-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আর্জেন্টিনা সফর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জ্বালানি সহযোগিতা এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৫ সালের ২-৯ জুলাই গ্লোবাল সাউথের পাঁচটি দেশে সফর শুরু করেন। এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আর্জেন্টিনা সফর, যা ৫৭ বছরেরও বেশি সময় পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরকেই দর্শায়। মোদী ২০১৮ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বুয়েনস আইরেস সফর করলেও এই সফর বৃহত্তর দক্ষিণ-দক্ষিণ সম্পৃক্ততা কৌশলের দিকে পরিচালিত করেছিল, যা ভারতের বিদেশনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে তুলে ধরে।
পূর্ববর্তী অনুশীলনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্পৃক্ততা স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলির সঙ্গে মোদীর সাক্ষাতের ফলে বেশ কয়েকটি উচ্চ-স্তরের সম্পৃক্ততা ঘটে। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের জন্য মোদীর পরবর্তী ব্রাজিল সফর - যে গোষ্ঠীতে আর্জেন্টিনা যোগ দেয়নি - আবারও ভারতের দক্ষতার ভারসাম্যকেই প্রতিফলিত করে।
বাণিজ্য ও এসটিআই সহযোগিতার অগ্রগতি
গত দশকে ভারত ও আর্জেন্টিনার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রসারিত হয়েছে, যদিও এটি এখনও উল্লেখযোগ্য রকমের আর্জেন্টিনার পক্ষেই। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত প্রায়শই আর্জেন্টিনার রফতানির জন্য শীর্ষ পাঁচটি গন্তব্যস্থলের মধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মোট মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা ২০২২ সালে ৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
ভারত আর্জেন্টিনার আয়ুর্বেদিক পণ্যের বাজারে একটি পরিসর তৈরি করেছে। অন্য দিকে ভারতীয় সংস্থাগুলি তথ্য প্রযুক্তি ও পরামর্শ পরিষেবার মতো ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার পরিধি আরও প্রসারিত করেছে।
ভারতে আর্জেন্টিনার রফতানি মূলত কৃষি ও সম্পদ-ভিত্তিক পণ্যের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল প্রধান পণ্য। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রফতানির মধ্যে রয়েছে চামড়া, শস্য, সোনা, তামা এবং কৃষি যন্ত্রপাতির কিছু নির্দিষ্ট বিভাগ। আবার আর্জেন্টিনায় ভারতের রফতানি আরও বৈচিত্র্যময় পরিসরে বিস্তৃত, যার মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, কৃষি রাসায়নিক, বস্ত্র, ওষুধ এবং দু’চাকার গাড়ি। উপরন্তু, ভারত আর্জেন্টিনার আয়ুর্বেদিক পণ্যের বাজারে একটি পরিসর তৈরি করেছে। অন্য দিকে ভারতীয় সংস্থাগুলি তথ্য প্রযুক্তি ও পরামর্শ পরিষেবার মতো ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার পরিধি আরও প্রসারিত করেছে।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন (এসটিআই) ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে পারমাণবিক চিকিৎসা, উপগ্রহ প্রযুক্তি, ডিজিটাল কৃষি এবং দূষণহীন প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে। শক্তিশালী সরকারি গবেষণা অবকাঠামো এবং অভিন্ন সাধারণ উন্নয়ন লক্ষ্যের দরুন উভয় দেশই দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র
২০২৪ সালে ভারত ও আর্জেন্টিনা তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বছর পূর্তি উদযাপন করেছে, যা তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলককে ঘিরে সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক সফরকে একত্রিত করেছে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, তেল ও গ্যাস, প্রতিরক্ষা, পারমাণবিক শক্তি, কৃষি, ওষুধ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সহ কৌশলগত ক্ষেত্রগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। পারমাণবিক শক্তি, কৃষি এবং হাইড্রোকার্বনের উপর জোর দেওয়া এই ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রাধিকার এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিপূরকতার ক্রমবর্ধমান সারিবদ্ধতাকেই প্রতিফলিত করে। এর পাশাপাশি উভয় নেতা ভারত-মেরকোসুর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা বৃহত্তর দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কাঠামোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য প্রবাহকে বৈচিত্র্যময় করার অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৪ সালে ভারত ও আর্জেন্টিনা তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বছর পূর্তি উদযাপন করেছে, যা তাদের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলককে ঘিরে সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক সফরকে একত্রিত করেছে।
ভারত তার জ্বালানি ভাবমূর্তি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে। অন্য দিকে আর্জেন্টিনা নিজেকে অপরিহার্য কাঁচামালের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে। চিলি ও বলিভিয়ার পাশাপাশি লিথিয়াম ট্রায়াঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত আর্জেন্টিনার কাছে প্রচুর লিথিয়াম মজুত রয়েছে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি এবং শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ভারতীয় উদ্যোগ কাবিল, ক্যাটামার্কার খনি কোম্পানি ক্যামিয়েন-এর সঙ্গে অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতের জন্য পাঁচটি লিথিয়াম ব্লক লিজ দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ভারতের প্রথম বিদেশি লিথিয়াম অধিগ্রহণকে চিহ্নিত করে। উপরন্তু, কোল ইন্ডিয়া ও গ্রিনকোর মতো ভারতীয় সংস্থাগুলি আর্জেন্টিনার প্রদেশগুলিতে লিথিয়াম অনুসন্ধান প্রকল্পে সক্রিয় ভাবে জড়িত।
