-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মস্কোর সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগ রাশিয়ায় সতর্ক আশাবাদ জাগালেও কৌশলগত উত্তেজনা রয়েই গিয়েছে। অচলাবস্থা কাটানোর জন্য মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের প্রয়াস কি আসলে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তিকে চালিত করতে পারে?
২০২৫ সালের ১৮ মার্চ রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ – যা ক্রেমলিনের মতে সময়ের নিরিখে ঐতিহাসিক এবং অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি রুশ প্রেসিডেন্টের তরফে সৌজন্য প্রদর্শন - ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য পর্যায়ক্রমিক পথ এবং মার্কিন-রুশ সম্পর্কের সমঝোতার পদ্ধতি সম্পর্কে ইঙ্গিত প্রদান করেছিল। এই আলোচনা শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াবে এবং এর ফলে একটি সফল চুক্তি আদৌ হবে কি না, তা এখনও বলার সময় আসেনি। তবে মার্কিনদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি মস্কো সতর্ক আশাবাদের আলোকেই দেখছে।
ইতিবাচক আলোচনা, ফলাফল সামান্যই
এখনও পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ‘রাশিয়ার পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি অনুসারে’ এগিয়ে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের পর পুতিন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন-ইউক্রেন প্রস্তাবের কাছে নতি স্বীকার না করে বাজি এ বার প্রতিপক্ষের দিকে ঠেলে দিতে সমর্থ হয়েছেন এবং একই সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার ধারণা থেকেও পিছু হঠেননি। এই আলোচনার প্রধান সাফল্য অর্থাৎ জ্বালানি অবকাঠামোর উপর হামলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আদপে একদিনও ধোপে টেকেনি। কারণ রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ই জ্বালানি অবকাঠামোগুলির উপর-সহ তাদের আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। একই ভাবে, সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ অবিলম্বেই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এ নিয়ে কর্মরত আধিকারিকদের পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে। এই সব কিছুই উচ্চ পর্যায়ে ও তৃণমূল স্তরে ইতিবাচক ঘোষণাগুলির ব্যবধানকেই দর্শায়। একই সঙ্গে যে কোনও ভবিষ্যৎ চুক্তির ভঙ্গুরতাকেও ইঙ্গিত করে।
একই ভাবে, সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ অবিলম্বেই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এ নিয়ে কর্মরত আধিকারিকদের পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
‘ইউক্রেনের অসামরিকীকরণ’ করার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়া শান্তি কাঠামো সমন্বয়ের আগে যুদ্ধবিরতি অনুসরণ করতে বিশেষ আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। এ পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রেমলিন মূলত দু’টি শর্ত দিয়েছে: প্রথমত, ‘ইউক্রেনে জোরপূর্বক সমাবেশ স্থগিত করা ও [ইউক্রেনীয়] সশস্ত্র বাহিনীর পুনর্সজ্জিতকরণ", এবং দ্বিতীয়ত, ‘কিয়েভকে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য প্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ করা’। তবে, এ কথা স্পষ্ট যে, সামনের পথ কঠিন হবে। কারণ পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করার সময় ট্রাম্প এই বিষয়গুলিকে স্বীকৃতি দেননি।
রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেই বিবেচনা করছে এবং আঞ্চলিক ও কৌশলগত বিষয়গুলিতে সমন্বয়ের বিনিময়ে শান্তির পদ্ধতিতে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে আরও ছাড় পেতে আগ্রহী। যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলি’ মোকাবিলা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সুনিশ্চিত করা ক্রেমলিনের জন্য শীর্ষ অগ্রাধিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, ইউক্রেন এখন মধ্যপ্রাচ্যের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলের চেয়ে তুলনায় অনেক বেশি গৌণ বলে মনে হচ্ছে, যা হোয়াইট হাউসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সম্ভাব্য সহযোগিতার পরিসর’ হিসাবে উল্লিখিত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতের বিনিময়ের জন্য কিছুটা হলেও সুযোগ অব্যাহত রেখেছে। কারণ মস্কো স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এতটাই প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে যে, রাশিয়া লেনদেনমূলক কূটনীতিকে সমর্থন করছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে প্রাথমিক মিথস্ক্রিয়ার পর থেকেই মস্কো একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংহত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ওয়াশিংটনের প্রতি রাশিয়ার বক্তব্য সমালোচনা থেকে সংযত ও সমঝোতায় পরিবর্তিত হয়েছে এবং কখনও কখনও রুশ ভাষ্যে হোয়াইট হাউসের আখ্যানও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগে যা শোনা যায়নি, তা এখন রাশিয়ার সরকারি আলোচনায় খানিক আদর্শের মতোই শোনাচ্ছে। যেমনটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বিবৃতিতে দেখা গিয়েছে: ‘মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পরামিতিগুলি মূলত [রাশিয়ার] দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
মস্কোর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে এখন তার সমকক্ষ বলে বিবেচনা করে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা - যেখানে দুই দেশই সমান ভিত্তিতে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে - রাশিয়ার বৃহৎ শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ইন্ধন জোগায় এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার বৈশ্বিক অবস্থানের প্রতিবন্ধকতাগুলিকে উপেক্ষা করে যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে মার্কিন প্রত্যাহার হোক কিংবা ইউক্রেনে মার্কিন প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ ও নিষেধাজ্ঞা নীতি কঠোর করা হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক তীব্র টানাপড়েনের মধ্যে থাকলেও মস্কো এখন সেই সময়ের কথা উল্লেখ করতে অনিচ্ছুক। বরং মস্কো এখন ভান করছে যে, অসংখ্য দ্বিপাক্ষিক বিরক্তির কারণ আসলে ‘পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত’।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ সম্পর্কে অবগত হয়ে পুতিন দ্রুত মার্কিন সংস্থাগুলিকে বিরল খনিজ শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে যৌথ ভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন।
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে রাশিয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে, প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আর্কটিকের বাণিজ্যিক পথের উন্নয়ন মার্কিন-রাশিয়া আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ সম্পর্কে অবগত হয়ে পুতিন দ্রুত মার্কিন সংস্থাগুলিকে বিরল খনিজ শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে যৌথ ভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। বিশেষ করে, তিনি রাশিয়ার ক্রাসনোয়ার্স্ক অঞ্চলে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনের একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন, যার আনুমানিক মূল্য ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং পশ্চিমি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রত্যাবর্তনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
কৌশলগত সমন্বয় ছাড়াই বোঝাপড়া
মস্কোর সমঝোতামূলক বক্তব্যকে কোনও ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার ইচ্ছা হিসেবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। ‘গঠনমূলক সংলাপের’ কূটনৈতিক আলোচনার আড়ালে রুশ নীতিনির্ধারকরা এখনও বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে আগ্রহী। মস্কোর বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রপতির শান্তি প্রচেষ্টা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ চিনের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ‘প্রস্তুতি পর্ব’। এই লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবতই আশা করবে যে, রাশিয়া চিনের সক্ষমতা জোরদার করবে না। অতএব, পুনর্মিলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল মস্কো-বেজিং জোটকে দুর্বল করা। এটি আপাত ভাবে একটি অবাস্তব ধারণা বলে মনে হচ্ছে। কারণ রাশিয়া চিনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। কারণ ধারাবাহিক ভাবে সতর্কতার সঙ্গে হলেও দেশটি ইউক্রেনে তার সামরিক অভিযানকে সহজতর করেছে। আর মতামত হল, মস্কোর এ হেন ধারণা যে রাশিয়া ও চিন দ্রুতই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মুখসমরে থাকবে, মস্কো আরও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করবে এবং মার্কিন অবস্থানকে দুর্বল করা থেকে রাশিয়া বিরত থাকবে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করেছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মার্কিন-রুশ সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য একটি অপরিহার্য প্রণোদনা জোগাতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বৃহৎ দর কষাকষির সম্ভাবনা রুশ অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাব্য আশা জাগিয়ে তুলেছে। যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, তা হলে তা ধীরে ধীরে এবং নির্বাচনী পদ্ধতিতে করা হবে। চিকিৎসা ও মানবিক পণ্য সরবরাহ, ভোগ্যপণ্য এবং নিম্ন-প্রযুক্তির শিল্প পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে আগে প্রত্যাহার করা হবে। আমেরিকায় তৈরি জেট-এর পরিষেবা প্রদানে রুশ বিমান সংস্থাগুলি যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা বিবেচনা করে রাশিয়া বিশেষ ভাবে মার্কিন বিমানের যন্ত্রাংশ রফতানিতে আগ্রহী হতে পারে। অন্য দিকে, বর্তমান আলোচনা ও অর্থনৈতিক প্রণোদনা নির্বিশেষে পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে, ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তির একমাত্র কার্যকর পথ হল ‘শত্রুর সম্পূর্ণ পরাজয়’ এবং এমনকি যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রেও রাশিয়ার যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বৃহৎ দর কষাকষির সম্ভাবনা রুশ অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাব্য আশা জাগিয়ে তুলেছে।
মার্কিন-রুশ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সুর ও গতি অসাধারণ হলেও ইউক্রেনের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে দুই পক্ষকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য রাশিয়াকে তার সর্বোচ্চবাদী অবস্থান থেকে সরে আসতে হতে পারে। প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হল, ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের কি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের জটিলতা মোকাবিলা করার ধৈর্য আছে এবং যদি শান্তি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে? যেহেতু মার্কিন-রুশ শান্তি আলোচনার সুযোগের পরিসর তুলনামূলক ভাবে সংকীর্ণ, তাই আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা পুনরায় শুরু করার পথ প্রশস্ত করতে পারে। আবার বিপরীতে এই পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্ককে আর একটি অবাধ পতনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আলেক্সেই জাখারভ ওআরএফ-এর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aleksei Zakharov is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research focuses on the geopolitics and geo-economics of Eurasia and the Indo-Pacific, with particular ...
Read More +