদের অনুকূলে নিয়ে আসে।
সেই অনুসারে, ক্ষমতায় আসার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনসমর্থন অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকার ও সংশ্লিষ্টতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। এর ফলে তারা ১৫ অগস্ট (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু উপলক্ষে) জাতীয় শোক দিবস বাতিল করেছে, বাংলাদেশের মুদ্রা নোটে তাঁর মুখের জায়গায় ছাত্র বিপ্লবের গ্র্যাফিতি স্থাপন করেছে, হাসিনার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে ভাঙচুরের জন্য হাসিনার ‘উস্কানিমূলক’ বক্তৃতাকে দায়ী করেছে এবং জাতীয় দেয়ালচিত্রের অবমাননা মাত্র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। তাদের বিদেশনীতিতে একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনার ভারত থেকে প্রত্যর্পণের অপেক্ষায় থাকার বিষয়টি এবং বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অসংখ্য প্রতিবেদনের মতো বেশ কয়েকটি বিষয় এই বিভেদকে আরও গভীর করে তুলেছে।
মাছ প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্ক
ইউনূস সম্প্রতি আশ্বস্ত করেছেন যে, ‘আমাদের (ভারতের সঙ্গে) মৌলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।’ কিন্তু তাঁর সরকার বারবার ঢাকায় অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার জন্য ভারতকে দোষারোপ করেছে। প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে অপ্রশিক্ষিত উপদেষ্টা পরিষদ ও ছাত্রনেতারা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপদে অধিষ্ঠিত থাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক পরিপক্বতার অভাব স্পষ্ট হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে ভারতে ইলিশ বিক্রির বিষয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবের কারণে বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে আসে।
আওয়ামী লীগের ইলিশ কূটনীতি ভেঙে বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উৎসবের মাসগুলিতে ভারতে ইলিশ বিক্রি নিষিদ্ধ করে বলেন যে, তাদের অন্যতম বৃহৎ হিন্দু উৎসব দুর্গাপুজোর আগে স্থানীয় জনগণের জন্য ইলিশের চালান যথেষ্ট হবে না। এই সিদ্ধান্ত ভারতবিরোধী মনোভাবকে প্রশমিত করেছে। কিন্তু তার পাশাপাশিই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবও রয়েছে। এটি পরোক্ষ ভাবে সীমান্তের ওপারে হিন্দু উদ্যাপনগুলিকে প্রভাবিত করেছে, হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে এবং ভারতের সদিচ্ছাকে আরও দুর্বল করেছে। অভ্যন্তরীণ ভাবে, ভারতে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলে বাংলাদেশি মাছ ধরার মূল্য শৃঙ্খলের যে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতি হবে, তার কথা বিবেচনাই করা হয়নি। ফলস্বরূপ, সিদ্ধান্তটি বদলে যেতেও খুব একটা সময় লাগেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্দিষ্ট শর্তাবলি আরোপ করেন এবং আশ্বস্ত করেন যে, ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত চালান নাকি চাঁদপুরে (বাংলাদেশ) একদিনে যত মাছ ধরা হয়, তার সমতুল্য।
ভারত তার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) শীর্ষ ১৫টি উৎসের মধ্যে অন্যতম এবং ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন পোর্টফোলিও-সহ একটি শীর্ষ উন্নয়ন অংশীদার।
এই সব কিছুই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে এখনও ভারত নীতি তৈরি করতে পারেনি, তা দর্শালেও বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন দাবিই করে। দেশটি তার উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মূলত বিদেশি তহবিলের উপর নির্ভর করে। ভারত তার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) শীর্ষ ১৫টি উৎসের মধ্যে অন্যতম এবং ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন পোর্টফোলিও-সহ একটি শীর্ষ উন্নয়ন অংশীদার। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত বন্ধ, শুল্ক ছাড়পত্রের সমস্যা ও বর্ধিত নিরাপত্তা নজরদারির কারণে দুই দেশের মধ্যে পণ্যের সুষ্ঠু প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার দরুন বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তা ছাড়া, উভয় দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য সংযোগ প্রকল্পগুলিও স্থগিত রাখা হয়েছে এবং গত জুন মাস থেকে গণপরিবহণ স্থগিত রয়েছে। এটি কেবল বাণিজ্যিক বিপর্যয়ই তৈরি করেনি, বরং এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের উপরও প্রভাব ফেলেছে। গত কয়েক মাস ধরে ভারতে বাংলাদেশি চিকিৎসা পর্যটকদের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
পাকিস্তানের দিকে ঝোঁক
বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘পারস্পরিক সংবেদনশীলতা’র অভাব স্পষ্ট, যা একটি সুস্থ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার ভারতকে ‘শেখ হাসিনাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে’ এবং ‘বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার উদ্দেশ্যে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করার’ অভিযোগ করলেও তারা নিজেই তার চিরাচরিত প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছে।