তেল ও গ্যাস খাতে পাটাগোনিয়ায় আর্জেন্টিনার ভাকা মুয়ের্তা শেল গঠনে বিশ্বব্যাপী শেল তেল ও গ্যাসের বৃহত্তম মজুত রয়েছে এবং এটি আর্জেন্টিনার জ্বালানি নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থা ওয়াইপিএফ-এর প্রেসিডেন্ট সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। আলোচনায় এলএনজি উন্নয়ন ও লিথিয়ামের সাথে সম্পর্কিত চুক্তির সম্ভাব্য সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই উদ্যোগগুলি তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ওয়াইপিএফ এবং ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড-এর (ওভিএল) মধ্যে ২০২৩ সালে সম্পাদিত একটি পূর্ববর্তী চুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি।
পারমাণবিক শক্তি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আর একটি প্রেক্ষিত। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের হেভি ওয়াটার বোর্ড আর্জেন্টিনার নিউক্লিওলেকট্রিকা আর্জেন্টিনা এস.এ.-র (নাসা) সঙ্গে চার বছরের সরবরাহ চুক্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাক্ষর করে, যা আর্জেন্টিনার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় সহায়তা করে। এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি উভয় দেশের শক্তি পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ভারত ও আর্জেন্টিনার মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রদর্শন করে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অংশীদারিত্বের আর একটি অনুঘটক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতিতে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স মিনিস্টার জর্জ টাইয়ানা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম দ্বিপাক্ষিক ভারত সফর করেন। সেই সফরকালে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন, বিশেষ করে বর্ধিত প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার উপায়গুলির উপর আলোকপাত করেন। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশ হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) এবং আর্জেন্টিনার বিমান বাহিনীর মধ্যে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা হেলিকপ্টারের খুচরো যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ পরিষেবা সরবরাহ করে। এই উন্নয়নগুলি ক্রমবর্ধমান কৌশলগত আস্থা ও বর্ধিত প্রতিরক্ষা সম্পৃক্ততার সম্ভাবনাকেই দর্শায়।
উভয় নেতা ভারত-মেরকোসুর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা বৃহত্তর দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কাঠামোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য প্রবাহকে বৈচিত্র্যময় করার অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়।
ভারত ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সাম্প্রতিক উচ্চ-স্তরের বৈঠক দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিতে এই খাতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর্জেন্টিনার ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর অধীনে ভারতকে অ্যানেক্স টু থেকে অ্যানেক্স ১-এ পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা আর্জেন্টিনার বাজারে ভারতীয় ওষুধ পণ্যের প্রবেশকে সহজতর করবে। এর জবাবে আর্জেন্টিনা ভারতকে তার দ্রুত আমদানি অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করেছিল, বিশেষ করে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) দ্বারা অনুমোদিত ওষুধের জন্য।
ক্রমবর্ধনশীল পথ
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-আর্জেন্টিনা সম্পর্ক একটি উল্লেখযোগ্য ঊর্ধ্বমুখী গতিপথ প্রত্যক্ষ করেছে, যার ভিত্তি একাধিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সমন্বয়। প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রক ও আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলিকে সুগম করার জন্য উভয় দেশ ক্রমবর্ধমান ভাবে তাদের প্রচেষ্টাগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করছে। এই সফরের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের উন্নয়নগুলি উভয় দেশে দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য একটি শক্তিশালী অনুভূতি প্রতিফলিত করে। উচ্চ স্তরের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এই গতিকে আরও অগ্রগামী করেছে, দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ভিত্তি তৈরি করেছে এবং সম্ভাব্য ব্যাঘাত বা নীতিগত অসঙ্গতি থেকে সম্পর্ককে সুরক্ষিত করেছে।
মানুয়েল গনজালো গ্লোবাল সাউথের তুলনামূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পক্ষেত্রে সংস্থাসমূহ ও এসটিআই নীতিমালা সংক্রান্ত গবেষক, অধ্যাপক এবং পরামর্শদাতা।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Manuel Gonzalo is a researcher, professor, and consultant/advisor specialising in comparative economic development in the Global South, industrial organisation, and productive and science, technology and ...
Read More +