-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
দেশগুলি কেবলমাত্র সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ীই কাজ করে। পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার বিষয়ে চিনের প্রতিক্রিয়া আসলে অনেক বিষয়ে তার নিজস্ব অবস্থানের বিপরীত।
পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে চিনের প্রতিক্রিয়া তার স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে বিকশিত হচ্ছে। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে ভারত বিশ্ব নেতাদের অবহিত করে কূটনৈতিক আক্রমণ শুরু করেছে। নয়াদিল্লি বিশ্ব জনমত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে এবং জানিয়েছে যে, তাদের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, যা পহেলগামের অপরাধীদের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে দেয়।
বেজিং-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নিয়ে ধারণা দূর করতে ভারতে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং প্রথমে টুইট করে শোক প্রকাশ করেন এবং হামলার একদিন পর কোনও পক্ষের নাম না করে ‘সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা’ করার আহ্বান জানান। কিন্তু পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে… এ কথা বুঝতে পেরে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ২৭ এপ্রিল তাঁর পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ ইসহাক দারের সঙ্গে কথা বলেন এবং পাকিস্তানকে ‘সর্বকালীন’ কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেন। ইসলামাবাদ এই বিষয়টির স্বচ্ছ তদন্তের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে, যা বেজিংও সমর্থন করেছে। বিষয়টি যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) উত্থাপিত হয়, তখন ঘটনার গুরুত্ব লঘু করে দেওয়ার জন্য পাকিস্তান চিনের সমর্থন পেয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অবস্থান থেকে এক উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি, যেখানে ভারত সরকার ও সংশ্লিষ্ট পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতার চেষ্টা চালানো হয়েছিল।
ভারত কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর চিন পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাশ্মীর সমস্যাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে। ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও বেজিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে ভারত কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর চিন পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাশ্মীর সমস্যাটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে। ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও বেজিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অতীতে, চিন জইশ-ই-মোহাম্মদের রউফ আসগর, লস্কর-ই-তৈয়বার সাজিদ মীর এবং আবদুর রহমান মক্কিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টাকে বাধা দিয়েছে।
৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যাটি সর্বদাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ২০২০ সালে বেজিং একতরফা ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার প্রচেষ্টার পরে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এর পরে, পাকিস্তানের সঙ্গে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ থাকাকালীনই চিনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্তের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ও চিন পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ বিন্দুগুলিতে টহল ব্যবস্থার বিষয়টি চূড়ান্ত করে এবং এর পরপরই রাশিয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি তিব্বতে কৈলাস মানস সরোবর তীর্থযাত্রার জন্য ডেক বা নদীখাত পরিষ্কার করার মাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গেই স্বাভাবিকীকরণের কাজ শুরু হচ্ছে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে বিশেষ প্রতিনিধিদের প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগও পুনরায় শুরু হয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে চিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে "হিমালয়ের চেয়েও উঁচু, গভীরতম সমুদ্রের চেয়েও গভীর এবং মধুর চেয়েও মধুরতর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরনের অযৌক্তিকতার ঊর্ধ্বে উঠে এ কথা বুঝতে হবে যে, দেশগুলি কেবল জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ীই কাজ করে। পহেলগামের প্রতি চিনের প্রতিক্রিয়া অনেক বিষয়ে তার নিজস্ব অবস্থানের তুলনায় একেবারে বিপরীত।
প্রথমত, মূল ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রেক্ষাপটে বেজিং যখন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তখন তারা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংযম প্রদর্শন ও তীব্রতা হ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছে। হামলার স্বাধীন তদন্তের জন্য চিন পাকিস্তানকে সমর্থন করলেও, ক্যানবেরা কোভিড-১৯-এর উৎপত্তি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করার পর অস্ট্রেলিয়ার আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে চিন পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, ভারতের মনোযোগ এখন পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম সীমান্তের দিকে নিবদ্ধ থাকায়, চিন এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে এলএসি বরাবর একটি ইতিবাচক চুক্তি এবং সম্পৃক্ততার শর্তাবলি অর্জন করতে পারে।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ও চিন পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ বিন্দুগুলিতে টহল ব্যবস্থার বিষয়টি চূড়ান্ত করে এবং এর পরপরই রাশিয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাক্ষাৎ করেন।
তৃতীয়ত, চিন আশা করবে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হোক। কারণ যে কোনও সংঘর্ষের ফলে নয়াদিল্লির সামরিক শক্তি হ্রাস পেতে পারে। এই নিঃশেষিত অস্ত্রাগার এলএসি আলোচনায় চিনকে আরও সুবিধা প্রদান করবে।
পাকিস্তান-চিন অক্ষকে তাই একটি পরজীবী-আশ্রয়দাতা সম্পর্ক হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। পাকিস্তানের জন্য এই মিথস্ক্রিয়তার সম্পর্ক দেশটিকে অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্বলতা থেকে বের করে আনার সুযোগ দিতে পারে। পরিবর্তে, একজন চিনা জেনারেল তাঁর পরিকল্পনায় পাকিস্তানের মূল্যকে স্রেফ ‘চিনের ইজরায়েল’ হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন।
ভারতের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব প্রায়শই দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। একটি বহুমেরু বিশ্বের ভিত্তি হিসেবে ভারত একটি বহুমেরুকৃত এশিয়ার প্রত্যাশী। এটি চিনের বহুমেরুকৃত বিশ্ব কিন্তু একমেরুকৃত এশিয়া নির্মাণের ভাবনার বিপরীত। এ ভাবে বেজিং নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পাল্টা ইসলামাবাদকে শিখণ্ডী রূপে কাজ লাগাচ্ছে। অবশেষে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে চিনের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে চিনের সামরিক অংশগ্রহণ সংক্রান্ত পাকিস্তানের আশা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল এই যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে বেজিং যখন যুঝছে, তখন ইসলামাবাদকে সাহায্য করার জন্য কি চিন আদৌ পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবে?
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +