Author : Soumya Awasthi

Published on Oct 18, 2025 Updated 0 Hours ago

এআই ভারতের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী প্রতিক্রিয়াকে রূপান্তরিত করতে পারে, তবে এর প্রকৃত প্রভাব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আন্তঃসংস্থা সমন্বয় এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের উপর নির্ভর করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী সক্রিয়তা বৃদ্ধি: একটি ভারত-কেন্দ্রিক কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি

আধুনিক রাষ্ট্রগুলি কীভাবে বিপদগুলির পূর্বাভাস পায়, সনাক্ত করে এবং মোকাবিলা করে তার একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী (সিটি) সক্রিয়তার সংযোগবিন্দু। এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ, ডিজিটাল প্রচারণা, ড্রোন প্রযুক্তি এবং বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কগুলিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ আয়তন ও পরিশীলন উভয় ক্ষেত্রেই বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রগুলিকে সমানভাবে তৎপর ও পূর্বাভাসমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। ভারতের মতো একটি দেশের জন্য, যারা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, বিদ্রোহ ও সাইবার-র‌্যাডিক্যালাইজেশনের বহু-স্তরীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি, এআই বিশাল ডেটাসেট বিশ্লেষণ করা, ধরনগুলি সনাক্ত করা এবং রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করার ক্ষমতাসহ সিটি কাঠামোর একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে।

গত কয়েক বছর ধরে, সিটি-তে এআই একটি দুমুখো তলোয়ার হয়ে উঠেছে: হিংসাত্মক অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ দ্বারা এর অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় পক্ষ দ্বারা ব্যবহার করা হচ্ছে। অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষগুলি নিয়োগ,
প্রশিক্ষণ, প্রচারণা, ও জঙ্গি তৈরি করার জন্য এআই-‌কে কাজে লাগিয়েছে। আল-কায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের মতো সংগঠনগুলি অনুসারীদের জঙ্গি করে তোলা এবং সন্ত্রাসী হামলার সমন্বয়  সাধনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি ডিপফেক কন্টেন্ট  এবং এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ ব্যবহার করেছে।


এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ, ডিজিটাল প্রচারণা, ড্রোন প্রযুক্তি এবং বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্কগুলিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ আয়তন ও পরিশীলন উভয় ক্ষেত্রেই বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রগুলিকে সমানভাবে তৎপর ও পূর্বাভাসমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে।



রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট ও কাশ্মীর টাইগার্সের মতো পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট গোষ্ঠীগুলি মিডিয়া প্রচারণাসহ এআই-সক্ষম প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। একইভাবে, হুথিরা ২০২১ সালে সৌদি আরবের তেল পরিকাঠামোতে আক্রমণ করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করেছিল। আহরার-আল-শাম গোষ্ঠীর রুশ সামরিক সম্পদের উপর ২০১৮ সালে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন আক্রমণ দেখায় যে ড্রোন, এনক্রিপ্ট করা অ্যাপ এবং অন্যান্য এআই সরঞ্জামের মতো প্রাপ্তিযোগ্য অফ-দ্য-শেল্ফ প্রযুক্তিগুলি কীভাবে অপ্রতিসম  যুদ্ধে পরিবর্তন আনছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য সিটি প্রয়োগ

দ্রুত হুমকি সনাক্তকরণ, রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ঝুঁকি মূল্যায়নকে ক্ষমতায়িত করে এআই দ্রুত সিটি পরিবর্তন করছে। সিটি অপারেশনে এর একীভূতকরণ প্রতিরোধমূলক এবং প্রতিক্রিয়াশীল উভয় ব্যবস্থার অভ্রান্ততা এবং সময়োপযোগিতা উন্নত করে।

১. ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ এবং আচরণগত মডেলিং

এআই মানুষের আচরণের মডেলিং এবং বিশাল ডেটাসেট বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এবং
প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (এনএলপি) ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সনাক্ত করতে পারে। এই মডেলগুলি, শব্দার্থিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে, প্রেক্ষাপট ও কোডেড ভাষার মধ্যে সম্পর্ক সনাক্ত করতে পারে, যা প্রায়শই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলি সনাক্তকরণ এড়াতে ব্যবহার করে। একইভাবে, একটি predictive analytics system  প্রয়োগ গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে প্রাথমিক সতর্কতা চিহ্ন সনাক্ত করতে, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রোফাইল তৈরি করতে, এবং পরিস্থিতি অনুকরণ করতে সক্ষম করে, যার ফলে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হয়।

২. স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ও মুখের সনাক্তকরণ

একটি কম্পিউটার ভিশন সিস্টেম মুখ ও বস্তুর সনাক্তকরণ এবং কার্যকলাপের ধরন বিশ্লেষণের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রদান করে নজরদারিতে বিপ্লব আনতে পারে। এই সিস্টেমগুলিকে সংবেদনশীল এলাকা বা সীমান্ত অঞ্চলে
সন্দেহজনক আচরণ ট্র্যাক করতে এবং অস্ত্র সনাক্ত করতে  ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যায়। এগুলি পরিচিত ডেটাসেটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থাপন করে, যার ফলে প্রতিক্রিয়ার সময় এবং মানুষের ত্রুটি হ্রাস পায়। 

৩. ড্রোন সনাক্তকরণ এবং কাউন্টার-ইউএভি সিস্টেম

কাউন্টার-ড্রোন এবং আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) ফ্রেমওয়ার্কগুলি হুমকি মূল্যায়নের যান্ত্রিকীকরণের জন্য এআই-কে সংযুক্ত করতে পারে, যার ফলে আকাশপথে ‌অনুপ্রবেশের জন্য সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে লক্ষ্যবস্তুকে নিষ্ক্রিয় করা, সেগুলির মোকাবিলা করা এবং রক্ষা করা সম্ভব হয়। গতি, উচ্চতা ও পেলোড বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ড্রোনগুলিকে বাণিজ্যিক, বেসামরিক বা প্রতিকূল হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করতে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং এবং অনলাইন ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশন

সন্ত্রাসীরা যখন নিয়োগ, মৌলবাদ ও প্রচারণার প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছে, সেই সময় এআই সিস্টেমগুলি সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ, জঙ্গিবাদের আলোচনা সনাক্তকরণ এবং প্রভাবের নেটওয়ার্ক মানচিত্রায়ণের জন্য 
স্বয়ংক্রিয় ভাষা অনুবাদের মতো সরঞ্জাম সরবরাহ করে। তার উপর, এআই ব্যক্তিদের কাছে বিকল্প সামগ্রী সুপারিশ করে জ্ঞানীয় হস্তক্ষেপকে সমর্থন করতে পারে, যা মৌলবাদ-বিরোধী সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
 
৫. আর্থিক গোয়েন্দা তথ্য এবং ক্রিপ্টোগ্রাফিক ট্র্যাকিং

সিম্ফনি এআই-এর মতো সরঞ্জামগুলি সন্ত্রাসীদের অবৈধ আর্থিক লেনদেন সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। একইভাবে,
সাইলেন্ট এইট  হল আরেকটি কোম্পানি যা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে অনিয়মিত আর্থিক কার্যকলাপ সনাক্ত এবং প্রত্যাখ্যান করার জন্য মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

৬. সাইবার হুমকি সনাক্তকরণ

সন্ত্রাসবাদী উপাদানগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য সাইবার পরিসরগুলিকে ক্রমবর্ধমানভাবে কাজে লাগাচ্ছে। এআই-সক্ষম সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি 
প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং অনুপ্রবেশ সনাক্তকরণ সিস্টেম  সরবরাহ করে যা ক্রমাগত হুমকি সংক্রান্ত গোয়েন্দা লাইব্রেরি আপডেট করে, এবং এইভাবে তাদেরকে সরকার, সামরিক এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম করে।

সিটি-‌র জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ

জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল উন্নত করার জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি এআই গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইজরায়েল সরাসরি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এআই-এর অন্যতম প্রধান ব্যবহারকারী হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের গাজা অভিযানের সময়, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী রিয়েল-টাইম নজরদারি, লক্ষ্য নির্বাচন এবং অপারেশনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য 'ল্যাভেন্ডার', 'হোয়ার্স ড্যাডি' এবং 'দ্য গসপেল'-এর মতো সিস্টেম ব্যবহার করেছিল, যা অ্যালগরিদমিক যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তন চিহ্নিত করে।


নীতিনির্ধারকেরা ব্যাঘাতের মূল বিষয়গুলি চিহ্নিত করেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি সাজিয়ে নিয়েছিলেন, যা সাইবার-সিটিতে এআই-এর উপযোগিতা চিত্রিত করেছিল।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ
প্রকল্প মাভেন চালু করেছে, যা ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের মতো অঞ্চলে প্রতিকূল গতিবিধি সনাক্ত করতে এআই ব্যবহার করে ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এআই-সমন্বিত রাডার সিস্টেম শত্রু ড্রোন সনাক্ত এবং ট্র্যাক করতে পারে — এগুলি ফ্লাইট প্যাটার্ন, উচ্চতা ও পেলোডের উপর ভিত্তি করে তাদের শ্রেণিবদ্ধ করে। উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার (ন্যাটো) ডেক্সটার প্রকল্প  আরেকটি উদাহরণ যেখানে এআই জনাকীর্ণ পরিবেশে সশস্ত্র  সন্দেহভাজন এবং ইউএভি হুমকি সনাক্ত করে। একইভাবে, লস্কর-এ-তৈয়বা (এলইটি) সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এই গোষ্ঠী কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এআই মডেল সোমা (স্টোকাস্টিক অপোনেন্ট মডেলিং এজেন্টস) ব্যবহার করা হয়েছিল। নীতিনির্ধারকেরা ব্যাঘাতের মূল বিষয়গুলি চিহ্নিত করেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি সাজিয়ে নিয়েছিলেন, যা সাইবার-সিটিতে এআই-এর উপযোগিতা চিত্রিত করেছিল।

