-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
উদীয়মান ও রূপান্তরশীল অর্থনীতিতে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে ‘চাতুর্য’-এর বহুমুখী স্ফুরক হিসাবে কাজ করে এবং জটিল, আন্তঃসংযুক্ত উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ধারণা, প্রমাণ এবং পদ্ধতিগত চিন্তাভাবনা নির্মাণ করে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্কের অস্তিত্ব আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিসর এবং নীতিগত ক্ষেত্রে সর্বব্যাপী ইঙ্গিতের মাধ্যমেই নিহিত হলেও আজও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ধারণাটিকে সহজে বোঝা যায় না। ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে একটি নির্দিষ্ট ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য এই শব্দবন্ধটির ব্যবহার গত দুই দশকে জনপ্রিয় হয়েছে। কিছু সরকার দ্বারা অর্থায়িত প্রতিষ্ঠান (যেমন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ দ্বারা অর্থায়িত প্রতিষ্ঠান) সমাজবিজ্ঞানের গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের আখ্যান গ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রায়শই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত বলে মনে করা হয়। তবে আধুনিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নয় এবং এটি চিরাচরিত গবেষণা সংস্থাগুলির মতো শিক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলির সমাধান করে না, যারা প্রায়শই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার পরিপূরক হিসেবে কাজ করত। বিশ্ববিদ্যালয় ও চিরাচরিত গবেষণা সংস্থাগুলি ডক্টরাল প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এবং এমন প্রশ্নের সমাধান করে যা শিক্ষাগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। এগুলি প্রায়শই চার দেয়ালের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, নিজেদের মধ্যে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে, কেবলমাত্র সেই উচ্চ মানের জার্নালে প্রকাশ করা হয়, যেগুলি শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষই পাঠ করে থাকেন। এর পাশাপাশি নিজেদের অস্তিত্বকে ‘উপ-দেবতা’ (ডেমি-গড) হিসাবে ন্যায্যতা দেয়, যারা তাদের স্ব-নির্ধারিত ‘সত্য’-এর বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনার কারণে নিজেদের গড়পড়তা জনসাধারণের ঊর্ধ্বে বলে মনে করে।
ব্যবহারিক নীতিগত জ্ঞানের হোতা হিসাবে আধুনিক কালের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলিকে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রযন্ত্র, মতামত নির্মাতা এবং নাগরিক সমাজের অন্তর্নিহিত গোলকধাঁধায় কাজ করতে হয়।
এর বিপরীতে হেঁটে আধুনিক কালের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যবস্থার গতিশীল চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে এবং ভবিষ্যতের জন্য ধারণা তৈরি করার উদ্দেশ্যে বর্তমানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সেই অর্থে দেখতে গেলে, জ্ঞান উৎপাদন, নীতিগত মধ্যস্থতা ও আদর্শগত উদ্ভাবনের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি অনন্য জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিসর জুড়ে রয়েছে। ব্যবহারিক নীতিগত জ্ঞানের হোতা হিসাবে আধুনিক কালের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলিকে শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রযন্ত্র, মতামত নির্মাতা এবং নাগরিক সমাজের অন্তর্নিহিত গোলকধাঁধায় কাজ করতে হয়। অতএব আজকের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি আন্তঃবিষয়ক গবেষণাকে কার্যকর অন্তর্দৃষ্টিতে রূপান্তরিত করে বিমূর্ত তাত্ত্বিক কাঠামো ও বাস্তব-বিশ্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষুদ্র চাহিদার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির কাজ করে। এমনটা করার মাধ্যমে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি কেবল তথ্যের পরিবাহক হিসাবেই নয়, বরং প্রাসঙ্গিকতার হোতা হিসাবেও আখ্যান নির্মাণ, কৌশলগত পছন্দগুলিকে অবহিত করা এবং বিকল্পগুলি প্রকাশ করার জন্য আবির্ভূত হয়, যেগুলি অন্যথায় অস্পষ্ট থেকে যেত।
অতএব, থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি এমন গবেষণামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে, যা সমাজ, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংযোগস্থলের ব্যবহারিক পরিসরে এবং সমস্যাগুলি জটিলও! জটিল সমস্যার সমাধান নেই। যদি সমাধান বিদ্যমান থাকত, তা হলে সমস্যাগুলি আর জটিল থাকত না এবং সেগুলিকে সহ-অক্ষবিশিষ্ট ও অক্ষাংশের কাঠামোর মধ্যে সুনির্দিষ্ট (ও সীমিত) সমাধান-সহ রৈখিক সমীকরণ হিসেবে প্রকাশ করা যেত। যাই হোক, বাস্তব জীবনের সমস্যার জটিলতাগুলি নিজেদেরকে সুনির্দিষ্ট কার্যকরী আকারে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেয় না। অতএব পরিসর ও সময় জুড়ে সত্য… এ হেন নির্দিষ্ট সমাধানের চেয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলি অনুসন্ধান করা জরুরি। আধুনিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি এই সমস্যারই সম্মুখীন হচ্ছে।
উন্নয়নমূলক নীতি চিন্তাভাবনা
এ ছাড়াও গত ৫০ বছরে একটি স্বাধীন নীতি-শিক্ষাগত শৃঙ্খলা হিসেবে উন্নয়ন অধ্যয়নের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাসবাদী বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা থেকে উন্নয়নমূলক চিন্তাভাবনা বিবর্তিত হয়ে বণ্টনমূলক ন্যায়বিচার ও সমতার উদ্বেগগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সম্পদের বৈষম্য মোকাবিলা করাও। এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ডল্যান্ড কমিশনের স্থিতিশীল উন্নয়নের সংজ্ঞা গ্রহণের মাধ্যমে এর অস্তিত্বের সাময়িক মাত্রা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। যাই হোক, ২০১৫ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যকে (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস বা এমডিজি) প্রতিস্থাপনকারী স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বা এসডিজি) ২০৩০ অ্যাজেন্ডার মাধ্যমে উন্নয়নমূলক শাসনের চ্যালেঞ্জগুলির আরও সামগ্রিক রূপরেখা ফুটে উঠেছে। নকশা অনুসারে এসডিজি উন্নয়ন শাসনের দৃষ্টান্তমূলক জটিলতা স্বীকার করে নেয়: মোহন মুনাসিংহের সাস্টেনোমিক্সের কাঠামোর মধ্যে ধারণাগত ন্যায়বিচার, দক্ষতা ও স্থিতিশীলতার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক উদ্বেগগুলির সমন্বয় সাধন করে।
হ্রাসবাদী বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা থেকে উন্নয়নমূলক চিন্তাভাবনা বিবর্তিত হয়ে বণ্টনমূলক ন্যায়বিচার ও সমতার উদ্বেগগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সম্পদের বৈষম্য মোকাবিলা করাও। এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ডল্যান্ড কমিশনের স্থিতিশীল উন্নয়নের সংজ্ঞা গ্রহণের মাধ্যমে এর অস্তিত্বের সাময়িক মাত্রা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
লক্ষ্যগুলি আন্তর্জাতিক হওয়া সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন। মূল চ্যালেঞ্জটি স্থিতিশীল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থায়ন, নীতি নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নের জন্য ‘ধারণা’ বা ‘চাতুর্য’-এর ঘাটতি থেকে উদ্ভূত হয়। এটি তরুণ গণতন্ত্র ও রূপান্তরশীল অর্থনীতির জন্য থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির প্রাসঙ্গিকতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
‘চাতুর্যের ফাঁক’
রাজনীতিবিদ টমাস হোমার-ডিক্সন প্রণীত ‘ইনজেনুইটি গ্যাপ’ (চাতুর্যের ফাঁক) শব্দবন্ধটি জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্ভাবনী ধারণার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সেই ধারণাগুলির প্রকৃত সরবরাহের মধ্যে বৈষম্যকেই বোঝায়। সর্বোপরি, হোমার-ডিক্সন ‘ইনজেনুইটি’কে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের একটি উপাদান হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং উন্নত ও স্বল্পোন্নত অর্থনীতির মধ্যে উন্নয়নমূলক ব্যবধানকে ‘ইনজেনুইটি’ উৎপাদনের পার্থক্যের জন্য দায়ী করেছেন। আধুনিক সমাজ পরিবেশগত সমস্যা, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সামাজিক বৈষম্য-সহ বিভিন্ন আন্তঃসংযুক্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের শক্তির কারণে এই চ্যালেঞ্জগুলির জটিলতা তীব্রতর হয়। এই নতুন সমস্যাগুলির মধ্যে অবিচ্ছেদ্য আন্তঃসংযোগ নতুন চিন্তাভাবনা ও নতুন ধারণা দাবি করে, যার মধ্যে প্রযুক্তিগত ও সামাজিক উভয় ধরনেরই চাতুর্য জড়িত। এই সমস্যাগুলি ও তাদের সংজ্ঞায়িত ধারণাগুলির তিনটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে: ক) বাস্তব জীবনের সমস্যাটি বর্তমান চিন্তাভাবনার পদ্ধতি বা একক-বিভাগীয় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমাধান করা যায় না; খ) ধারণা বা ‘চাতুর্য’কে বর্তমান বা ভবিষ্যতে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হতে হবে; এবং গ) যদি ধারণাটি ভবিষ্যতের হয়, তা হলে এর জন্য সম্ভাব্য শর্তগুলির বর্ণনার প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার জন্য জনসাধারণের মধ্যে ক্রমাগত পুনর্ব্যক্ত করতে হতে পারে।
রাজনীতিবিদ টমাস হোমার-ডিক্সন কর্তৃক প্রণীত ‘ইনজেনুইটি গ্যাপ’ (চাতুর্যের ফাঁক) শব্দবন্ধটি জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্ভাবনী ধারণার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সেই ধারণাগুলির প্রকৃত সরবরাহের মধ্যে বৈষম্যকেই বোঝায়।
বহুবিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভূমিকা
বহুবিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি একটি আন্তঃবিষয়ক কাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়নের সমস্যাগুলি সমাধানের সাহায্যে ‘চাতুর্য’ তৈরি এবং উৎপাদনের জন্য নিখুঁত অবস্থানে রয়েছে। তারা তথ্যের লব্ধতাকে গণতান্ত্রিক করে, পাল্টা বিশ্লেষণ প্রদান করে এবং জনসাধারণের যুক্তিতে বহুত্ববাদকে উৎসাহিত করে নীতিগত পরিসরের ফাঁককে প্রশস্ত করে দেয়। এক সময় মনে করা হত যে, অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থাগুলি কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে। যাই হোক, আজকের উন্নয়ন শাসন ক্রমবর্ধমান ভাবে জটিলতা, বহুত্ব এবং সহ-সৃষ্ট সমাধানের প্রয়োজনীয়তা দ্বারা চিহ্নিত করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও শক্তি পরিবর্তন থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা পর্যন্ত উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলির বৈচিত্র্য বহু-অংশীদার দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তঃবিষয়ক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে দর্শায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সমস্যাগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক ধাক্কা সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করে, উন্নয়নমূলক সহায়তার প্রবাহকে আকার দেয়, মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি করে, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করে এবং মানুষের কল্যাণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব, এই জটিল সমস্যাগুলির জন্য শৃঙ্খলাগত বাধা অতিক্রম করে সমন্বিত পদ্ধতিগত চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাগত বিভাগ বা বিশেষ অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সম্ভব নয়। বহু-বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি আদর্শগত পরীক্ষাগার হিসাবে কাজ করে এই প্রয়োজনে সাড়া দেয়। তারা ক্ষেত্রব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়, পদ্ধতিগত আন্তঃসংযোগগুলির দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং প্রমাণ, পদ্ধতিগত চিন্তাভাবনা ও প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তববাদের উপর ভিত্তি করে নীতিগত বিকল্পগুলি প্রদান করে।
গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এই ধরনের বহুমুখী থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির বিশ্লেষণাত্মক ভাণ্ডার লক্ষণীয় নীতি সংশোধনের ঊর্ধ্বে উঠেও বিস্তৃত। সমন্বিত ব্যবস্থার পদ্ধতি থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলিকে ‘প্রক্রিয়ার নিয়ম’ - উন্নয়নমূলক ফলাফল নির্ধারণকারী প্রণোদনা কাঠামো ও ক্ষমতার অসামঞ্জস্য - সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেয়। এই ব্যবস্থাভিত্তিক পদ্ধতিই ক্ষণস্থায়ী পরামর্শ থেকে শক্তিশালী নীতিগত সম্পৃক্ততাকে আলাদা করে দেয়।
এমনটা করার মাধ্যমে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি উন্নয়নমূলক শাসন আলোচনার রূপরেখা গঠনে একটি আদর্শগত ভূমিকা পালন করে। লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু অভিযোজন অর্থায়ন, মানব কল্যাণে বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার ভূমিকা অথবা আন্তঃপ্রজন্মগত ন্যায়বিচারের উদ্বেগের মতো অপ্রতিনিধিত্বমূলক উদ্বেগগুলির গুরুত্ব বৃদ্ধি করে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি ‘উন্নয়ন’ বলতে যা বোঝায়, তার সীমানা প্রসারিত করে এবং সেই অনুযায়ী নীতিগত অগ্রাধিকারগুলি পুনর্নির্মাণ করে। গবেষণা ফলাফল, গণমঞ্চ এবং পরামর্শমূলক কর্মশালার মাধ্যমে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের পূর্বসূরি হিসেবে প্রায়শই আলোচ্য পরিবর্তনের পথ প্রদান করে।
বহুবিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি একটি আন্তঃবিষয়ক কাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়নের সমস্যাগুলি সমাধানের সাহায্যে ‘চাতুর্য’ তৈরি এবং উৎপাদনের জন্য নিখুঁত অবস্থানে রয়েছে।
ভঙ্গুর বা ক্রান্তিকালীন গণতন্ত্রে - যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অনুন্নত থাকতে পারে এবং নীতি প্রণয়ন অস্বচ্ছ বা বর্জনীয় থাকে - থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি প্রায়শই আনুষ্ঠানিক নীতি পরিকল্পনা সংস্থাগুলির বিকল্প হিসাবে কাজ করে। তারা কঠোরতা, ধারাবাহিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি বহন করে। এর ফলে স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক সুবিধার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যগুলিতে নীতিগত আলোচনাকে সীমিত করতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, কেবলমাত্র একটি ব্যবস্থাগত পদ্ধতিই দর্শাতে সক্ষম যে, কী ভাবে একটি বাঁধ (যেমন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ফরাক্কা ব্যারেজ) পলি প্রবাহকে আটকাতে পারে এবং ব-দ্বীপের বাস্তুতন্ত্রকে (এই ক্ষেত্রে ভারতীয় সুন্দরবন ব-দ্বীপ) সঙ্কুচিত করতে পারে। থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নির্মাণ, পরিস্থিতির আদলে মডেল নির্মাণ এবং ব্যয়-লাভের কাঠামো প্রস্তাব করার মাধ্যমে এই ধরনের প্রমাণ-ভিত্তিক নীতি নির্ধারণকে উৎসাহিত করে। এটি এমন এক ধরনের সাধনী, যা জনসাধারণের চাপ ও স্বেচ্ছাচারিতা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলি কূটনৈতিক শক্তি ও কৌশলগত চিন্তাভাবনার নেতৃত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এটি জি২০ এবং নিরকস-এর মতো বিশ্বব্যাপী মঞ্চগুলিতেও দেখা গিয়েছে, যেখানে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এনগেজমেন্ট গ্রুপগুলি প্রায়শই উন্নয়ন কর্মসূচি গঠনে সহায়তা করেছে, গ্লোবাল সাউথ থেকে প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে। গ্লোবাল সাউথের প্রতিষ্ঠানগুলি - বিশেষ করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে - এখন অর্থনৈতিক কূটনীতি, স্থিতিশীল পরিবর্তন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য বিকল্প কাঠামো প্রদান করে বৈশ্বিক মঞ্চে আদর্শগত সংস্থার উপর বেশি জোর দিচ্ছে।
এ কথা মনে রাখা উচিত যে, একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ককে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত আবহে তার অস্তিত্বকে ন্যায্যতা দিতে হবে এবং এর জন্য ক্ষমতার নৈকট্য দ্বারা নয়, বরং তার কাজের কঠোরতা ও জনসাধারণের আলোচনাকে নৈতিক প্রেক্ষিতে তুলে এনেই কাজটি করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সময় বিশ্লেষণাত্মক বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার ক্ষমতার উপর এর বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভরশীল। অতএব, উন্নয়ন আলোচনা ক্রমশ প্রতিযোগিতামূলক ও বহুমাত্রিক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে, জটিলতার ব্যাখ্যাকারী এবং ‘চাতুর্য’-এর স্ফুরক হিসাবে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির ভূমিকা আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠবে।
নীলাঞ্জন ঘোষ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr Nilanjan Ghosh heads Development Studies at the Observer Research Foundation (ORF) and is the operational head of ORF’s Kolkata Centre. His career spans over ...
Read More +