-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ভূমিকা পালন করবে না। তাই আগামীতে কী হতে চলেছে, তা নির্ভর করবে অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়ার উপর।
ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র দু’মাসের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ডিসরাপশন’ বা ‘ব্যাঘাত’ শব্দটির একটি নতুন অর্থ দিয়েছেন। দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগে নানাবিধ আলোচনার কক্ষ ও সম্মেলনে এই শব্দটিকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাল্পনিক ভাবে তুলে ধরা হত। কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রাথমিক আট সপ্তাহই বিশ্বক্রমের বাস্তবতাকে ব্যাহত করেছে। এক প্রসঙ্গ থেকে আর এক প্রসঙ্গ এবং এক ভৌগোলিক পরিসর থেকে অন্য ভৌগোলিক পরিসরের বিষয়ে ট্রাম্পের দৈনন্দিন ঘোষণায় কোনও কৌশলগত সমন্বয় না-ও থাকতে পারে। কিন্তু এটি অন্যান্য দেশের জন্য বৈশ্বিক বাস্তবতা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নতুন বাধাগুলিকে রুখে দেয় না।
এখন ট্রাম্প ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর কেন্দ্রস্থলে একটি ক্ষত মোকাবিলা করার জন্য তাঁর খ্যাতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর একটি পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সৌদি আরবে যুদ্ধবিরতি আলোচনাও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। উভয় পক্ষই ‘নিরাপদ নৌচলাচল সুনিশ্চিত করতে, বলপ্রয়োগ বন্ধ করতে এবং কৃষ্ণ সাগরে সামরিক উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক জাহাজের ব্যবহার রোধ করতে’ সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের জ্বালানি সুবিধার বিরুদ্ধে হামলা নিষিদ্ধ করার চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা তৈরি করতে’ও সম্মত হয়েছে। এটি ট্রাম্পের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। কারণ যুদ্ধ শুরু করা সহজ। কিন্তু তা শেষ করা অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন। গত তিন বছর ধরে ওয়াশিংটনের বার্তাটি উত্তেজনা বৃদ্ধির পক্ষেই ছিল। এখন ট্রাম্প ইউরোপের নিরাপত্তা কাঠামোর কেন্দ্রস্থলে একটি ক্ষত মোকাবিলা করার জন্য তাঁর খ্যাতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে। মূলত ইউক্রেন ও ইউরোপকে হতবাক করে ট্রাম্প প্রশাসন পূর্ববর্তী জো বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা প্রণীত যুদ্ধের প্রতি তাঁর উন্মুক্ত প্রতিশ্রুতি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অনেক বেশি শক্তিশালী রুশ সামরিক শিল্পশক্তির বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বিজয়ের শেষ খেলার অঙ্কটি ছিল এমন একটি কষ্টকল্পনা, যা ট্রাম্পের পূর্বসূরি কোনও ভাবেই সেই ফলাফল অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিশাল সম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত না করেই এগিয়ে চলেছিলেন।
ইউক্রেন সমস্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তার বেশির ভাগ ভূখণ্ড ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং রাশিয়াকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের দাবি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্যই কখনওই একটি বাস্তব সম্ভাবনা ছিল না। এটি স্বীকার না করে এবং ইউরোপকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে বাধ্য না করে, বাইডেন যুদ্ধের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে অসম্ভব করে তুলেছিলেন। এবং অবশেষে ট্রাম্পকেই এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার জটিলতা পুনর্গঠন করতে হচ্ছে।
রাশিয়া তার যুদ্ধক্ষেত্রের সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখনও যুদ্ধবিরতির দাবির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং রাশিয়া এই বিষয়টিকে রাশিয়ান ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা, ব্যবসায়ী বন্দর, বন্দর এবং জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সঙ্গে যুক্ত করছে, যার ফলে রাশিয়া আরও কৃষি পণ্য এবং সার রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু স্পষ্টতই দুই মাস আগে পর্যন্ত যে কোনও পরিণতি বহন করে আনতে পারে এমন যুদ্ধ অবশেষে এক বিশেষ ধরনের পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এটি ট্রাম্পের দ্বারা ইউরোপে দ্বিতীয় বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হওয়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত। তিনি ইউরোপীয় নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ১৯৪৫-পরবর্তী ট্রান্স-আটলান্টিক অংশীদারিত্বের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ইউরোপ-মার্কিন সম্পর্কের সঙ্কট নিয়ে এত আলোচনার পরেও ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণও ইউরোপীয়দের জন্য তাদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা করার জন্য যথেষ্ট বড় ধাক্কা ছিল না। ইউরোপ ও তার ইউক্রেন নীতির প্রতি ট্রাম্পের প্রকাশ্য অবজ্ঞাটি এ বার কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। প্রথম বারের মতো ইউরোপীয় নেতারা তাঁদের প্রতিরক্ষা নীতি পুনর্নির্ধারণ করছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপীয় পরিসরের সঙ্গে যুক্ত না করেই নিজেদের হুমকির ধারণা মোকাবিলা করার জন্য নিজস্ব দায়িত্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করছেন বলে মনে হচ্ছে। জার্মানি সার বক্তব্যটি তুলে ধরেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর জার্মানির বর্তমান বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ একটি ‘জিটেনওয়েন্ডে’ - বা ‘টার্নিং পয়েন্ট’ অর্থাৎ ‘বাঁকবদল বিন্দু’র কথা বলেছিলেন। সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ দেশটির সামরিক বাহিনীতে বৃহত্তর বিনিয়োগের জন্য জোর দিচ্ছেন এবং মনে করা হচ্ছে, জার্মানি আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ৬৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে পারে। এটি ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা পরিসরের উপর একটি রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলবে এবং ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্য কৌশলগত ভাবে পুনরুজ্জীবিত জার্মানির দীর্ঘমেয়াদি পরিণতিগুলি পর্যবেক্ষণ করার মতো বিষয় হবে।
মার্কিন শক্তির অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্ষয়িষ্ণু এবং যদি না ওয়াশিংটন তার দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করে, তা হলে বিশ্বক্রমে তার বিশিষ্ট অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে এ কথা না বললেও তাঁর কিছু উপদেষ্টা বলছেন যে, আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯০-এর দশকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়। ঠান্ডা লড়াইয়ের শেষের দিকে হওয়া একমেরুকরণের মুহূর্ত এখন অতীত এবং আমেরিকা একই সঙ্গে একাধিক প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হতে পারবে না। মার্কিন শক্তির অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্ষয়িষ্ণু এবং যদি না ওয়াশিংটন তার দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করে, তা হলে বিশ্বক্রমে তার বিশিষ্ট অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না।
ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণকারী আন্ডার সেক্রেটারি অফ ডিফেন্সের মনোনীত প্রার্থী এবং পেন্টাগনের প্রধান কৌশলবিদ এলব্রিজ কোলবি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, চিন ‘সম্ভবত ১৫০ বছরে [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের] সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী’ হলেও, আমেরিকার বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও তার বর্তমান সামরিক সক্ষমতার মধ্যে একটি ব্যবধান দেখা দিয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ১০% পর্যন্ত বাড়ানো উচিত বলে যুক্তি দিয়ে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্যান্য মার্কিন অংশীদারকেও সতর্ক করছেন যে, এই অঞ্চলেও বৃহত্তর নিরাপত্তা ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়াই নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠবে।
ট্রাম্প এমন ভাবে বাজি রাখছেন, যার জন্য ভারত-সহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই অপ্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের নীতিগত পরিবর্তন উপেক্ষা করার বিলাসিতাও এই দেশগুলির কাছে নেই।
বর্তমানে আমরা হয়তো একটি নতুন বিশ্বক্রমের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। তবে এর সঠিক রূপরেখা নির্ভর করবে ট্রাম্পের বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অন্যান্য দেশ কী রকম প্রতিক্রিয়া দেয়, তার উপর।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +