Author : Sushant Sareen

Published on Oct 16, 2025 Updated 0 Hours ago

টিটিপি-র ক্রমবর্ধমান হামলার মাঝেই কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলা আফগানিস্তান-পাকিস্তান সংঘর্ষের একটি নতুন পর্ব সূচনা করার ঝুঁকি তৈরি করেছে

নয়া আফগান যুদ্ধ?

আফগানিস্তান থেকে আগত খবরে দাবি করা হয়েছে যে, অক্টোবর কাবুলের কয়েকটি স্থানে এবং পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পূর্ব আফগানিস্তানের কিছু অংশে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এখনও স্পষ্ট নয় যে, আক্রমণগুলি যুদ্ধবিমান না কি ড্রোন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। স্পষ্টতই একটি গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালানো হয় ফলে ড্রোন ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলগুলি দাবি করছে যে, আক্রমণে ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক খবর পাওয়া যায়নি যে, তারা কাবুলে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা চলছে। যদি সত্যিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত থাকে, তা হলে তা কি প্রযুক্তিগত স্তরে ছিল? না কি গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল? না কি এতে সক্রিয় পদক্ষেপ জড়িত ছিল? সব নিয়েই এখন জল্পনা-কল্পনা চলছে। টিটিপি- আমির নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তবে হামলার পরপরই মেহসুদের একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি আফগানিস্তানে নয়, বরং পাকিস্তানের উপজাতীয় জেলাগুলিতে রয়েছেন।

পাকিস্তান থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক খবর পাওয়া যায়নি যে, তারা কাবুলে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটির উপর পাকিস্তানের বিমান হামলা চালানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয় তবে অতীতের আক্রমণগুলি সাধারণত সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল, যেগুলি ছিল দুর্গম এবং প্রান্তিক অঞ্চলেএই প্রথম বারের মতো পাকিস্তান আফগানিস্তানের কেন্দ্রস্থলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ধরনের সাহসী হামলার প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হবে। পূর্ববর্তী হামলাগুলিকে তালিবানরা গুরুত্বহীন ভাবে বিবেচনা করেছিল এবং খুব বেশি জলঘোলা করেনি অন্তত এমন পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ে যায়নি, যেখানে আফগানিস্তান পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। তবে কাবুলে চালানো হামলাকে নেহাতই বিবেচনা না করা কঠিন হবে তালিবানের সরকারি মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এবং কাবুল পুলিশ প্রধানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া উঠে এলেও রাজধানীতে পাকিস্তানের আক্রমণের বিষয়ে তালিবানদের দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে হবে। এমনটা না করলে তালিবান শাসনের বৈধতা গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমির উল মোমিনি’-এর কর্তৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এমনকি চ্যালেঞ্জও করবে।

তালিবানরা পাকিস্তানের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম নয় কারণ তাদের কাছে বিমান বাহিনী এবং কার্যকর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে তবে তাদের পাল্টা আক্রমণ করার অন্যান্য উপায় রয়েছে। বিস্তৃত ভাবে দেখতে গেলে, তালিবানদের কাছে চারটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমটি হল কিছুই না করা। সামান্য বার্তা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই ধরনের সংযম তাদের বৈধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করবে কারণ এমনটা হলে মনে করা হবে যে, তালিবানরা পাকিস্তানকে ভয় পাচ্ছে অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে আপস করছে। এমনকি উপরের স্তরের নেতৃত্ব কোনও তীব্র পদক্ষেপ না নিতে চাইলেও বাস্তবের জমিতে লড়তে থাকা সৈন্যরা প্রতিশোধ নিতে চাইবে। দ্বিতীয় বিকল্পটি হল কণ্ঠস্বর উচ্চকিত না করেও আক্রমণ তীব্র করা। এর অর্থ হবে তালিবান ক্যাডারদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল যাতে তারা টিটিপির পদে যোগদান না করে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণে অংশগ্রহণ না করে। তৃতীয় বিকল্পটি হল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এবং প্রতিশোধের জন্য গেরিলা বাহিনীকে মুক্ত করা। অবশেষে পাকিস্তানি আক্রমণগুলি তালিবানদের উপর একটি শুভ প্রভাব ফেলবে এবং তাদেরকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে টিটিপি-র কার্যকলাপকে বহিষ্কার করতে বা দমন করতে বাধ্য করবে এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

টিটিপি এবং অন্যান্য গোষ্ঠী দাবি করে যে, তারা এখন পাকিস্তানের ভিতর থেকে কাজ করছে।

যে বিকল্পই বেছে নেওয়া হোক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত টিটিপি পাকিস্তানকে রক্তাক্ত করে চলেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্যার কোনও সমাধান নেই। টিটিপির আক্রমণ তীব্রতা, বর্বরতা এবং এমনকি ভৌগোলিক ভাবেও বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি পাকিস্তান-বিরোধী জিহাদি জোট ইত্তেহাদুল মুজাহিদিন পাকিস্তান দাবি করেছে যে, তারা পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরেও আক্রমণ চালিয়েছে এর অর্থ হল তাদের নির্মূল করা সহজ হবে না। টিটিপি এবং অন্যান্য গোষ্ঠী দাবি করে যে, তারা এখন পাকিস্তানের ভিতর থেকে কাজ করছে। আফগানিস্তানের তালিবান কর্তৃপক্ষও জোর দিয়ে বলে যে, এটি পাকিস্তানের সমস্যা এবং আফগানিস্তানকে স্রেফ বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে যে, কেবল ইসলামপন্থী জিহাদিরা নয়, বালুচ মুক্তিযোদ্ধারাও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরের ঘাঁটি থেকে কাজ করছে।

পাকিস্তানের জন্য সমস্যা হল, আফগানিস্তানে বোমা হামলা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বিশেষ করে পাঞ্জাবে, যেখানে পশতুন-বিরোধী মনোভাব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, সেখানে জনমতকে সন্তুষ্ট করাই তাদের একমাত্র কাজ। কিন্তু সামরিক  পদক্ষেপেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাকিস্তানকে আগে সোভিয়েতদের কাছে জিজ্ঞেস করতে হত। এখন কেবল আমেরিকানদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবে। আফগানিস্তানে আক্রমণের ফলে কেবল আফগানরা - এমনকি যারা তালিবানের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে, তারাও - পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, কান্দাহার চক্রের সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি গুরুত্বও খাটো করেছিলেন। কিন্তু তালিবান আমিরের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ উঠলে হাক্কানিরা কিছুই করবে না। মজার বিষয় হল, আফগানিস্তানের কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানি হামলার সমালোচনা করেছেন। পাকিস্তানের জন্য আর কটি বিকল্প হল, আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার আর কটি ধাপ শুরু করা। এর জন্য হাতিয়ার হিসেবে থাকবে পূর্বতন প্রজাতন্ত্রের কিছু অংশ - যারা তালিবানের বিরুদ্ধে নিম্ন স্তরের বিদ্রোহ চালাচ্ছে এবং ইসলামিক স্টেট খোরাসান-কে (আইএসকে) প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে - আফগানিস্তানে একটি বর্বরোচিত যুদ্ধ শুরু করছে। তালিবানরা ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের কাছে বেলুচিস্তানে আইএসকে ঘাঁটি তৈরির অভিযোগ করেছে এবং কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) মতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু সন্ত্রাসবাদী প্রক্সিকেও তালিবান টিটিপির বিরুদ্ধে মোতায়েন করা যেতে পারে। ২০০০ সালের শেষের দিকে টিটিপির বিরুদ্ধে এলইটি ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু উপজাতীয় জেলাগুলিতে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত এই বেশিরভাগ পাঞ্জাবি জিহাদিদের ব্যবহার করে টিটিপির পশতুন ইসলামপন্থী জিহাদিদের নির্মূল করার জন্য দ্বিতীয় বার চেষ্টা করা হবে।

২০০০ সালের শেষের দিকে টিটিপির বিরুদ্ধে এলইটি ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু উপজাতীয় জেলাগুলিতে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল।

কাবুল আফগানিস্তানের অন্যান্য অংশে বোমা হামলার সময়টিও আকর্ষণীয় কারণ তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাক্কি যখন ভারত সফরে এসেছেন, তখনই এই হামলা ঘটেছে। অবশ্য তাৎক্ষণিক উস্কানি হল ওরাকজাইতে অতর্কিত হামলা, যেখানে প্রায় ১৭ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছিল মুত্তাক্কির ভারতে সফর পাকিস্তানি সামরিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের বিরক্তিকর ঘটনা বটে, যারা ভারতকে কেবল বালুচ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যই (পাকিস্তানিরা এটিকে ফিতনা আল হিন্দুস্তান বলা শুরু করেছে) নয়, বরং টিটিপি বিদ্রোহকে সমর্থন এবং অর্থায়নের জন্যও অভিযুক্ত করে আসছে। কিন্তু এই আক্রমণ তালিবানদের আরও বেশি করে ভারতের ঘনিষ্ঠই করে তুলবে, যাকে এই অঞ্চলে পাকিস্তানি দাপট আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিরোধী শক্তি হিসাবে মনে করা হয়। শত্রুর শত্রুই বন্ধু এই যুক্তি আবারও কার্যকর হতে পারে এটি এমন এক ধরনের সমীকরণ, যা ঐতিহাসিক ভাবে আফগানিস্তানের আঞ্চলিক জোটকে  সংজ্ঞায়িত করেছে।

 


সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.