-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
কাশ্মীরে হত্যাকাণ্ড ইঙ্গিত দেয় যে, সন্ত্রাসবাদী বাস্তুতন্ত্র পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের কাছ থেকেই মদত পেয়েছে, যাতে সংঘাতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফিরিয়ে আনা যায়।
নিরীহ পর্যটকদের আর্তনাদ ও কান্নায় কাশ্মীরের নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও উপত্যকার সবুজ পরিবেশের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী চিন্তাভাবনা, যা বারবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কাশ্মীরে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার আগের তুলনায় অনেক বেশি সমন্বয়শীল বলে মনে হচ্ছিল এবং স্থানীয়রা এমন এক শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি উপভোগ করতে শুরু করেছিল, যা কয়েক বছর আগেও দুরূহ ছিল। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, কাশ্মীর ও ভারতের বাকি অংশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। কাশ্মীর যে আসলে ভারতেরই অংশ… অতীতের এই বাগাড়ম্বর বাস্তবে পরিণত হচ্ছিল।
৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে আঞ্চলিক মানচিত্রের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভারত সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কাশ্মীরের কোনও প্রকৃত সমস্যা নেই।
আর এই নতুন বাস্তবতাই তাদের চক্ষুশূল হয়েছে, যারা গত সাত দশক ধরে কাশ্মীরে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার রাজনৈতিক অর্থনীতিকে মদত দিয়ে এসেছে। ভারত ও বৃহত্তর বিশ্বের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার পরিসরে ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও তাদের পরিচালনাকারীরা। ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে আঞ্চলিক মানচিত্রের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভারত সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কাশ্মীরের কোনও প্রকৃত সমস্যা নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে যে সমস্যাটি নিয়ে ভারতের আলোচনা করা বাকি ছিল, তা হল পাকিস্তানের দখলকৃত অঞ্চল। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের কুৎসা রটনাকে পাত্তা দেওয়ার মতো সময় বিশ্বের কাছে ছিল না। রাওয়ালপিন্ডি কাশ্মীর নিয়ে যত বেশি কথা বলেছে, তত বেশি করে তারা তাদের নিজস্ব ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলি প্রকাশ করে দিয়েছে।
এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির আহমেদ শাহ এ কথা নিজের দেশকে মনে করিয়ে দিয়ে কার্যত হতাশা প্রকাশ করেছেন যে, কাশ্মীর পাকিস্তানের ‘জুগুলার ভেন’ বা ‘ঘাড়ের শিরা’। এমনটা বলার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তান গঠনের নেপথ্যে থাকা আত্মবলিদানের কথা পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি ইসলামাবাদে এক সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং আমরা এই দেশ গঠনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। এবং আমরা জানি কীভাবে এটিকে রক্ষা করতে হয়।’ কিন্তু তিনি সেখানেই থেমে থাকেননি। দ্বি-জাতি তত্ত্বের যুক্তি পুনর্ব্যক্ত করার সময় তাঁর মধ্য থেকে যে গোপন ইসলামপন্থী ভাব ছিল, তা প্রকট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা ভেবেছিলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। আমাদের ধর্ম ভিন্ন, আমাদের রীতিনীতি ভিন্ন, আমাদের ঐতিহ্য ভিন্ন, চিন্তাভাবনা ভিন্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ভিন্ন। যে দ্বি-জাতি তত্ত্ব স্থাপন করা হয়েছিল, তার মূল ভিত্তি ছিল এই ভাবনা। আমরা দু’টি দেশ, কোনও মতেই আমরা এক দেশ নই।’
কাশ্মীরে হত্যাকাণ্ড ইঙ্গিত দেয় যে, সন্ত্রাসবাদী বাস্তুতন্ত্র পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের কাছ থেকেই মদত পেয়েছে, যাতে সংঘাতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফিরিয়ে আনা যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এই হামলাগুলি যখন করা হয়েছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স ভারতে ছিলেন। ওয়াশিংটন পাকিস্তানের প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি এই বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময়, ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির কথা বিন্দুমাত্র উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্বের উদ্বেগের জন্য আরও বড় সমস্যা রয়েছে এবং মার্কিনরা তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও চিনের উদীয়মান প্রতিযোগিতা পুনর্গঠনের প্রতি লক্ষ্য স্থির করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উদীয়মান ক্ষমতার ভারসাম্য গঠনের ক্ষমতা ভারতেরই রয়েছে।
ওয়াশিংটন পাকিস্তানের প্রতি সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি এই বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময়, ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির কথা বিন্দুমাত্র উল্লেখ করা হয়নি।
গত দশকে মোদী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় সাফল্যের আখ্যানগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির হিসাব-নিকাশে পাকিস্তানকে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা। প্রাথমিক প্রচেষ্টার পর মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার নিরর্থকতা বুঝতে পেরেছিলেন এবং বাস্তবে পাকিস্তানকে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক শক্তি ও কূটনৈতিক দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ভারতের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্য দিকে পাকিস্তানকে বিশ্বব্যাপী উপদ্রব হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি আরও দৃঢ় হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের সর্বকালীন অংশীদার চিনও দেশটির সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি অসম্ভব বলে মনে করছে। মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যেমন সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও সৌদি আরব এখন ভারতের কৌশলগত অংশীদার এবং এই বিষয়টিও বিশ্ব মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান মর্যাদাকেই দর্শায়।
অভ্যন্তরীণ ভাবে একটি অস্থির অর্থনীতি ও বেলুচিস্তানে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আরও খারাপ করেছে। এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যারা পাকিস্তানের নিরাপত্তার চূড়ান্ত গ্যারান্টার বলে নিজেকে দাবি করলেও ফলাফলের নিরিখে তেমন কিছুই প্রদর্শন করতে পারেনি। তাই হিন্দু-মুসলিম দ্বি-মেরু এবং কাশ্মীরের প্রসঙ্গটি ব্যর্থ রাষ্ট্রটির জন্যই স্বাভাবিক উপায় হয়ে উঠেছে।
এখন নয়াদিল্লির তরফে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর পালা। তাদের কাছে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে এবং প্রতিটি বিকল্প ঝুঁকি ও লাভ দুই-ই বহন করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে ভারত উপরোক্ত বিকল্পের বেশ কয়েকটিকে কার্যকর করেছে। আজ আমরা বিশ্বজুড়ে যেমন দেখতে পাই, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু সংঘাতের অবসান ঘটানো সহজ কাজ নয়। পাকিস্তান এমনটা মনে করতে পারে, ভারতের প্রতিক্রিয়া অনুমানযোগ্য হবে। ভারতের এ কথা নিশ্চিত করা উচিত যে, ভারতের পদক্ষেপ মোটেই অনুমানযোগ্য নয়।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +