Author : Vivek Mishra

Published on May 29, 2025 Updated 0 Hours ago

ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপ মার্কিন বিশ্ব বাণিজ্যের একটি কঠোর পুনর্নির্মাণকে দর্শায় এবং তা হল জোট ভেঙে ফেলা, চিনের সঙ্গে সংঘাত আরও গভীর করা এবং বিশ্বায়নের ভিত্তি নড়িয়ে দেওয়া

মার্কিন দুর্গ: ট্রাম্পের পুনর্মতাদেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’তে জোট, বন্ধু অংশীদারদের উপর সর্বাত্মক শুল্ক আরোপের আহ্বান তাঁর নীতিগত ধারার কিছু অনিশ্চিত উপাদানকেই দর্শায়। অনিশ্চয়তা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিকে চিহ্নিত করে, যেখানে ওয়াশিংটনের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের প্রভাব বাজারের উপর পড়ে। তবে ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল সর্বশেষ শুল্ক ঘোষণা নীতিগত দিকনির্দেশনায় কিছুটা নিশ্চিত অবস্থান দেখা গিয়েছে। কমপক্ষে তিনটি বৃহত্তর প্রসঙ্গ এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতিকে চিহ্নিত করেছে।

প্রথমত, ওয়াশিংটনের সাহায্যকারী শুল্ক-সহ একটি জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কৌশলগত নৈকট্য নির্বিশেষে বাণিজ্য অংশীদারদের ক্ষেত্রে শুল্ক সমতা প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হবে। এই প্রেক্ষিতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নবীকরণ পদ্ধতির একটি প্রাথমিক প্ররোচনা হল সংস্থাগুলিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থাপন করতে বাধ্য করা এবং পরিবর্তে নিজের দেশে মূলধনকে আকৃষ্ট করা, সরকারি ব্যয় ঋণের পরিমাণ হ্রাস করা। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের জন্য আমেরিকার মহত্ত্বের পথ হল কৌশলগত অর্থনীতির পথ, যেখানে স্বার্থই প্রাধান্য পায়। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির প্রতি আমেরিকার পুনর্নির্মিত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ রূপে বাণিজ্যিক। এটি এই বিশ্বাস দ্বারা চালিত হয় যে, কেবলমাত্র মোট অর্থনৈতিক লাভের নীতির নেতৃত্বে স্বার্থই এখন থেকে ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে চালিত করবে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু, অংশীদার মিত্রদের মধ্যে সম্পর্কের কঠোর বিভাজন এবং স্তরবিন্যাস ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে। সম্ভবত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে সহমত হওয়া সম্ভব, ট্রাম্পের দুনিয়ায় সে ক্ষেত্রে কোনও শত্রু দেশ নেই।

অর্থনৈতিক পটপরিবর্তন

ওয়াশিংটনের তরফে হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তনের ফলে দেশগুলি মানিয়ে নিতে, প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতে এবং আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে। ২ এপ্রিল ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’তে শুল্ক ঘোষণার আগে যে চূড়ান্ত প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা বিশ্ব জুড়ে বাজারকে অস্থির করে তুলেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন ধরনের উচ্চ শুল্ক ঘোষণা করার পরই বাজারগুলি অস্থির হয়ে পড়ে। ২ এপ্রিল বাজার বন্ধ হওয়ার পরে ট্রাম্প ইচ্ছাকৃত ভাবে এই শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল, পরের দিন বাজারগুলি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ব জুড়ে শেয়ারের পতন ঘটতে থাকে। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়োর্স (এসঅ্যান্ডপি) ২০২০ সালের জুন মাসের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পতন অর্থাৎ ৫০০ পয়েন্টেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর থেকে অনুমানগুলি অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতির পরিমাপ, সরবরাহ শৃঙ্খলের পুনর্গঠন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং ডলারের জন্য বিশ্বের ঝোঁক - এই সমস্ত কিছুর সমাপতন হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহের অভাব রয়েছে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খলের অভাব দেখা দিয়েছে এবং চিনের মতো দেশগুলির উপর ক্ষেত্রগুলিতে নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের মূলে রয়েছে এই বিশ্বাস যে, আমেরিকা বছরের পর বছর ধরে একটি অবিরাম বাণিজ্য ঘাটতির শিকার হচ্ছে। এর ফলে অপ্রতিসমতা ও স্বীকৃত অসুবিধার ক্রম তৈরি হয়েছে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ঘাঁটিগুলি ক্রমশ ‘শূন্য’ হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহের অভাব রয়েছে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খলের অভাব দেখা দিয়েছে এবং চিনের মতো দেশগুলির উপর ক্ষেত্রগুলিতে নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্যনির্বাহী পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকার সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে নিজেদের পূর্ববর্তী ধারণারই অনুসরণ করেছে। ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলা করার জন্য ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট (আইইইপিএ) প্রয়োগ করেন। আইইইপিএ-র অধীনে তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে ট্রাম্প ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া সমস্ত দেশের উপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক আরোপের জন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং যে সব দেশের সঙ্গে আমেরিকার সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের উপর পৃথক পৃথক পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেন। অবশ্যই এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চি, যার উপর ইতিমধ্যে বিদ্যমান ২০ শতাংশের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী চিনা পণ্যের উপর ৫৪ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। ৫৭টি দেশ ব্লকের বিস্তৃত তালিকার মধ্যে ট্রাম্পের সর্বশেষ দাবির মধ্যে রয়েছে - ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর (ইইউ) ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের উপর ৪৬ শতাংশ, জাপানের উপর ২৪ শতাংশ, ভারতের উপর ২৭ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ২৬ শতাংশ, তাল্যান্ডের উপর ৩৭ শতাংশ এবং সুইজারল্যান্ডের উপর ৩২ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা

চিনের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রভাব এখনও পুরোপুরি বোঝা সম্ভব না হলেও দেশগুলি তাদের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ প্রভাব খতিয়ে দেখছে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিস্তৃত প্রবণতা থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনুমান করা যেতে পারে এবং যা অবশ্যই স্পষ্ট। প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক, পূর্ববর্তী প্রশাসনের বিদ্যমান বাণিজ্য যুদ্ধ, চিনের উপর সর্বোচ্চ শতাংশ শুল্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য উদ্বৃত্তের কারণে চিন প্রতিশোধমূলক শুল্ক ঘোষণা করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পর থেকে পরবর্তী প্রশাসনগুলি চিনেসঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করেছে এবং প্রতিশোধমূলক শুল্কের চক্রকে ইন্ধন জুগিয়েছে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের দরুন প্রতিশোধ নিয়েছে এবং ১১টি মার্কিন সংস্থাকে অনির্ভরযোগ্য সংস্থা’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং তাদের উপর চিনে বা চিনা সংস্থাগুলির সঙ্গে ব্যবসা করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পর থেকে পরবর্তী প্রশাসনগুলি চিনেসঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করেছে এবং প্রতিশোধমূলক শুল্কের চক্রকে ইন্ধন জুগিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আগামী মাসগুলিতে এবং সম্ভবত বছরগুলিতে বাজার, সংযোগ, বিনিয়োগ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির উপর প্রথম ক্রমানুসারী প্রভাব পড়বে এবং অন্যান্য অর্থনীতি  স্থিতিশীলতার দিকে বাণিজ্যের নিরিখে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব পুনর্নির্মাণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে মোট বাণিজ্য ৫৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হওয়ায়, একটি সর্বাত্মক বাণিজ্য  যুদ্ধের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পড়বে, বিশেষ করে সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্বব্যাপী ডলারের ভাণ্ডারের উপর। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ দুটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ব অর্থনীতি শক্তির মধ্যে ব্যবধান দ্রুত প্রসারিত করার সম্ভাবনা রাখেকারণ তাদের নিজ নিজ নীতির লক্ষ্যগুলি বিপরীত। আরও উদ্বেগজনক হল, জ্বালানি, জলবায়ু, প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) এবং গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান খনিজ পদার্থের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি চিনের দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত।

চিনের ঊর্ধ্বে উঠে মার্কিন শুল্ক অন্য প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের শুল্কের সঙ্গে পুনর্বিন্যাস করতে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে পুনর্নির্দেশ করতে বাধ্য করতে পারে। চি, জাপান দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্প্রতি ঘোষিত যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি মাধ্যমে আসলে দেশগুলি ইতিমধ্যে কী ভাবে তাদের নীতি পুনর্বিন্যাস করছে, তার একটি ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে অন্যান্য দেশের মোকাবিলার পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য ভাবে ভিন্ন হতে পারেবৃহত্তর অর্থনীতির তুলনায় কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম অন্যান্য ছোট দেশের উপর অনেক খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সে সব দেশে প্রভাবের মাত্রা অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দিল্লি ওয়াশিংটন উভয় পক্ষের মধ্যে অ-সংঘাতমূলক বাণিজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রশংসাসূচক ইঙ্গিত মিলেছে

মার্কিন শুল্কের প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের গত মেয়াদের বিপরীতে মার্কিন শুল্কের প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়া ক্রমাঙ্কিত করা হবে কারণ উভয় পক্ষ বিদ্যমান বাণিজ্য আলোচনায় জড়িত। ট্রাম্পের সতর্কীকরণ অনুযায়ী যে কোনও প্রতিশোধের ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে এবং তা আমেরিকার শুল্কের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির প্রতিক্রিয়াগুলিকেও ম্লান করে দিতে পারে। এ ছাড়াও, দিল্লি ওয়াশিংটন উভয় পক্ষের মধ্যে অ-সংঘাতমূলক বাণিজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রশংসাসূচক ইঙ্গিত মিলেছে। ভারত ২০২৫ সালে তার কেন্দ্রীয় বাজেটে কিছু আমদানি খাতে সমঝোতামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকাকে সম্পৃক্ত করার জন্য একটি ইতিবাচক পদ্ধতির ইঙ্গিত দিয়েছে। ট্রাম্প ভারতের শুল্ককে প্রাথমিক ২৭ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে এনেছেন এবং এটিকে ভারতের জন্য একটি ছাড়প্রাপ্ত পারস্পরিক শুল্ক বলে অভিহিত করেছেন। ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হওয়ার কারণে ২৬ শতাংশ শুল্ক এখনও ভারতের জন্য একটি বিশাল রাজস্ব ক্ষতিসম হতে পারে। তা সত্ত্বেও, ট্রাম্পের ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠা বাণিজ্য যুদ্ধ ভারতের জন্য দুটি সুবিধা নিয়ে আসতে পারে: প্রথমত, ভারত ট্রাম্পসুলভ চিনের সরাসরি আক্রমণের মধ্যে না-ও থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি শুল্ক সংখ্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তবুও ভারতের প্রতিক্রিয়া কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

এ দিকে, বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথ যখন এক ধাক্কার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারত-সহ দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক নীতির বৃহত্তর ভিত্তি ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করবে না। বাজার সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্গঠনে মৌলিক অর্থনীতির নিয়মগুলি কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে যেহেতু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চিন দক্ষিণ, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলগুলিতে নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। বলা বাহুল্য, এর সঙ্গে যুক্ত ভূ-রাজনীতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংযোগের গোলকধাঁধা পরিবর্তন আনতে পারে। মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধকে কেবল বাণিজ্য মূল্য খাতের কারণে মার্কিন শুল্কের প্রতি অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়ার একটি নকশা হিসাবে দেখা উচিত নয়, যা নির্দিষ্ট দেশগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য রকমের ভিন্ন হতে পারে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলি, যাদের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং আমদানির জন্য যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বেশি নির্ভরশীল, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখার মতো হবে।

উদারবাদী বিশ্বক্রম সম্পর্কে গ্লোবাল সাউথের অবিশ্বাসী মনোভাব আখেরে সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে পশ্চিমীদের একটি স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থনৈতিক নীতি গত সাত দশক ধরে অনেক দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছে।

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস গত শতাব্দীর বিশ্বায়িত বিশ্বব্যবস্থার ভিত্তির জন্য মৃত্যুঘণ্টার শামিল হতে পারে, যা নীতিমালা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দ্বারা চালিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রতিষ্ঠান যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাসমূহ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যদিও স্বভাবতই পশ্চিমীদের পক্ষপাতী হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, তবুও সংস্থাগুলির কিছু গুণাবলি অবশ্যই ছিল। উদারবাদী বিশ্বক্রম সম্পর্কে গ্লোবাল সাউথের অবিশ্বাসী মনোভাব আখেরে সত্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে পশ্চিমীদের একটি স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থনৈতিক নীতি গত সাত দশক ধরে অনেক দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছে। চিন ছিল সেই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় সহায়ক। সেই যুগ এখন চিরতরে বদলে যেতে পারে।

 


বিবেক মিশ্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...

Read More +