Published on Oct 09, 2025 Updated 9 Hours ago

বেজিং-নেতৃত্বাধীন ত্রিপাক্ষিক জোট ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করার লক্ষ্যে কাজ করছে

ভারতের নতুন চ্যালেঞ্জ হল চিনের নেতৃত্বাধীন ত্রিপাক্ষিক জোট

সম্প্রতি চিনের কুনমিংয়ে চি, পাকিস্তান বাংলাদেশ তাদের প্রথম ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। আলোচনায় সহযোগিতা আরও জোরদার করা এবং গভীর সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা অন্বেষণের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এই বৈঠকটি মে মাসে চি, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত আর কটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠককে ঘনিষ্ঠ ভাবে অনুসরণ করেছে, যার লক্ষ্য ছিল চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক রিডোরের সম্প্রসারণ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। চিনের নেতৃত্বে এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকগুলি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা কমছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবহার পাকিস্তানকে এই অঞ্চলে অংশীদার করা এবং নয়াদিল্লিকে তাৎক্ষণিক উদ্বেগ নিয়ে ব্যস্ত রাখার জন্য চিনের নতুন প্রচেষ্টাকেই দর্শায়।

এমন যুদ্ধ, যা সারিবদ্ধতা তৈরি করেছে

১৯৬২ সালের ভারত ও চিনের মধ্যে যুদ্ধ মূলত আঞ্চলিক সারিবদ্ধতা ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। যুদ্ধের পর চিন পাকিস্তানকে এমন একটি মিত্র হিসেবে খুঁজে পেয়েছিল, যা ভারতকে তাৎক্ষণিক হুমকির সঙ্গে ড়িয়ে রাখতে পারে এবং বেজিংয়ের স্বার্থ, নিরাপত্তা মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। অন্য দিকে, পাকিস্তান চিনকে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল, যারা ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করবে। এখনও অবধি সহায়তা, বিনিয়োগ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পাকিস্তান চিনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চিন থেকে পাকিস্তানের ২৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ ছিল। অনুমান করা হয় যে, পাকিস্তানের অস্ত্র আমদানির ৮০%-এরও বেশি চিন থেকে আসে। এ ছাড়াও চিরাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীদেরও রক্ষা করেছে।

পাকিস্তান চিনকে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল, যারা ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করবে।

২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের অপারেশন সিঁদুরের সময় এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক মূলত দৃশ্যমান ছিল। চিন পহেলগামে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট হামলার প্রতি ভারতের প্রতিশোধকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছে এবং রাজনৈতিক সমাধান ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে চিন পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্ত শুরু করার বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। সর্বশেষ উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান নজরদারি রাডার, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, নির্দেশিকা ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিনা হার্ডওয়্যার অস্ত্র মোতায়েন করেছে। অপারেশন সিঁদুরের অব্যবহিত পরে পাকিস্তানের ফরেন মিনিস্টার তাঁচিনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘লোহার মতো শক্তিশালী বন্ধুত্ব পুনর্ব্যক্ত করার জন্য দেখা করেছিলেন। আফগানিস্তান অন্যান্য দেশের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্ভবত এই বৈঠক থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।

একটি ধারণার পুনরুত্থান

চিন ও পাকিস্তানের ভারতের বিরুদ্ধে প্লাস ওয়ান ব্যবহার করার এই ধারণাটি কোনও নতুন ঘটনা নয়। এমনকি ১৯৬৫ সালেও পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান, চি নেপালকে ব্যবহার করে ভারতকে তার কৌশলগত শিলিগুড়ি করিডোর থেকে বিচ্ছিন্ন করার ধারণা নিয়ে মেতেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে ব্যবহার করার এই ধারণাটি মনে হয় আবারও উঠে আসছে। কারণ চিপাকিস্তান উভয়ই আত্মবিশ্বাসী ভারতের সম্মুখীন হচ্ছে। উরি (২০১৬), পুলওয়ামা (২০১৯) এবং পহেলগামে পাকিস্তান-মদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত যথাযথ ভাবে প্রতিশোধ নিয়েছেভারত দেখিয়ে দিয়েছে যে, সে আর পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকি সহ্য করবে না। ভারত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তার কূটনৈতিক প্রভাব ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিও ব্যবহার করেছে। পহেলগাম হামলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভারতের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, বাণিজ্য বন্ধ করা, ন্দরে প্রবেশাধিকার সীমিত করা এবং সামরিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা এই সবই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অভিযানমূলক ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা রাওয়ালপিন্ডির সীমাবদ্ধতা দুর্বলতাগুলিকেই দর্শায়। ডোকলাম গলওয়ানে চিনা সীমান্ত অনুপ্রবেশের প্রতি ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সম্ভবত বেজিংকে অবাক করেছে। চিনা আগ্রাসন সীমিত করতে নয়াদিল্লি সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও বাড়িয়েছে।

