পটভূমি
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়েছিল, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে পরিবহণ বিমান, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিল। উভয় পক্ষ এবং ব্রিটেন সীমিত সময়ের জন্য বিমান মহড়াও চালিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে পাঁচ বছরের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান প্রদানের উদ্দেশ্যে এমন সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল, যেগুলি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক স্থগিত করার পর এই সহযোগিতা বন্ধ করা হয় এবং তার পর থেকে আর কখনওই তা চালু হয়নি।
বর্তমান সহযোগিতার সারবত্তা রয়েছে ১৯৯০-এর দশকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ক্লদ কিকলাইটারের তৈরি করা স্মারকলিপিতে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিকলাইটার ছিলেন হাওয়াইতে অবস্থিত ইউএস প্যাসিফিক কম্যান্ডের (বর্তমানে ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ড) সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার। এই কম্যান্ডের মাধ্যমেই পরবর্তী সমস্ত ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতার সূচনা করা হয়েছে। সেই সময়ে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের উপর ভারতের নির্ভরতা সম্পর্কে সচেতন - যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তুলনায় অনেক সস্তা ছিল - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করার ধারণাটির প্রচার করেছিল। এ কথা অবশ্য উল্লেখ্য যে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিকলাইটারের প্রস্তাবগুলি রেগান প্রশাসনের সময় ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গলদ এবং ১৯৮২-৮৯ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর উত্তরসূরি রাজীব গান্ধী দ্বারা চালিত হওয়ার কারণে সম্ভব হয়েছিল।
১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে ভারত-মার্কিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যখন ভারত আশ্বাস দিয়েছিল যে, প্রাপ্ত মার্কিন প্রযুক্তি পারমাণবিক বিস্তার বা ক্ষেপণাস্ত্র উত্পাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে না। মার্কিন রফতানি নিয়ন্ত্রণ সীমাবদ্ধতা শিথিল করার উপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে চিহ্নিত প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা হালকা যুদ্ধ বিমান (এলসিএ), যা এখন তেজস নামে পরিচিত এবং যার জন্য মার্কিন জেনারেল ইলেকট্রিক এফ৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহ করতে ও বেশ কয়েকটি উপ-ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছিল।
ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী সময়ে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ভারতের জন্য সহজ ছিল না। কারণ ভারতের তৎকালীন মিত্রদেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন আলাদা হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভারত মার্কিন সন্দেহের সম্মুখীন হয়েছিল। পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা নীতি নির্দেশিকা ১৯৯৪-১৯৯৯ সালের নথিতেও এই সন্দেহের কথা উঠে আসে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদী আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও অসম্প্রসারণের ক্ষেত্র ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়েও চাপ ছিল। ভারত আন্দামান সাগরে এবং ভারতের পশ্চিম উপকূলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস-এর (আসিয়ান) সঙ্গে জড়িত একাধিক অনুশীলনের মাধ্যমে তার সোভিয়েত সংযোগের আশঙ্কা প্রশমিত করতে চেয়েছিল, যা এখন মালাবার অনুশীলন নামে পরিচিত।
১৯৯৮ সালে ভারত তার পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পরে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এলসিএ সহযোগিতা-সহ তার অস্ত্র রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক ভাবে ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরে এই প্রবণতাটির বিরতি ঘটে। যাই হোক, মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট স্ট্রোব ট্যালবট এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং-এর মধ্যে একটি আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক দ্রুত স্বাভাবিক হয়, যা ১৯৯৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং কৌশলগত প্রসঙ্গ ও সম্প্রসারণের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী কালে ভারত বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞাগুলি থেকে ছাড় পেয়ে এসেছে।
২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস ফরেন অ্যাফেয়ার্সে লিখেছিলেন: ‘চিনের গণনায় ভারত একটি উপাদান এবং এমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণনাতেও হওয়া উচিত ছিল। ভারত এখনও একটি বৃহৎ শক্তি নয় বটে, তবে একটি বৃহৎ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ভারতের রয়েছে।’(১)
২০০১ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার তথাকথিত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়, তখন ভারতীয় নৌবাহিনী মালাক্কা প্রণালী দিয়ে চলাচলকারী মার্কিন জাহাজগুলিকে সঙ্গ দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইরাকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে, তখন যে দেশগুলিকে সেনা পাঠানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ করেছিল, তার অন্যতম ছিল ভারত। ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটের দ্বিতীয় স্থানে আসীন এল কে আডবানী ওয়াশিংটন ডিসি সফরের সময় বিকল্প পন্থা এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হন। কিন্তু দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী কৌশলে তাঁকে ছাপিয়ে যান এবং তাঁর পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তী কালে ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরবর্তী পদক্ষেপ’-এর সূচনা করে,(২) যার মধ্যে ভারতের উপর প্রভাব ফেলে এমন রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলি অপসারণের জন্য আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারণ ভারত পারমাণবিক সম্প্রসারণ চুক্তির স্বাক্ষরকারী ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের সঙ্গে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। এমনটা সেই সময়ে ঘটেছিল, যখন ভারত-মার্কিন নিরাপত্তা সম্পর্ক নতুন মোড় নেয় ও দুই দেশ একটি বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি ঘোষণা করে (২০০৫ সালে) এবং যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সব ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতা প্রদান।(৩)
এই সময়ের মধ্যে আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত মহাসাগরের সুনামির পরে সহযোগিতা, যাতে দুই লক্ষের বেশি মানুষ মারা যান। ভারতীয় নৌবাহিনী মানবিক ত্রাণে সক্রিয় ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সমমনস্ক নৌবাহিনী এই প্রচেষ্টায় অংশীদার হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা লক্ষ করে যে, ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মক্ষমতা এবং দেশগুলির এই অংশীদারিত্ব — যেগুলি প্রত্যেকটিই ছিল গণতান্ত্রিক দেশ — কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগের ধারণাকে উস্কে দেয়।(৪)
পথপ্রদর্শক নীতি এবং নথি
বর্তমান সম্পর্কের সূত্রপাত ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত ভারত-মার্কিন সমঝোতা স্মারক এবং তার পরে ১৯৮৬ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব ক্যাসপার ওয়েইনবার্গারের নয়াদিল্লি সফরে নিহিত। এটিই ছিল কোনও মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের প্রথম ভারত সফর, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এলসিএ প্রকল্পের জন্য জিই৪০৪ ইঞ্জিন সরবরাহ করার দিকে চালিত করে।
এর পর ১৯৯১ সালে ‘কিকলাইটার প্রস্তাব’ আসে এবং যে প্রস্তাব নিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিকলাইটার নয়াদিল্লি সফরে এসেছিলেন। এটিতে ভূখণ্ড, সমুদ্র ও আকাশপথে মার্কিন-ভারত সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল। প্রস্তাবগুলিতে দু’টি সামরিক বাহিনীর মধ্যে পরামর্শমূলক প্রক্রিয়া, যৌথ প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত আলোচনার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান ফ্রাঙ্ক কেলসো এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিকলাইটারের উত্তরসূরি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জনি কর্নস আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে আসেন এবং উভয় পক্ষ ‘দীর্ঘকালব্যাপী ভিত্তি স্থাপনের জন্য দুই দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে’ একটি সামরিক স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে।(৫)
১৯৯২ সালে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বোধনী ইন্দো-মার্কিন মালাবার অনুশীলনের আয়োজন করেছিল এবং প্রথম বারের মতো দুই দেশ সামরিক মহড়ায় একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিল। পরবর্তী কালে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য মহড়ায় অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল ২০০২ সালে যুদ্ধ অভ্যাস, বজ্র প্রহর (লাইটনিং স্ট্রাইক; একটি বিশেষ বাহিনীর মহড়া যা ২০১০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে), এবং টাইগার ট্রায়াম্ফ (একটি ত্রি-সেবা অনুশীলন যা ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল) এবং অন্যান্য।
‘এগ্রিড মিনিট অন ডিফেন্স রিলেশনস’ (১৯৯৫) ছিল ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী সময়ে দুই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে স্বাক্ষরিত প্রথম নথি।(ক) দুই সামরিকবাহিনী সংক্রান্ত এই নথির অধীনে দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তত্ত্বাবধানের জন্য মার্কিন ডিফেন্স আন্ডার সেক্রেটারি এবং ভারতের প্রতিরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে ডিফেন্স পলিসি গ্রুপ বা প্রতিরক্ষা নীতি গ্রুপ (ডিপিজি) তৈরি করেছে। এটি একটি যৌথ কারিগরি গ্রুপও তৈরি করেছে এবং অব্যবহিত পরেই দুই গ্রুপ তাদের প্রথম বৈঠকের আয়োজন করে। ১৯৯৮ সালে ভারতের উপর পারমাণবিক পরীক্ষা সংক্রান্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এই নথিটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ২০০১ সালে ট্যালবট-সিং আলোচনার পরেই ডিপিজি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়। গ্রুপের ১৫তম বৈঠকটি ২০২৩ সালের মে মাসে ওয়াশিংটন ডিসি-তে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরামনে এবং মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর ডিফেন্স পলিসি কলিন কাহলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।(৬)
২০০২ সালের নভেম্বর মাসে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলির জন্য একটি ‘স্থায়ী কাঠামো’ প্রদানের উদ্দেশ্যে ইউএস-ইন্ডিয়া হাই টেকনোলজি কো-অপারেশন গ্রুপ (এইচটিসিজি) গঠিত হয়েছিল। এর সহ-সভাপতি ছিলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং ভারতের বিদেশ সচিব। এর মূল লক্ষ্য ছিল নিয়ন্ত্রিত পণ্যগুলিতে কৌশলগত বাণিজ্য পরিচালনা করা এবং দুই দেশের মধ্যে আইনি ও কাঠামোগত পরিবেশ গঠন করে… এ হেন বাণিজ্য বিকাশের পরিবেশ তৈরি করা। এইচটিসিজি ২০০২-২০০৫ সালের মধ্যে ভারতে মার্কিন রফতানিকে বার্ষিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দ্বিগুণ করে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে এবং রফতানি লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে।(৭)
২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দেশ ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরবর্তী পদক্ষেপ’-এ স্বাক্ষর করেছিল, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের একটি নতুন দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন ইঙ্গিত দেয়। এতে বেসামরিক পারমাণবিক কার্যক্রম, বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি, উচ্চ প্রযুক্তি বাণিজ্য ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় সহযোগিতা জড়িত। পরবর্তী আলোচনায় ভারতকে মার্কিন বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য কার্যপ্রণালী নিয়ে কাজ করাও সম্পৃক্ত রয়েছে।(৮) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালের জুলাই মাসে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি সমাপ্ত করার ঘোষণা করে এবং এটিকে ভারত-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তিতে এগিয়ে নিতে যেতে সক্ষম করে তোলে।(৯)
ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে উন্নত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় চারটি মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চাপ দিতে শুরু করেছে। ভারত ২০০২ সালে প্রথম জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট-এ (জিএসওএমআইএ) সম্মত হয়েছিল এবং এটি এমন একটি মৌলিক চুক্তি, যার লক্ষ্য ছিল দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের গোপনীয়তা সুনিশ্চিত করা।(১০)
যাই হোক, ২০১৬ সালে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ) অন্যান্য দেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষরিত লজিস্টিক সাপোর্ট এগ্রিমেন্টের (এলএসএ) একটি ভারত-নির্দিষ্ট সংস্করণ;(১১) ২০১৮ সালে কমিউনিকেশন কমপ্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ), কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সিকিউরিটি মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট-এর (সিআইএসএমওএ)(১২) একটি ভারত-নির্দিষ্ট সংস্করণ; ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে মহাকাশ ও সমুদ্র পরিসরের তথ্য সংক্রান্ত নথি অর্থাৎ বেসিক এক্সচেঞ্জ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট-এ (বিইসিএ)(১৩) স্বাক্ষর করতে ভারতের ২০ বছর বা তার বেশি সময় লেগেছিল।
২০০৫ সালের জুন মাসে দুই দেশ ১০ বছরের জন্য ‘নিউ ফ্রেমওয়ার্ক ফর দি ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স রিলেশনশিপ’-এ স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিটি তাদের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য একটি পথনির্দেশিকা প্রদান করেছে, যার মধ্যে বহুপাক্ষিক অভিযানে সহযোগিতা, দ্বিমুখী প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রযুক্তি স্থানান্তর ও সহযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটি ইন্দো-মার্কিন প্রতিরক্ষা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি করা হয়েছিল এবং এটির প্রথম বৈঠক ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।(১৪)
২০০৫ সালের মার্চ মাসে ডিফেন্স সেক্রেটারি অব স্টেট রাইসের নয়াদিল্লি সফরের সময় রাইস ভারতের তরফের আলোচনাকারীদের বলেছিলেন যে, বুশ প্রশাসন একটি ‘নির্ণায়ক বিস্তৃত কৌশলগত সম্পর্ক’-এ আগ্রহী। সফরে রাইসের সঙ্গে থাকা একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হল ভারতকে একুশ শতকে একটি প্রধান বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করা’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা এই বিবৃতির সামরিক প্রভাব-সহ সম্পূর্ণ অর্থ বুঝতে সক্ষম।’(১৫)
কয়েক মাস পরে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একটি ‘ভারত-মার্কিন বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি’র কথা ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে ভারতের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণমূলক নিষেধাজ্ঞাগুলি সরিয়ে নেয়। ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সুরক্ষার অধীনে আর কোনও পারমাণবিক পরীক্ষা পরিচালনা করবে না এবং তার বেসামরিক পারমাণবিক ব্যবস্থা স্থাপন করবে না।(১৬) ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত শর্ত পূরণের পরে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বেসামরিক পারমাণবিক বাণিজ্যের চেয়েও বেশি এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল নিষেধাজ্ঞা দ্বারা বিশৃঙ্খল সম্পর্কের অবস্থার উন্নতি ঘটানো, যার ভিত্তিতে নতুন কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করা যেতে পারে।
২০১০ সালের জুন মাসে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উচ্চ স্তরের নির্দেশিকা প্রদানের জন্য ‘ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক ডায়লগ’ চালু করা হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। আলোচনাটি ২০১০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম ভারত সফরের মঞ্চও প্রস্তুত করে। ২০১৫ সালে ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ওবামার ভারত সফরের পর এটি ‘ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডায়লগ’-এর সূচনা ঘটায়।(১৭)
এ ছাড়াও, ওবামার ২০১০ সালের দিল্লি সফরের সময় নানা নিষেধাজ্ঞা খারিজ করা হয়েছিল এবং ভারতকে মার্কিন রফতানি প্রবিধান ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনস-এর (আইটিএআর) অধীনে রফতানি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ-প্রযুক্তি বাণিজ্যে আরও একটি ছাড় দেওয়া হয়েছিল।(১৮)
২০১২ সালে সামরিক সরঞ্জামের সহ-উৎপাদন ও সহ-উন্নয়নকে উত্সাহিত করার জন্য ‘প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও প্রযুক্তি উদ্যোগ’ (ডিটিটিআই) চালু করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রক্রিয়াটিকে আমলাতান্ত্রিক বাধাজনিত মন্থরতা থেকে রক্ষা করা।(১৯)
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালের ‘নিউ ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিফেন্স রিলেশনস’কে শক্তিশালী করার জন্য ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি ‘জয়েন্ট ডিক্লারেশন অন ডিফেন্স কোঅপারেশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট’-এর সূচনা করেছে। এটি তাদের সাধারণ নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করেছে এবং এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি স্থানান্তর, বাণিজ্য, গবেষণা, সহ-উন্নয়ন এবং সহ-উৎপাদন সংক্রান্ত সম্পর্ক তাদের নিকটতম অংশীদারদের মতো একই স্তরে ঘটবে।(২০)
ওবামার ভারত সফরের সময় ২০১৫ সালে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কাঠামো’র পুনর্নবীকরণ করা হয়েছিল। ডিটিটিআই-এর অধীনে চারটি ‘পথনির্দেশ প্রদানকারী’ প্রকল্পের পাশাপাশি এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার এবং জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তিতে সহযোগিতার বিষয়েও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সফরের সময়ই – প্রথম বার যখন কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন - ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য যৌথ কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি’-তে স্বাক্ষর করেছে।(২১) ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ শব্দটি তখনো দুই দেশের কৌশলগত অভিধানে প্রবেশ করেনি।
এ ছাড়াও এই সফরের সময় দুই সরকারের মধ্যে ভ্রাম্যমান বৈদ্যুতিক শক্তি জ্বালানি উৎস এবং রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র সুরক্ষার উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষামূলক সমন্বয় সম্পর্কিত ডিটিটিআই প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়েছিল।(২২)
২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে একটি ‘প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার’ বলে ঘোষণা করেছিল। এই মর্যাদা ভারতের জন্য অনন্য এবং তা ইঙ্গিত দেয় যে, দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটতম মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সমমনস্ক বলে বিবেচনা করা হবে।(২৩)
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের যৌথ বৈঠকে ‘২+২ ডায়লগ’ দ্বারা ‘ভারত-মার্কিন কৌশলগত সংলাপ’ প্রতিস্থাপিত হয়। উদ্বোধনী বৈঠকে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস উপস্থিত ছিলেন। এর পাশাপাশি তাঁদের ভারতীয় সমকক্ষ অর্থাৎ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও ছিলেন। এই বার্ষিক বিন্যাসের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়গুলির তত্ত্বাবধান এখন ডিপিজি-র পরিবর্তে মন্ত্রী পর্যায়ে ঘটে থাকে।(খ)(২৪)
২০১৮ সালের অগস্ট মাসে মার্কিন সংস্থাগুলিকে ভারতে দ্বৈত ব্যবহারের এবং বৃহত্তর পরিমাণে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যগুলি রফতানি করতে সক্ষম করার জন্য ভারতকে ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড অথরাইজেশন টিয়ার ১’ (এসটিএ-১) উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এই মর্যাদা ন্যাটো দেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য উপলব্ধ।(২৫) এর উদ্দেশ্য এটিও ছিল যে, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স (আইডেক্স) কাঠামোর অধীনে ভারত সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করা।(২৬)
ভারত ২০১৯ সালের জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর কাউন্টারিং আমেরিকা’স অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট-এর (সিএএএসটিএ) কাছ থেকে ছাড় পেয়েছে। এই ছাড়টি সুনিশ্চিত করেছে যে, রুশ যুদ্ধাস্ত্র এস-৪০০ দূরপাল্লার সারফেস টু এয়ার মিসাইল ব্যবস্থা অস্ত্র আমদানির জন্য ভারতকে শাস্তি দেওয়া হবে না।(২৭)
২০১৯ সালে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের দ্বিতীয় ‘২+২ ডায়লগ’-এ শিল্প নিরাপত্তা চুক্তিতে (আইএসএ) স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল শ্রেণিবদ্ধ সামরিক তথ্য বিনিময় সক্ষম করে মার্কিন ও ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের মধ্যে সহযোগিতাকে গভীরতর করে তোলা।(২৮)
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তৃতীয় ‘২+২’ বৈঠকে - যা ভারতের পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চিনা জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপের পরপরই সংঘটিত হয়েছিল - ভারত ভূ-স্থানিক সহযোগিতার জন্য বিইসিএ-তে স্বাক্ষর করেছিল এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় বাহরাইন কম্যান্ডের নৌ সদর দফতর ন্যাভসেন্ট-এ একজন ভারতীয় লিয়াজঁ অফিসারকেও নিযুক্ত করে। একই সময়ে একজন মার্কিন নৌবাহিনী অফিসারকে ভারতের গুরুগ্রামে ইনফরমেশন ফিউশন সেন্টারের ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। উভয় পক্ষ তাদের সামুদ্রিক তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং পরিসর সচেতনতা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।(২৯)
২০১৭ সালে ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পর ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনকে সামরিক ও কূটনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার জন্য কোয়াডকে পুনরুজ্জীবিত করতে সম্মত হয়েছিল। ২০১৮ সালের মে মাসে পেন্টাগন তার প্যাসিফিক কম্যান্ড-এর (পিএসিসিওএম) নাম পরিবর্তন করে ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ড (ইন্দো-পিএসিসিওএম) রেখেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় কাঠামোর মধ্যে চিনের ছায়া ঘনিয়ে এলেও এই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ভারত মহাসাগর এবং ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করায় চিনের উপস্থিতি নগণ্য বলে মনে হয়। এটি চিনের প্রতি এবং চিনের জন্য একটি অবচেতনমূলক বার্তাও বটে।(৩০)
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগে ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ ঘোষণা করেছিল এবং সেখানে বলা হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘শীর্ষ স্বার্থ’গুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য বজায় রাখা’। এই লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল যেখানে ‘ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগণ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা নেয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে এবং অঞ্চলের অন্য মার্কিন মিত্র অংশীদারদের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সহযোগিতার প্রসার ঘটায়।’ ভারতকে ‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আন্তঃব্যবহারযোগ্যতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে’ সাহায্য করার উদ্দেশ্যে এ হেন পদক্ষেপ জরুরি ছিল। উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাইবার ও মহাকাশ নিরাপত্তা এবং সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতার ক্ষেত্রে ভারতকে অংশীদার করার চেষ্টা করেছে এবং ‘মার্কিন -ভারত গোয়েন্দা আদান-প্রদান এবং বিশ্লেষণাত্মক আদান-প্রদান প্রসারিত করেছে।’(৩১)
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি আইএসএ শীর্ষ সম্মেলনে উভয় পক্ষ একটি ‘ইন্দো-ইউএস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয় যাতে প্রতিরক্ষা শিল্পগুলিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করতে সক্ষম করে তোলার জন্য নীতি ও পদ্ধতিগুলিকে সাযুজ্যপূর্ণ করা যায়।(৩২)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অউকাস নামে একটি ত্রিপাক্ষিক সামরিক জোটের সূচনা করে। এই জোট অস্ট্রেলিয়ার জন্য পারমাণবিক শক্তি চালিত ডুবোজাহাজ সরবরাহের উপর মনোনিবেশ করলেও এটি একই সঙ্গে সাইবার সমস্যা, এআই, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, সমুদ্রের তলদেশের ক্ষমতা, বৈদ্যুতিন যুদ্ধ এবং হাইপারসনিক দক্ষতার বিষয়ে সহযোগিতা নিয়েও কাজ করে।(৩৩) ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কোয়াড গ্রুপিং থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাজনমূলক বিন্দু ছিল। এ কথা এখন স্পষ্ট যে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি কোয়াডের অংশ নয়, যা ২০২২ সালের মে মাসে টোকিয়োতে নেতাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিগত বৈঠকের পরে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে প্রকাশ্যে এসেছিল।(৩৪)
