Author : Abhishek Sharma

Published on May 07, 2025 Updated 0 Hours ago

বাণিজ্য বিরোধ, নিরাপত্তা উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক জোটের পরিবর্তনের দরুন ট্রাম্পের অধীনে জাপানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অনিশ্চয়তার সম্মুখীনমার্কিন নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ জাপানকে আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব জোরদার করতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সতর্কতা নিয়েই চিনের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করতে বাধ্য করছে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে সব কিছু আর ইতিবাচক নয়

ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় ফিরে আসার দরুন ইউরোপে মার্কিন মিত্ররা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। তবে কেবল ইউরোপের উপরই নয়, ট্রাম্পের প্রচার জাপানের মতো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। জাপানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার এই দাবিটি অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে দুই নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোকে, যেখানে তাঁরা মার্কিন-জাপান সম্পর্কের একটি নতুন স্বর্ণযুগসূচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে বৈঠকের পরের মন্তব্য ঘটনাপ্রবাহ অনিশ্চয়তাকে স্পষ্ট করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, সরকারি দ্বিপাক্ষিক বিবৃতি নির্বিশেষেই বন্ধুত্বের উপর জোর দেওয়া হলেও পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়

বাস্তবতাকে বাগাড়ম্বর থেকে আলাদা করা

ইশিবার সফল মার্কিন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক বাগাড়ম্বর যৌথ বিবৃতিতে প্রতিফলিত হলেও বৈঠকের পর থেকে বাস্তবতা প্রত্যাশা থেকে অনেকটাই দূরে সরেছে। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে জাপানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে তাঁদের বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহ পরে মার্কিন প্রশাসন জাপানি ইস্পাত আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগও জোরদার তদন্তের আওতায় এসেছে, যার মধ্যে ১৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিপ্পন স্টিল চুক্তিও রয়েছে। নিপ্পন কেনার পরিকল্পনা ত্যাগ করার বিষয়ে ট্রাম্পের একতরফা ঘোষণাটি শুধুমাত্র বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা ছিলতবে, বিরোধিতা সত্ত্বেও চুক্তিটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্থার জেদ ইঙ্গিত দেয় যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে না।

নিপ্পন কেনার পরিকল্পনা ত্যাগ করার বিষয়ে ট্রাম্পের একতরফা ঘোষণাটি শুধুমাত্র বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা ছিল

সর্বোপরি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে জাপানের ভূমিকা এবং বর্তমান দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্পের মন্তব্য উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি জাপানকে ভালোবাসি। জাপানের সঙ্গে আমাদের একটি দুর্দান্ত সম্পর্ক রয়েছে... কিন্তু আমাদেরকে রক্ষা করার প্রয়োজন জাপানের নেইট্রাম্পের এই বক্তব্য জাপানকে কার্যকর ভাবে সম্পর্ক থেকে স্বাধীন বা মুক্ত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেএই সমালোচনার পাশাপাশি নীতির জন্য আন্ডারসেক্রেটারি অফ ডিফেন্স পদে ট্রাম্পের মনোনীত এলব্রিজ কোলবির জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপি-র ৩ শতাংশে বৃদ্ধি করার আহ্বান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জাপানের প্রাইম মিনিস্টার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, ‘[জাপান] তার প্রতিরক্ষা ব্যয় নির্ধারণ করে এবং তা অন্য কোনও দেশের নির্দেশে হবে না কথা স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মেয়াদে পাওয়া অনুগ্রহ আর জাপান ভোগ করছে না।

দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি ছাড়াও রাশিয়ার তরফে ইউক্রেনের উপরে আক্রমণ এবং শুল্কের আকারে ক্রমবর্ধমান সুরক্ষাবাদের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট দেশগুলি সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানাবিধ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জাপান আশঙ্কা করছে যে, ট্রাম্পের বাণিজ্যবাদ এবং লেনদেনমূলক কূটনীতির প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা ত্যাগ করবে, মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং তার নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি থেকেও সরে দাঁড়াবে। মার্কিন মিত্ররা মনে করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হঠার ফলে ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক সমীকরণে চিন এবং রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

এই উদ্বেগগুলি চিন ও রাশিয়ার মতো সংশোধনবাদী রাষ্ট্রগুলির ইচ্ছা এবং আগ্রহের পক্ষে একটি ভিন্ন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনার বিষয়ে আশঙ্কাও জাগিয়ে তুলেছে। এই উদ্বেগের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ট্রাম্পের বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি তাঁর অজ্ঞ মনোভাব এবং রাশিয়ার অবৈধ পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার প্রয়াসএই অঙ্গাঙ্গী বিষয়গুলি জাপানের মতো মিত্রদের মার্কিন নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করেছে। সর্বোপরি, চিনের উত্থান তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে সংঘাতের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ট্রাম্পের ইউক্রেন পরিত্যাগের আলোকে উদ্বেগগুলি আরও তীব্র হয়েছে।

ট্রাম্পের যুগে জাপান-মার্কিন সম্পর্ক

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমমনস্ক দেশগুলির শৃঙ্খল সম্প্রসারণ ও সশক্তকরণে বিনিয়োগ করেছিল, যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলিও ছিল। তবে, ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব তাঁর পূর্বসূরির উদ্যোগ অব্যাহত রাখার চেয়ে মিত্রদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা পারস্পরিক সহযোগিতা দাবি করার উপর বেশি মনোযোগী। এর ফলে জাপান ভাবছে যে, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এত দিন ধরে যে উদার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ধরে রেখেছিল, এখনও তারা তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না। এমনকি তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া অস্ট্রেলিয়ার মতো অন্যান্য মার্কিন মিত্রও নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির বৈধতা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং অনেকেই আরও বাস্তববাদী পদ্ধতির পক্ষে কথা বলছে। এটি দর্শায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মিত্রদের ধারণা পরিবর্তিত হচ্ছে, যা প্রতিটি দেশকে চিন-সহ তাদের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বৈচিত্র্যময় করতে বাধ্য করছে।

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমমনস্ক দেশগুলির শৃঙ্খল সম্প্রসারণ ও সশক্তকরণে বিনিয়োগ করেছিল, যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলিও ছিল।

উদাহরণস্বরূপ, ইশিবার অধীনে জাপান আবার চিনের সঙ্গে স্থবির হয়ে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছেউদাহরণস্বরূপ, ছয় বছর (২০১৮) বিরতির পর জাপানি প্রতিনিধিদল চিন-জাপান শাসক দলের বিনিময় ব্যবস্থার নবম বৈঠকে অংশ নিতে এসেছিল। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্বে ছিলেন এলডিপি-র মহাসচিব হিরোশি মোরিয়ামা এবং কোমেইতো পার্টির মহাসচিব মাকোতো নিশিদা। সফরের পর জাপানের প্রাইম মিনিস্টার ইশিবা শিগেরু চিন সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা বেজিংয়ের প্রতি জাপানের নরম মনোভাবকেই দর্শায়।

ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন-জাপান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

চিনের সঙ্গে নরম সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও জাপানের পছন্দের অংশীদার। বাণিজ্য নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান জোটের সুবিধাগুলি অসুবিধার চেয়ে বেশি স্পষ্ট। বেশিরভাগ জাপানি সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের বৃহত্তম রফতানি বাজার হিসাবে দেখে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছে। এমনকি জনসাধারণের মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বস্ত মিত্র হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। জাপানের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষার ভিত্তিতে, ৫২.১ শতাংশ জাপানি নাগরিক এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর ইঙ্গিত দেয় যে, বাণিজ্যিক চাপানউতোর সত্ত্বেও টোকিয়ো মতবিরোধ সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকতে পছন্দ করবে

টোকিয়োর দুটি প্রাথমিক লক্ষ্য হল মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পক্ষে দাঁড়ানো এবং ইউক্রেনের প্রতি নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন প্রদান করা।

তবে, একই সঙ্গে জাপান আরও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছে, এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শূন্য স্থানকে পূরণ করছে, আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক উদারনৈতিক ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে বৃহত্তর দায়িত্ব গ্রহণ করছে, যা তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে ইউরোপীয় ইন্দো-প্যাসিফিক উভয় দেশই রয়েছে। টোকিয়োর দুটি প্রাথমিক লক্ষ্য হল মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পক্ষে দাঁড়ানো এবং ইউক্রেনের প্রতি নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন প্রদান করা। এই সমস্ত কিছুই দর্শায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থার স্তর হ্রাস পাচ্ছে, যা স্বল্পমেয়াদে প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘমেয়াদে জাপানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে।

আপাতত, জাপান নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা এবং মুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত রাখবে। জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিরাপত্তা জোটকে শক্তিশালী করা এবং চিন-সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করার দিকেও মনোনিবেশ করবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মানি কন্ট্রোল-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Abhishek Sharma

Abhishek Sharma

Abhishek Sharma is a Research Assistant with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the Indo-Pacific regional security and geopolitical developments with a special ...

Read More +