-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত ও বিমস্টেক অংশীদাররা কী ভাবে একসঙ্গে মিলে সমৃদ্ধ হতে পারে।
তিনবার স্থগিতাদেশ এবং তাইল্যান্ড ও মায়ানমারকে কাঁপিয়ে দেওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমস্টেক) ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল ব্যাঙ্ককে তাদের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের সময়সূচি নির্ধারণ করে। শীর্ষ সম্মেলন এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেবল আয়োজক শহরের স্থিতিস্থাপকতাকেই তুলে ধরেনি, বরং এই বছরের কর্মসূচি অর্থাৎ ‘বিমস্টেক: সমৃদ্ধ, স্থিতিস্থাপক এবং উন্মুক্ত’… এই ভাবনার স্থায়ী প্রাসঙ্গিকতার উপরও জোর দিয়েছে। সাত সদস্য রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভুটানের নেতারা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপের মাধ্যমে এই আঞ্চলিক সংস্থায় আরও বেশি গতি সঞ্চার করার উপায়গুলি অনুসন্ধান করেছেন। ২০১৮ সালে নেপালে চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনের পর এটি ছিল আঞ্চলিক নেতাদের প্রথম ব্যক্তিগত সমাবেশ। পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনটি ২০২২ সালে অতিমারি-কবলিত পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি পরিচালিত হয়েছিল। ভারতের জন্য এই বৈঠক ছিল বঙ্গোপসাগরে একটি ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই তার আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা পুনর্ব্যক্ত করার একটি সুযোগ।
ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনটি বিমস্টেককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার একটি ধারাবাহিকতার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এবং এর ফলাফল গোষ্ঠীটির সদস্য দেশগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে গৃহীত সনদটি সংগঠনটিকে দীর্ঘকাল ধরে অপ্রত্যাশিত প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা দিলেও আরও কার্যকরী পরিবর্তনগুলি মুলতুবিই থেকেছে, যার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে মূল বিমস্টেক প্রক্রিয়াগুলির জন্য কার্যপ্রণালীর নিয়ম গ্রহণ, বিমস্টেকের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রুপ কর্তৃক জমা দেওয়া প্রতিবেদন গ্রহণ, ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্র গ্রহণ এবং বিমস্টেক ব্যাঙ্কক ভিশন ২০৩০ চালু করা, যা সদস্য দেশগুলির মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে। এই প্রথম বারের মতো বিমস্টেক তার দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা প্রদান করেছে, যা একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনার অভাবের দীর্ঘস্থায়ী সমালোচনার সমাধান করে।
বঙ্গোপসাগর জুড়ে পণ্যসম্ভার ও যাত্রী পরিবহণ বৃদ্ধির জন্য, বাণিজ্য ও ভ্রমণের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সমুদ্র পরিবহণ সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিমস্টেক নেতারা ইতিমধ্যেই জয়েন্ট শিপিং কমিটির সঙ্গে আলোচনার জন্য এই চুক্তি অনুসারে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির খসড়া চালু করার অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়াও, এটি ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম বিষয়ক অফিসের সঙ্গে দু’টি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে, যা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সূচনাকেই দর্শায়। বিমস্টেক অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর (আসিয়ান) সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে। কারণ সহযোগিতামূলক কাজের জন্য, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। বিমস্টেক একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ান-এর অভিজ্ঞতা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নিতে পারে। কারণ আসিয়ান ভৌগোলিক ভাবে নিকট পরিসরে কাজ করে এবং এই গোষ্ঠীতে মায়ানমার ও তাইল্যান্ডের সদস্যপদ রয়েছে।
বিমস্টেক অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর (আসিয়ান) সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে। কারণ সহযোগিতামূলক কাজের জন্য, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। বিমস্টেক একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ান-এর অভিজ্ঞতা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নিতে পারে। কারণ আসিয়ান ভৌগোলিক ভাবে নিকট পরিসরে কাজ করে।
নেতারা পরিবহণ, আন্তঃজাহাজ চলাচল ব্যবস্থা এবং যানবাহন চলাচল সংক্রান্ত বিমস্টেক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের ধারণাপত্র চূড়ান্ত করা; বিমস্টেক মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্টের খসড়া তৈরি করা এবং বিমস্টেক গাইডলাইনস ফর মেরিটাইম কম্পোনেন্ট অফ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফের খসড়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিমস্টেক ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ), পরিবহণ সংযোগের জন্য মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও সামুদ্রিক সুরক্ষার উপর গভীর সহযোগিতাও আলোচনার মূল বিষয় ছিল, যা আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া্র দাবি রাখে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই প্রতিটি উদ্যোগ ভারতের কৌশলগত অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বঙ্গোপসাগরের জন্য একচেটিয়া ভাবে নিবেদিতপ্রাণ আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে বিমস্টেক ভারতকে তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ ও ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতি বাস্তবায়নের জন্য একটি সহজাত মঞ্চ প্রদান করে, যার মাধ্যমে নয়াদিল্লি তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির সুবিশাল এবং বৈচিত্র্যময় পরিসর ভারতকে কেবল গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করা ও প্রয়োজনীয় আস্থা গড়ে তোলার জন্যই নয়, বরং তার ক্ষমতা প্রদর্শন ও আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিকে রূপদানে গঠনমূলক ভূমিকা পালনেরও সুযোগ প্রদান করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি ভারতের সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গি ‘মহাসাগর’-এর (‘মিউচুয়াল অ্যান্ড হোলিস্টিক অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ অ্যাক্রস রিজিয়নস’ বা ‘পারস্পরিক এবং সামগ্রিক অগ্রগতির অঞ্চল জুড়ে নিরাপত্তা ও বৃদ্ধি’) সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এটি আসলে ২০১৫ সালে গৃহীত ‘সাগর’ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন বা ‘অঞ্চলের সকলের জন্য নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধি’) ধারণারই পরিবর্ধিত সংস্করণ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জন্যও বিমস্টেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার ‘আসিয়ান কেন্দ্রীয়তা’র উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কারণে একটি স্বতন্ত্র পূর্ব-অভিমুখী দিক রয়েছে।
পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে বিমস্টেকের সহযোগিতার ১৪টি ক্ষেত্রকে সাতটি বিস্তৃত ক্ষেত্রে পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত বিমস্টেকের নিরাপত্তা স্তম্ভের নেতৃত্ব দেয়, যার আবার তিনটি উপ-ক্ষেত্র রয়েছে: সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্দেশীয় অপরাধ দমন; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; এবং জ্বালানি। বঙ্গোপসাগরের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই উপ-ক্ষেত্রগুলিতে উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি সম্পৃক্ততা দেখা গিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট যৌথ কর্মীগোষ্ঠী গঠন, দুর্যোগ প্রস্তুতি অনুশীলন পরিচালনা এবং সম্প্রতি বিমস্টেক এনার্জি সেন্টারের নির্মাণ। সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব রূপান্তর বৃদ্ধির জন্য সংস্থার বিদ্যুৎ গ্রিডগুলির আন্তঃসংযোগের উদ্যোগেও নয়াদিল্লি নেতৃত্ব দিচ্ছে।
জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলি, বিশেষ করে আরাকান আর্মি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাখাইন ও চিন স্টেটে সামরিক হুন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। নয়াদিল্লির এই রাজ্যগুলিতে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, যা বর্তমানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তবে প্রতিবেশী দেশগুলির পরিবর্তনশীল সমীকরণের কারণে বিমস্টেকে ভারতের আরও অনেক বিনিয়োগ করা দরকার। গত অগস্ট মাসে ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের পর দক্ষিণ এশিয়ায় এক সময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নাটকীয় ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঢাকার বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (দুই-ই ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়), বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর বারবার আক্রমণের খবর এবং বহিষ্কৃত প্রাক্তন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের আবেদনের মুখে ভারতে আশ্রয় নেওয়া… সব কিছুই অবিশ্বাসের একটি জটিল জাল তৈরি করেছে।
মায়ানমারেও পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলি, বিশেষ করে আরাকান আর্মি ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাখাইন ও চিন স্টেটে সামরিক হুন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। নয়াদিল্লির এই রাজ্যগুলিতে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, যা বর্তমানে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভারত কেবল সরকারের সঙ্গে আলোচনার অবস্থানের বিপরীতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনার জন্য সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়েও দ্বিধান্বিত।
বাংলাদেশ ও মায়ানমার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) অংশ। অন্য বিমস্টেক সদস্য দেশগুলিতে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের প্রতিবেশ সমীকরণে আরও একটি জটিলতা যোগ করে। বঙ্গোপসাগর ভারতের আগ্রহের প্রধান ক্ষেত্র, যা এর অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সংযোগ এবং বৈদেশিক নীতির পূর্বাভাসের মূল বিষয়। বহুপাক্ষিকতা দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের গুরুত্বকে প্রতিস্থাপন না করলেও বিমস্টেক নয়াদিল্লিকে তার প্রভাব ধরে রাখতে এবং উপসাগরের আঞ্চলিক কাঠামো গঠনের জন্য অভিন্ন সাধারণ চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলি কাজে লাগানোর বিষয়ে অনন্য সুযোগ প্রদান করে।
তবে বিমস্টেকের স্থিতিশীল ভাবে কাজ করার জন্য তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এটি কেবল তখনই নিশ্চিত করা যেতে পারে, যদি বিদ্যমান আঞ্চলিক উদ্যোগগুলি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তব সুবিধা অর্জন করে। ভারতকে তাই সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওপেন-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...
Read More +