-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ, নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক কূটকৌশল এ বার দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ তাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, কম্বোডিয়ার দৃঢ়তা এবং সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসিয়ানের বিশ্বাসযোগ্যতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।
তাইল্যান্ড ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝড়ের মুখে পড়েছে। মে মাসের শেষের দিকে চং বোক অঞ্চলে এক কম্বোডিয়ান সৈন্যের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এক মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষ দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সঙ্কটে পরিণত হয়েছে, যার পরিণতিতে তাই সাংবিধানিক আদালত ১ জুলাই প্রাইম মিনিস্টার পেতংটার্ন সিনাওয়াত্রাকে পদত্যাগ করতে বলেছে। এই সংঘর্ষ অমীমাংসিত আঞ্চলিক দাবি ও চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে গভীর উত্তেজনার পুনরুত্থান ঘটায়। তবে ফাঁস হওয়া ফোনালাপই এই চাপানউতোরের ছাইচাপা আগুনে যেন বারুদের সঞ্চার করে।
১৮ জুন কম্বোডিয়ান সেনেটের প্রেসিডেন্ট এবং প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার হুন সেন তাই প্রাইম মিনিস্টার পায়েতংটার্নের সঙ্গে ১৭ মিনিট ৬ সেকেন্ড দীর্ঘ একটি ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন, যাতে কোনও ছাঁটকাট করা হয়নি এবং যে ফোনালাপটি নিঃসন্দেহে ছিল বিস্ফোরক। জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর পেতংটার্ন ফোনালাপটির সত্যতা স্বীকার করে নেন। ওই ফোনালাপে তাই সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনামূলক মন্তব্য ছিল এবং কম্বোডিয়ান প্রাইম মিনিস্টারকে ‘আঙ্কল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই সিনাওয়াত্রার ভঙ্গুর জোটের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক। কারণ ৬৯টি আসনবিশিষ্ট প্রধান জোটসঙ্গী ভূমজাইথাই পার্টি সেদিনই জোট ছাড়ে, যার ফলে সরকারে সঙ্কট দেখা দেয়। নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং নৈতিকতার অভিযোগের বন্যা বয়ে যায়। সেনেট প্রেসিডেন্ট মংকোল সুরসাজ্জা সংবিধানিক আদালতে আবেদন করেন, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী আদৌ আর শাসনক্ষমতার উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং নৈতিক অনিয়ম ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের অনুরোধ জানান।
২৪ জুন এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সমস্ত স্থল সীমান্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং শুধুমাত্র ছাত্র, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে এবং জরুরি মানবিক ভিত্তিতে ভ্রমণের অনুমতি দেয়। পর্যটন, বাণিজ্য এবং নৈমিত্তিক পরিবহণ… অন্য সব রকমের চলাচলই অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়।
তবুও পেতংটার্ন পিছু হটতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ও সার্বভৌমত্ব ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি অটল ছিলেন। তিনি কম্বোডিয়ার প্রাইম মিনিস্টারের এই ফোনালাপ ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনাটিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও বিশ্বাসের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। এই মর্মে তাইল্যান্ডের ফরেন অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদপত্র পেশ করে। ২৪ জুন এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সমস্ত স্থল সীমান্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং শুধুমাত্র ছাত্র, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে এবং জরুরি মানবিক ভিত্তিতে ভ্রমণের অনুমতি দেয়। পর্যটন, বাণিজ্য এবং নৈমিত্তিক পরিবহণ… অন্য সব রকমের চলাচলই অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়।
১ জুলাই তাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত পেতংটার্নের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অভিযোগগুলি পরীক্ষা করার সময় তাঁকে ১৫ দিনের জন্য পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কট আরও গভীর হয়। এই পনেরো দিনের জন্য ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিটকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। দেশে উত্তেজনা এবং বিদেশে কূটনীতির দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতা এবং এর প্রভাব বোঝা এই মুহূর্তে অপরিহার্য।
সীমান্ত উত্তেজনার ঐতিহাসিক পটভূমি
ঐতিহাসিক ভাবে তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ৮১৭ কিলোমিটার স্থলসীমার মধ্যে একটি ছোট অংশ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরের আশেপাশের এলাকা নিয়ে এই বিরোধ, যাকে তাইরা ফ্রা বিহারন নামে চেনে। বিরোধের সূত্রপাত বিশ শতকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলে, যখন তাইল্যান্ড (তৎকালীন সিয়াম) দুই দেশের মধ্যে উত্তর সীমান্ত চিহ্নিত করে একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫৩ সালে আবার যখন কম্বোডিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, তখন বহু বার এই অঞ্চলটি হাত বদল হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৫৪ সালে তাই সৈন্যরা এই অঞ্চল দখল করে। এর প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সামনে বিরোধটি নিয়ে আসে, যা ১৯৬২ সালে কম্বোডিয়ার পক্ষে রায় দেয়। তবে তাইল্যান্ড আইসিজে-র রায় গ্রহণ করেনি এবং প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত ১৯০৭ সালের মানচিত্রের ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে। তাইল্যান্ড স্পষ্ট ভাবেই বলেছে যে, তারা ১৯০৭ সালের মানচিত্রকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। যদিও এই মানচিত্র দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং তাইল্যান্ড জোর দিয়ে বলেছে যে, আইসিজে-র রায় কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক মন্দিরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বৃহত্তর সীমান্ত অঞ্চলে নয়। ২০১৩ সালে কম্বোডিয়ান সরকারের অনুরোধে আইসিজে তার ১৯৬২ সালের রায় পুনর্ব্যক্ত করে এবং সমগ্র মন্দির চত্বরের উপর কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে তাইল্যান্ডকে এই অঞ্চল থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।
