Published on May 14, 2025 Updated 0 Hours ago

উপমহাদেশের দেশগুলিকে বুঝতে হবে যে, পাকিস্তান এই অঞ্চলে যে সুযোগ বয়ে আনতে পারে, তার পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে

পাকিস্তানে অনিশ্চয়তার মাঝেই দক্ষিণ এশিয়ায় জোটনিরপেক্ষতার পুনর্বিবেচনা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি - যারা পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা ও সমালোচনা করেছিল - তারা এখনও অপরাধী দেশ পাকিস্তানের নিন্দা করেনি। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা নেপাল নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে এবং উত্তেজনা হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।

অতীতে ভারতের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী – অর্থাৎ নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ - ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সময় প্রকাশ্যে নিরপেক্ষই থেকেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভুটানের ভারতের প্রতি সমর্থন কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতি তালিবানদের নিষ্ক্রিয় সমর্থন হল কয়েকটি ব্যতিক্রম। তবে বর্তমান আঞ্চলিক বিশ্ব ব্যবস্থায় জোটনিরপেক্ষতার এই নীতিটি মারাত্মক ভাবে ভুল বলে মনে হচ্ছে। তাদের নীতির উপর প্রভাব বিস্তারকারী তিনটি কারণ ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভুটানের ভারতের প্রতি সমর্থন কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতি তালিবানদের নিষ্ক্রিয় সমর্থন হল কয়েকটি ব্যতিক্রম।

ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে পাকিস্তান আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, (১৯৭৫-পরবর্তী) বাংলাদেশ এবং মলদ্বীপের সঙ্গে একটি যুক্তিসঙ্গত বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রতিরক্ষামূলক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তবে আজ পাকিস্তান চরমপন্থা সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য একটি উপদ্রবমূলক দেশ হয়ে উঠেছে এবং নিজেরাই নিজেদের দেশের বিনিয়োগের পথ বন্ধ করেছে। পাকিস্তান এখনও তীব্র দীর্ঘমেয়াদি  কাঠামোগত সমস্যাগুলির সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলে বাহ্যিক ঋণের ঝুঁকি রয়েছে।

অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশ একাধিক অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৩৭ বিলিয়ন ডলারে এবং ভারতের অর্থনীতি ৫০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি ৯৭ বিলিয়ন ডলার থেকে মাত্র ৩৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালে এর প্রবৃদ্ধির হার ছিল -০.২ শতাংশ। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে মাথাপিছু আয় বিনিয়োগের হার ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের তুলনায় কম ছিল। দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং সেনাবাহিনী তার বেশিরভাগ রাজনীতি নিরাপত্তা সংক্রান্ত হিসেব-নিকেশের উপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে।

দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রতিবেশীরা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এই অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তারের জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভর করত। এই সমীকরণ থেকে এই সত্য থেকে উদ্ভূত হয়েছিল যে, ভারত একটি উল্লেখযোগ্য রকমের শক্তিশালী দেশ এবং পাকিস্তানের মতো সংশোধনবাদী শক্তির অভাব এই অঞ্চলে তাদের স্বাধীনতা প্রদান করত। ভারতের আধিপত্যের ধারণা - তা যতই ভুল হোক না কেন - পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্ককে প্রয়োজনীয় করে তুলেছিল। অন্যান্য শক্তির কাছ থেকে দক্ষিণ এশিয়া গুরুত্ব না পাওয়ার ফলে এই দেশগুলি ইসলামাবাদের উপর বাজি ধরতে বাধ্য হয়েছিল। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া একটি ভূ-রাজনৈতিক হটস্পট হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, গত দুদশক ধরে সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রে চিন এই অঞ্চলে ভারতের একটি প্রধান কার্যকর বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের মোট বহির্গামী বিদেশি বিনিয়োগের ৪৭ শতাংশের জন্যই চিদায়বদ্ধ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইইউ-র মতো অন্যান্য শক্তিও তাদের উপস্থিতি সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। অন্য কথায় বলতে গেলে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের কাছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ বৈচিত্র্যময় করার জন্য আরও বিকল্প রয়েছে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যে থাকায় ভারতের প্রভাব, সহায়তা সংযোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্য দিকে, নতুন শক্তির প্রবেশ দিল্লিকে তার প্রতিবেশীদের তাদের স্বার্থের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে বাধ্য করছে। তারা প্রতিবেশী প্রথম নীতিতে সংযোগ, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং সহায়তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ভারত বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলার এবং নেপালকে ১.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ভুটানকে তার ১৩তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারত মলদ্বীপকে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কাকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তাও দিয়েছে, যাতে তারা অর্থনৈতিক ভাবে নিজেদের পুনরুদ্ধার করতে পারে। পাকিস্তানের অর্থনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যে থাকায় ভারতের প্রভাব, সহায়তা সংযোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিশেষে, ভারতের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীরা বিশ্বাস করে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক অবশেষে আরও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সংহতিকরণে অবদান রাখবে, বিশেষ করে সার্ক-এর ক্ষেত্রে। ফলস্বরূপ, তারা দিল্লি এবং ইসলামাবাদের উপর সার্ক সংগঠনটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে, যদিও সার্ক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সংহতিকরণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২০ সালে নেতাদের ভিডিয়ো কনফারেন্সে দেখা গিয়েছে যে, ইসলামাবাদ কাশ্মীরের রাজনীতিকরণের জন্য সার্ককে ব্যবহার করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের লালন-পালন অব্যাহত রেখেছে। এই নীতিগুলি সার্ক-এর কার্যকারিতাকে বাধা দিয়েছে এবং ভারতকে বিকল্প অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাদের পক্ষ থেকে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের শিকার  হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি সার্ক-কে বাধা দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার জন্য ইসলামাবাদকে নিরস্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এটি কেবল পাকিস্তানকে তার নীতি অব্যাহত রাখতে বর্তমান আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং (বিচ্ছিন্ন) সমন্বিতকরণে অবদান রাখতে উৎসাহিত করেছে।

দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি পাকিস্তানকে একটি প্রধান প্রতিরক্ষামূলক অংশীদার হিসেবে দেখে, বিশেষ করে সামরিক প্রশিক্ষণ সামুদ্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে। প্রকৃতপক্ষে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বার্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় এবং পাকিস্তানের একটি সামরিক প্রতিনিধিদল নেপাল সফর করেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পাকিস্তান এই অঞ্চলে যে সুযোগ বয়ে আনতে পারে, তার পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির জন্য সম্ভবত তাদের জোটনিরপেক্ষ নিরপেক্ষ নীতির গুণাবলি পুনর্মূল্যায়ন করা এবং নিজেদেরকে এই কথা জিজ্ঞাসা করার সময় এসেছে যে, কীভাবে তাদের স্বার্থ, আঞ্চলিক শান্তি এবং সংহতিকে সর্বোত্তম উপায়ে এগিয়ে নেওয়া যায়।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.