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ‘২+২’ বৈঠকে ভারত ঘোষণা করেছিল যে, তারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহরাইন-ভিত্তিক কম্বাইন্ড মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সে (সিটিএফ) এক সহযোগী অংশীদার হিসেবে যোগদান করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ভারত একটি পূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠে। সিটিএফ-এর ৪১ জন সদস্য রয়েছে এবং তারা মাদক, চোরাচালান ও জালিয়াতি বিশেষজ্ঞ, যা এটির চারটি যৌথ টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।(গ) এর পাশাপাশি উভয় পক্ষই একটি স্পেস সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস এগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করে এবং প্রতিরক্ষা পরিসর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা চালায়।(৩৫)
সারণি ১: গুরুত্বপূর্ণ ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা উদ্যোগ
বছর
|
চুক্তির নাম
|
১৯৯১
|
স্টিয়ারিং কমিটি ‘টু এস্টাবলিশ দ্য বেসিস ফর আ লং-টার্ম আর্মি-টু-আর্মি রিলেশনশিপ’
|
১৯৯২
|
ইন্দো-ইউএস মালাবার এক্সারসাইজ
|
১৯৯৫
|
মিনিট অন ডিফেন্স রিলেশনস – ডিফেন্স পলিসি গ্রুপ (ডিপিজি)
|
২০০২
|
জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফর্মেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ)
|
২০০৪
|
নেক্সট স্টেপ ইন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ (এনএসএসপি)
|
২০০৫
|
নিউ ফ্রেমওয়ার্ক ফর দি ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স রিলেশনশিপ
|
২০১২
|
ডিফেন্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই)
|
২০১৫
|
জয়েন্ট স্ট্র্যাটেজিক ভিশন ফর দি এশিয়া প্যাসিফিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়ন
|
২০১৬
|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে মেজর ডিফেন্স পার্টনার (এমডিপি) বলে ঘোষণা করে
|
২০১৬
|
লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ)
|
২০১৮
|
দ্য কমিউনিকেশনস কম্প্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ)
|
২০১৮
|
ভারতকে ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড অথরাইজেশন টিয়ার ১’-এর (এসটিএ-১) অনুমোদন দেওয়া হয়
|
২০১৮
|
‘২+২’ আলোচনার সূচনা
|
২০১৯
|
ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (আইএসএ)
|
২০২০
|
বেসিক এক্সচেঞ্জ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ)
|
২০২১
|
ইন্দো-ইউএস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ
|
২০২২
|
ভারত ঘোষণা করে যে, সে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহরাইনভিত্তিক কম্বাইন্ড মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সে (সিএমএফ) সহযোগিতা করছে
|
সূত্র: বিভিন্ন উৎস থেকে সঙ্কলিত
সামরিক মহড়া
দ্বিপাক্ষিক অনুশীলন
- বজ্র প্রহর: ২০০৩ সালে উভয় পক্ষ মিজোরামের ভাইরেংতেতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাউন্টার ইনসার্জেন্সি এবং জাঙ্গল ওয়ারফেয়ার স্কুলে বজ্র প্রহর নামে একটি বিশেষ বাহিনীর অনুশীলনের এক প্রাথমিক সংস্করণ চালু করে। এটি ছিল একটি প্রশিক্ষণমূলক অনুশীলন এবং পরবর্তী কালে, শত শত মার্কিন সামরিক কর্মী নিয়মিত ভাবে সেখানে প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান বজ্র প্রহর স্পেশ্যাল ফোর্সের মহড়া ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ছিল একটি প্লাটুন স্তরের (৩০-৫০ সৈন্য সম্বলিত) মহড়া। অনুশীলনের ১৩তম সংস্করণ ২০২২ সালের অগস্ট মাসে বাকলোর (হিমাচল প্রদেশ) স্পেশ্যাল ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।(৩৬)
- যুদ্ধ অভ্যাস: প্রথম সেনা মহড়া নামক যুদ্ধ অনুশীলন (যুদ্ধ মহড়া) ২০০৪ সালে শুরু হয়েছিল এবং রাজস্থানের পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যাটালিয়ন স্তরে ব্রিগেড পর্যায়ের মিশন পরিকল্পনার সঙ্গে প্রতিটি পক্ষ থেকে প্রায় ২৫০ জন সৈন্য নিয়ে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। অনুশীলনে টহল, প্রাণনাশ এবং স্বল্প ব্যবধানে যুদ্ধের মতো যুদ্ধের মৌলিক বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুশীলনের ১৮তম সংস্করণটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে উত্তরাখণ্ডের আউলি হাই অল্টিটিউড ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল অধিক উচ্চতাসম্পন্ন ভূখণ্ডে যৌথ অভিযান। এতে প্রতিটি দেশের ৩৫০টি সৈন্যদল অংশগ্রহণ করে। যেহেতু মহড়ার ভারতীয় সংস্করণটি সাধারণত মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়, তাই ভারত-চিন সীমান্তের কাছাকাছি আউলিতে এমনটা করার সিদ্ধান্ত ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।(৩৭)
- কোপ ইন্ডিয়া: ২০০৪ সালে শুরু হওয়া দু’টি বিমান বাহিনী কোপ ইন্ডিয়া নামক মহড়ার আয়োজন করে। প্রথম মহড়াটি গ্বালিয়রের এয়ার ফোর্স স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিরাজ ২০০০ যোদ্ধাদের ঘাঁটি রয়েছে। অনুশীলনটি ২০১০ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়নি। কোপ ইন্ডিয়া ২০২৩ হল কলাইকুন্ডা, পানাগড় এবং আগ্রার বিমান বাহিনীর স্টেশনগুলিতে অনুষ্ঠিত একটি বিস্তৃত মহড়া, যেটিতে প্রথম সারির ভারতীয় ও মার্কিন বিমান জড়িত ছিল এবং ইউএস বি১বি কৌশলগত বোমারু বিমানও অংশগ্রহণ করে। জাপানি স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা পর্যবেক্ষক হিসেবে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করেন।(৩৮)
- টাইগার ট্রায়াম্ফ: ২০১৯ সালে ভারতীয় ও মার্কিন সামরিক বাহিনী বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাদের প্রথম ট্রাই-সার্ভিস অনুশীলন চালায়, যার নাম ট্রাইসার্ভিসেস ইন্ডিয়া ইউ.এস. অ্যাম্ফিবিয়াস এক্সারসাইজ (টাইগার ট্রায়াম্ফ)। মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ সম্পর্কিত আন্তঃ-কার্যক্ষমতা এবং ছোট দলের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি করাই ছিল এই অনুশীলনের লক্ষ্য। ন’দিন ব্যাপী মহড়ায় ৫০০ জনেরও বেশি মার্কিন মেরিন ও নাবিক এবং ১২০০ জন ভারতীয় কর্মী অংশ নেন। উভয় পক্ষের তরফেই একটি করে জাহাজ অর্থাৎ ইউএসএস জার্মানটাউন এবং আইএনএস জলাশওয়া (প্রাক্তন ইউএসএস ট্রেন্টন) অংশগ্রহণ করে।(৩৯) অনুশীলনের দ্বিতীয় সংস্করণটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।(৪০) যাই হোক, মাত্র ৫০ জনের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলে এর আকার ছিল ছোট এবং এই মহড়ায় কূটনৈতিক, অভিযানমূলক ও লজিস্টিক্যাল সমন্বয়ের জন্য কর্মীদের পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়াগুলিতে মনোনিবেশ করা হয়েছিল।
- ইউএস স্পেশ্যাল ফোর্স ও ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের মধ্যে তারকাশ অর্থাৎ যৌথ স্থল বাহিনী সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা অনুশীলন এবং মার্কিন নৌবাহিনীর সিলের সঙ্গে ভারতের মেরিন কম্যান্ডোদের নিয়ে একটি বিশেষ নৌ বাহিনীর মহড়া অর্থাৎ সঙ্গম ছাড়াও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বহুপাক্ষিক অনুশীলন
- মালাবার: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভারত মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে মালাবার অনুশীলনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, যা ১৯৯০-এর দশকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই মহড়াগুলি দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা ও দেশটির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরে অবশ্য মহড়াগুলি স্থগিত করে দেওয়া হয়। যাই হোক, ১৯৯৯ সালে ট্যালবট-সিং আলোচনার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মধ্যম স্থল খুঁজে পেতে সমর্থ হয় এবং অনুশীলনগুলি ২০০২ সালে ফের শুরু করা হয়েছিল। ২০০৫ সাল নাগাদ দুই দেশের মধ্যে বিমানবাহী রণতরী এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ সংক্রান্ত অনুশীলন পরিশীলিত ভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০১৪ সালে জাপান এই অনুশীলনে যোগ দেয় এবং ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার যোগদানের পরে এই মালাবার মহড়া এখন বহুপাক্ষিকে পরিণত হয়েছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মহড়াগুলি ভারতের পশ্চিম (মালাবার) উপকূলে সমুদ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী মহড়াগুলি ফিলিপাইন সাগর, বঙ্গোপসাগর ও জাপানের জলসীমায় হয়েছে। মহড়ার ২৬তম সংস্করণটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জাপানের উপকূলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এতে সামুদ্রিক টহল বিমান, হেলিকপ্টার ও ডুবোজাহাজ-সহ ১১টি সারফেস জাহাজ সম্পৃক্ত ছিল। এতে একটি মার্কিন পারমাণবিক শক্তি চালিত বিমানবাহী রণতরী অংশগ্রহণ করে, ভারত একটি স্টিলথ ফ্রিগেট বা আইএনএস শিবালিক, একটি কর্ভেট, একটি পি৮আই মেরিটাইম রিকনোসেন্স এবং এএসডব্লিউ বিমান পাঠায়।(৪১) অনুশীলনের ২৭তম সংস্করণটি ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বারের মতো আয়োজন করলেও তার মাত্রা ছিল স্বল্প। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার জাহাজ ও বিমানের পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর দু’টি জাহাজ অর্থাৎ স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস সহ্যাদ্রি এবং ডেস্ট্রয়ার আইএনএস কলকাতা এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল।(৪২)
- আরআইএমপিএসি: ভারত ২০১২ সাল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন রিম অব দ্য প্যাসিফিক এক্সারসাইজ-এ (আরআইএমপিএসি) অংশগ্রহণ করেছে এবং ভারতের ফ্রিগেট আইএনএস সহ্যাদ্রি ২০১৪ সালে অংশগ্রহণ করে। ২০২২ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর পি৮আই বিমানের সঙ্গে ফ্রিগেট সাতপুরা অংশগ্রহণ করেছিল। মহড়াটিতে উন্নত ডুবোজাহাজ বিরোধী যুদ্ধের অভিযান চালানো হয় এবং বলা হয়, এটিই বিশ্বের বৃহত্তম নৌ মহড়া।(৪৩)
- মিলন: মিলন (বন্ধুত্ব) বহুপাক্ষিক অনুশীলন শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে আসিয়ান-এর সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী আস্থা নির্মাণের ব্যবস্থা হিসাবে। অনুশীলনটি প্রাথমিক ভাবে আন্দামান সাগরে অনুষ্ঠিত হলেও এর বর্ধিত আকার ও পরিসরের কারণে এটি এখন বিশাখাপত্তনম বন্দরে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম ২০২২ সালের সংস্করণে অংশ নিয়েছিল, যা ছিল সর্ববৃহৎ। সেই মহড়ায় একটি ডেস্ট্রয়ার এবং একটি সামুদ্রিক টহল বিমান অংশ নেয়। ২০২২ সালের মহড়ায় ৪২টি দেশ, ২৬টি যুদ্ধজাহাজ, ২১টি বিমান এবং একটি ডুবোজাহাজ অংশ নেয়।(৪৪) ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত ৫০টিরও বেশি বিদেশি নৌবাহিনী, ১৫টি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি সামুদ্রিক টহল বিমান-সহ মেগা অনুশীলনের সর্বশেষ পুনরাবৃত্তির আয়োজন করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রায় ২০টি জাহাজ, দু’টি বিমানবাহী রণতরী এবং পি৮আই সামুদ্রিক টহল বিমানও অংশ নেয়।(৪৫)
- কাটলাস এক্সপ্রেস: এই নৌবাহিনীর মহড়াটি মার্কিন আফ্রিকা কম্যান্ড দ্বারা আয়োজিত হয়। ২০১৯ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট জিবুতির কাছে মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। ২০২৩ সালের সংস্করণটি সেশেলেসে চালু করা হয়েছিল এবং জিবুতি, কেনিয়া ও মরিশাসেও সেই মহড়া হয়েছিল। এতে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট আইএনএস ত্রিকাণ্ড অংশ নেয়। ২০২৩ সালের মহড়াটি ইউএস সেন্ট্রাল কম্যান্ড কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক মহড়ার সঙ্গে সম্মিলিত বিন্যাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মিলিত মহড়ায় ৫০টি দেশের ৭০০০ সামরিক কর্মী, ৩৫টি জাহাজ এবং ৩০টি ক্রুবিহীন ও এআই ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।(৪৬)
- লে পেরুজ: এই নৌবাহিনীর মহড়াটি ফ্রান্সের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়। এর তৃতীয় সংস্করণে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে একটি দুই দিনের অনুশীলনের জন্য সাতটি নৌবাহিনীর উপাদানগুলিকে একত্রিত করা হয়েছে এবং কোয়াড দেশগুলি ছাড়াও ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং কানাডা এতে অংশ নেয়। একটি ভারতীয় নৌবাহিনীর স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস সহ্যাদ্রি, ফ্লিট ট্যাঙ্কার আইএনএস জ্যোতি এবং একটি পি৮আই সামুদ্রিক রিকনোসেন্স বিমান অংশ নিয়েছিল, যা ‘উচ্চ স্তরের’ অনুশীলন হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল এবং যার মধ্যে বিমান প্রতিরক্ষা অন্তর্ভুক্ত ছিল।(৪৭)
- সি ড্রাগন: মার্কিন নেতৃত্বাধীন ডুবোজাহাজ বিরোধী যুদ্ধ নৌ মহড়াটি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে গুয়ামের কাছে তার পঞ্চম সংস্করণের আয়োজন করে এবং এতে কোয়াড দেশগুলি ছাড়াও কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। একটি ভারতীয় পি৮আই সামুদ্রিক টহল এবং এএসডব্লিউ বিমান এতে অংশগ্রহণ করে। এটি ছিল ভারতের অংশগ্রহণের তৃতীয়তম বর্ষ।(৪৮)
- পিচ ব্ল্যাক: অস্ট্রেলিয়া দ্বারা আয়োজিত একটি বিমান বাহিনীর মহড়া প্রতি দু’বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এটির শেষ পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০২২ সালে। সেখানে ১৭টি দেশের বাহিনী অংশগ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে চারটি এসইউ-৩০এমকেআই ফাইটার এবং দু’টি সি-১৭ পরিবহণ বিমানের একটি ভারতীয় দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহড়ায় বিশ্বব্যাপী ২৫০০ জন অংশগ্রহণকারী এবং ১০০টি বিমান অংশগ্রহণ করেছিল। অনুশীলনে দিন এবং রাত উভয় ধরনের অভিযান বাস্তবায়িত করা হয় এবং একগুচ্ছ বাস্তবধর্মী হুমকির মোকাবিলার অনুশীলন করা হয়।(৪৯)
- রেড ফ্ল্যাগ: এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের একটি প্রধান বিমান যুদ্ধের মহড়া, যেখানে মিত্র এবং অংশীদার দেশগুলির নানা ইউনিট অংশগ্রহণ করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর বেশ কয়েক বার অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় যুদ্ধ বিমান এবং ট্যাঙ্কার এই মহড়ায় ২০০৮ ও ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিল। ২০১৬ সালে ভারতীয় তরফে চারটি আইএএফ এসইউ-৩০এমকেআই, চারটি জাগুয়ার ফাইটার, দু’টি সি-১৭ ট্রান্সপোর্ট জেট এবং দু’টি মধ্য আকাশে রিফুয়েলিং বিমান দল অংশগ্রহণ করে। ২০২০ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনী অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকলেও কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিল। তার পর থেকে ভারত আর রেড ফ্ল্যাগ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেনি।(৫০)
সারণি ২: ভারত-মার্কিন বহুপাক্ষিক অনুশীলন
ঘোষণার বছর
|
মহড়ার নাম
|
কোন কোন ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত
|
১৯৯২
|
মালাবার এক্সারসাইজ (পরবর্তী সময়ে যা বহুপাক্ষিক হয়ে ওঠে)
|
নৌ
|
১৯৯৫
|
মিলন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যোগদান করে ২০২২ সালে)
|
নৌ
|
২০০৮
|
রেড ফ্ল্যাগ
|
বিমান
|
২০১২
|
আরআইএমপিএসি
|
নৌ
|
২০১৪
|
সি ড্রাগন
|
নৌ
|
২০০৮
|
রেড ফ্ল্যাগ
|
বিমান
|
২০১৯
|
কাটলাস এক্সপ্রেস
|
ত্রিপাক্ষিক পরিষেবা
|
২০২২
|
পিচ ব্ল্যাক
|
বিমান
|
২০২৩
|
লে পেরুজ (ফরাসি উদ্যোগ)
|
নৌ
|
সূত্র: বিভিন্ন উৎস থেকে সঙ্কলিত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত অধিগ্রহণ
২০০৭ সালে বিশেষ অভিযানের সময় ব্যবহারের জন্য ছ’টি সিকোর্স্কি এস-৬১ সিকিং হেলিকপ্টার এবং ছ’টি সি-১৩০জে পরিবহণ বিমান-সহ একটি উভচর পরিবহণ ডক ইউএসএস ট্রেন্টন (নাম পরিবর্তন করে জলাশওয়া) অর্জন করে ভারত বিনয়ী ভাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় শুরু করে।(৫১) ২০১১ সালে ভারত ইঙ্গিত দেয় যে, দেশটি আরও ছ’টি সি-১৩০জে বিমান কিনবে, যেটি মাউন্টেন স্ট্রাইক কর্পোরালের সদর দফতর পানাগড়ভিত্তিক (পশ্চিমবঙ্গ) হবে। এই বিক্রয় শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে হয়।(৫২)
২০০৮ সালে ভারত তার মেরিটাইম স্ট্রাইক জাগুয়ার বিমান, বোয়িং পি৮আই মেরিটাইম রিকনোসেন্স এবং এএসডব্লিউ বিমান ব্যবহার করার জন্য ২০টি এজিএম-৮৪এল হারপুন ব্লক ২ ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছিল।(৫৩) পরবর্তী কালে, ২০১৪ সালে ভারত তার সংস্কারকৃত সিশুমার (টাইপ ২০৯) সাবমেরিনগুলিকে সজ্জিত করার জন্য আরও ১২টি হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র অর্জন করে।(৫৪) ২০২০ সালে ভারত পি৮আই বিমানের সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য আরও ১০টি বায়ুচালিত হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র অর্জন করে।(৫৫)
২০০৯ সালে ভারত একটি বৃহৎ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যখন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আটটি পি৮আই দূরপাল্লার সামুদ্রিক রিকনোসেন্স এবং
এএসডব্লিউ বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ছিল বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং-এর সঙ্গে একটি প্রত্যক্ষ বাণিজ্যিক লেনদেন।(৫৬) পরবর্তী কালে, ভারত ২০১৬ সালে আরও চারটি পি৮আই ক্রয় করে এবং ২০২১ সালে বিদেশি সামরিক বিক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও ছ’টি বিমানের বরাত দেয়।(৫৭) ২০২০ সালে ভারত ১৬টি লাইটওয়েট টর্পেডোও ক্রয় করেছে, যা পি৮আই-এর মাধ্যমে চালু করা যেতে পারে।(৫৮)
২০১০ সালে ভারত ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে কিছু সম্পর্কিত সরঞ্জাম-সহ ১০টি বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার টু পরিবহণ বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর ভারী এয়ারলিফ্ট ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ক্রয় করা হয়েছিল।(৫৯) ভারত ২০১৭ সালে আর একটি বিমান ক্রয় করেছিল।(৬০)
এ ছাড়াও ২০১০ সালে, ভারত অত্যাধুনিক আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্যাকেজে ২২টি এএইচ-৬৪ডি অ্যাপাশে অ্যাটাক হেলিকপ্টার বিক্রির একটি অগ্রিম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যাই হোক, চুক্তিটি ২০১৫ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তী কালে, ভারত তার সেনাবাহিনীর জন্য আরও ছ’টি অ্যাপাশে কেনার বরাত দেয়।(৬১)
ভারত পার্বত্য এলাকায় তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে ১৪৫ এম ৭৭৭ লাইটওয়েট হাউইৎজার এবং ৮৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে।(৬২)
চিত্র ১: ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্কের মূল্য (২০১৩-২০২২; মার্কিন ডলারে)
সূত্র: স্টকহলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট
২০১৯ সালে ভারত ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে সংশ্লিষ্ট মাল্টি-মোডাল রাডার, রেডিও সরঞ্জাম, ইঞ্জিন, টার্গেটিং সিস্টেম এবং হেলফায়ার মিসাইল-সহ ২৪টি এমএইচ-৬০ আর মাল্টি-মিশন হেলিকপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।(৬৩)
২০২০ সালে ভারত অনুরোধ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স উইপন সিস্টেম কেনার অনুমোদন দিয়েছে যাতে পাঁচটি এএন/এমপিকিউ-৬৪এফআই সেন্টিনেল রাডার সিস্টেম, ১১৮টি এএমআরএএএম এইম ১২০সি মিসাইল এবং ১৩৪টি স্টিঙ্গার মিসাইল রয়েছে। চুক্তিটির মূল্য ছিল ১.৮৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সম্ভবত এটি জাতীয় রাজধানীতে নিবিড় বায়ু সুরক্ষা প্রদান করবে।(৬৪)
ভারত প্রাথমিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমকিউ৯এ সি গার্ডিয়ান ড্রোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে দু’টি ড্রোন লিজ নেয়। ২০২০ সালে বোয়িং পি৮আই পসাইডন এবং সি গার্ডিয়ান ড্রোনের মতো মার্কিন সরঞ্জামগুলিও চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।(৬৫)
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ভারত ও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ডিটিটিআই-এর অংশ হিসাবে একটি এয়ার-লঞ্চড মনুষ্যবিহীন আকাশযান তৈরিতে সহযোগিতা করার জন্য একটি প্রকল্প চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়।(৬৬)
২০২২ সাল থেকে অগ্রগতি
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেলেও এতে কোনও ধরনের সামরিক জোট সম্পৃক্ত ছিল না। ভারত প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ক্রয় করেছে, কিন্তু ডিটিটিআই উদ্যোগের দ্বারা প্রতিশ্রুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সহ-উন্নয়ন এবং সহ-উৎপাদনে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
যাই হোক, ২০২২-২৩ সালে, ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক একটি গুণগত পরিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। এর নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হল ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে চিনা পদক্ষেপের ফলে উদ্ভূত উত্তেজনা; দ্বিতীয়টি হল ইন্দো-প্যাসিফিকের ঘটনাবলির ফলে উদ্ভূত আমেরিকা ও চিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা; এবং তৃতীয়টি হল সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী, গ্রিন এনার্জি বা দূষণহীন শক্তি এবং এর সরবরাহ শৃঙ্খলগুলির নিকটস্থ ও বন্ধুদেশের উপর জোর দিয়ে একটি নতুন গার্হস্থ্য শিল্প কাঠামো তৈরি করার মার্কিন সিদ্ধান্ত।
২০২২ সালের মে মাসে যখন মোদী টোকিয়োতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন, তাঁরা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য উদ্যোগ’-এর (আইসেট) ঘোষণা করেছিলেন। জুন মাসে মোদীর ওয়াশিংটন সফরের প্রস্তুতির জন্য ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতীয় এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা সাক্ষাৎ করেন, আইসেট-এর আকার দেন এবং এটিকে মার্কিন ও ভারতীয় প্রতিরক্ষা স্টার্টআপগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য একটি উদ্ভাবনী সেতু হিসাবে চালু করার উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। মোদীর সফরের সময় একটি উদ্বোধনী সভার মাধ্যমে ওয়াশিংটনে আইসেট চালু করা হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের তথ্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুই দেশ শুধু সরকারের মধ্যেই তাদের ‘কৌশলগত প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা’ সম্প্রসারণ নয়, এর পাশাপাশি ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও প্রস্তুত।(৬৭)
২০২৩ সালের মে মাসে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বোধনী ‘অ্যাডভান্সড ডোমেন ডিফেন্স ডায়লগ’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ২০২২ সালে ‘২+২ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ’-এর সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এটি ছিল সাব-ক্যাবিনেট আধিকারিকদের স্তরে এবং উভয় পক্ষ পরিসর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জোর দিয়ে নতুন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র সম্পর্কে মতামত বিনিময় করে।(৬৮) এর পাশাপাশি মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং তাঁর ভারতীয় সমকক্ষ রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে ২০১৩ সালের ‘জয়েন্ট ডিক্লেয়ারেশন অন ডিফেন্স কো-অপারেশন’ এবং ২০১৫ সালের ‘ফ্রেমওয়ার্ক ফর দ্য ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স রিলেশনশিপ’ থেকে উদ্ভূত বিদ্যমান কার্যক্রমের ভিত্তিতে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। এর অধীনে, দুই দেশ ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রক্রিয়াটিকে সহায়তা করার জন্য একটি পথনির্দেশিকা জারি করেছে, যখন ২০১৫ ‘ফ্রেমওয়ার্ক’-এর পুনর্নবীকরণ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি লজিস্টিক হাব’ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সংস্থাগুলির আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে সমন্বিত করার প্রতিশ্রুতির কথাও ঘোষণা করেছে।(৬৯)
ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ভারত-মার্কিন কৌশলগত বাণিজ্য আলোচনা’ শুরুর মাধ্যমে ২০২৩ সালের জুন মাসে আর একটি মূল উপাদান বাস্তবায়িত হয়েছিল। বিদেশ সচিব ভি এম কোয়াত্রা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যার উদ্দেশ্য ছিল সেমিকন্ডাক্টর, মহাকাশ, টেলিকম, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, এআই, প্রতিরক্ষা ও বায়োটেকের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পরিসর’-এর উন্নয়ন এবং বাণিজ্যকে সহজতর করে তোলা। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের শক্তিশালী ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সম্মতি নিয়ে কাজ করা শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা অ্যালান এস্তেভেজ দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল এই যে, মার্কিন প্রবিধানের বজ্র আঁটুনি যেন প্রক্রিয়াটির শ্বাসরুদ্ধ না করে দেয়।(৭০)
২০২৩ সালের জুন মাসে মোদীর মার্কিন সফরটি সেই বছরের জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হওয়া সরকারি স্তরের প্রক্রিয়াগুলির চূড়ান্ত পরিণতি ছিল। ঘোষিত অনেক প্রতিরক্ষা চুক্তিও কিছু সময়ের জন্য বাস্তবায়িত হয়। এই সফরে একটি স্বাগত অনুষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেসে মোদী একটি ভাষণ দেন। বৈদ্যুতিক যানবাহন উত্পাদন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলির পালে হাওয়া দেওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন সহায়তা সম্পর্কিত চুক্তিগুলি ঘোষণা করা হয়েছিল, যেমনটি গুজরাতে একটি নতুন চিপ প্ল্যান্টে মাইক্রন প্রযুক্তির বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। সামগ্রিক ভাবে, সফরটি উভয় পক্ষের জন্য ইতিবাচক থেকেছে।(৭১)
২০২৩ সালের ২১ জুন মোদীর সফরের সময় ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দু’টি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পরামর্শ অনুসারে কৌশলগত প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক ‘ডিফেন্স এক্সিলারেশন ইকোসিস্টেম’ (ইন্ডাস-এক্স) চালু করে। জানুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে সংযুক্ত করার জন্য একটি ‘উদ্ভাবন সেতু’ স্থাপন করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের ইনোভেশনস ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স (আইডেক্স) সংস্থা এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের কার্যালয় ইন্ডাস-এক্স-এর নেতৃত্ব প্রদান করবে। এটি একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ হিসাবে পরিকল্পিত, যা শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করবে এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রচার চালাবে।(৭২)
দ্বিতীয় ইন্ডাস এক্স শীর্ষ সম্মেলন ২০২৪ সালের ২০-২১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং আইডেক্স ও মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ছাড়াও অনুষ্ঠানটিতে ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল এবং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স যোগদান করে। অনুষ্ঠানে সেই স্টার্টআপ পুরস্কার বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়েছে, যারা গত বছর চালু হওয়া সামুদ্রিক পরিসর সম্পর্কিত ইন্ডাস-এক্স উদ্ভাবন সংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগদান করেছিল।(৭৩)
২০২৩ সালের জুন মাসে জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) সংস্থা যৌথ ভাবে ভারতে তাদের জিই এফ-৪১৪ জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে সম্মত হয়েছিল। চুক্তির অধীনে জিই ৮০ শতাংশ প্রযুক্তি প্রদান করবে।(৭৪) জিই প্রাথমিক ভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য ৯৯টি এফ-৪০৪ ইঞ্জিন তৈরি করতে সম্মত হলেও এখন ভারতের এলসিএ এমকে ২ এবং উন্নত মাঝারি যুদ্ধ বিমান (এএমসিএ) প্রকল্পগুলির জন্য ১০০ এফ ৪১৪-আইএনএস৬ তৈরি করতে চাইছে এবং এর পাশাপাশি সহযোগিতা করার জন্য একটি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে এএমসিএ এমকে ২ ইঞ্জিন তৈরি করতে আগ্রহী। যাই হোক, এএমসিএ এমকে ২ ইঞ্জিন তৈরির জন্য ভারত রোলস রয়েস (ইংল্যান্ড) এবং সাফরান-এর (ফ্রান্স) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
হোয়াইট হাউস দ্বারা জারি করা একটি তথ্যপত্র দর্শায় যে, প্রযুক্তি হস্তান্তর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নেপথ্যে একটি প্রধান কারণ হবে। অর্ধপরিবাহীগুলিতে সহযোগিতার পাশাপাশি দু’টি দেশ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উন্নত টেলিকম, মহাকাশ, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি এবং এআই-এর ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে।(৭৫)
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ছিল চেন্নাইয়ের নিকটবর্তী কাট্টুপল্লিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং লারসেন অ্যান্ড টুব্রো শিপইয়ার্ডের মধ্যে একটি মাস্টার শিপ রিপেয়ার এগ্রিমেন্ট (এমএসআরএ) ও অন্যান্য ভারতীয় শিপইয়ার্ডের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তির প্রচেষ্টা।(৭৬) ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাজগাঁও ডকইয়ার্ডস লিমিটেড মার্কিন সরকারের একটি সংস্থার সঙ্গে একটি এমএসআরএ-তে স্বাক্ষর করেছে।(৭৭)
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পঞ্চম বার্ষিক ‘২+২ মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা’র আয়োজন করে। সেখানে গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল ভারতে স্ট্রাইকার, একটি সাঁজোয়া পদাতিক যুদ্ধের গাড়ির যৌথ প্রযোজনা শুরু করার চুক্তি। আলোচনায় এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং ওভারহল (এমআরও) সুবিধার কেন্দ্র হিসাবে ভারতের আবির্ভাবের গুরুত্বের উপরও আলোকপাত করা হয়েছিল।(৭৮)
২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট মার্কিন কংগ্রেসকে এমকিউ-৯বি ইউএভি এবং ৩.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অন্যান্য সরঞ্জামের সম্ভাব্য বিদেশি সামরিক বিক্রির বিষয়ে অবহিত করেছে। এই সরঞ্জামটি সশস্ত্র ইউএভি-র স্কাই গার্ডিয়ান ও সি গার্ডিয়ান সংস্করণে ব্যবহৃত হবে। সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল হেলফায়ার মিসাইল এবং লেজারের স্বল্প-ব্যাসের বোমা।(৭৯)
তবে যে ক্ষেত্রে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না, তা হল গোয়েন্দা সহযোগিতা। চারটি মৌলিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর ভারতের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করার জন্য হার্ডওয়্যার থাকলেও তা রয়েছে নির্বাচনী ভিত্তিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তাওয়াং এলাকায় একটি বড় চিনা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে সহায়তা করেছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগরে চিনা জাহাজের চলাচলের তথ্যও প্রদান করে বলে বিশ্বাস করার মতো কারণ রয়েছে।(৮০)
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে ইন্ডাস এক্স-এর দ্বিতীয় বৈঠকের সময় ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরামনে ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের পরিস্থিতি মোকাবিলায় মার্কিন সহায়তার কথা খোলাখুলি ভাবে স্বীকার করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, এমন একটি জিনিস রয়েছে, যা ভারতকে ‘খুব দ্রুত’ ভিত্তিতে সাহায্য করেছিল এবং তা হল ‘বুদ্ধিমত্তা ও পরিস্থিতিগত সচেতনতা যা দিয়ে মার্কিন সরঞ্জাম ও মার্কিন সরকার ভারতকে সাহায্য করতে পারে’। তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গেই থাকবে, যদি (ভবিষ্যতে) আমাদের মার্কিন সমর্থনের প্রয়োজন হয়। এটি আমাদের জন্য অপরিহার্য এবং আমাদের এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’(৮১)
প্রধান সমস্যার ক্ষেত্র
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে অস্ত্র বিক্রি এবং সামরিক মহড়া ছাড়া অন্যান্য কার্যকলাপ সীমিত। এর মধ্যে বেশির ভাগই দুই পক্ষের ভিন্ন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল দুই দেশের মধ্যে সুবিশাল অসামঞ্জস্য সত্ত্বেও এই স্বাভাবিক ফলাফল যে, ভারত মার্কিন প্রযুক্তি ও বাণিজ্যকে অর্থনৈতিক সিঁড়ি করে এগিয়ে যেতে চাইছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তা অবকাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
প্রযুক্তি স্থানান্তরের দিক থেকে প্রযুক্তি রফতানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সব সময়ই ভারতের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা বিভিন্ন প্রযুক্তি অস্বীকারমূলক প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সেই সংস্থাগুলি হল নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপ (এনএসজি), মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর), ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ। গত দুই দশকে ভারতকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং এখন এমটিসিআর, ওয়াসেনার, অস্ট্রেলিয়া গ্রুপের পক্ষ হয়ে উঠেছে ও এনএসজি-কে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ভারতকে ২০১৬ সালে প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদারের অনন্য উপাধি দেওয়া হলেও তা স্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি বা কার্যকর করা হয়নি।(৮২) বরং এর বিপরীতে পাকিস্তানের ‘প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র’ মর্যাদা একটি মার্কিন আইনগত বিভাগ এবং ইসলামাবাদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সুবিধার একটি পরিসীমা পেতে সক্ষম করে তোলে।(৮৩)
বর্তমান প্রতিরক্ষা-শিল্প সহযোগিতা প্রসারিত করতে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও দু’টি চুক্তির জন্য আলোচনা করতে হবে। প্রথমটি হল সিকিউরিটি অব সাপ্লাই অ্যারেঞ্জমেন্ট (এসওএসএ) এবং দ্বিতীয়টি হল রেসিপ্রোকাল ডিফেন্স প্রোকিওরমেন্ট অ্যারেঞ্জমেন্ট (আরডিপি)। ভারতীয় মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারীদের কাছে মার্কিন বাজার উন্মুক্ত করার জন্য এগুলির অবশ্য প্রয়োজন।
জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তিতে সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যেতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। এর আগে ভারত ডিটিটিআই-এর অধীনে কোর ইঞ্জিন বা ‘হট সেকশন’ প্রযুক্তি চাইলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তির উপর ওয়ার্কিং গ্রুপটিকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।(৮৪) ডিটিটিআই-এর অধীনে এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি করা হয়। সেই গ্রুপটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ তার ষষ্ঠতম সভার আয়োজন করলেও কোনও বিশেষ অগ্রগতির তেমন লক্ষণ মেলেনি। কারণ ভারত এখনও তার পরবর্তী ক্যারিয়ার নির্মাণের বিষয়ে স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।(৮৫)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (বা অন্য কোনও দেশ যেমন ফ্রান্স) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করুক… ভারত এমনটা চাইলেও তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অভিন্ন সাধারণ প্রযুক্তির স্পষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে। কারণ বিভিন্ন সংস্থার মেধা সম্পত্তিই হল তাদের লাভের চাবিকাঠি। সুতরাং, একটি সংশোধিত প্রস্তাব নিয়ে ফিরে আসা সত্ত্বেও জিই উল্লেখ করেছে যে, রফতানির জন্য সেটির মার্কিন সরকারের অনুমোদন দরকার। ভারতীয় গণমাধ্যমের ভাষ্য বলছে যে, ভারত ৮০ শতাংশ প্রযুক্তি স্থানান্তর পাবে, যার অর্থ সম্ভবত ভারত হট সেকশন সম্পর্কিত প্রযুক্তি পেতে সক্ষম হবে না।(৮৬)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতকে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা প্রকাশ করেছে স্কাই গার্ডিয়ান চুক্তি (২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে)। মার্কিন সেনেটের শক্তিশালী বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর বেন কার্ডিন খালিস্তান আন্দোলনের একজন মার্কিন সমর্থক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার কথিত ষড়যন্ত্রকে কেন্দ্র করে কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিটি অবরুদ্ধ করেছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে কার্ডিন তাঁর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পরই মার্কিন বিদেশ দফতর চুক্তিটি অনুমোদন করে।(ঘ)(৮৭)
প্রতিরক্ষা এবং দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি রফতানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিধিনিষেধ এখনও বড় সমস্যা। এগুলি একটি দ্বি-স্তরীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা একটি নিবিড় আইনি কাঠামোর অধীনে কাজ করে। প্রথমত, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাফিক ইন আর্মস রেগুলেশনস (আইটিএআর) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এটি মার্কিন যুদ্ধাস্ত্রের তালিকায় তালিকাভুক্ত সেই পণ্যগুলির সঙ্গে কাজ করে, যেগুলির একটি স্পষ্ট সামরিক ব্যবহার রয়েছে। আইটিএআর-এর সঙ্গে সম্মতির জন্য নির্দিষ্ট উপকরণ রফতানি করার উদ্দেশ্যে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে লাইসেন্স বা শংসাপত্রের প্রয়োজন হয়।(৮৮)
দ্বিতীয় ট্র্যাক বা স্তরটি হল এক্সপোর্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশনস (ইএআর), যা ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের অধীনে ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি (বিআইএস) দ্বারা পরিচালিত হয়। এগুলি ‘দ্বৈত ব্যবহার’ সংক্রান্ত সেই পণ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত, যেগুলিতে বেসামরিক ও সামরিক অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে এবং যার মধ্যে সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত। এখানেও রফতানির জন্য শংসাপত্রের প্রয়োজন হয়।(৮৯)
অস্ত্র রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইন (এইসিএ) হল মার্কিন অস্ত্র রফতানি নিয়ন্ত্রণের আইনি কাঠামো এবং কংগ্রেস স্তরের পর্যালোচনাও এ ক্ষেত্রে জড়িত। ১৯৭৬ সালের এইসিএ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির রফতানি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয় এবং কিছু শর্ত সাপেক্ষে তা বিক্রি ও রফতানি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমোদন দেয়। এটি এর প্রয়োগ সম্পর্কিত অসম্প্রসারণ ও মানবাধিকার বিবেচনাগুলিও নির্দিষ্ট করে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের পলিটিকো-মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এবং পেন্টাগনের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সির মাধ্যমে বিভাগীয় তদারকি করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং ট্রেজারি বিভাগ দ্বারা পরিচালিত ১১টি পৃথক রফতানি নিরীক্ষণ তালিকা বিবেচনা করে প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা চালানো জটিল হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত তালিকা উপলব্ধ থাকলেও, তালিকার কিছু অংশ শ্রেণিবদ্ধ বা ক্লাসিফায়েড করা যেতে পারে। এমনকি অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও প্রায়শই নির্দিষ্ট প্রযুক্তির রফতানির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে টালবাহানা সহ্য করতে হয়।(৯০)
২০০৮ সালে ভারত এনএসজি-র জন্য ছাড় পায়, যা অসামরিক পারমাণবিক বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিকে সক্ষম করে তোলে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশের মতোই ভারতকে এখনও মূলত আইটিএআর এবং ইএআর প্রবিধানগুলি অনুসরণ করতে হবে। যাই হোক, একটি প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসাবে এসটিএ-১ অনুমোদন পাওয়ায় ভারতের বিস্তৃত পরিসরে প্রতিরক্ষা এবং দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তিতে শংসাপত্রবিহীন প্রবেশাধিকার রয়েছে। ভারত সমস্ত প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে প্রবেশাধিকার না পেলেও যেগুলির ক্ষেত্রে শংসাপত্রের প্রয়োজন হয়, সে সব ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে দ্রুত অনুমোদন পেয়ে থাকে।
ভারত মার্কিন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার প্রতি বৃহত্তর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সতর্ক, বিশেষ করে চিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০২৩ সালের মে মাসে কংগ্রেসম্যান মাইক গ্যালাঘারের নেতৃত্বে মার্কিন হাউস সিলেক্ট কমিটি অন স্ট্র্যাটেজিক কম্পিটিশন যে ভারতকে ন্যাটো প্লাস ৫ গ্রুপে সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়া থেকেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। এই দলে ইন্দো-প্যাসিফিক-অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ইজরায়েল এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ন্যাটো ও পাঁচ মার্কিন মিত্র থাকবে।(৯১) যাই হোক, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাবে এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, ‘ন্যাটো টেমপ্লেট ভারতের জন্য প্রযোজ্য নয়’।(৯২)
টপ-ড্রয়ার প্রযুক্তি অর্জনে ভারতের আকাঙ্ক্ষা তার বর্তমান শিল্প ক্ষমতার সঙ্গে পুরোপুরি সাযুজ্যপূর্ণ নয়। আর ঠিক এই কারণেই ২০১২ সালে ফরাসি ফার্ম দাসাউ রাফালে বিমান তৈরির জন্য একটি প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি হতে অস্বীকার করে। এই কারণেই জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি নিয়ে ডিটিটিআই-তে আলোচনা ২০১৯ সালে স্থগিত করা হয়েছিল। এবং এখনও জিই চুক্তি ও প্রযুক্তির অন্য স্থানান্তর ব্যবস্থাগুলি কী ভাবে কাজ করবে, তা ভাল করে খতিয়ে দেখতে হবে।
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ভবিষ্যৎ
এসওএসএ এবং আরডিপি ভারতকে ডিফেন্স ফেডারেল অ্যাকুইজিশন রেগুলেশন সাপ্লিমেন্ট-এর (ডিএফএআরএস) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বা মার্কিন সামরিক আদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য উপাদান এবং বেশ কিছু অংশ সরবরাহ করার জন্য বর্তমানে যোগ্য দেশগুলির তালিকায় যোগদান করতে সক্ষম। আরডিপি মূলত মার্কিন আইনের মকুব-সম, যা অন্যথায় ফেডারেল সরকারকে অ-দেশীয় উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে বাধা দেয়। এটি ভারতীয় সংস্থাগুলিকে মার্কিন শিল্পের আনুষঙ্গিক প্রযোজক হওয়ার জন্য বড় সুযোগ প্রদান করতে পারে।
যাই হোক, ভারত এখনও ইউএস ন্যাশনাল টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস-এর (এনটিআইবি) অংশ হওয়া থেকে বেশ কিছুটা দূরে রয়েছে, যা মার্কিন আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি আইনি বিভাগ। এটি কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলিকে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রযুক্তি আধিপত্য সুনিশ্চিত করতে সামরিক অভিযান, উন্নত গবেষণা ও উন্নয়ন (আর অ্যান্ড ডি) পরিচালনা ও ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ বিভাগ তৈরি করেছে। এই বিভাগ একটি জাতীয় জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং শিল্প প্রস্তুতির নির্ভরযোগ্য উত্স সুরক্ষিত করার সঙ্গে জড়িত।(৯৩)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ডিটিটিআই এবং আইসেট-এর প্রচারকে অ-এনটিআইবি দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অংশীদারিত্ব প্রসারিত করার প্রচেষ্টার আলোকে দেখছে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইজরায়েলের মতো দেশগুলিও এনটিআইবি-র সদস্য নয়।
উপসংহার
ভূ-রাজনৈতিক পরিভাষায় ভারত হল সুই জেনারিস (নিজস্ব ধরনের বা স্বকীয়)। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তিভিত্তিক মিত্রদেশ নয়। অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার ভারতের প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারীও নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা-ই চেয়ে থাক না কেন, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিরাপত্তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই কিছু সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। ভারত তার কোয়াড অংশীদারদের মতো ‘মুক্ত ও অবাধ উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি সাযুজ্যপূর্ণ নয়। পাকিস্তান, ইরান বা রাশিয়ার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনার সঙ্গেও ভারত সহমত নয়।
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে এবং বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক ২+২ মন্ত্রী পর্যায়ে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে একটি নিবিড় ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সমস্ত স্তরে দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়া রয়েছে। ভবিষ্যতে এশিয়া প্যাসিফিকের বিন্যাস অনুসরণ করে এটিকে ত্রিপাক্ষিক স্তরে উন্নীত করা যেতে পারে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া-জাপান-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোটের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ কোরিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান, ভারত-অস্ট্রেলিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান জোট তৈরির চেষ্টা চলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অনুধাবন করেছে যে, ভারতের মূল্য তার অনন্য মর্যাদা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। একটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফ্যাক্ট শিট উল্লেখ করেছে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ‘একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে কৌশলগত ও ফলাফলের মধ্যে অন্যতম’।(৯৪)
ভারতের পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক ভূমিকা পালনের সম্ভাবনা কম… মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটা মনে করলেও ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারকারী অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ ভারত নিজেই একটি মিত্র না হয়েও চিনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একটি নতুন পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। তথাকথিত নিউ ওয়াশিংটন কনসেনসাসের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে কী রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা-ও খতিয়ে দেখছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল সালে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান একটি আধুনিক মার্কিন শিল্প কৌশলের ভিত্তিতে নতুন ঐকমত্য গঠনের আহ্বান জানান। সে ক্ষেত্রে প্রথমে অর্ধপরিবাহী, ক্লিন এনার্জি টেকনোলজি বা দূষণহীন শক্তি প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতার উপর মনোযোগ দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, এতে সক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরির উদ্দেশ্যে মার্কিন অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, এটি বিদ্যমান ট্রেডিং সিস্টেমকে ‘উদ্ভাবনী নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’-এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে চাইবে, যা শুধু মাত্র শুল্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে না। চতুর্থ স্তম্ভটিতে বর্তমান উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অপারেটিং মডেলের সংস্কার করে শক্তি, ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো বিকাশের জন্য উদীয়মান অর্থনীতিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হবে।(৯৫)
স্পষ্টতই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনার অংশীদার হিসাবে ভারতকেই অগ্রাধিকার দেয়। যাই হোক, ভারতের দুর্লভ আর্থিক সংস্থান, উত্পাদন প্রযুক্তিতে দুর্বলতা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে পশ্চাদপদতার কারণে ভারত একটি অবশ্যম্ভাবী অংশীদারও হয়ে উঠবে।
তবে যা-ই হোক না কেন, চিনের সঙ্গে অভিজ্ঞতার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রযুক্তিকে আড়াল করে রাখতে যথেষ্ট সাবধানী হয়ে উঠবে।
সুলিভানের পরিকল্পনার শেষ এবং মূল স্তম্ভটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘একটি ছোট পরিসর এবং উচ্চ পরিখা-সহ মৌলিক প্রযুক্তিগুলিকে’ রক্ষা করা। সমস্ত উচ্চ প্রযুক্তি, বিদেশি বিনিয়োগ এবং সম্পর্ককে কঠোর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
আরও একটি সমস্যাও রয়েছে, যার কথা বলা জরুরি। নিজের অসংখ্য মিত্রদের নেতা এবং প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদেশের মধ্যে যুদ্ধ মোকাবিলার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাদের সঙ্গে ব্যবস্থাগুলির আন্তঃকার্যকারিতার প্রচার করতে চায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, এ হেন ব্যবস্থাগুলির উৎস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাই হোক, ভারত দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের বাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে চায়। ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা হল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনাকারী, প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারক হওয়া, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে বিদ্যমান। আর এই কারণেই যখন ভারত তার চাহিদার তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি করে, তখন তা রাশিয়া, ইজরায়েল, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিদ্যমান সরবরাহকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শর্ত ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা মার্কিন-উৎপত্তিগত সরঞ্জামের ব্যবহারকে উন্নত করে এবং বেশ কয়েকটি নকশা ও শিল্প উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে প্রস্তুত হয়েছে ভারত।
মার্কিন-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার এই সমীক্ষা যা প্রকাশ করে তা হল, প্রযুক্তি অংশীদারিত্বের বিকাশের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ এবং কঠিন ছিল মূলত দু’টি দেশের মধ্যে বিশাল অসামঞ্জস্যের কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উচ্চ প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং ভারত প্রযুক্তি শক্তি হয়ে উঠতে চায়। এমন একটি পরিস্থিতি থেকে - যেখানে প্রযুক্তির জন্য অনুরোধগুলি ‘অস্বীকারের অনুমান’মূলক পরিবেশে চালিত হয়েছিল – দুই দেশ এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো মিত্রদের সমতুল্য বলে মনে করে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ভারত বা অন্যান্য ন্যাটো দেশের মার্কিন প্রযুক্তিতে নিঃশর্ত বা স্বয়ংক্রিয় প্রবেশাধিকার রয়েছে। সেই প্রযুক্তিগুলি এখনও একটি নিবিড় আইনি পরিবেশের আওতায় কাজ করে, যেখানে প্রতিটি অনুরোধ প্রয়োজনীয় এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়।
পাদটিকা
[ক] এতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব উইলিয়াম জে. পেরি এবং ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী এম. মল্লিকার্জুন।
[খ] মিত্র এবং অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গঠনে ২+২ কাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জাপানের সঙ্গে ২+২ ব্যবস্থা চালিয়ে আসছে।
[গ] সিটিএফ - ১৫০ পারস্য উপসাগরের ঊর্ধ্বে উঠে মেরিটাইম সিকিউরিটি অপারেশন (এমএসও) চালায়; সিটিএফ – ১৫১ সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা; সিটিএফ – ১৫২ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে এমএসও; এবং সিটিএফ – ১৫৩ লোহিত সাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য দায়বদ্ধ।
[ঘ] কার্ডিন বলেছিলেন যে, বাইডেন প্রশাসন কয়েক মাস আলোচনার পর তাঁকে আশ্বস্ত করার পরেই তিনি চুক্তিটি অনুমোদন করেছিলেন যে, ভারত পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের তদন্তে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
১) কন্ডোলিজা রাইস, ‘প্রোমোটিং দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’, ফরেন অ্যাফেয়ার্স ৭৯, নম্বর ১ (২০০০)- ৪৫-৬২, https://doi.org/10.2307/20049613
২) এম্ব্যাসি অফ ইন্ডিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএসএস, https://www.indianembassyusa.gov.in/ArchivesDetails?id=469
৩) ‘ইউএস-ইন্ডিয়া-সিভিল নিউক্লিয়ার কোঅপারেশন’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আর্কাইভ, https://2001-2009.state.gov/p/sca/c17361.htm#:
৪) মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, ব্রিজিং দি ওশান- ইন্ডিয়া লিডস রিলিফ মেজারস ইন সুনামি-হিট এরিয়াস, ডিসেম্বর ২০০৪-জানুয়ারি ২০০৫, https://www.mea.gov.in/Uploads/PublicationDocs/185_bridging-the-ocean-tsunami.pdf
৫) সুনন্দ কে দত্ত-রায়, ‘ইন দ্য অ্যাশেস অব নন-অ্যালাইনমেন্ট, আ ইউএস-ইন্ডিয়া এমব্রেস’, নিউ ইয়র্ক টাইমস, মার্চ ৬, ১৯৯২, https://www.nytimes.com/1992/03/06/opinion/IHT-in-the-ashes-of-nonalignmenta-usindia-embrace.html
৬) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1925015
৭) ‘ইউএস-ইন্ডিয়া ইকোনমিক ডায়লগ- ইউএস-ইন্ডিয়া হাই টেকনোলজি কোঅপারেশন গ্রুপ’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আর্কাইভ, https://2001-2009.state.gov/p/sca/rls/fs/2006/62495.htm#:~:text=The%20U.S.%2DIndia%20High%2DTechnology,technology%20issues%20of%20mutual%20interest
৮) ইউনাইটেড স্টেটস – ইন্ডিয়া জয়েন্ট স্টেটমেন্ট অন নেক্সট স্টেপস ইন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আর্কাইভ, https://2001-2009.state.gov/r/pa/prs/ps/2004/36290.htm
৯) ইউনাইটেড স্টেটস – ইন্ডিয়া জয়েন্ট স্টেটমেন্ট অন নেক্সট স্টেপস ইন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আর্কাইভ, https://2001-2009.state.gov/p/sca/rls/fs/2005/49721.htm
১০) ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দি ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা অ্যান্ড ইন্ডিয়া’, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, জানুয়ারি ১৭, ২০০২, https://www.state.gov/wp-content/uploads/2019/04/02-117-India-Defense-GSOIA-1.17.2002.pdf
১১) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://archive.pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=149322
১২) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=183300
১৩) ‘ইন্ডিয়া-ইউএস সাইন বিইসিএ এমপাওয়ারিং ইন্ডিয়া’জ মিলিটারি ভ্যালোর’, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি ডিভিশন, মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, অক্টোবর ২৬, ২০২০, https://indbiz.gov.in/india-us-sign-beca-empowering-indias-military-valour/; মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1797511
১৪) ‘নিউ ফ্রেমওয়ার্ক ফর দি ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স রিলেশনশিপ’, http://library.rumsfeld.com/doclib/sp/3211/2005-06-28%20New%20Framework%20for%20the%20US-India%20Defense%20Relationship.pdf
১৫) ‘ইউএস টু হেল্প মেক ইন্ডিয়া আ ‘মেজর ওয়ার্ল্ড পাওয়ার’,’ চায়না ডেইলি, মার্চ ২৬, ২০০৫, https://www.chinadaily.com.cn/english/doc/2005-03/26/content_428361.htm; ‘ইউএস আনভেইলস প্ল্যানস টু হেল্প ইন্ডিয়া বিকাম আ ‘মেজর ওয়ার্ল্ড পাওয়ার’,’ উইকি নিউজ, মার্চ ২৬, ২০০৫, https://en.wikinews.org/wiki/U.S._unveils_plans_to_help_India_become_a_%22major_world_power%22
১৬) ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট বাই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টার মনমোহন সিং’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট আর্কাইভ, https://2001-2009.state.gov/p/sca/rls/pr/2005/49763.htm
১৭) এম্ব্যাসি অফ ইন্ডিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএসএস, https://www.indianembassyusa.gov.in/ArchivesDetails?id=1608
১৮) সুহাসিনী হায়দার, ‘ট্রেসিং দি আর্ক অফ আমেরিকার ‘এক্সসেপশান-ইজম’ ফর ইন্ডিয়া’, দ্য হিন্দু, জুন ২৮, ২০২৩, https://www.thehindu.com/opinion/lead/tracing-the-arc-of-american-exception-ism-for-india/article67016550.ece#:~:text=The%20Obama%20visit%20to%20Delhi,in%20Arms%20Regulations%20(ITAR)
১৯) ‘ইন্ডিয়া-ইউএস ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই)- ইনিশিয়াল গাইডেন্স ফর ইন্ডাস্ট্রি’, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, অফিস অব প্রিপাবলিকেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি রিভিউ, জুলাই ১৪, ২০২০, https://www.acq.osd.mil/ic/docs/dtti/DTTI-Initial-Guidance-for-Industry-July2020.pdf
২০) অফিস অব প্রেস সেক্রেটারি, দ্য হোয়াইট হাউস, https://obamawhitehouse.archives.gov/the-press-office/2013/09/27/us-india-joint-declaration-defense-cooperation; ‘ইনগরাল ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডায়লগ’, https://in.usembassy.gov/our-relationship/policy-history/inaugural-u-s-india-strategic-and-commercial-dialogue/
২১) অফিস অব প্রেস সেক্রেটারি, দ্য হোয়াইট হাউস, https://obamawhitehouse.archives.gov/the-press-office/2015/01/25/us-india-joint-strategic-vision-asia-pacific-and-indian-ocean-region
২২) ‘ফ্যাক্ট শিট- ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স রিলেশনশিপ’, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, https://dod.defense.gov/Portals/1/Documents/pubs/US-IND-Fact-Sheet.pdf
২৩) ‘ইউএস- ইন্ডিয়া ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (ডিটিটিআই)’, ডিরেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন, https://www.acq.osd.mil/ic/dtti.html#:~:text=On%20June%207%2C%202016%2C%20President,subsequently%20been%20codified%20in%20law
২৪) ‘ব্রিফ অফ ইন্ডিয়া-ইউএস রিলেশনস’, এম্ব্যাসি অফ ইন্ডিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএসএ, https://www.indianembassyusa.gov.in/pages/MzM
২৫) ‘ইউএস এলিভেটস ইন্ডিয়া টু স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড অথরাইজেশন টিয়ার ১ স্টেটাস, ইজিং ফিউচার ডুয়েল-ইউজ এক্সপোর্টস’, হিউ হুবার্ড অ্যান্ড রিড, অগস্ট ২, ২০১৮, https://www.hugheshubbard.com/news/u-s-elevates-india-to-strategic-trade-authorization-tier-1-status-easing-future-dual-use-exports
২৬) ‘অ্যাবাউ্ট আইডেক্স’, আইডেক্স, https://idex.gov.in/about-idex
২৭) তৃষা কাস্তেলিনো, ‘ইউএস এলিভেটস ইন্ডিয়া’স ডিফেন্স ট্রেড স্টেটাস’, আর্মস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন, https://www.armscontrol.org/act/2018-09/news-briefs/us-elevates-indias-defense-trade-status
২৮) মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, https://mea.gov.in/bilateral- documents.htm?dtl/32227/Joint+Statement+on+the+Second+IndiaUS+2432+Ministerial+Dialogue; মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1759911
২৯) ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট অন দ্য থার্ড ইউএস-ইন্ডিয়া ২+২ মিনিস্টেরিয়াল ডায়লগ’, ইউএস এম্ব্যাসি অ্যান্ড কনস্যুলেটস ইন ইন্ডিয়া, অক্টোবর ২৭, ২০২০, https://in.usembassy.gov/joint-statement-on-the-third-u-s-india-22-ministerial-dialogue/; মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=1667841
৩০) ইউএস প্যাসিফিক কম্যান্ড, ‘ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ড হোল্ডস চেঞ্জ অব কম্যান্ড সেরেমনি’, মে ৩০, ২০১৮, https://www.pacom.mil/Media/News/News-Article-View/Article/1535776/us-indo-pacific-command-holds-change-of-command-ceremony/
৩১) ‘ইউএস স্ট্র্যাটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর দি ইন্দো-প্যাসিফিক’, দ্য হোয়াইট হাউস, https://trumpwhitehouse.archives.gov/wp-content/uploads/2021/01/IPS-Final-Declass.pdf
৩২) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1759911
৩৩) ‘জয়েন্ট লিডারস স্টেটমেন্ট অন অউকাস’, প্রাইম মিনিস্টার অফ অস্ট্রেলিয়া, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, https://web.archive.org/web/20210927191438/https://www.pm.gov.au/media/joint-leaders-statement-aukus
৩৪) ‘কোয়াড জয়েন্ট লিডারস স্টেটমেন্ট’, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মে ২৪, ২০২২, https://mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/35357/Quad+Joint+Leaders+Statement
৩৫) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1815838; https://www.mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/35184/Joint+Statement+on+the+Fourth+IndiaUS+22+Ministerial+Dialogue
৩৬) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1855014
[37] Ministry of Defence, Government of India, https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1876038
৩৮) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1919361#:~:text=The%20sixth%20edition%20of%20Cope,culminated%20on%2024%20Apr%202023
৩৯) ইউএস কনস্যুলেট হায়দরাবাদ, ‘ইউএস ইন্ডিয়া লঞ্চ ফার্স্ট টাইগার ট্রায়াম্ফ এক্সারসাইজ’, ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ড, নভেম্বর ১৫, ২০১৯, https://www.pacom.mil/Media/News/News-Article-View/Article/2018116/us-india-launch-first-tiger-triumph-exercise/
৪০) ‘টাইগার ট্রায়াম্ফ ২০২২’, ইন্ডিয়ান নেভি, https://indiannavy.nic.in/content/tiger-triumph-2022
৪১) ‘মালাবার ২০২২ প্রেস ব্রিফ’, ইন্ডিয়ান নেভি, https://indiannavy.nic.in/content/malabar-2022-press-brief; কম্যান্ডার, টাস্ক ফোর্স ৭০ / ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ৫, ‘জাপান হোস্টস অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, ইউএস ইন নেভাল এক্সারসাইজ মালাবার ২০২২’, ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কম্যান্ড, নভেম্বর ১৫, ২০২২, https://www.pacom.mil/Media/News/News-Article-View/Article/3219459/japan-hosts-australia-india-us-in-naval-exercise-malabar-2022/
৪২) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1947436
৪৩) ‘ইন্ডিয়ান নেভি’স আইএনএস সাতপুরা অ্যান্ড পি৮আই পার্টিসিপেট ইন দি রিমপ্যাক হারবার ফেজ’, ইন্ডিয়ান নেভি,https://indiannavy.nic.in/content/indian-navys-ins-satpura-and-p8i-participate-rimpac-harbour-phase
৪৪) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1800604; কম্যান্ডার, টাস্ক ফোর্স ৭১ / ডেস্ট্রয়ার স্কোয়াড্রন ১৫, ‘ইউএস ফোর্সেস পার্টিসিপেট ইন ইন্ডিয়ান নেভি-লেড এক্সারসাইজ মিলন ফর ফার্স্ট টাইম’, আমেরিকা’স নেভি, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২, https://www.navy.mil/Press-Office/News-Stories/Article/2946520/us-forces-participate-in-indian-navy-led-exercise-milan-for-first-time/
৪৫) ‘ইন্ডিয়ান নেভি’স বিগেস্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ ‘মিলন’ বিগিনস ইন বিশাখাপত্তনম’, অল ইন্ডিয়া রেডিও নিউজ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, https://newsonair.gov.in/Main-News-Details.aspx?id=477473
৪৬) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1905563; ইউএস নেভাল ফোর্সেস সেন্ট্রাল কম্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম এক্সারসাইজ ২০২৩ কিকস অফ অপারেশনাল ফেজ’, আমেরিকা’স নেভি, মার্চ ২, ২০২৩, https://www.navy.mil/Press-Office/News-Stories/Article/3315989/international-maritime-exercise-2023-kicks-off-operational-phase/
৪৭) ‘এক্সারসাইজ লা পেরুজ – ২০২৩’, ইন্ডিয়ান নেভি, https://indiannavy.nic.in/content/exercise-la-perouse-%E2%80%93-2023-1; ‘লা পেরুজ এক্সারসাইজ’, ফ্রেঞ্চ এম্ব্যাসি ইন নিউ দিল্লি, https://in.ambafrance.org/La-Perouse-exercise
৪৮) ‘কানাডা, ইন্ডিয়া, জাপান, কোরিয়া, অ্যান্ড দি ইউএস কমপ্লিট মাল্টিল্যাটেরাল গুয়াম-বেসড এক্সারসাইজ সি ড্রাগন ২০২৩’, আমেরিকা’স নেভি, এপ্রিল ৬, ২০২৩, https://www.navy.mil/Press-Office/News-Stories/Article/3354063/canada-india-japan-korea-and-the-us-complete-multilateral-guam-based-exercise-s/
৪৯) ‘এক্সারসাইজ পিচ ব্ল্যাক’, রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্স, https://www.airforce.gov.au/news-and-events/events/exercise-pitch-black
৫০) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=145357
৫১) অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০০৭-২০০৮, মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://mod.gov.in/dod/sites/default/files/AR-eng-2008.pdf
৫২) ‘ইন্ডিয়া – সি ১৩০জে এয়ারক্রাফট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, অক্টোবর ২৭, ২০১১, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-c-130j-aircraft
৫৩) ‘ইন্ডিয়া – হারপুন ব্লক ৩ মিসাইলস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, সেপ্টেম্বর ৯, ২০০৮, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-harpoon-block-ii-missiles
৫৪) ‘ইন্ডিয়া – ইউজিএম – ৮৪ এল হারপুন মিসাইলস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, জুলাই ১, ২০১৪, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-ugm-84l-harpoon-missiles
৫৫) ‘ইন্ডিয়া – এজিএম - ৮৪ এল হারপুন এয়ার লঞ্চড ব্লক ২ মিসাইলস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, এপ্রিল ১৩, ২০২০,https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-agm-84l-harpoon-air-launched-block-ii-missiles
৫৬) দ্য বোয়িং কম্পানি ২০০৯ অ্যানুয়াল রিপোর্ট, বোয়িং, ২০০৯, https://s2.q4cdn.com/661678649/files/doc_financials/annual/2009/2009-annual_report.pdf
৫৭) ‘ইন্ডিয়া – পি – ৮১ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট সাপোর্ট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, এপ্রিল ৩০, ২০২১, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-p-8i-and-associated-support
৫৮) ‘ইন্ডিয়া – এমকে ৫৪ লাইটওয়েট টর্পেডোস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, এপ্রিল ১৩, ২০২০, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-mk-54-lightweight-torpedoes-0
৫৯) ‘ইন্ডিয়া – সি – ১৭ গ্লোবমাস্টার ৩ এয়ারক্রাফট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, এপ্রিল ২৬, ২০১০, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-c-17-globemaster-iii-aircraft
৬০) ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া – সি -১৭ ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, জুন ২৬, ২০১৭, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/government-india-c-17-transport-aircraft
৬১) ‘ইন্ডিয়া – সাপোর্ট ফর ডিরেক্ট কমার্শিয়াল সেল অফ এএইচ – ৬৪ ডি ব্লক ৩ অ্যাপাশে হেলিকপ্টারস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, ডিসেম্বর ২৭, ২০১০,
https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-support-direct-commercial-sale-ah-64d-block-iii-apache
৬২) ‘ইন্ডিয়া – এম ৭৭ ১৫৫ এমএম লাইটওয়েট টোড হাউৎসজারস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, অগস্ট ৭, ২০১৩, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-m777-155mm-light-weight-towed-howitzers-0
৬৩) ‘ইন্ডিয়া – এমএইচ – ৬০আর মাল্টি-মিশন হেলিকপ্টারস’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, এপ্রিল ২, ২০১৯, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-mh-60r-multi-mission-helicopters
৬৪) ‘ইন্ডিয়া – ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স উইপন সিস্টেম (আইএডিডব্লিউএস) অ্যান্ড রিলেটেড ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-integrated-air-defense-weapon-system-iadws-and-related-equipment
৬৫) রজত পণ্ডিত, ‘অ্যামিড এলএসি টেনশন, ইন্ডিয়া ইউজিং নেভাল অ্যাসেটস ফর ল্যান্ড বর্ডার সার্ভিলিয়েন্স’, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, https://timesofindia.indiatimes.com/india/amid-lac-tension-india-using-naval-assets-for-land-border-surveillance/articleshow/96326329.cms
৬৬) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1751648
৬৭) দ্য হোয়াইট হাউস, https://www.whitehouse.gov/briefing-room/statements-releases/2023/01/31/fact-sheet-united-states-and-india-elevate-strategic-partnership-with-the-initiative-on-critical-and-emerging-technology-icet/
৬৮) ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স,
https://www.defense.gov/News/Releases/Release/Article/3408336/readout-of-the-inaugural-us-india-advanced-domains-defense-dialogue
৬৯) ‘রোডম্যাপ ফর ইউএস-ইন্ডিয়া ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোঅপারেশন’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, জুন ৫, ২০২৩, https://media.defense.gov/2023/Jun/21/2003244834/-1/-1/0/ROADMAP-FOR-US-INDIA-DEFENSE-INDUSTRIAL-COOPERATION-FINAL.PDF
৭০) ‘লঞ্চ অফ ইন্ডিয়া-ইউএস স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড ডায়লগ’, এম্ব্যাসি অফ ইন্ডিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ইউএসএস, https://www.indianembassyusa.gov.in/News?id=249871
৭১) মঞ্জরী চ্যাটার্জি মিলার, ‘হোয়াট ডিড প্রাইম মিনিস্টার মোদী’স স্টেট ভিজিট অ্যাচিভ?’ কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস, জুন ২৬, ২০২৩, https://www.cfr.org/blog/what-did-prime-minister-modis-state-visit-achieve
৭২) ‘ফ্যাক্ট শিট – ইন্ডিয়া – ইউএস ডিফেন্স অ্যাকসিলারেশন ইকোসিস্টেম (ইন্ডাস এক্স)’, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, জুন ২১, ২০২৩, https://media.defense.gov/2023/Jun/21/2003244837/-1/-1/0/FACTSHEET-INDUS-X-FINAL.PDF
৭৩) দিনকর পেরি, ‘ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডিং আপ টু আ বুলি ইন আ ভেরি ডিটারমাইন্ড ফ্যাশন – ডিফেন্স সেক্রেটারি অন চায়না’, দ্য হিন্দু, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, https://www.thehindu.com/news/national/india-standing-up-to-a-bully-in-a-very-determined-fashion-defence-secretary-on-china/article67871499.ece; ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, https://www.defense.gov/News/Releases/Release/Article/3682879/fact-sheet-india-us-defense-acceleration-ecosystem-indus-x/
৭৪) জেনারেল ইলেকট্রিক, https://www.ge.com/news/press-releases/ge-aerospace-signs-mou-with-hindustan-aeronautics-limited-to-produce-fighter-jet-0
৭৫) দ্য হোয়াইট হাউস, https://www.whitehouse.gov/briefing-room/statements-releases/2023/06/22/fact-sheet-republic-of-india-official-state-visit-to-the-united-states/
৭৬) পিটিআই, ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ। এল অ্যান্ড টি সাইনস শিপ রিপেয়ার এগ্রিমেন্ট উইথ ইউএস নেভি’, দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন, জুলাই ১২, ২০২৩, https://www.thehindubusinessline.com/companies/lt-signs-master-ship-repair-agreement-with-us-navy/article67070313.ece
৭৭) ‘মাজাগাঁও ডক সাইনস মাস্টার শিপ রিপেয়ার এগ্রিমেন্ট উইথ ইউএস গভর্নমেন্ট; শেয়ারস হিট ৫২ উইক হাই’, মানিকন্ট্রোল, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, https://www.moneycontrol.com/news/business/markets/mazagon-dock-signs-master-ship-repair-agreement-with-us-govt-shares-hit-52-week-high-11330471.html
৭৮) ‘জয়েন্ট স্টেটমেন্ট – ফিফথ অ্যানুয়াল ইন্ডিয়া – ইউএস ২+২ মিনিস্টেরিয়াল ডায়লগ’, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, নভেম্বর ১০, ২০২৩, https://www.mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/37252/Joint_Statement_Fifth_Annual_IndiaUS_22_Ministerial_Dialogue
৭৯) ‘ইন্ডিয়া – এমকিউ - ৯ বি রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট’, ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, https://www.dsca.mil/press-media/major-arms-sales/india-mq-9b-remotely-piloted-aircraft
৮০) পিটার মার্টিন অ্যান্ড জেনি লেওনার্দ, ‘ইউএস উইভস ওয়েবস অফ ইন্টেলিজেন্স পার্টনারশিপস অ্যাক্রস এশিয়া টু কাউন্টার চায়না’, টাইম, অক্টোবর ৫, ২০২৩,https://time.com/6320722/us-asia-intelligence-partnerships-china/
৮১) রজত পণ্ডিত, ‘ফোর্সেস স্ট্যান্ডিং আপ টু ‘বুলি’ – ডিফেন্স সেক্রেটারি গিরিধর আরামানে অন চায়না’, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪,https://timesofindia.indiatimes.com/india/forces-standing-up-to-bully-china-defence-secretary/articleshow/107893452.cms; পেরি, ‘ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডিং আপ টু আ বুলি ইন আ ভেরি ডিটারমাইন্ড ফ্যাশন’
৮২) রিচার্ড ভার্মা এবং সমীর সারন, ‘স্ট্র্যাটেজিক কনভার্জেন্স – দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড ইন্ডিয়া অ্যাজ মেজর ডিফেন্স পার্টনারস’, দি এশিয়া গ্রুপ এবং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, জুন ২০১৯, https://www.orfonline.org/research/strategic-convergence-the-united-states-and-india-as-major-defence-partners-52364/
৮৩) ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, https://www.state.gov/major-non-nato-ally-status/
৮৪) দিনকর পেরি, ‘ইন্ডিয়া, ইউএস কোঅপারেশন অন জেট ইঞ্জিনস ‘সাসপেন্ডেড’,’ দ্য হিন্দু, অক্টোবর ২৫, ২০১৯, https://www.thehindu.com/news/national/india-us-cooperation-on-jet-engines-suspended/article29787788.ece
৮৫) মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1904172
৮৬) পিটিআই, ‘জিই এরোস্পেস – হ্যাল ডিল টু এনটেইল ৮০% ট্রান্সফার অব টেকনোলজি টু ইন্ডিয়া – অফিশিয়াল’, দ্য প্রিন্ট, জুন ২৪, ২০২৩,
https://theprint.in/india/ge-aerospace-hal-deal-to-entail-80-transfer-of-technology-to-india-official/1640170/
৮৭) পিটিআই, ‘সেনেটর কার্ডিন সেজ হি ব্যাকড ড্রোন ডিল উইথ ইন্ডিয়া আফটার ‘পেনস্টেকিং ডিসকাশনস’ উইথ বাইডেন অ্যাডমিন’, দি ইকোনমিক টাইমস, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, https://economictimes.indiatimes.com/news/defence/senator-cardin-says-he-backed-drone-deal-with-india-after-painstaking-discussions-with-biden-admin/articleshow/107377490.cms?
৮৮) টিম ও’কালাঘান এবং ট্রাভিস শোয়্যার্ড, ‘আইটিএআর ০১ – ফান্ডামেন্টালস অ্যান্ড প্র্যাকটিস’, পাইপারঅল্ডারম্যান, জুন ২১, ২০২২, https://piperalderman.com.au/insight/itar-101-fundamentals-and-practice/
৮৯) ‘রেগুলেশনস’, ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি, https://www.bis.doc.gov/index.php/regulations/export-administration-regulations-ear
৯০) বিশ্বজিৎ ধর, ‘মোদী’জ ইউএস টেকনোলজি ট্রান্সফার ডিলস মে স্টাম্বল অন এক্সপোর্ট কন্ট্রোলস’, দি ওয়্যার, জুলাই ৮, ২০২৩, https://thewire.in/security/modi-tech-transfer-deals-may-stumble-on-export-controls
৯১) ‘অ্যাহেড অব পিএম মোদী’জ ভিজিট, ইউএস প্যানেল সাজেস্টস ন্যাটো প্লাস স্টেটাস ফর ইন্ডিয়া’, ডিডি নিউজ, অগস্ট ৭, ২০২৩,
https://ddnews.gov.in/international/ahead-pm-modis-visit-us-panel-suggests-nato-plus-status-india
৯২) ‘ইন্ডিয়া কেপেবল অব কাউন্টারিং চাইনিজ অ্যাগ্রেশন’, রিফিউজেস টু জয়েন ন্যাটো, সেজ এস জয়শঙ্কর’, লাইভমিন্ট, জুন ৯, ২০২৩, https://www.livemint.com/news/india-capable-of-countering-chinese-aggression-refuses-to-join-nato-says-s-jaishankar-11686288765836.html
৯৩) ‘সাবপার্ট আই-ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেস’, https://www.govinfo.gov/content/pkg/USCODE-2021-title10/pdf/USCODE-2021-title10-subtitleA-partV-subpartI-chap381-sec4801.pdf
৯৪) ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, https://www.state.gov/united-states-india-relations/#:~:text=The%20relationship%20between%20the%20United,and%20prosperous%20Indo%2DPacific%20region
৯৫) দ্য হোয়াইট হাউস, https://www.whitehouse.gov/briefing-room/speeches-remarks/2023/04/27/remarks-by-national-security-advisor-jake-sullivan-on-renewing-american-economic-leadership-at-the-brookings-institution/
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.