ইতিমধ্যে, যুক্তরাজ্য ডিজিটাল উগ্রবাদবিরোধী কার্যক্রমে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলির সঙ্গে সরকারের অংশীদারিত্বের ফলে '
মুনশট সিভিই'-র মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু সক্রিয়ভাবে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে, যা চরমপন্থী বিষয়বস্তু অনুসন্ধানকারী ব্যবহারকারীদের প্রতিরোধ পোর্টালে পুনঃনির্দেশিত করে। একইভাবে, ইউরোপোলের 'সিরিয়াস' প্ল্যাটফর্ম ভার্চুয়াল সম্পদের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের তহবিল সনাক্ত করতে এআই-কে সংযুক্ত করে, ব্লকচেন লেনদেন বিশ্লেষণ করে, সন্দেহজনক ধরন সনাক্ত করে, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) লগের সঙ্গে ক্রিপ্টো ডেটা একত্রিত করে ওয়ালেটগুলিকে আসল পরিচয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

এদিকে, ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করে
'ফ্যারোস' প্ল্যাটফর্মকে — একটি সহযোগী এআই টুল যা সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলির সঙ্গে একত্রে তৈরি করা হয়েছে চরমপন্থী বিষয়বস্তুকে চিহ্নিত করে। এটি ফরাসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে হস্তক্ষেপ করতে এবং সম্ভাব্য অপরাধীদের ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র মানচিত্রায়িত করতে দেয়।

সন্ত্রাসবাদ-‌বিরোধী নীতিতে ভারতের নীতি স্থাপত্য বৃদ্ধি করা

 
ভারতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-‌ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উদ্যোগের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে, যা তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা স্থাপত্যে প্রযুক্তি একীভূত করার ক্ষেত্রে আশাবাদ প্রকাশ করে। ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিসিটিএনএস), ন্যাশনাল অটোমেটেড ফেসিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম (এএফআরএস), এবং ন্যাশনাল ইন্ট্যালিজেন্স গ্রিড (এনএটিজিআরআইডি)-‌এর মতো উদ্যোগগুলি ডিজিটালাইজড নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) নজরদারি প্ল্যাটফর্ম নেট্রা (এনইটওয়ার্ক ট্র্যাফিক বিশ্লেষণ) ভারতীয় সংস্থাগুলিকে এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করতে এবং প্রাথমিক হুমকি সংকেত সনাক্ত করতে সক্ষম করেছে। ২০২৪ সালের আখনুর এনকাউন্টারের সময়, আধা-স্বায়ত্তশাসিত নেভিগেশন-‌সহ মানবহীন স্থল যানবাহন সৈন্য অভিযানকে সমর্থন করেছিল। উপরন্তু, গুজরাটে অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত ইন্দ্রজাল এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মোতায়েন করা স্কাইনেট ইন্টেলের মতো অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমগুলি পরিধি প্রতিরক্ষা এবং আকাশ নজরদারিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে।

ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের ২০২০ সালের '
সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য দায়িত্বশীল এআই ' (রেইজ) উদ্যোগটি উন্নয়ন লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেও, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এর কার্যকরী প্রাসঙ্গিকতার অভাব রয়েছে। পরিবর্তে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এআই কৌশল এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, যেমন প্রতিরক্ষা এআই কাউন্সিল এবং প্রতিরক্ষা প্রকল্প সংস্থা তৈরি করা হল সন্ত্রাসবাদ দমন এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে এআই-কে একীভূত করার দিকে আরও বাস্তব পদক্ষেপ। তবে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে এআই গ্রহণ এখনও সীমিত ফরেনসিক ক্ষমতা, আন্তঃ-সংস্থা ডেটা সাইলো এবং হুমকি সনাক্তকরণ সরঞ্জামগুলিতে অপ্রতুল প্রশিক্ষণের কারণে ভুগছে, কারণ এগুলিতে প্রায়শই এআই-এর সঙ্গে সংযুক্তিকরণের অভাব রয়েছে।

গুজরাটে অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত ইন্দ্রজাল এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মোতায়েন করা স্কাইনেট ইন্টেলের মতো অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমগুলি পরিধি প্রতিরক্ষা এবং আকাশ নজরদারিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে।



জাতীয় প্রস্তুতি বাড়ানোর লক্ষ্যে, ভারতকে
নিরাপত্তায় এআই-এর জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় মিশন তৈরি করতে হবে। এটি এআই-এর জাতীয় মিশনের মডেল অনুসরণ করে তৈরি করা উচিত, তবে স্পষ্টভাবে এটি তৈরি করা উচিত সন্ত্রাসবাদ দমন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য, এবং এতে সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তা হল আঞ্চলিক এআই-সমন্বিত টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা। এই ইউনিটগুলিকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে হুমকির ধরন সনাক্ত করার জন্য এআই ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বর্তমানে এআই গবেষণা ও উন্নয়নে ভারতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা জাতীয় মোট আভ্যন্তর উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ০.৬ থেকে ০.৭ শতাংশ, যা হুমকির পরিবর্তিত প্রকৃতির কারণে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মোকাবিলা করা প্রয়োজন। যদিও প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) ইতিমধ্যেই
এআই-ভিত্তিক সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে কাজ শুরু করেছে, তবুও ভারতের যতটা ভাবা যায় তার চেয়েও বেশি উদ্যোগের প্রয়োজন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল ভারতে ভাষা বৈচিত্র্য; তাই, উগ্রবাদ-‌বিরোধী কার্যকর এআই পর্যবেক্ষণকে ভাষাগত বৈচিত্র্যের কথা বিবেচনা করতে হবে। ভারতে,
সন্ত্রাসী বিষয়বস্তু প্রায়শই এআই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, কারণ এটি ল্যাটিন-বহির্ভূত লিপিতে (যেমন হিন্দি, বাংলা বা উর্দু) বা কোড-মিশ্রিত ভাষাগুলিতে (যেমন, ইংরেজি অক্ষরে লেখা হিন্দি) প্রদর্শিত হয়। বিশ্বব্যাপী এআই সরঞ্জামগুলি এই ধরনের ফরম্যাট সনাক্ত করার জন্য সুপ্রশিক্ষিত নয়। ফলস্বরূপ, ক্ষতিকারক বার্তা অজ্ঞাতসারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভারতীয় এআই গবেষণা কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতায় আঞ্চলিক ভাষার এআই মডেল বিকাশের উদ্যোগগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাস দমন কমিটি এবং গ্লোবাল কাউন্টার টেরোরিজম ফোরাম-‌এর মতো
আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি সিগন্যাল ইন্ট্যালিজেন্স (সিগইন্ট), হিউম্যান ইন্ট্যালিজেন্স (হিউমিন্ট) এবং জিওস্পেশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স (জিয়োইন্ট)-‌সহ  ফাইভ আইজ অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে সহযোগিতার কাঠামোতেও অংশগ্রহণ করা উচিত। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইজরায়েল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ভারতকে সর্বোত্তম অনুশীলন অর্জন ও অভিযোজিত করতে সহায়তা করতে পারে। আইনি দিক থেকে, ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) সংশোধন করতে হবে, যাতে এগুলির মধ্যে এআই-উৎপাদিত প্রমাণ, আন্তঃসীমান্ত ডেটা প্রাপ্যতা এবং উন্নত গোপনীয়তা প্রোটোকলের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইজরায়েল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ভারতকে সর্বোত্তম অনুশীলন অর্জন ও অভিযোজিত করতে সহায়তা করতে পারে।



উপসংহার

একদিকে সন্ত্রাসীরা এআই-এর জন্য সৃজনশীল প্রয়োগ খুঁজে বেড়াচ্ছে;‌ অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রাথমিক হুমকি সনাক্তকরণ, কর্মক্ষম দক্ষতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তার উপরে, এআই ভারতের সন্ত্রাসবাদ দমনের পদ্ধতিতে বিপ্লব নিয়ে আসার সম্ভাবনা রাখে। প্রতিক্রিয়াশীল থেকে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সুরক্ষা কৌশলের দিকে মনোনিবেশ করে এআই বিভিন্ন হুমকি প্রতিরোধ করা, ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিগুলি পর্যবেক্ষণ করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলিকে সুরক্ষিত করার সুযোগ দেয়। তবে, এই সম্ভাবনা শুধুমাত্র একটি সামগ্রিক পদ্ধতির মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে যার মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, কৌশলগত বিনিয়োগ, নৈতিক তদারকি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারি। ভারতের মতো একটি দেশের জন্য, যারা বিভিন্ন এবং গতিশীল সুরক্ষা চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছে, এআই শুধু ভবিষ্যতের একটি হাতিয়ার নয় — এটি বর্তমানের একটি কৌশলগত অপরিহার্যতা।



সৌম্য অবস্থি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজির ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.