Published on Oct 27, 2025 Updated 0 Hours ago

ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ব্যয় ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার পরিসরকে তীব্রতর করার জন্য প্রস্তুত।

একটি অনিশ্চিত বিশ্ব ব্যবস্থা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতারণামূলক কূটনীতি - যেখানে কৌশলগত অস্পষ্টতা' একটি নীতিগত পছন্দ - নিয়ে যাঁরা বিরক্ত, তাঁদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) সম্পর্কে ট্রাম্পে একেবারে উলটো মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। সম্প্রতি হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সময় সম্ভবত সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ছিল ট্রাম্পের এই রূপান্তরিত দৃষ্টিভঙ্গি যে, ন্যাটো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রাসঙ্গিক থাকবে। ন্যাটো দেশগুলির কাছ থেকে একটি জোরালো ইঙ্গিত অর্থাৎ ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরা তাদের জিডিপির প্রায় ৫% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার বিষয়ে প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছে - ট্রাম্পের হৃদয় গলাতে বাধ্য করেছে। সদস্য দেশগুলি যে বিষয়টিকে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেছে তা হল, ট্রাম্প ন্যাটোকে আর প্রতারবলে উল্লেখ করেননি এবং ন্যাটোর প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই ঘটনাপ্রবাহ ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়ন প্রদান করে, বিশেষ করে ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের শুরু থেকে ধারাবাহিক বিস্তৃতির তীব্র পটভূমির বিপরীতে, যা এই বছরের শুরুতে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বক্তৃতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ওভাল অফিসের এই মনোভাব ট্রাম্পের বাকি মেয়াদেও টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে অনুমান চলতেই পারে কিন্তু আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে হেগ শীর্ষ সম্মেলনের নতুন প্রতিশ্রুতি ঐতিহাসিক এবং একটি নেতৃস্থানীয় যৌথ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে ন্যাটোর বিবর্তনে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।

ন্যাটো দেশগুলির কাছ থেকে একটি জোরালো ইঙ্গিত অর্থাৎ ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরা তাদের জিডিপির প্রায় ৫% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার বিষয়ে প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছেছে - ট্রাম্পের হৃদয় গলাতে বাধ্য করেছে।

এই বছরের হেগ প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতিতে ২০৩৫ সালের মধ্যে ন্যাটো সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫%-এ উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩.৫% মূল প্রতিরক্ষা চাহিদার জন্য এবং বাকি অংশ অবকাঠামো, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদির মতো নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত দিকগুলিতে বরাদ্দ করা হবে। ন্যাটো আশা করে যে, এই বছরের শেষ নাগাদ সমস্ত মিত্র প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপি ব্যয়ের কমপক্ষে ২% পূরণ করবে বা অতিক্রম করবে। এই প্রতিশ্রুতিগুলি তিনটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত ভাবে বিতরণ করা হয়েছে - প্রতিরোধ প্রতিরক্ষা, সঙ্কট প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা এবং সহযোগিতামূলক নিরাপত্তা।

হেগ শীর্ষ সম্মেলন থেকে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা উঠে এসেছে যে, কী ভাবে ইউরোপের যৌথ প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করার ইচ্ছা বিশ্বব্যাপী ব্যয়ের প্রবণতার সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। রাজনৈতিক সঙ্কেত এবং ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের উপর প্রভাবের পাশাপাশি এই বছরের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন একটি বৃহত্তর প্রবণতার প্রতিফলন ঘটায় এবং তা হল বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধি। ১৯৭০-১৯৯০ সালের শীতল যুদ্ধের সময়ের তুলনায় ২০১০-২০১৯ সালের মধ্যে জিডিপির শতাংশ হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা ব্যয় ৩.৬% থেকে অর্ধেক হয়ে ১.৯% হয়েছে। তবে এই প্রবণতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় ২৭০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা ব্যয় - যা ৮%-এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্ধিত ইউরোপীয় প্রতিশ্রুতি দ্বারা সমর্থিত ছিল - আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান যুদ্ধের ফলে এই প্রবণতার বেশিরভাগই মন্থন ইন্ধন জোগালেও পূর্ববর্তী দেশটির রিআর্ম ইউরোপ বা রেডিনেস ২০৩০ পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা প্যাকেজের লক্ষ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শান্তি লাভের যুগেরসমাপ্তিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

রাজনৈতিক সঙ্কেত এবং ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের উপর প্রভাবের পাশাপাশি এই বছরের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন একটি বৃহত্তর প্রবণতার প্রতিফলন ঘটায় এবং তা হল বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধি।

ট্রাম্পের এখনকার বক্তব্য অর্থাৎ শীর্ষ সম্মেলনটি একটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক মাইলফলকএবং হেগ প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি স্মরণীয় জয়... এবং ইউরোপের জন্য একটি বড় জয় এই বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে যে, ইউরোপ সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়গুলির মধ্যে একটি অর্থাৎ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমস্যাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। এ ভাবে এ বছর হেগ শীর্ষ সম্মেলন বিভিন্ন উপায়ে ন্যাটোতে নতুন ইউরোপীয় ছাপ চিহ্নিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। যৌথ প্রতিরক্ষা বৃদ্ধির জন্য মিত্রদের তাদের আর্থিক প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি ট্রান্সআটলান্টিক রাজনৈতিক-নিরাপত্তা ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে ইউরোপের নবজাগরণের মুহূর্ত হতে পারে। এ ছাড়াও ন্যাটো সদস্যদের আরও বেশি ব্যয় করার ক্ষমতা এই ধরনের ব্যয়ের গতিপথ নির্ধারণে আরও বেশি সুবিধা প্রদানের অর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন হত, যদি ন্যাটো সদস্যরা তাদের জিডিপির ৫% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করত। ইউরোপের জন্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আর কটি প্রশ্ন হল আর্থিক স্থায়িত্ব ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণভাবে উচ্চ স্তরের সরকারি ঋণ বজায় রাখা পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা।

ট্রাম্পের ইতিবাচক মূল্যায়ন এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও ইউরোপের দুর্দশার অন্ত হয়নি। হেগের প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি ৫% লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘ সময় নেয়, যেখানে স্পেন এবং ইতালির মতো কিছু দেশ কিছুটা সন্দেহ পোষণ করছেএই উদ্বেগের উপর নির্ভর করে ট্রাম্পের অসঙ্গতি অনির্দেশ্যতা - যা ওয়াশিংটনের ইউরোপ সম্পর্কিত অন্য প্রতিবন্ধকতাগুলিকে দূর করতে পারে - এর সম্মিলিত নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি তার অভাব ঘটলে সম্পর্কগুলিকে ফের টানাপড়েনের দোরগোড়ায় ঠেলে দিতে পারে।

হেগ শীর্ষ সম্মেলন ন্যাটো সম্মিলিত নিরাপত্তার বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে ত্বরান্বিত করেছে। সর্বোপরি ট্রাম্পের ক্রোধকে ইউরোপের জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক উন্নয়ন হিসাবে দেখা হয় না, বরং ব্রাসেলসের প্রয়োজনীয় একটি ধাক্কা হিসাবে মনে করা হয়। তবে বর্ধিত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দরুন বিশ্বের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে একত্রিত করে ইউরোপ একটি শান্তিপূর্ণ মহাদেশ হিসাবে তার ভাবমূর্তি পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে পারে অর্থাৎ একটি প্রাণবন্ত অর্থনৈতিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে এমন একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারে, যা অন্য কোনও মহাদেশের মতো নয়

পরবর্তী দশকে ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা সুসংহত করার প্রচেষ্টা বিপরীত অক্ষ বরাবর প্রতিধ্বনিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে চি, রাশিয়া, ইরান উত্তর কোরিয়া পশ্চিমিদের মোকাবিলা করার জন্য কৌশল সমন্বয় করবে।

বৈশ্বিক স্তরে এই পরিবর্তনগুলি ন্যাটোর পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার উদীয়মান অভিপ্রায়ের সঙ্গে সমাপতিত হয়, যদিও সরাসরি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নয়। ট্রাম্প ন্যাটোর বাজেট পুনর্বিন্যাসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন তবে জোটের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস ন্যাটোর ভাবমূর্তিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পুনর্গঠন করতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। পরবর্তী দশকে ট্রান্সআটলান্টিক নিরাপত্তা সুসংহত করার প্রচেষ্টা বিপরীত অক্ষ বরাবর প্রতিধ্বনিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে চি, রাশিয়া, ইরান উত্তর কোরিয়া পশ্চিমিদের মোকাবিলা করার জন্য কৌশল সমন্বয় করবে। ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা ব্যয় আগামী বছরগুলিতে বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে তীব্রতর করার জন্য প্রস্তুত - যার মধ্যে প্রধান হল বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিতে দ্রুত উদ্ভাবন এবং বিশ্ব ব্যবস্থার গভীরতর ভাঙন।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস-এ।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...

Read More +