আওয়ামী লীগের চিরাচরিত অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে সরে এসে নিজের সংক্ষিপ্ত মেয়াদেই মোহাম্মদ ইউনূস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করতে দু’বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেই অনুযায়ী, সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ঢাকা পাকিস্তানি যাত্রীদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। অন্য দিকে ইসলামাবাদ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফি মকুব করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সর্বোপরি, ১৯৭১ সালের পর প্রথম বারের মতো করাচি বন্দর থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে দু’টি পণ্যবাহী জাহাজ এসে পৌঁছেছে। এই দুই জাহাজে এসেছিল চিনি ও আলু, যা এখনও পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশে সরবরাহ করে আসছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানি জাহাজগুলিকে তার মংলা বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দিয়েছে, যেখানে ভারতের একটি টার্মিনাল রয়েছে। হাসিনা ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত অঞ্চলগুলির যোগাযোগ উন্নত করার জন্য চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই উন্নয়নমূলক কার্যক্রম স্থবির। এর বিপরীতে, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উভয় দেশই বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে চাইছে। দুই দেশই ১৩ জানুয়ারি একটি যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেছে।
হাসিনা ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত অঞ্চলগুলির যোগাযোগ উন্নত করার জন্য চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা রাওয়ালপিন্ডিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা গতিশীলতা ও যৌথ সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অস্ত্র বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করার জন্য বৈঠক করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় 'শত্রু' হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এখন দুই দেশকে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সামরিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চিন কর্তৃক যৌথ ভাবে তৈরি পাকিস্তান থেকে জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কিনতেও আগ্রহী।
এই ধরনের ঘটনাপ্রবাহ ভারতের জন্য উদ্বেগজনক। কিন্তু আরও উদ্বেগের বিষয় হল শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের লক্ষ্যচালিত পুনর্কল্পনা। ইতিহাসের নতুন বইগুলি থেকে মুজিবের কবিতা, বক্তৃতা ও নিবন্ধগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তার বদলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণাপত্র জারি করার ক্ষেত্রে প্রাক্তন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বই থেকে হাসিনার ছবি যেমন বাদ দেওয়া হয়েছে, তেমনই ২০২৪ সালে হাসিনার সরকার পতনের প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তার মূল্যায়ন বিশদে করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহের পুনর্বিন্যাস করে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে মুজিবের উত্তরাধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাকে মারাত্মক ভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মৌলিক স্তম্ভকে আরও ভঙ্গুর করে ফেলছে।
সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি একটি পছন্দ মাত্র
সাম্প্রতিক টানাপড়েন সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যকরী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ… এই সত্যটি ইউনূস সম্প্রতি বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, দু’টি দেশ ‘ঐতিহাসিক ভাবে, রাজনৈতিক ভাবে ও অর্থনৈতিক ভাবে' সংযুক্ত এবং তাদের সম্পর্ক ‘মৌলিক ভাবে শক্তিশালী’। এই অন্তর্দৃষ্টিকে আরও বাস্তবসম্মত বিদেশনীতি দ্বারাও সমর্থন জোগানো প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করতে চাইলেও পাকিস্তান কোনও দিনই ভারতের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না। শুধু মাত্র বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে দক্ষিণ সীমান্ত ছাড়া বাংলাদেশ কার্যত ভারত দ্বারা বেষ্টিত। একই ভাবে মায়ানমারের সঙ্গে একটি ছোট সীমান্ত ছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি মূলত বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত। এই অনন্য ভূগোল পারস্পরিক সুবিধা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। তবে এই ভৌগোলিক বাস্তবতা স্বীকার করা এখন একটি পছন্দ অবশ্যই। যেমনটা ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা ভারতের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়।’
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...
Read More +