ডোকলাম গলওয়ানে চিনা সীমান্ত অনুপ্রবেশের প্রতি ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সম্ভবত বেজিংকে অবাক করেছে।

একই সময়ে ভারতের বাস্তববাদী অংশগ্রহণ এবং এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের গতিকে রুদ্ধ করেছে। মলদ্বীপে বেজিং প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু এবং দেশটির অর্থনীতির উপর আস্থা রাখতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছেযদিও মুইজ্জুর প্রাথমিক বক্তব্য ভারত-বিরোধী ছিল। মুইজ্জু এখন দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য ভারতের দিকে ঝুঁকছেন। নেপালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সহযোগিতার কাঠামোতে স্বাক্ষর করার পরেও তহবিলের ক্ষেত্রে প্রধান পার্থক্যগুলি অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে এবং প্রকল্পগুলির অগ্রগতি ধীর। শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েকে ভারতের বিপদসঙ্কেতকে সম্মান করে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। দিল্লির সাথে আদর্শগত ও চিরাচরিত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তিনি চিনে যাওয়ার আগে ভারত সফর করেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ভারত নেপালের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক জ্বালানি সহযোগিতায় কোনও বাধা দেয়নি।

এই ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সম্ভবত চিনকে আফগানিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার জন্য চাপ দিতে উৎসাহিত করেছে। ২০২১ ২০২৪ সালে তাদের নিজ নিজ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের আগে উভয় দেশই পাকিস্তান তার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের দৃঢ় সমর্থক ছিল। তবে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ও চিন উভয় দেশকেই তাদের নিজেদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তারা ভারত তালিবানের মধ্যে বাস্তবসম্মত সম্পৃক্ততার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে এই আশঙ্কায় যে, পাকিস্তান ক্রমশ নিজের প্রভাব হারাবে। এর পাশাপাশি পাকিস্তান বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেছে।

চিরাচরিত ভাবে বাংলাদেশ আফগানিস্তান উভয়ই পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছে এবং সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি উর্বর জমি প্রদান করেছে। চিতার অর্থনৈতিক প্রভাব দ্বারা সমর্থিত পাকিস্তানের প্রভাব নতুন সন্ত্রাস নিরাপত্তা-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এটি পাকিস্তানকে এই অঞ্চলে একটি প্রাসঙ্গিক দেশ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে, ভারত তার প্রতিবেশীদের মধ্যে ফাটল তৈরি করবে এবং দিল্লিকে তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা সন্ত্রাস-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যস্ত রাখবে, যা এই অঞ্চলে চিনা বিআরআই প্রকল্প, স্বার্থ এবং বিনিয়োগের পথ তৈরি করবে।

শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ও চিন উভয় দেশকেই তাদের নিজেদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে।

চিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতা

এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহ আবারও প্রমাণ করে যে, পাকিস্তান নয়, চিনই ভারতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান ও চিন উভয়ই আত্মবিশ্বাসী ভারতের সম্মুখীন হওয়ায় চিন ত্রিপাক্ষিক জোটের মাধ্যমে ভারতকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেখছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারত যখন দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির সমর্থন চাইছে, তখন চিনের প্রচেষ্টা নতুন বাধা তৈরি করবে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিকে তাই ভারত ও চিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে শিখতে হবেকারণ বেজিং ইসলামাবাদকে ব্যবহার করে এই অঞ্চলে নতুন জটিলতা তৈরি করছে। অন্য দিকে, দিল্লিকে নিজের বিপদরেখা প্রকাশ করতে হবে এবং এই বিষয়টি বোঝাতে হবে যে, তার প্রতিবেশীদের যে কোন দুঃসাহসিক কাজের জন্য অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক ভাবে গুরুতর মূল্য চোকাতে হতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy

Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative.  He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...

Read More +