২০০৮ সালে কম্বোডিয়া প্রিয়া বিহারকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধনের চেষ্টা করলে এবং ২০১১ সালে আবারও যখন উভয় পক্ষের সৈন্যদের গুলি বিনিময়ের পর প্রায় ৪০ জন নিহত হয়, তখন বিরোধটি নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সীমান্ত সমস্যাটি বিভিন্ন সময়ে বারবার উঠে এসেছে, যার ফলে দেশগুলির মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাঙনের ঘটনাও ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮ ও ২০১১ সালে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কম্বোডিয়া ও তাইল্যান্ড বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ২০০৮ সালে কম্বোডিয়া প্রিয়া বিহারকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধনের চেষ্টা করলে এবং ২০১১ সালে আবারও যখন উভয় পক্ষের সৈন্যদের গুলি বিনিময়ের পর প্রায় ৪০ জন নিহত হয়, তখন বিরোধটি নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করে।
বর্তমান সময়ের সমীকরণ
ফোনালাপটি বিতর্কের কেন্দ্রে জায়গা করে নিলেও এবং তাই শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করলেও তাই প্রাইম মিনিস্টার এটিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার গভীর আকাঙ্ক্ষা থেকে পরিচালিত এক ধরনের আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সরকারি কূটনৈতিক চ্যানেলগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার ফলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন এবং তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সফর বা সরকারি আলোচনার বিপরীতে ব্যক্তিগত কথোপকথনের কূটনৈতিক সুরক্ষার অভাব থাকে, সেই ধরনের আলোচনার কোনও সরকারি রেকর্ড থাকে না এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনও নির্দিষ্ট পরিকাঠামোও নেই। এক বার এই ধরনের কথোপকথন প্রকাশ্যে এলে এগুলি দ্রুতই রাজনৈতিক আক্রমণের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হয়ে পেতংটার্ন আপসের দিক থেকে সরে এসে আরও কঠোর পদক্ষেপের দিকে হাঁটছেন। নমপেন এবং অন্যান্য কম্বোডিয়ান সীমান্ত শহরে ক্যাসিনো - যা দেশের পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাই পর্যটকদের আকর্ষণ করে - এখন তদন্তের আওতায় রয়েছে। ২৩ জুন জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী সাতটি প্রদেশের স্থল সীমান্ত চেকপয়েন্ট দিয়ে যানবাহন, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
পেতংটার্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার অপরাধ শৃঙ্খল মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর সরকারের ইচ্ছার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। এই বছরের শুরুতে তাইল্যান্ড মায়ানমারভিত্তিক জালিয়াতি কেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল, যেখানে অনলাইন জালিয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হত। এই জালিয়াতির মোকাবিলা করার জন্য তাইল্যান্ড সীমান্ত শহরগুলিতে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। একই ধরনের পদ্ধতি এখন কম্বোডিয়াতেও সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং সন্দেহভাজন জালিয়াতি কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনীয় আন্তঃসীমান্ত সরবরাহ বন্ধ করার জন্য তাইল্যান্ড উঠেপড়ে লেগেছে।
ভঙ্গুর জোটকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের ভূমিকা পুনর্বণ্টন ও রাজনৈতিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য মন্ত্রিসভায় রদবদল শুরু করেছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী এবং রাজপরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। ফলে এই সঙ্কট দ্বিপাক্ষিক বিরোধের চাইতেও আরও বেশি গভীর হয়েছে। এটি এখন তাইল্যান্ডের জোটের স্থিতিশীলতা, প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বেসামরিক ও সামরিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্যকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। কূটনৈতিক চ্যানেলগুলি উন্মুক্ত থাকলেও সঙ্কট মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভঙ্গুরতার কারণে সীমাবদ্ধই থাকবে।
এই সঙ্কট দ্বিপাক্ষিক বিরোধের চাইতেও আরও বেশি গভীর হয়েছে। এটি এখন তাইল্যান্ডের জোটের স্থিতিশীলতা, প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বেসামরিক ও সামরিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্যকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।
অন্য দিকে, কম্বোডিয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতিদান দিয়েছে। যেমন আইনি আশ্রয় নেওয়া, রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিদান দেওয়া এবং শক্তিশালী সামরিক অবস্থান দেখানো। তাইল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করলেও কম্বোডিয়া আবারও আইসিজে-র দ্বারস্থ হয়েছে এবং মন্দিরের সংলগ্ন এলাকার উপর সার্বভৌমত্বের অধিকার দাবি করেছে। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হুন সেন বলেন যে, ‘আইসিজে-তে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়নি।’ আইসিজে-র মাধ্যমে তা মোয়ান থম, তা মোয়ান তাউচ, তা ক্রাবেই মন্দির এবং পান্না ত্রিভুজ অঞ্চলের বিরোধ নিষ্পত্তি করার অভিপ্রায়ের কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন। আইসিজে-র রায় মেনে নিতে তাইল্যান্ডের অনিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে বিরোধের আইনি দিকটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এটি কম্বোডিয়ার একটি প্রচেষ্টাও বটে।
সর্বোপরি, ফ্রন্টলাইন পরিদর্শন করার সময় কম্বোডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার হুন মানেত (হুন সেনের পুত্রও বটে) পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন এবং ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের’ আহ্বান জানিয়েছেন। তবে হুন সেন আরও শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে পরিখা খনন এবং প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক উভয় অভিযানের জন্যই প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক পরিসরের দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তুলেছেন এবং তাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার থাকসিন সিনাওয়াত্রার ‘মুখোশ খুলে দেওয়া’র হুমকিও দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এই সব কিছুই আসলে তাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার কম্বোডিয়ার ক্ষমতাকেই দর্শায়।
এ ছাড়াও দেশটি তাইল্যান্ড থেকে তেল, গ্যাস, ফল ও সবজি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাই ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাগরিকদের তাইল্যান্ড ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শও দিয়েছেন।
এই সীমান্ত পর্বটি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতকে তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমর্থন একত্রিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। আইসিজেতে বিরোধটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এই রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেমন হুন সেনের আরও দৃঢ় রাজনৈতিক কৌশল।
সীমান্ত উত্তেজনার প্রভাব
তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনার পুনরুত্থানের উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রভাব রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ভাবে এই সঙ্কট কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ব্যাহত করেছে, যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত সম্প্রদায়ের ক্ষতি হয়েছে। তাইল্যান্ডের জন্য এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ঘটেছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ জোট রাজনীতি এবং সামরিক ও বেসামরিক শক্তির মধ্যে উত্তেজনা বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করে। এই বিতর্ক তাইল্যান্ডের কূটনৈতিক অবস্থানের উপর আঞ্চলিক আস্থা হ্রাস করতে পারে, বিশেষ করে আসিয়ানের সঙ্গে প্রতিবেশী সম্পর্ক গঠনমূলক ভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা।
জুলাই মাসে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়টির সমাধান হতে পারে। তবে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা অনিশ্চিতই রয়ে গিয়েছে।
কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রে সরকার কূটনৈতিক সংযম ও যৌথ সীমান্ত কমিশনের মাধ্যমে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও, তাই আমদানি বন্ধ করে এবং তার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আইসিজে-র মাধ্যমে বিরোধকে আন্তর্জাতিকীকরণের সম্ভাব্য পদক্ষেপ আসিয়ানের অ-হস্তক্ষেপবাদী নীতিমালাকে আরও পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে।
আঞ্চলিক ভাবে, উত্তেজনা আসিয়ানের সংঘাত সমাধান ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিশেষ করে যেহেতু এর কেন্দ্রীয়তা প্রায়শই তার ঐকমত্যচালিত নিষ্ক্রিয়তা এবং অ-হস্তক্ষেপবাদী দৃষ্টিভঙ্গির দরুন ক্ষুণ্ণ হয়। এই সঙ্কট আন্তঃ-আঞ্চলিক বিরোধ কমাতে ব্লকের সীমাবদ্ধতাগুলিকে তুলে ধরে। জুলাই মাসে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়টির সমাধান হতে পারে। তবে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা অনিশ্চিতই রয়ে গিয়েছে।
আসিয়ানের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক মধ্যস্থতা ছাড়াই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিরোধগুলি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতাকে খর্ব করেছে। অবকাঠামোগত সংযোগ ও আঞ্চলিক সমন্বিতকরণ গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তাবাদ, কৌশলগত ভুল পদক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এই ধরনের উত্তেজনাময় সম্পর্কের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ্যে এনে দেয়। তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া এই উত্তেজনাকে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের নতুন পর্যায়ে পরিণত হওয়া থেকে রোধ করতে পারবে কি না তা নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্বের উপর এবং প্রতিক্রিয়ার চাইতেও আলাপ-আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর।
শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
অভিষেক শর্মা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sreeparna Banerjee is an Associate Fellow in the Strategic Studies Programme. Her work focuses on the geopolitical and strategic affairs concerning two Southeast Asian countries, namely ...
Read More +Abhishek Sharma is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the Indo-Pacific regional security and geopolitical developments with a special ...
Read More +